leadT1ad

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

সারকোজির কারাদণ্ড অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে কঠোর হয়েছে। আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন রায় এটাই প্রথম। আদালত ত্যাগ করার সময় সারকোজি এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৭
নিকোলাস সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত।

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালতে সারকোজির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি প্রয়াত লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গে একটি দুর্নীতিমূলক চুক্তি করেছিলেন। ২০০৭ সালের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্থ তহবিলের জন্য তিনি ওই চুক্তি করেন।

বিস্ময়করভাবে প্রধান বিচারক নাথালি গাভারিনো বিশেষ ধরনের দণ্ড দেন। যার অর্থ সারকোজি (৭০) আপিল করলেও তার কারাদণ্ড কার্যকর হবে। তাকে কারাগারে যেতেই হবে। তার সাজা শুরু করার তারিখ পরে নির্ধারণ করা হবে। প্রসিকিউটরদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানকে কারাগারে যাওয়ার সময় জানাতে। বিচারক সারকোজিকে ১ লাখ ইউরো জরিমানাও করেন।

সারকোজির কারাদণ্ড অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে কঠোর হয়েছে। আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন রায় এটাই প্রথম। আদালত ত্যাগ করার সময় সারকোজি এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে তা আইনশৃঙ্খলা এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুতর।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁরা যদি আমাকে কারাগারে রাখতেই চান, আমি মাথা উঁচু করে কারাগারে যাব।’

আদালতে সব অভিযোগ অস্বীকার করা সারকোজি বলেন, তিনি আপিল করবেন। তিনি বলেন, তার প্রতি ‘ঘৃণা’ সীমাহীন। তারা ভাষ্য, ‘যারা আমাকে এভাবে ঘৃণা করে, তারা ভাবছে আমাকে অসম্মান করবে। কিন্তু আজ যাকে অসম্মান করা হয়েছে, সে হলো ফ্রান্স, ফ্রান্সের ভাবমূর্তি। আমি নই, বরং ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থাই ফ্রান্সের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

সারকোজিকে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি দুর্নীতি, লিবিয়ার জনতহবিলের অপব্যবহার এবং অবৈধ নির্বাচনী তহবিল এর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন।

প্রসিকিউটররা আদালতে বলেছেন, ২০০৭ সালের নির্বাচনে অবৈধ তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে সারকোজি এবং তার সহকর্মীরা গাদ্দাফি ও লিবিয়ার সঙ্গে একটি দুর্নীতিমূলক চুক্তি করেন। চুক্তির বিনিময়ে লিবিয়ার সরকার কূটনৈতিক, আইনগত এবং ব্যবসায়িক সুবিধা চেয়েছিল। এছাড়াও আশা করা হচ্ছিল সারকোজি গাদ্দাফির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে পুনরুদ্ধার করবেন। গাদ্দাফি ৪১ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন এবং তার শাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

রায়ের পর সারকোজি ও তার স্ত্রী কার্লা ব্রুনি। ছবি: সংগৃহীত।
রায়ের পর সারকোজি ও তার স্ত্রী কার্লা ব্রুনি। ছবি: সংগৃহীত।

প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেন, ২০০৫ সালে সারকোজি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সহকর্মীরা লিবিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলে সারকোজি গাদ্দাফিকে প্যারিসে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানান। তিনি এলিসি প্রাসাদের বাগানে বেদুইন তাঁবু বসিয়েছিলেন। পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম গাদ্দাফিকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে আনেন।

কিন্তু ২০১১ সালে সারকোজি লিবিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় ফ্রান্সকে প্রধান ভুমিকায় রাখেন। এই হামলা বিদ্রোহী সৈন্যদের হাতে গাদ্দাফির পতনে সহায়তা করে। গাদ্দাফি ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন।

লিবিয়ার সঙ্গে নির্বাচনী তহবিলের জন্য গোপন চুক্তির অভিযোগ ছিল সারকোজির সবচেয়ে বড় দুর্নীতির মামলা। সারকোজি ইতিমধ্যে দুটি আলাদা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার লেজিয়ন অফ অনার খেতাব (ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান) কেড়ে নেওয়া হয়।

প্রথম মামলায়, সারকোজি অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা তিনি বৈদ্যুতিক ট্যাগ ব্যবহারসহ তিন মাস কাটান এবং শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান। এই প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক ফরাসি রাষ্ট্রপ্রধানকে বৈদ্যুতিক ট্যাগ ব্যবহার করতে হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায়, ২০১২ সালের নির্বাচনে অবৈধ ব্যয়ের তথ্য লুকানোর কারণে সারকোজিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি উভয় দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম গাদ্দাফিকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে আনেন। ছবি: সংগৃহীত।
পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম গাদ্দাফিকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে আনেন। ছবি: সংগৃহীত।

বৃহস্পতিবার ২০০৭ সালের নির্বাচনী প্রচারণার পরিচালক ও পরে সারকোজির চিফ অফ স্টাফ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়া ক্লোড গেউঁআঁ দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ফৌজদারি ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির দায়ে।

সারকোজির অন্য সহযোগী ব্রিস হর্টেফোউক্স, যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন, ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হন কিন্তু অবৈধ নির্বাচনী তহবিলের অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।

আরেক সাবেক মন্ত্রী এরিক ওয়োর্থ, যিনি ২০০৭ সালে সারকোজির নির্বাচনী তহবিল প্রধান ছিলেন এবং পরে এমমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দলে যোগ দিয়েছেন, নির্দোষ ঘোষিত হন।

এদিকে এই সপ্তাহে হঠাৎ করেই ফরাসি-লেবানিজ ব্যবসায়ী জিয়াদ তাকিদ্দিন মারা যান। ২০১৬ সালে তিনি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্টকে বলেছিলেন, তিনি গাদ্দাফির কাছ থেকে সারকোজির সহকর্মীদের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিলেন। রায়ের দুই দিন আগে তিনি বেইরুতে হৃদরোগে মারা যান।

২০২০ সালে তাকিদ্দিন তার স্বীকারোক্তি হঠাৎ প্রত্যাহার করেন। অভিযোগ ওঠে যে সারকোজি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন। তবে তারা সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তাকিদ্দিন তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারকেও আবার প্রত্যাখ্যান করেন।

তার প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি আলাদা মামলা হয়েছে। সারকোজি, তার স্ত্রী কার্লা ব্রুনি-সারকোজি এবং আরও কয়েকজনকে সাক্ষীর ওপর প্রভাব বিস্তারের সন্দেহে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু তারা সবাই দোষ অস্বীকার করছেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত