leadT1ad

দুর্গাপূজায় কি ভাসতে চলেছে কলকাতা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ২১
ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কলকাতার পথঘাট। স্ট্রিম ছবি

গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে টানা ভারী বর্ষণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বেনিয়াপুকুর, কালিকাপুর, নেতাজি নগর, গড়িয়াহাট ও ইকবালপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসস্ট্যান্ড এবং বিপণি-বিতান পানিতে ডুবে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। একাধিক এলাকায় ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিচতলা প্লাবিত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও উত্তর কলকাতার কিছু অংশে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এখন পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

কলকাতার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহরের রাস্তায় চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দমদমের শুভাঞ্জন অধিকারী স্ট্রিমকে জানান, ‘বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় নেই। জরুরি সেবাগুলোও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ভোগান্তিতে আছি।’

কলকাতার রাস্তা ডুবে গেছে ভারী বৃষ্টিতে। স্ট্রিম ছবি
কলকাতার রাস্তা ডুবে গেছে ভারী বৃষ্টিতে। স্ট্রিম ছবি

বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় জোড়া নিম্নচাপের কারণে আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলকাতা পৌরসভা ও রাজ্য প্রশাসন জরুরি প্রস্তুতি নিয়েছে এবং বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অতিরিক্ত বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনী ও ত্রাণকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সংকটে প্রতিমা শিল্পীরা

এমন দুর্যোগের মধ্যে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আনুমানিক তিন হাজারের বেশি প্রতিমা মণ্ডপে সরবরাহের কাজে ব্যস্ত কলকাতার কুমারটুলির শিল্পীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ভারী বর্ষণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিমা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সৌরভ দে স্ট্রিমকে জানান, ‘প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় আনঅর্গানাইজড সেক্টরগুলো। এবারও প্রতিমা শিল্পীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে। দুদিনের মধ্যেই পুজোর পরিক্রমা শুরু হবে, কিন্তু সময়মতো প্রতিমা পৌঁছানোর অবস্থা নেই। জল না নামা পর্যন্ত মানুষও মণ্ডপে ভিড় করবেন না। এতে পুজোকে কেন্দ্র করে ছোট ব্যবসায়ীরাও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। এতদিনের পরিশ্রমে বানানো প্রতিমাগুলো এখন বিপদের মুখে।’

কুমারটুলীর এক শিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘এবারের পুজোতে আমাদের ব্যবসায়িক ভরাডুবি নিশ্চিত। কাস্টমারদের বলেছি, ডেলিভারির জন্য চাপ না দিতে। আমাদের আর কিছু করার নেই।’

ডুবে গেছে রাস্তা, দুর্ভোগে পড়েছেন কলকাতার মানুষ। স্ট্রিম ছবি
ডুবে গেছে রাস্তা, দুর্ভোগে পড়েছেন কলকাতার মানুষ। স্ট্রিম ছবি

কী বলছে আবহাওয়া দপ্তর

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজোর প্রতিটি দিনেই বৃষ্টি হতে পারে। পুজোর শুরুতেই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ মেঘলা থাকবে এবং প্রায় পুজোজুড়েই বৃষ্টিপাত চলবে। দপ্তর জানিয়েছে, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর (পঞ্চমী থেকে সপ্তমী) পর্যন্ত রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমীর দিন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। নবমী ও দশমীতে প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা বেশি, কারণ পুজোর মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণাবর্তের শক্তি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর ফের নতুন ঘূর্ণাবর্তও তৈরি হতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় চতুর্থী ও নবমীর রাত থেকে ভারী বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে উত্তরবঙ্গের জন্যও জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। দার্জিলিংসহ পার্বত্য পাঁচ জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে, সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা, আর দার্জিলিং, কালিম্পং ও কোচবিহারে ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে কলকাতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টানা বৃষ্টির দুর্যোগ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা। দুর্গাপূজা যত এগিয়ে আসছে, শহরের শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগও তত বাড়ছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত