বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্য অ্যাবিগেল বয়েড।
গত ১৩ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সংসদে তিনি একটি ‘নোটিশ অব মোশন’ দাখিল করে নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার দাবি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি বিপজ্জনকভাবে অবনতি হচ্ছে।
অ্যাবিগেল বয়েড তার মোশনে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি চিঠি পাঠিয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তা, চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন—দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। বিদেশে থাকা ভোটারদের ডাকভোট ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও কারচুপিমুক্ত রাখতে সহায়তার কথাও মোশনে উল্লেখ করা হয়।
মোশনে অ্যাবিগেল বয়েড দাবি করেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়ে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, ভিন্নমত দমন করা হয়, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করা হয়—যা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ৪টি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং সবই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত। তার মতে, শেখ হাসিনার পতনের পর তার বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং দায়ীদের বিচারের অভাব আসন্ন নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের পথে বড় বাধা।
তিনি মনে করেন, ২০২৫ সালের ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক জেনারেল ইলেকশন সাপোর্ট (ব্যালট) প্রকল্পে যুক্ত হওয়া—যা ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগ—বাংলাদেশ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ভূমিকা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এ কারণেই তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
নির্বাচনের আগে এমন সমর্থন পেয়ে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারেক রহমান। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
তারেক রহমান ওই পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের মতো আমরাও অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট ও বিবেকসম্মত বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের এই উদ্যোগ বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের প্রতি গভীর দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং মুক্ত ও নির্ভয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সাধারণ মানুষ স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগই শুধু চায়।
‘এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অস্ট্রেলীয় সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান বাংলাদেশের মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। তাদের বার্তা সেই সত্যটিকেই তুলে ধরে, যা লাখো কোটি মানুষ মাসের পর মাস ধরে বলে আসছে—গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ এবং সহিংসতা বা ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত থাকে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও লেখেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরছেন। অস্ট্রেলিয়ার সমাজে তাদের অবদান এবং মাতৃভূমির প্রতি তাদের অটুট সম্পর্ক দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। তাদের দায়িত্বশীল প্রচেষ্টা বাংলাদেশের মানুষের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্ক পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো অস্ট্রেলীয় প্রতিনিধিদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সমর্থন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব সবার। দেশ-দেশান্তরের এই ঐক্য শান্তি, ন্যায় এবং অগ্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।’