মোহাম্মদ আজমের লেখা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটেছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের। এই অভ্যুত্থানের এক বছর পেরোলো। অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী, অভ্যুত্থানকালীন ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় ও বাস্তবতা নিয়ে দেখা যাচ্ছে নানামাত্রিক ব্যাখ্যা। প্রশ্ন হলো, অভ্যুত্থান কি কেবলই সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপান্তর কতটা ঘটেছে?
মোহাম্মদ আজম
৫ আগস্ট তারিখটি বহুকালের জন্য বাংলাদেশের ক্যালেন্ডারে খুব স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। দেশের মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক দিনপঞ্জিতে তারিখটিকে স্থায়ী করে দেওয়ার মতো ঘটনাটি ঘটেছে আজ থেকে এক বছর আগে–২০২৪-এর ৫ আগস্ট।
সেদিন এদেশের কোটি কোটি মানুষের আত্মার সামষ্টিক আকুতিকে সাফল্যের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়ে এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতি এসেছিল। আমি এই ঘটনাকে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান নামে চিহ্নিত করতে চেয়েছি, এবং গত এক বছরের ঘটনা পরম্পরায় সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতা, সংকট ও সম্ভাবনা–এ নামের বৈশিষ্ট্যমূলকতা দিয়ে সর্বোত্তম ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা যায় বলেই ধারণা করি।
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে অনেকেই নানা ভঙ্গিতে একে স্মরণ করছেন। বেশির ভাগ স্মরণ ওই দিনগুলোতে নিজ নিজ সক্রিয়তা ও অবস্থানের জানান দিয়েছে। সেটা অস্বাভাবিক নয়। এ ধরনের ত্বরিত ও সর্বব্যাপী ঘটনায় নানা ব্যক্তি ও সমষ্টির অবদান আলাদাভাবে চিহ্নিত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
তদুপরি গত এক বছর ধরে অভ্যুত্থানের পক্ষ-বিপক্ষ বর্গ এতটাই সক্রিয় আর কার্যকর ছিল যে এ ধরনের একটা প্রবণতা সবার মধ্যে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে জমে ওঠা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে দুটি বড় ক্ষতিও হয়েছে। একদিকে একটা অবিভাজ্য সামষ্টিকতা টুকরা টুকরা হয়ে এমনভাবে বিভাজিত হয়ে পড়েছে যে এগুলোকে একত্র করে একটা সামগ্রিক চেহারা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর মতো বিরল ঘটনা একটা জনগোষ্ঠীর নতুন ভাগ্য গড়ার যে আদেশ ও প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল, তা আরও দ্রুত বাস্তব ময়দান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
সেদিক থেকে সরকারি অনুষ্ঠানমালার যে নাম ঘোষিত হয়েছে, তা অনেক বেশি কাজের হয়েছে। নামটি হলো ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’। এ নামের মধ্যে এক বছর আগে ঘটে যাওয়া মহাঘটনাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার একটা বাসনা আছে। বাস্তবে মূল ঘটনা ও উপস্থাপনার মধ্যে যে ফারাক থাকে তা ঘুচিয়ে দেওয়া অসম্ভব। তদুপরি গত এক বছরে অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তি এতটাই মত-বিরোধ এবং পথ-বিরোধ দেখিয়েছে যে কোনো সামষ্টিক সিদ্ধান্ত প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এমতাবস্থায় জুলাই মুভমেন্টের তাৎপর্যগত বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্তগ্রহণ ও গৃহীত সিদ্ধান্ত আজকের কর্মকাণ্ডে অনবরত সঞ্চারিত করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। কোনো ক্ষেত্রেই অবশ্য থাকে না। তবে এখানে অতি দ্রুত আমরা এ অবস্থায় উপনীত হয়েছি। ফলে আত্মগ্লানিতে ভোগা ছাড়া এ থেকে ন্যূনতম মাত্রায় মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে আগেও ঘটেছে। একাত্তর, পঁচাত্তর, নব্বই …। দুনিয়ার সর্বত্র ঘটে। ঘটার মূল কারণ যদি চিহ্নিত করতে চাই তাহলে বলতে হবে, রাষ্ট্রক্ষমতাসহ নানাবিধ ক্ষমতাবলয়ের ভিত্তি হিসেবে যখন কোনো আন্দোলন বা অভ্যুত্থান বা ব্যক্তি ব্যবহৃত হয়, তখন তা সার্বজনীনতা হারাতে বাধ্য।
ব্যাপারটা ঠিক এত সরলও নয়। রাষ্ট্রক্ষমতাসহ অন্য ছড়ানো-ছেটানো ক্ষমতার অংশীদার না হলে কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর সম্ভব হয় না। আবার ক্ষমতা সবসময় সংকীর্ণতা তৈরি করে, এবং ঘটনা বা ব্যক্তিকে অবলম্বন করে তৈরি হওয়া মেটা-ন্যারেটিভ থেকে বিপুল মানুষকে বাইরে রাখতে চায়। এমনই ঘটে। আমাদের এখানে ঘটেছে; সারা দুনিয়ায়ও ঘটে।
এ অবস্থার সবচেয়ে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় খোদ রাষ্ট্রের ধারণাটিকে রাষ্ট্রক্ষমতার কাঠামো থেকে আলাদা করতে পারা। বস্তুত শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে এ ধরনের একটা উপলব্ধি তৈরি হয়েছিল বলেই আদৌ অভ্যুত্থানটি সম্ভবপর হয়েছে। কথাটা আরেকটু খোলাসা করা দরকার।
অনেকেই এ অভ্যুত্থানকে ‘সরকার-পতনের আন্দোলন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। এরচেয়ে বড় মিথ্যাচার আর হতে পারে না। যদি দলীয় ব্যানারে ও দলগত নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটত, তাহলে এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারতাম। কিন্তু তা তো হয়নি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের পক্ষে সৌভাগ্যক্রমে একটা বড় উদাহরণ রয়ে গেছে।
জুলাই আন্দোলনের অল্প আগে দলীয় নেতৃত্বে বেশ বড়সড় আন্দোলন হয়েছিল। সবারই মনে থাকার কথা, সে আন্দোলনে বড় ধরনের জনসমাবেশ হয়েছিল, এবং জানবাজি রেখে কর্মী-সমর্থকেরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। কিন্তু সরকারের পতন হয়নি।
সরকার যখন আরেকটি নির্বাচনী ক্ষণ পায়ে দলে গুছিয়ে বসেছে, তখনই সম্পূর্ণ ভিন্ন সূত্র ও লক্ষ্য মেনে আন্দোলন দানা বাঁধে। তাতে সরকারের পতন হয়। কিন্তু ওই সূত্র ও লক্ষ্য বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, সরকারের পতন অনুষঙ্গী ফল মাত্র। মূল লক্ষ্যটা ছিল রাষ্ট্র। নতুন রাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান সরকার ও রাষ্ট্রকে আলাদা করতে পেরেছিল। অভ্যুত্থানের পরে আমরা এই আলাদা সত্তা অন্তত বোধ-বোধির স্তরে জাগরূক রাখার মতো পরিপক্বতার পরিচয় দিতে সামষ্টিকভাবে ব্যর্থ হয়েছি।
রাষ্ট্র এক সামষ্টিক ধারণা। দলীয় বা গোষ্ঠীগত সত্তার ঊর্ধ্বে সে সত্তার কল্পনা যদি জনসমাজে শক্ত ভিত্তি না পায়, তাহলে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে না। জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় মৌহূর্তিক অবদান এ ধরনের এক কল্পনার উদ্ভাসন। গত এক বছরে ওই বোধকে দলীয় সংকীর্ণতায় অবনমিত করার এক মরিয়া প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি।
অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁরা দলীয় পরিচয়ে কাজ করেছেন। এ দাবি বড় হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য সবচেয়ে বড় দায় অভ্যুত্থানের অগ্রনায়কদের। তাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে অভ্যুত্থান থেকে অর্জিত পরিচয়কে নিঃশেষে ও দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহার করতে চেয়ে মারাত্মক রাজনৈতিক অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকে দলীয় পরিচয়ে সংকীর্ণ করে আনা মারাত্মক মিথ্যাচার ও অসততা।
এরচেয়ে বড় কথা, এটা অভুত্থানকে তাত্ত্বিক-প্রায়োগিকভাবে বুঝতে পারার অক্ষমতা। অভ্যুত্থান নিজেই নিজের ভাষা তৈরি করে। ওই ভাষা তৈরি হয় বলেই অভ্যুত্থান হয়। তখন সবাইকে ওই ভাষার সূত্র মেনেই তৎপরতা চালাতে হয়। নিজেদের পরিচয় মুলতবি রাখতে হয়। মুলতবি রাখা পরিচয় অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে নিশ্চয়ই পুনরায় জাগ্রত হবে। তবে ওই পরিচয় অভ্যুত্থানকালীন তৎপরতায়ও জাগ্রত ছিল, এ দাবি অজ্ঞতা ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কী!
অভ্যুত্থানের এই এজমালি ভাষাই প্রয়োজনীয় পাটাতন তৈরি করেছে। তাতে দল তো বটেই, অন্য সব পরিচয়ই কিছু সময়ের জন্য মুলতবি রাখতে হয়েছে। অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে কেবল তখনই, যখন ওই এজমালি ভাষা ও পাটাতনে কাজ করা অভিজ্ঞতা পরবর্তী দলীয় ও গোষ্ঠীগত চর্চায় অনুবাদ করা যায়। আমরা এ কাজটি করতে সামষ্টিকভাবে ব্যর্থ হয়েছি বলেই ক্ষমতাসীন দলের পতন হিসেবে একে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হচ্ছি।
আদতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দলীয় আন্দোলন বা ক্ষমতা পরিবর্তনের আন্দোলন দানা বাঁধেনি মুখ্যত এ কারণে যে জনমনের আকাঙ্ক্ষাকে নিছক ক্ষমতার পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। আকাঙ্ক্ষাটা ছিল আরও বেশি কিছু। বিগত সরকারের অন্তত শেষ দশ-বারো বছরের শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে পারলে আমরা এই ‘বেশি’ জিনিসটা উপলব্ধি করতে পারব।
ওই সরকার কার্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বৃহত্তর অস্তিত্বকে দলীয় অস্তিত্বে রূপান্তরিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি, প্রগতিশীলতা ইত্যাদি যেসব বর্গ জনসমাজে ও রাষ্ট্রদেহে উন্মুক্ত বহু-অর্থকতার মধ্য দিয়ে চর্চিত হওয়ার কথা, যেগুলোর সজীব ও নিয়ন্ত্রণহীন অস্তিত্ব সব রাষ্ট্রেই জনগোষ্ঠীর পারস্পরিকতা তৈরি করে থাকে, সেগুলোকে ওই সরকার একদিকে দলীয় সংকীর্ণতায় কুক্ষিগত করেছিল, অন্যদিকে সেগুলোর সুবিধাজনক অর্থ নির্দিষ্ট করে দিচ্ছিল। ফলে রাষ্ট্র উধাও হয়ে যাচ্ছিল।
জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দলীয় অস্তিত্বের মধ্যে ফারাক করতে পারছিল না। অর্থের এই একার্থক সংকীর্ণতা ও দলীয় বদ্ধতা থেকে গোটা জনসমাজ–এমনকি আওয়ামীমনস্ক জনসমাজকেও–মুক্ত করাই ছিল গত দশকের রাজনৈতিক চর্চার মূল কথা।
অনুমান করা অসম্ভব নয়, এ রাজনৈতিক চর্চাটা হয়েছিল প্রধানত সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে। একমাত্র ওই ধরনের চর্চাই মানুষের স্ফুট-অস্ফুট আকাঙ্ক্ষার জন্য ভাষা তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক ভাষার এই গভীর পটভূমিতেই সংঘটিত হয়েছিল শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪। একে ক্ষমতাচ্যুত করার লড়াই এবং ক্ষমতাসীন হওয়ার অভিলাষ হিসাবে ব্যাখ্যা করা ওই অভ্যুত্থানের সাথে সবচেয়ে বড় বেইমানি।
অভুত্থান হয়ে গেলেই রাষ্ট্র বদলে যায়–এ ধরনের খায়েশ অনেকের মধ্যে দেখা গেছে। এটা একদিকে মূর্খতা, অন্যদিকে ক্ষতিকর মনোভঙ্গি। রাষ্ট্র এক সাংস্কৃতিক প্রপঞ্চ–প্রাকৃতিক নয়। একে বহু আয়াসে ক্রমে গড়ে তুলতে হয়। এ কাণ্ডজ্ঞান না থাকার ফলে অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষার চাপে পড়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারসহ ক্রিয়াশীল পক্ষগুলো যতটা ভূমিকা রাখতে পারত, ততটা রাখতে পারেনি। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই, যতটা হতে পারত, তার খুব সামান্যই আমরা পেয়েছি। জনগণের বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাষ্ট্রদেহে এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন আমরা বাস্তবসম্মত মাত্রাতেই পেতে পারতাম, তা পাইনি।
না পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখাতে পারিনি। অনেকেই এমনভাবে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন, যেন এরকম ঘটনা আমাদের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। বেশি পেছনে না গিয়ে যদি ১৯৪৭ সাল থেকেও ধরি, যখন থেকে আমরা মোটের ওপর একই ভূমি ও জনগোষ্ঠী নিয়ে প্রায় একই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রজীবন যাপন করছি, তাহলেও এরকম ভাবনার গলদটা বোঝা যাবে।
আমরা যদি গত কয়েক দশক এবং আগামী কয়েক দশককে কল্পনাবৃত্তে না আনতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রগঠন কীভাবে হবে? অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কি এটুকুও শিখব না যে ক্ষমতায় একবার আরোহণ করাই শেষ কথা নয়। অতি শীঘ্রই ফিরে ফিরে সংকীর্ণ বিরোধের সিঁড়ি বেয়ে আবার ফিরে আসে আগের নৈরাজ্য–বাংলাদেশের ইতিহাসের এ অভিজ্ঞতাও কি আমাদের রাষ্ট্র-ব্যবস্থা গঠনের দিকে মনোযোগী করবে না? কেবল অব্যবহিত ক্ষমতা-প্রদর্শনী বা ক্ষমতারোহণকেই আমরা ভবিতব্য মানব?
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরে বলতেই হবে, আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এ ব্যর্থতাকে যারা অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করে, তারা অসৎ ও কূপকণ্ডূক। ২০২৪ আমাদের হাতে জনগোষ্ঠী হিসাবে যে ভাষার স্মৃতি তুলে দিয়ে গেছে, সম্পদ হিসাবে তা অপরিমেয়। এটা অনবরত আমাদের কর্তব্য-প্রশ্নে আলোকবর্তিকার কাজ করবে। মনে করিয়ে দেবে, সব পার্থক্যসহই আমাদের ন্যূনতম ঐক্যের ভাষা ও পাটাতন তালাশ করে যেতেই হবে। তা না হলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিয়াশীলতা সম্ভবপর হবে না। এ উপলব্ধির দিকে মুখ ফেরানোই হতে পারে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর সর্বোত্তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক
৫ আগস্ট তারিখটি বহুকালের জন্য বাংলাদেশের ক্যালেন্ডারে খুব স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। দেশের মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক দিনপঞ্জিতে তারিখটিকে স্থায়ী করে দেওয়ার মতো ঘটনাটি ঘটেছে আজ থেকে এক বছর আগে–২০২৪-এর ৫ আগস্ট।
সেদিন এদেশের কোটি কোটি মানুষের আত্মার সামষ্টিক আকুতিকে সাফল্যের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়ে এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতি এসেছিল। আমি এই ঘটনাকে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান নামে চিহ্নিত করতে চেয়েছি, এবং গত এক বছরের ঘটনা পরম্পরায় সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতা, সংকট ও সম্ভাবনা–এ নামের বৈশিষ্ট্যমূলকতা দিয়ে সর্বোত্তম ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা যায় বলেই ধারণা করি।
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে অনেকেই নানা ভঙ্গিতে একে স্মরণ করছেন। বেশির ভাগ স্মরণ ওই দিনগুলোতে নিজ নিজ সক্রিয়তা ও অবস্থানের জানান দিয়েছে। সেটা অস্বাভাবিক নয়। এ ধরনের ত্বরিত ও সর্বব্যাপী ঘটনায় নানা ব্যক্তি ও সমষ্টির অবদান আলাদাভাবে চিহ্নিত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
তদুপরি গত এক বছর ধরে অভ্যুত্থানের পক্ষ-বিপক্ষ বর্গ এতটাই সক্রিয় আর কার্যকর ছিল যে এ ধরনের একটা প্রবণতা সবার মধ্যে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে জমে ওঠা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে দুটি বড় ক্ষতিও হয়েছে। একদিকে একটা অবিভাজ্য সামষ্টিকতা টুকরা টুকরা হয়ে এমনভাবে বিভাজিত হয়ে পড়েছে যে এগুলোকে একত্র করে একটা সামগ্রিক চেহারা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর মতো বিরল ঘটনা একটা জনগোষ্ঠীর নতুন ভাগ্য গড়ার যে আদেশ ও প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল, তা আরও দ্রুত বাস্তব ময়দান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
সেদিক থেকে সরকারি অনুষ্ঠানমালার যে নাম ঘোষিত হয়েছে, তা অনেক বেশি কাজের হয়েছে। নামটি হলো ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’। এ নামের মধ্যে এক বছর আগে ঘটে যাওয়া মহাঘটনাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার একটা বাসনা আছে। বাস্তবে মূল ঘটনা ও উপস্থাপনার মধ্যে যে ফারাক থাকে তা ঘুচিয়ে দেওয়া অসম্ভব। তদুপরি গত এক বছরে অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তি এতটাই মত-বিরোধ এবং পথ-বিরোধ দেখিয়েছে যে কোনো সামষ্টিক সিদ্ধান্ত প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এমতাবস্থায় জুলাই মুভমেন্টের তাৎপর্যগত বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্তগ্রহণ ও গৃহীত সিদ্ধান্ত আজকের কর্মকাণ্ডে অনবরত সঞ্চারিত করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। কোনো ক্ষেত্রেই অবশ্য থাকে না। তবে এখানে অতি দ্রুত আমরা এ অবস্থায় উপনীত হয়েছি। ফলে আত্মগ্লানিতে ভোগা ছাড়া এ থেকে ন্যূনতম মাত্রায় মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে আগেও ঘটেছে। একাত্তর, পঁচাত্তর, নব্বই …। দুনিয়ার সর্বত্র ঘটে। ঘটার মূল কারণ যদি চিহ্নিত করতে চাই তাহলে বলতে হবে, রাষ্ট্রক্ষমতাসহ নানাবিধ ক্ষমতাবলয়ের ভিত্তি হিসেবে যখন কোনো আন্দোলন বা অভ্যুত্থান বা ব্যক্তি ব্যবহৃত হয়, তখন তা সার্বজনীনতা হারাতে বাধ্য।
ব্যাপারটা ঠিক এত সরলও নয়। রাষ্ট্রক্ষমতাসহ অন্য ছড়ানো-ছেটানো ক্ষমতার অংশীদার না হলে কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর সম্ভব হয় না। আবার ক্ষমতা সবসময় সংকীর্ণতা তৈরি করে, এবং ঘটনা বা ব্যক্তিকে অবলম্বন করে তৈরি হওয়া মেটা-ন্যারেটিভ থেকে বিপুল মানুষকে বাইরে রাখতে চায়। এমনই ঘটে। আমাদের এখানে ঘটেছে; সারা দুনিয়ায়ও ঘটে।
এ অবস্থার সবচেয়ে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় খোদ রাষ্ট্রের ধারণাটিকে রাষ্ট্রক্ষমতার কাঠামো থেকে আলাদা করতে পারা। বস্তুত শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে এ ধরনের একটা উপলব্ধি তৈরি হয়েছিল বলেই আদৌ অভ্যুত্থানটি সম্ভবপর হয়েছে। কথাটা আরেকটু খোলাসা করা দরকার।
অনেকেই এ অভ্যুত্থানকে ‘সরকার-পতনের আন্দোলন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। এরচেয়ে বড় মিথ্যাচার আর হতে পারে না। যদি দলীয় ব্যানারে ও দলগত নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটত, তাহলে এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারতাম। কিন্তু তা তো হয়নি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের পক্ষে সৌভাগ্যক্রমে একটা বড় উদাহরণ রয়ে গেছে।
জুলাই আন্দোলনের অল্প আগে দলীয় নেতৃত্বে বেশ বড়সড় আন্দোলন হয়েছিল। সবারই মনে থাকার কথা, সে আন্দোলনে বড় ধরনের জনসমাবেশ হয়েছিল, এবং জানবাজি রেখে কর্মী-সমর্থকেরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। কিন্তু সরকারের পতন হয়নি।
সরকার যখন আরেকটি নির্বাচনী ক্ষণ পায়ে দলে গুছিয়ে বসেছে, তখনই সম্পূর্ণ ভিন্ন সূত্র ও লক্ষ্য মেনে আন্দোলন দানা বাঁধে। তাতে সরকারের পতন হয়। কিন্তু ওই সূত্র ও লক্ষ্য বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, সরকারের পতন অনুষঙ্গী ফল মাত্র। মূল লক্ষ্যটা ছিল রাষ্ট্র। নতুন রাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান সরকার ও রাষ্ট্রকে আলাদা করতে পেরেছিল। অভ্যুত্থানের পরে আমরা এই আলাদা সত্তা অন্তত বোধ-বোধির স্তরে জাগরূক রাখার মতো পরিপক্বতার পরিচয় দিতে সামষ্টিকভাবে ব্যর্থ হয়েছি।
রাষ্ট্র এক সামষ্টিক ধারণা। দলীয় বা গোষ্ঠীগত সত্তার ঊর্ধ্বে সে সত্তার কল্পনা যদি জনসমাজে শক্ত ভিত্তি না পায়, তাহলে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে না। জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় মৌহূর্তিক অবদান এ ধরনের এক কল্পনার উদ্ভাসন। গত এক বছরে ওই বোধকে দলীয় সংকীর্ণতায় অবনমিত করার এক মরিয়া প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি।
অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁরা দলীয় পরিচয়ে কাজ করেছেন। এ দাবি বড় হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য সবচেয়ে বড় দায় অভ্যুত্থানের অগ্রনায়কদের। তাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে অভ্যুত্থান থেকে অর্জিত পরিচয়কে নিঃশেষে ও দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহার করতে চেয়ে মারাত্মক রাজনৈতিক অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকে দলীয় পরিচয়ে সংকীর্ণ করে আনা মারাত্মক মিথ্যাচার ও অসততা।
এরচেয়ে বড় কথা, এটা অভুত্থানকে তাত্ত্বিক-প্রায়োগিকভাবে বুঝতে পারার অক্ষমতা। অভ্যুত্থান নিজেই নিজের ভাষা তৈরি করে। ওই ভাষা তৈরি হয় বলেই অভ্যুত্থান হয়। তখন সবাইকে ওই ভাষার সূত্র মেনেই তৎপরতা চালাতে হয়। নিজেদের পরিচয় মুলতবি রাখতে হয়। মুলতবি রাখা পরিচয় অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে নিশ্চয়ই পুনরায় জাগ্রত হবে। তবে ওই পরিচয় অভ্যুত্থানকালীন তৎপরতায়ও জাগ্রত ছিল, এ দাবি অজ্ঞতা ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কী!
অভ্যুত্থানের এই এজমালি ভাষাই প্রয়োজনীয় পাটাতন তৈরি করেছে। তাতে দল তো বটেই, অন্য সব পরিচয়ই কিছু সময়ের জন্য মুলতবি রাখতে হয়েছে। অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে কেবল তখনই, যখন ওই এজমালি ভাষা ও পাটাতনে কাজ করা অভিজ্ঞতা পরবর্তী দলীয় ও গোষ্ঠীগত চর্চায় অনুবাদ করা যায়। আমরা এ কাজটি করতে সামষ্টিকভাবে ব্যর্থ হয়েছি বলেই ক্ষমতাসীন দলের পতন হিসেবে একে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হচ্ছি।
আদতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দলীয় আন্দোলন বা ক্ষমতা পরিবর্তনের আন্দোলন দানা বাঁধেনি মুখ্যত এ কারণে যে জনমনের আকাঙ্ক্ষাকে নিছক ক্ষমতার পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। আকাঙ্ক্ষাটা ছিল আরও বেশি কিছু। বিগত সরকারের অন্তত শেষ দশ-বারো বছরের শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে পারলে আমরা এই ‘বেশি’ জিনিসটা উপলব্ধি করতে পারব।
ওই সরকার কার্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বৃহত্তর অস্তিত্বকে দলীয় অস্তিত্বে রূপান্তরিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি, প্রগতিশীলতা ইত্যাদি যেসব বর্গ জনসমাজে ও রাষ্ট্রদেহে উন্মুক্ত বহু-অর্থকতার মধ্য দিয়ে চর্চিত হওয়ার কথা, যেগুলোর সজীব ও নিয়ন্ত্রণহীন অস্তিত্ব সব রাষ্ট্রেই জনগোষ্ঠীর পারস্পরিকতা তৈরি করে থাকে, সেগুলোকে ওই সরকার একদিকে দলীয় সংকীর্ণতায় কুক্ষিগত করেছিল, অন্যদিকে সেগুলোর সুবিধাজনক অর্থ নির্দিষ্ট করে দিচ্ছিল। ফলে রাষ্ট্র উধাও হয়ে যাচ্ছিল।
জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দলীয় অস্তিত্বের মধ্যে ফারাক করতে পারছিল না। অর্থের এই একার্থক সংকীর্ণতা ও দলীয় বদ্ধতা থেকে গোটা জনসমাজ–এমনকি আওয়ামীমনস্ক জনসমাজকেও–মুক্ত করাই ছিল গত দশকের রাজনৈতিক চর্চার মূল কথা।
অনুমান করা অসম্ভব নয়, এ রাজনৈতিক চর্চাটা হয়েছিল প্রধানত সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে। একমাত্র ওই ধরনের চর্চাই মানুষের স্ফুট-অস্ফুট আকাঙ্ক্ষার জন্য ভাষা তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক ভাষার এই গভীর পটভূমিতেই সংঘটিত হয়েছিল শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪। একে ক্ষমতাচ্যুত করার লড়াই এবং ক্ষমতাসীন হওয়ার অভিলাষ হিসাবে ব্যাখ্যা করা ওই অভ্যুত্থানের সাথে সবচেয়ে বড় বেইমানি।
অভুত্থান হয়ে গেলেই রাষ্ট্র বদলে যায়–এ ধরনের খায়েশ অনেকের মধ্যে দেখা গেছে। এটা একদিকে মূর্খতা, অন্যদিকে ক্ষতিকর মনোভঙ্গি। রাষ্ট্র এক সাংস্কৃতিক প্রপঞ্চ–প্রাকৃতিক নয়। একে বহু আয়াসে ক্রমে গড়ে তুলতে হয়। এ কাণ্ডজ্ঞান না থাকার ফলে অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষার চাপে পড়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারসহ ক্রিয়াশীল পক্ষগুলো যতটা ভূমিকা রাখতে পারত, ততটা রাখতে পারেনি। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই, যতটা হতে পারত, তার খুব সামান্যই আমরা পেয়েছি। জনগণের বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাষ্ট্রদেহে এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন আমরা বাস্তবসম্মত মাত্রাতেই পেতে পারতাম, তা পাইনি।
না পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখাতে পারিনি। অনেকেই এমনভাবে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন, যেন এরকম ঘটনা আমাদের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। বেশি পেছনে না গিয়ে যদি ১৯৪৭ সাল থেকেও ধরি, যখন থেকে আমরা মোটের ওপর একই ভূমি ও জনগোষ্ঠী নিয়ে প্রায় একই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রজীবন যাপন করছি, তাহলেও এরকম ভাবনার গলদটা বোঝা যাবে।
আমরা যদি গত কয়েক দশক এবং আগামী কয়েক দশককে কল্পনাবৃত্তে না আনতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রগঠন কীভাবে হবে? অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কি এটুকুও শিখব না যে ক্ষমতায় একবার আরোহণ করাই শেষ কথা নয়। অতি শীঘ্রই ফিরে ফিরে সংকীর্ণ বিরোধের সিঁড়ি বেয়ে আবার ফিরে আসে আগের নৈরাজ্য–বাংলাদেশের ইতিহাসের এ অভিজ্ঞতাও কি আমাদের রাষ্ট্র-ব্যবস্থা গঠনের দিকে মনোযোগী করবে না? কেবল অব্যবহিত ক্ষমতা-প্রদর্শনী বা ক্ষমতারোহণকেই আমরা ভবিতব্য মানব?
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরে বলতেই হবে, আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এ ব্যর্থতাকে যারা অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করে, তারা অসৎ ও কূপকণ্ডূক। ২০২৪ আমাদের হাতে জনগোষ্ঠী হিসাবে যে ভাষার স্মৃতি তুলে দিয়ে গেছে, সম্পদ হিসাবে তা অপরিমেয়। এটা অনবরত আমাদের কর্তব্য-প্রশ্নে আলোকবর্তিকার কাজ করবে। মনে করিয়ে দেবে, সব পার্থক্যসহই আমাদের ন্যূনতম ঐক্যের ভাষা ও পাটাতন তালাশ করে যেতেই হবে। তা না হলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিয়াশীলতা সম্ভবপর হবে না। এ উপলব্ধির দিকে মুখ ফেরানোই হতে পারে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর সর্বোত্তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক
বিশ্বজুড়ে মুক্ত বাণিজ্যের যুগ শেষ হয়ে এখন প্রতিটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি নিজেদের স্বার্থে আলাদা জোট তৈরি করছে, বাড়ছে আত্মনির্ভরতার ঝোঁক।
১ দিন আগেফ্রান্সিস ফুকুয়ামার ভাষায়, দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিশ্বাসের মাত্রার ওপর অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে।
২ দিন আগেকেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একদফার ডাক। পথে নেমে আসেন ছাত্র-জনতা—নাগরিকেরা। এ সময় শেখ হাসিনা সরকারকে অভিশাপ দিয়েছিলেন এক অধ্যাপক।
৩ দিন আগেসম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি প্রজ্ঞাপন আমার নজরে এল। প্রজ্ঞাপনটি হলো, রাত দশটার পর হলে ফিরলে ছাত্রীদের হলের সিট বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি তা দশটা এক মিনিট হলেও। অবাক করা প্রজ্ঞাপন বটে!
৪ দিন আগে