আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের দ্বিতীয় দিনে গণভোট ও জোটের প্রতীক ব্যবহারের মতো বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দলগুলো। একই সঙ্গে, সব দলের জন্য নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে জামানত কমানো, পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ এবং ইসির নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোও উঠে আসে।
দিনের প্রথম ভাগে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্ধারিত থাকলেও তৃণমূল বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি।
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেশ কয়েকটি দল। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যমান প্যাকেজে হ্যাঁ বা না ভোট হলে এটি অকার্যকর হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত গণভোট যেন হাস্যকর বিষয়ে পরিণত না হয়, এ ব্যাপারে আপনাদের শক্ত থাকতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হলে গণভোটের গুরুত্ব থাকবে না। আমরা চাই, গণভোট আলাদা দিনে হোক।’ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও একই দিনে দুটি ভোট আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অন্যদিকে, নির্বাচনী জোটে থাকলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার নতুন বিধান নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন মত এসেছে। গণফোরাম ও ইসলামী ঐক্যজোট এই বিধান পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেছে, এর ফলে জোটগতভাবে অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এই বিধানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতে দলগুলো শক্তিশালী হবে। তারা এই সিদ্ধান্তে ইসিকে অটল থাকার আহ্বান জানায়।
সংলাপে অংশ নেওয়া প্রায় সব দলই নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বড় দলগুলো ইতিমধ্যেই পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে মাঠে আছে, যা তাদের বাড়তি সুবিধা দেবে। এতে ছোট দলগুলো পিছিয়ে পড়বে।’ তিনি প্রতিটি এলাকায় সব প্রার্থীর জন্য একটি অভিন্ন প্রচার মঞ্চ তৈরির প্রস্তাব দেন, যেখান থেকে সবাই প্রচারণা চালাতে পারবেন।
গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, জাসদ, ন্যাপ এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অন্যান্য দলগুলোও একই দাবি জানায়।
দলগুলোর বক্তব্য শোনার পর নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা পেশিশক্তি দেখাবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এটাই ইসির বার্তা। এ ব্যাপারে কোনো ব্যত্যয় হবে না। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’
আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা নতজানু হব না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করছি। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আশা করি, দলগুলোর প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাবো। সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া একটি জাতীয় বিষয়, এবং জাতি হিসেবে আমরা একসাথে কাজ করে সফল হবো।’ তিনি আরও জানান, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলেই কেবল সেখানে ‘না’ ভোটের সুযোগ থাকবে।