কলকাতার ক্যাফেগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই একত্রিত হন। তাঁরা দেশে থাকা কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন। দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এজন্য তারা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
স্ট্রিম ডেস্ক
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বহু নেতা ভারতের কলকাতায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন ক্যাফেতে নিয়মিত বৈঠক করেন এবং অনলাইনে দেশে থাকা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কেউ কেউ দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করছেন। সেখানে তাঁরা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন। এজন্য তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি এসব তথ্য উঠে এসেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্ক্রল ডট ইনে প্রকাশিত দেশটির সাংবাদিক অনন্ত গুপ্তের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। অনন্ত গুপ্ত কথা বলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। তাঁদের কথোপকথন থেকেই বেরিয়ে এসেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কীভাবে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছে।
হাবিবে মিল্লাত স্ক্রলকে জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে যাওয়ার সাত সপ্তাহ পর অক্টোবরে তিনিও কলকাতায় পালিয়ে যান। ওই সাত সপ্তাহ তিনি ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মিল্লাত ২০০৭ সালে স্কটল্যান্ডে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগে (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) যোগ দিয়ে তিনি ২০২৪ পর্যন্ত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন।
মিল্লাত বর্তমানে কলকাতার এক আবাসিক এলাকায় ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন। তাঁর স্ত্রী ভাড়া করেছেন ওই ফ্ল্যাট। সেখানেই স্ক্রলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তাঁর দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আন্তর্জাকিভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি।
মিল্লাতের দাবি, গত এক বছরে অন্তত ৬৩৭ জন আওয়ামী লীগকর্মী গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১১৬ জন সাবেক সংসদ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মিল্লাত জানান, এসব তথ্য অভিযোগ আকারে তিনি কানাডাভিত্তিক ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্নেন্স’ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কে নথিভুক্ত করছেন।
মিল্লাতের লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। মিল্লাতের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় এক হাজার আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন, যাদের বেশিরভাগই কলকাতায় থাকেন।
গত মাসে ব্রিটিশ সংবাদ বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কলকাতায় আওয়ামী লীগ একটি অফিস খুলেছে। এতে ঢাকায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে একে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘স্পষ্ট অবমাননা’ হিসেবে আখ্যা দেয় এবং সেটি ‘অবিলম্বে বন্ধ’ করার দাবি জানায়। কিন্তু জবাবে নয়াদিল্লি ঢাকার এই প্রতিক্রিয়াকে ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করে।
তবে স্ক্রলের প্রতিবেদক জানান, তাঁর সঙ্গে কথা বলা চারজন আওয়ামী লীগ নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। মিল্লাত বলেন, ‘আমরা সামাজিক মানুষ। পাঁচজন যদি আড্ডার জন্য বসি, তাকে অফিস বলা যাবে না।’
স্ক্রলের প্রতিবেদনে বলা হয়, অফিস থাকুক বা না থাকুক, এই নেতারা কলকাতার বিভিন্ন ক্যাফেতে নিয়মিত মিলিত হন। তাঁরা বাংলাদেশে থাকা কর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখেন। এদের কেউ কেউ দিল্লিতেও যান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার পরিকল্পনা সাজাতে।
স্ক্রল কথা বলেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গেও। ঢাকায় হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি সাদ্দাম বর্তমানে কলকাতার বিমানবন্দরের কাছের নিউ টাউনে অবস্থান করছেন। তিনিও নিয়মিত বাংলাদেশের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
সাদ্দাম দাবি করেন, বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাস্তায় অপরাধ ও দুর্নীতি বেড়েছে। আর এই সুযোগেই আওয়ামী লীগ নিয়মিত বিক্ষোভের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে সাদ্দামও একজন। সাদ্দাম স্ক্রলকে বলেন, হাসিনা তাদের বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী। বিজয় বলতে তিনি বোঝান, আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে।
মিল্লাতও একই আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যদি দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তাদের সাংগঠনিক শক্তির কারণে জনগণের ভোটের একটি বড় অংশ তারা পাবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তা করতে পেরেছিল।
তখন দলটির শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার চার বছর পেরিয়েছে। সেসময়ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দিল্লিতে নির্বাসনে ছিলেন। মিল্লাত বলেন, ‘সেই কঠিন সময়েও আমরা ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম।’
তবে বিএনপি ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের তীব্র বিরোধিতা করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার তুষার স্ক্রলকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে সারাদেশে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি মূলত গত বছর হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে তৈরি। এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে দলটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। ডাকসুতে খারাপ ফলাফলের কথা স্বীকার করে তুষার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে মাঠপর্যায়ে আরও শক্তিশালী করা জরুরি।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সংগঠন এবং ভোটব্যাংক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্ক্রলকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বশেষ অবাধ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। এরপর বহু নতুন ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তাদের আনুগত্য স্থায়ীভাবে কোনো দলের প্রতি নেই। তাই আওয়ামী লীগের স্থায়ী ভোটার অনেক কমে গেছে।’
অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরাসরি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি বেশি গুরুত্ব দেন আওয়ামী লীগের সমালোচনায়। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ও দাবি করেন।
রিজভী মনে করিয়ে দেন, বিএনপি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু তখন কখনোই তারা হাসিনার মতো ক্ষমতা ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দখল করেনি। তাঁর মতে, এ কারণেই জনগণের মনোভাব আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে গেছে। ভারতকেও এটি উপলব্ধি করা উচিত।
রিজভী আরও বলেন, ‘ভারতের উচিত নয় আওয়ামী লীগকে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া। এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমি একে হস্তক্ষেপ বলব।’
কঠোর সমালোচনা করলেও রুহুল কবির রিজভী স্ক্রলকে জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তিনি আরও বলেন, তার দল দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে কোনো রাজনৈতিক সুযোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। বরং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো আদিত্য গোদারা শিবমূর্তি স্ক্রলকে বলেন, ভারতে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তবে তাঁর মতে, হাসিনাকে ফেরত পাঠানো বা তার দলকে নিষিদ্ধ করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তা হলে প্রতিবেশী দেশের অন্যান্য ভারতপন্থী নেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
তিনি বলেন, ‘ভারতকে এই বোঝা বহন করতেই হবে। কারণ অতীতে দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলগুলো বহুবার প্রত্যাবর্তন করেছে।’ তাঁর মতে, আওয়ামী লীগও আবার ফিরে আসবে।
তবে শিবমূর্তি স্বীকার করেন, আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন হলেও তা কয়েক বছর সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তিনি যোগ করেন, ‘ভারতের এখন উপলব্ধি হয়েছে যে আগামী নির্বাচনে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বহু নেতা ভারতের কলকাতায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন ক্যাফেতে নিয়মিত বৈঠক করেন এবং অনলাইনে দেশে থাকা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কেউ কেউ দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করছেন। সেখানে তাঁরা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন। এজন্য তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি এসব তথ্য উঠে এসেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্ক্রল ডট ইনে প্রকাশিত দেশটির সাংবাদিক অনন্ত গুপ্তের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। অনন্ত গুপ্ত কথা বলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। তাঁদের কথোপকথন থেকেই বেরিয়ে এসেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কীভাবে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছে।
হাবিবে মিল্লাত স্ক্রলকে জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে যাওয়ার সাত সপ্তাহ পর অক্টোবরে তিনিও কলকাতায় পালিয়ে যান। ওই সাত সপ্তাহ তিনি ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মিল্লাত ২০০৭ সালে স্কটল্যান্ডে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগে (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) যোগ দিয়ে তিনি ২০২৪ পর্যন্ত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন।
মিল্লাত বর্তমানে কলকাতার এক আবাসিক এলাকায় ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন। তাঁর স্ত্রী ভাড়া করেছেন ওই ফ্ল্যাট। সেখানেই স্ক্রলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তাঁর দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আন্তর্জাকিভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি।
মিল্লাতের দাবি, গত এক বছরে অন্তত ৬৩৭ জন আওয়ামী লীগকর্মী গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১১৬ জন সাবেক সংসদ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মিল্লাত জানান, এসব তথ্য অভিযোগ আকারে তিনি কানাডাভিত্তিক ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্নেন্স’ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কে নথিভুক্ত করছেন।
মিল্লাতের লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। মিল্লাতের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় এক হাজার আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন, যাদের বেশিরভাগই কলকাতায় থাকেন।
গত মাসে ব্রিটিশ সংবাদ বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কলকাতায় আওয়ামী লীগ একটি অফিস খুলেছে। এতে ঢাকায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে একে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘স্পষ্ট অবমাননা’ হিসেবে আখ্যা দেয় এবং সেটি ‘অবিলম্বে বন্ধ’ করার দাবি জানায়। কিন্তু জবাবে নয়াদিল্লি ঢাকার এই প্রতিক্রিয়াকে ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করে।
তবে স্ক্রলের প্রতিবেদক জানান, তাঁর সঙ্গে কথা বলা চারজন আওয়ামী লীগ নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। মিল্লাত বলেন, ‘আমরা সামাজিক মানুষ। পাঁচজন যদি আড্ডার জন্য বসি, তাকে অফিস বলা যাবে না।’
স্ক্রলের প্রতিবেদনে বলা হয়, অফিস থাকুক বা না থাকুক, এই নেতারা কলকাতার বিভিন্ন ক্যাফেতে নিয়মিত মিলিত হন। তাঁরা বাংলাদেশে থাকা কর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখেন। এদের কেউ কেউ দিল্লিতেও যান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার পরিকল্পনা সাজাতে।
স্ক্রল কথা বলেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গেও। ঢাকায় হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি সাদ্দাম বর্তমানে কলকাতার বিমানবন্দরের কাছের নিউ টাউনে অবস্থান করছেন। তিনিও নিয়মিত বাংলাদেশের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
সাদ্দাম দাবি করেন, বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাস্তায় অপরাধ ও দুর্নীতি বেড়েছে। আর এই সুযোগেই আওয়ামী লীগ নিয়মিত বিক্ষোভের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে সাদ্দামও একজন। সাদ্দাম স্ক্রলকে বলেন, হাসিনা তাদের বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী। বিজয় বলতে তিনি বোঝান, আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে।
মিল্লাতও একই আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যদি দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তাদের সাংগঠনিক শক্তির কারণে জনগণের ভোটের একটি বড় অংশ তারা পাবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তা করতে পেরেছিল।
তখন দলটির শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার চার বছর পেরিয়েছে। সেসময়ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দিল্লিতে নির্বাসনে ছিলেন। মিল্লাত বলেন, ‘সেই কঠিন সময়েও আমরা ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম।’
তবে বিএনপি ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের তীব্র বিরোধিতা করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার তুষার স্ক্রলকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে সারাদেশে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি মূলত গত বছর হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে তৈরি। এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে দলটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। ডাকসুতে খারাপ ফলাফলের কথা স্বীকার করে তুষার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে মাঠপর্যায়ে আরও শক্তিশালী করা জরুরি।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সংগঠন এবং ভোটব্যাংক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্ক্রলকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বশেষ অবাধ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। এরপর বহু নতুন ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তাদের আনুগত্য স্থায়ীভাবে কোনো দলের প্রতি নেই। তাই আওয়ামী লীগের স্থায়ী ভোটার অনেক কমে গেছে।’
অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরাসরি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি বেশি গুরুত্ব দেন আওয়ামী লীগের সমালোচনায়। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ও দাবি করেন।
রিজভী মনে করিয়ে দেন, বিএনপি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু তখন কখনোই তারা হাসিনার মতো ক্ষমতা ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দখল করেনি। তাঁর মতে, এ কারণেই জনগণের মনোভাব আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে গেছে। ভারতকেও এটি উপলব্ধি করা উচিত।
রিজভী আরও বলেন, ‘ভারতের উচিত নয় আওয়ামী লীগকে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া। এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমি একে হস্তক্ষেপ বলব।’
কঠোর সমালোচনা করলেও রুহুল কবির রিজভী স্ক্রলকে জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তিনি আরও বলেন, তার দল দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে কোনো রাজনৈতিক সুযোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। বরং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো আদিত্য গোদারা শিবমূর্তি স্ক্রলকে বলেন, ভারতে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তবে তাঁর মতে, হাসিনাকে ফেরত পাঠানো বা তার দলকে নিষিদ্ধ করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তা হলে প্রতিবেশী দেশের অন্যান্য ভারতপন্থী নেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
তিনি বলেন, ‘ভারতকে এই বোঝা বহন করতেই হবে। কারণ অতীতে দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলগুলো বহুবার প্রত্যাবর্তন করেছে।’ তাঁর মতে, আওয়ামী লীগও আবার ফিরে আসবে।
তবে শিবমূর্তি স্বীকার করেন, আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন হলেও তা কয়েক বছর সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তিনি যোগ করেন, ‘ভারতের এখন উপলব্ধি হয়েছে যে আগামী নির্বাচনে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। বিশেষ করে দুই ও তিন ফসলি জমিতে নির্মাণ করা যাবে না কোনো স্থাপনা। কৃষি জমি রক্ষায় কঠোর বিধান রেখে ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে।
১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার পর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি রাজনৈতিক সংঘাত নতুন মাত্রা নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর প্রকাশ্যে ডিম ছোড়ার ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্মিলিত ভাবমূর্
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামের আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ও আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেউত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে, এটি ঘনীভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং
৪ ঘণ্টা আগে