.png)

খোরশেদ আলম

জীবনের অর্থ অনুসন্ধান চিন্তাশীল মানুষের একটি স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা। কেউ তা সন্ধান করতে পেরেছে, কেউ চেষ্টা করে গোটা জীবনই পার করেছে। আবার কেউ মাঝপথে হাল ছেড়ে দিয়েছে। জীবন আপাত মধুর হলেও নেতিবাচকতা তার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। এই নেতি বা শূন্যতার বোধ অবশ্য বাস্তবতা থেকেই আসে। পৃথিবী স্বর্গের অমরাবতী নয়, জটিল বাস্তবতা তাকে নারকীয় করে তোলে। যুদ্ধ, হিংসা আর অমানবিকতার মধ্যে মাধুর্যের প্রতীক্ষা সত্যিই কঠিন। যদিও এই কঠিনের সাধনায় আলবেয়ার কামু জয়ী হয়েছেন, আশাবাদী জীবনদৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখানেই কামু অনন্য, যুগের পরিস্থিতিকে তিনি ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
ফরাসি উপনিবেশ আলজেরিয়ায় জন্মানো (১৯১৩–১৯৬০) এই মানুষটির শৈশব কেটেছে কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে। হয়তো সেটাই তাঁকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। ক্রমে বিশ শতকের ইউরোপীয় সাহিত্য ও দর্শনে কামু এমন একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন, যিনি সাহিত্য, দর্শন ও নৈতিক চিন্তাকে বিমিশ্রভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যতিক্রমী দৃষ্টিতে দর্শন ও সাহিত্যের সেতুবন্ধনে তিনি গড়ে তুলেছেন এক মোহনীয় রচনাশৈলী। মানব অস্তিত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, বিদ্রোহ, নৈতিকতা প্রভৃতি সেখানে মিলেমিশে একাকার। অত্যুক্তি নয় যে, কামুর গদ্যের সরলতা আসলে তাঁর দার্শনিক সততারই একটি রূপ।
কালের সমূহ বিপর্যয়ের মধ্য থেকেও কামুর সাহিত্য আশার নদীতে ভাসানো ভেলা। তিনি দেখিয়েছেন যে, কিছু না পেলেও জীবন তার অন্তর্গত সৌন্দর্য হারায় না। অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও মানুষ আলো সৃষ্টি করতে পারে। তিনি কোনো ধর্মপ্রচারক নন, নন কোনো রক্ষাকর্তাও। তবে তাঁর দর্শন চরম অর্থহীনতার মধ্যেও ভালোবাসা, সততা ও সাহসের পরমার্থ অন্বেষণ করে। কামুর কাছে মানব অস্তিত্ব অনন্য সত্য আলোর প্রভায় চিহ্নিত। তিনি জানতেন, জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকলে নির্মম সময়কে অতিক্রম করা যায়। এ জন্য অযৌক্তিকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ নয়। তার চেয়ে বিদ্রোহ, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে মর্যাদা ও মানবতাবাদের চূড়া স্পর্শ করা যায়। দুটো বিশ্বযুদ্ধ, উপনিবেশ, রাজনৈতিক চরমপন্থা, মানবতার অবমাননা এসবের মধ্য থেকে উত্তর আফ্রিকার আলজেরীয় তরুণ লেখক কামুর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল—‘আমি বিদ্রোহ করি, তাই আমি আছি।’
দর্শন ও সাহিত্যের মধ্যবর্তী এক ত্রিশঙ্কু অবস্থান সত্ত্বেও কামু নিজেকে কখনো ‘অস্তিত্ববাদী’ বলতে চাননি। দ্য স্ট্রেঞ্জার (১৯৪২), দ্য মিথ অব সিসিফাস (১৯৪২), দ্য প্লেগ (১৯৪৭) ও দ্য রেবেল (১৯৫১)-এর মতো রচনাগুলো তার প্রমাণ। তাঁর দর্শনকে অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ ব্যতিরেকে ব্যাখ্যা করার উপায় নেই। কামু এক সময় জাঁ পল সার্ত্রের মতো করে চিন্তা করতেন। একসময় নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন। সার্ত্র যেখানে বলেছেন, “existence precedes essence”, কামু সেখানে ‘সারবস্তু’ বা সারমর্ম খোঁজার চেষ্টাকে অযৌক্তিক বলে রায় দিয়েছেন। তিনি নিজেকে ‘অস্তিত্ববাদী’ দাবি না করে ‘অ্যাবসার্ডিস্ট’ বলতে চেয়েছেন। তাঁর মানবতাবাদে স্বপ্ন নির্ভরতার বদলে স্থান পেয়েছে মানুষের বেদনার্ত মর্যাদার সংগ্রাম। সেই ভাবনায় কামু যেন দস্তয়েভস্কির চিন্তার সঙ্গে তুল্যমূল্যে বিচার্য। দস্তয়েভস্কির দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ-এর ইভান বলে, ‘ইফ দ্য গড ইজ ডেড, এভরিথিং পারমিটেড’; অন্যদিকে কামু বলেন, ‘ইভেন ইফ গড ইজ দেড, নট এভ্রিথিং ইজ পারমিটেড।’
আলবেয়ার কামুর দর্শনের কেন্দ্রভূমি তৈরি হয়েছে ‘অ্যাবসার্ডিটি’ বা অযৌক্তিকতা দিয়ে। অথচ মানুষ জীবনের মানে খুঁজতে চায় সবসময়। শৃঙ্খলা দিয়ে সে পৃথিবীকে বোঝারও চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্বজগৎ তো তার প্রতি চরম উদাসীন, গভীর শূন্যতায় নীরব। এই দ্বৈত অনুভব তার মধ্যে জন্ম দেয় আন্তসংঘর্ষ। দ্য মিথ অব সিসিফাসে এই জীবনার্থের খোঁজ এবং নঞার্থক বৈপরীত্যময় অবস্থারই প্রতিচ্ছায়া। গ্রিক পুরাণের সিসিফাস দেবতাদের শাস্তিস্বরূপ একটি বিশাল পাথর বারবার পাহাড়ের চূড়ায় ঠেলে ওঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পুনরায় নিচে গড়িয়ে পড়ে। অনেকের কাছেই সিসিফাসের অবস্থাটা চরম হতাশাজনক। কিন্তু গভীর নৈরাশ্যের মধ্যেও কামু বলেন, ‘উই মাস্ট অমাজিন সিসিফাস হ্যাপি।’ তাঁর মতে, সিসিফাস যেন এক অনন্ত সৌন্দর্যের বলেই বারবার পাথর ঠেলে। সিসিফাসের এই অন্তহীন শ্রমই মানুষের জীবনের বেঁচে থাকার প্রতীক হয়ে ওঠে।
কামুর লেখায় একই প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসে—পৃথিবীতে স্থায়ী অর্থ বলে কিছু নেই, তবুও আমরা কেন বাঁচি? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে—আত্মহত্যা করা উচিত কি না? কামু মনে করেন, আত্মহত্যা করা উচিত নয়, অথচ সার্ত্রীয় অস্তিত্ববাদ প্রায়ই আত্মহত্যায় নিমজ্জিত। কামু জীবনের অর্থহীনতাকে স্বীকার করেও বাঁচতে চেয়েছেন। হয়ত এই ‘অর্থহীনতার’ নাম তিনি দিয়েছেন ‘অ্যাবসার্ড’। শুধু তাই নয়, কামুর চিন্তা আরও ভিন্নপথে অগ্রসর হয়েছে। তাঁর মতে, এই অর্থহীনতা অতিক্রমের দুটো পথ—আত্মহত্যা অথবা বিদ্রোহ। তবে তিনি আত্মহত্যাকে অস্বীকার করে নৈতিক বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচতে শেখার কথা বলেছেন। সিসিফাস যেমন বারবার ব্যর্থ হয়েও আবার কাজ শুরু করে, তেমনি জীবন ‘অর্থহীন’ জেনেও মানুষকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়।
কামুর সাহিত্যের ভাষা সত্যিকার অর্থেই সরল, নির্মোহ ও দার্শনিকভাবে পরিশ্রুত। তাঁর গদ্যে গ্রিক ট্র্যাজেডির নান্দনিকতা, ফরাসি বুদ্ধিবাদ আর আলজেরীয় আশার আলো মিলেমিশে একাকার। দ্য স্ট্রেঞ্জার-এর সূচনাপর্বে উদ্ধৃত, ‘ মাদার ডায়েড টুডে। অর মেবি ইয়েসটারডে, আই দোন্ট নো।’ চরম নির্লিপ্ত, কিন্তু অস্তিত্বের বোধে টইটম্বুর এই হিমশীতল বাক্যটি প্রচলিত আবেগের পরিপন্থী। মানুষ যে পরিস্থিতিতে কান্না, বেদনা বা শোক অনুভব করে, নায়ক মারসো সেখানে নির্বিকার। এখানেই সে নৈতিক মানবতাবাদের ধর্মে উজ্জীবিত। প্রেমিকার কথায় উদাসীন, এমনকি এক আরবকে হত্যা করার পরেও সে অনুশোচনাহীন। তার এই আচরণ সমাজের চোখে নিন্দনীয়, কিন্তু কামুর কাছে মারসো যেন এক ‘অ্যাবসার্ড হিরো’। সে জানে, জীবনের কোনো গভীর অর্থ নেই, তবু তার পক্ষে মিথ্যা মুখোশ পরে বাঁচার ইচ্ছে নেই। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখেও পৃথিবীর কোমল উদাসীনতাকে সে প্রাণভরে গ্রহণ করে। মারসো যেন সমাজের ‘নৈতিক কোড’ বা নিয়মের বাইরে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে জীবনের অর্থহীনতা যাপনে সে নিরাসক্ত কিন্তু সাহসী। এক গভীর ঔদাসীন্য যেন কামুর দার্শনিক মানবতাবাদের কেন্দ্রবিন্দু। আদালতে মারসোর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। আমাদের কাছে স্পষ্ট—সমাজ মারসোর অপরাধের জন্য ততটা উদ্বিগ্ন নয়, যতটা তার ‘সংবেদনহীন’ আচরণের জন্য ক্রোধান্বিত। কিন্তু তার এই ‘অসংবেদনশীল’ আচরণের কার্যকারণ কেউই জিজ্ঞাসা করে না। সমাজে সবার মধ্যেই রয়েছে এক চরম সংবেদনহীন বোধ। এসব কারণেই মারসো অ্যাবসার্ড মানব কিন্তু সে সত্যিকারের মানুষ। কামু বলেন, “Meursault dies for the truth he refuses to lie about.” লেখক বুঝিয়ে দেন, জীবনের অর্থহীনতা সত্ত্বেও সত্যনিষ্ঠ থাকাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব।
আলবেয়ার কামু দ্য প্লেগ উপন্যাসটি লেখেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আলজেরিয়ার ওরান নামক একটি শহরে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হলে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ পালিয়ে যায়, কেউ প্রবেশ করে মৃত্যুর গহ্বরে, কেউ হয়ে পড়ে ভীষণ অসহায়। কিন্তু কয়েকজন সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়—তারা লড়বে, মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ভীষণ বিপদ জেনেও, তারা যতটুকু সম্ভব মানুষকে সাহায্য করে। এই উপন্যাসটি শুধু অনিরাময়যোগ্য ব্যাধির গল্প হয়ে থাকে না, বরং ফ্যাসিবাদ ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে। লেখকের ভাবনা—অন্ধকার যতই গভীর হোক, তার মধ্যে মানুষের আশার প্রদীপ নেভে না। দ্য প্লেগ-এ কামু মহামারির মধ্যেও মানবিক অসহায়ত্ব, নৈতিক দায়িত্ব ও প্রতিরোধের প্রশ্ন তুলেছেন। এখানে ‘অ্যাবসার্ড’-এর সঙ্গে মানবিক সংহতি, দ্রোহ কিংবা প্রতিরোধ সমীকৃত হয়েছে। ড. রিও চরিত্রের মাধ্যমে কামু তা স্পষ্ট করেছেন। জীবনের সমূহ বিপর্যয় ও অর্থহীনতা জেনেও সে অন্যের যন্ত্রণার পাশে দাঁড়াতে পেরেছে। প্লেগ তাই নিছক কোনো রোগ নয়, তা হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপীয় বাস্তবতার রূপক। সেখানে মানবতার বোধ হয়ে ওঠে মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা। যুদ্ধ, নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিক নিস্পৃহতার মধ্যেও চিকিৎসক বার্নার্ড রিও ঐকান্তিকভাবে অন্যের সমব্যথী। এই সাধারণ মানবিকতাই আলবেয়ার কামুর দর্শনকে অত্যন্ত উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এই ভাবনার ধারাবাহিকতা থেকেই উঠে আসে দ্য রেবেল-এর মতো উপন্যাস। কামু আত্মবিধ্বংসী নৈরাশ্যবাদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে চান। তিনি তাদেরকে নৈতিক বিদ্রোহের আহ্বান জানান। তাঁর ভাষ্যে, “আই রেবেল—দেয়ারফর উই এক্সিস্ট।’ এই বিদ্রোহ ধ্বংস নয়; বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানব মর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের ঘোষণা। অন্যদিকে লেখক অমানবিক সহিংসতার সমালোচক হয়ে ওঠেন। তিনি ঐতিহাসিক সহিংসতার বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। কামুর মতে, সত্যিকারের বিপ্লব তখনই ন্যায়সম্মত, যখন তা মানবিক সীমার মধ্যে থাকে। তাকে অবশ্যম্ভাবীরূপে জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়। কামুর বিদ্রোহী মানবের অবয়ব তাই নৈতিক চিন্তাপাশে আবদ্ধ, যেখানে ‘অন্যের স্বাধীনতা’ মানে নিজের স্বাধীনতা। কামুর বিদ্রোহ তাই বিধ্বংসী বাস্তবতা নয়। তাঁর কাছে বিদ্রোহ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক অসীম ক্ষমতা। যেটি মানবিক চৈতন্যের ভেতর গলে আসে। রাষ্ট্রিক ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে যে মানুষ দাঁড়ায়, কামুর কাছে সেই হচ্ছে আসল মানুষ। কারণ সে শুধু নিজের নয়, সকল মানুষের মর্যাদার পক্ষ অবলম্বন করে। এমনকি বিপ্লবও যদি অমানবিক হয়ে যায়, তবে তা অন্যায়ের মতোই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তাই তাঁর কাছে বিদ্রোহ মানে নৈতিক সীমা রক্ষা করে আবশ্যিকভাবেই মানবতার পক্ষে থাকা। রাশিয়ার বিপ্লব, নৈরাজ্যবাদ ও নাৎসিবাদের ইতিহাস মাথায় রেখে তিনি ভেবেছেন—মানুষ নিশ্চয়ই অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে।
পরিশেষে বলা যায়, কামুর শিল্পকর্ম এমন এক নৈতিকতা, যা শুধু ‘অযৌক্তিকতা’ বা ‘অ্যাবসার্ডিটি’র প্রতিবেদন নয়। তাকে এড়িয়ে যাওয়াও নয়, বরং সাংঘাতিকভাবে তার মুখোমুখি হওয়া। আলবেয়ার কামুর চিন্তা আজকের পৃথিবীতে খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে প্রতিনিয়ত নৈতিক বিভ্রান্তি, যুদ্ধ ও অস্তিত্বের অনিশ্চয়তার প্রতিধ্বনি। সাম্প্রতিক সংকট, সহিংসতা কিংবা শূন্যতার মধ্যে কামুর অ্যাবসার্ড ‘নৈতিক মানব’ হওয়ার ধারণা যেন নতুন অর্থে অভিষিক্ত হতে পারে।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জীবনের অর্থ অনুসন্ধান চিন্তাশীল মানুষের একটি স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা। কেউ তা সন্ধান করতে পেরেছে, কেউ চেষ্টা করে গোটা জীবনই পার করেছে। আবার কেউ মাঝপথে হাল ছেড়ে দিয়েছে। জীবন আপাত মধুর হলেও নেতিবাচকতা তার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। এই নেতি বা শূন্যতার বোধ অবশ্য বাস্তবতা থেকেই আসে। পৃথিবী স্বর্গের অমরাবতী নয়, জটিল বাস্তবতা তাকে নারকীয় করে তোলে। যুদ্ধ, হিংসা আর অমানবিকতার মধ্যে মাধুর্যের প্রতীক্ষা সত্যিই কঠিন। যদিও এই কঠিনের সাধনায় আলবেয়ার কামু জয়ী হয়েছেন, আশাবাদী জীবনদৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখানেই কামু অনন্য, যুগের পরিস্থিতিকে তিনি ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
ফরাসি উপনিবেশ আলজেরিয়ায় জন্মানো (১৯১৩–১৯৬০) এই মানুষটির শৈশব কেটেছে কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে। হয়তো সেটাই তাঁকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। ক্রমে বিশ শতকের ইউরোপীয় সাহিত্য ও দর্শনে কামু এমন একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন, যিনি সাহিত্য, দর্শন ও নৈতিক চিন্তাকে বিমিশ্রভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যতিক্রমী দৃষ্টিতে দর্শন ও সাহিত্যের সেতুবন্ধনে তিনি গড়ে তুলেছেন এক মোহনীয় রচনাশৈলী। মানব অস্তিত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, বিদ্রোহ, নৈতিকতা প্রভৃতি সেখানে মিলেমিশে একাকার। অত্যুক্তি নয় যে, কামুর গদ্যের সরলতা আসলে তাঁর দার্শনিক সততারই একটি রূপ।
কালের সমূহ বিপর্যয়ের মধ্য থেকেও কামুর সাহিত্য আশার নদীতে ভাসানো ভেলা। তিনি দেখিয়েছেন যে, কিছু না পেলেও জীবন তার অন্তর্গত সৌন্দর্য হারায় না। অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও মানুষ আলো সৃষ্টি করতে পারে। তিনি কোনো ধর্মপ্রচারক নন, নন কোনো রক্ষাকর্তাও। তবে তাঁর দর্শন চরম অর্থহীনতার মধ্যেও ভালোবাসা, সততা ও সাহসের পরমার্থ অন্বেষণ করে। কামুর কাছে মানব অস্তিত্ব অনন্য সত্য আলোর প্রভায় চিহ্নিত। তিনি জানতেন, জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকলে নির্মম সময়কে অতিক্রম করা যায়। এ জন্য অযৌক্তিকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ নয়। তার চেয়ে বিদ্রোহ, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে মর্যাদা ও মানবতাবাদের চূড়া স্পর্শ করা যায়। দুটো বিশ্বযুদ্ধ, উপনিবেশ, রাজনৈতিক চরমপন্থা, মানবতার অবমাননা এসবের মধ্য থেকে উত্তর আফ্রিকার আলজেরীয় তরুণ লেখক কামুর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল—‘আমি বিদ্রোহ করি, তাই আমি আছি।’
দর্শন ও সাহিত্যের মধ্যবর্তী এক ত্রিশঙ্কু অবস্থান সত্ত্বেও কামু নিজেকে কখনো ‘অস্তিত্ববাদী’ বলতে চাননি। দ্য স্ট্রেঞ্জার (১৯৪২), দ্য মিথ অব সিসিফাস (১৯৪২), দ্য প্লেগ (১৯৪৭) ও দ্য রেবেল (১৯৫১)-এর মতো রচনাগুলো তার প্রমাণ। তাঁর দর্শনকে অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ ব্যতিরেকে ব্যাখ্যা করার উপায় নেই। কামু এক সময় জাঁ পল সার্ত্রের মতো করে চিন্তা করতেন। একসময় নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন। সার্ত্র যেখানে বলেছেন, “existence precedes essence”, কামু সেখানে ‘সারবস্তু’ বা সারমর্ম খোঁজার চেষ্টাকে অযৌক্তিক বলে রায় দিয়েছেন। তিনি নিজেকে ‘অস্তিত্ববাদী’ দাবি না করে ‘অ্যাবসার্ডিস্ট’ বলতে চেয়েছেন। তাঁর মানবতাবাদে স্বপ্ন নির্ভরতার বদলে স্থান পেয়েছে মানুষের বেদনার্ত মর্যাদার সংগ্রাম। সেই ভাবনায় কামু যেন দস্তয়েভস্কির চিন্তার সঙ্গে তুল্যমূল্যে বিচার্য। দস্তয়েভস্কির দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ-এর ইভান বলে, ‘ইফ দ্য গড ইজ ডেড, এভরিথিং পারমিটেড’; অন্যদিকে কামু বলেন, ‘ইভেন ইফ গড ইজ দেড, নট এভ্রিথিং ইজ পারমিটেড।’
আলবেয়ার কামুর দর্শনের কেন্দ্রভূমি তৈরি হয়েছে ‘অ্যাবসার্ডিটি’ বা অযৌক্তিকতা দিয়ে। অথচ মানুষ জীবনের মানে খুঁজতে চায় সবসময়। শৃঙ্খলা দিয়ে সে পৃথিবীকে বোঝারও চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্বজগৎ তো তার প্রতি চরম উদাসীন, গভীর শূন্যতায় নীরব। এই দ্বৈত অনুভব তার মধ্যে জন্ম দেয় আন্তসংঘর্ষ। দ্য মিথ অব সিসিফাসে এই জীবনার্থের খোঁজ এবং নঞার্থক বৈপরীত্যময় অবস্থারই প্রতিচ্ছায়া। গ্রিক পুরাণের সিসিফাস দেবতাদের শাস্তিস্বরূপ একটি বিশাল পাথর বারবার পাহাড়ের চূড়ায় ঠেলে ওঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পুনরায় নিচে গড়িয়ে পড়ে। অনেকের কাছেই সিসিফাসের অবস্থাটা চরম হতাশাজনক। কিন্তু গভীর নৈরাশ্যের মধ্যেও কামু বলেন, ‘উই মাস্ট অমাজিন সিসিফাস হ্যাপি।’ তাঁর মতে, সিসিফাস যেন এক অনন্ত সৌন্দর্যের বলেই বারবার পাথর ঠেলে। সিসিফাসের এই অন্তহীন শ্রমই মানুষের জীবনের বেঁচে থাকার প্রতীক হয়ে ওঠে।
কামুর লেখায় একই প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসে—পৃথিবীতে স্থায়ী অর্থ বলে কিছু নেই, তবুও আমরা কেন বাঁচি? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে—আত্মহত্যা করা উচিত কি না? কামু মনে করেন, আত্মহত্যা করা উচিত নয়, অথচ সার্ত্রীয় অস্তিত্ববাদ প্রায়ই আত্মহত্যায় নিমজ্জিত। কামু জীবনের অর্থহীনতাকে স্বীকার করেও বাঁচতে চেয়েছেন। হয়ত এই ‘অর্থহীনতার’ নাম তিনি দিয়েছেন ‘অ্যাবসার্ড’। শুধু তাই নয়, কামুর চিন্তা আরও ভিন্নপথে অগ্রসর হয়েছে। তাঁর মতে, এই অর্থহীনতা অতিক্রমের দুটো পথ—আত্মহত্যা অথবা বিদ্রোহ। তবে তিনি আত্মহত্যাকে অস্বীকার করে নৈতিক বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচতে শেখার কথা বলেছেন। সিসিফাস যেমন বারবার ব্যর্থ হয়েও আবার কাজ শুরু করে, তেমনি জীবন ‘অর্থহীন’ জেনেও মানুষকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়।
কামুর সাহিত্যের ভাষা সত্যিকার অর্থেই সরল, নির্মোহ ও দার্শনিকভাবে পরিশ্রুত। তাঁর গদ্যে গ্রিক ট্র্যাজেডির নান্দনিকতা, ফরাসি বুদ্ধিবাদ আর আলজেরীয় আশার আলো মিলেমিশে একাকার। দ্য স্ট্রেঞ্জার-এর সূচনাপর্বে উদ্ধৃত, ‘ মাদার ডায়েড টুডে। অর মেবি ইয়েসটারডে, আই দোন্ট নো।’ চরম নির্লিপ্ত, কিন্তু অস্তিত্বের বোধে টইটম্বুর এই হিমশীতল বাক্যটি প্রচলিত আবেগের পরিপন্থী। মানুষ যে পরিস্থিতিতে কান্না, বেদনা বা শোক অনুভব করে, নায়ক মারসো সেখানে নির্বিকার। এখানেই সে নৈতিক মানবতাবাদের ধর্মে উজ্জীবিত। প্রেমিকার কথায় উদাসীন, এমনকি এক আরবকে হত্যা করার পরেও সে অনুশোচনাহীন। তার এই আচরণ সমাজের চোখে নিন্দনীয়, কিন্তু কামুর কাছে মারসো যেন এক ‘অ্যাবসার্ড হিরো’। সে জানে, জীবনের কোনো গভীর অর্থ নেই, তবু তার পক্ষে মিথ্যা মুখোশ পরে বাঁচার ইচ্ছে নেই। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখেও পৃথিবীর কোমল উদাসীনতাকে সে প্রাণভরে গ্রহণ করে। মারসো যেন সমাজের ‘নৈতিক কোড’ বা নিয়মের বাইরে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে জীবনের অর্থহীনতা যাপনে সে নিরাসক্ত কিন্তু সাহসী। এক গভীর ঔদাসীন্য যেন কামুর দার্শনিক মানবতাবাদের কেন্দ্রবিন্দু। আদালতে মারসোর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। আমাদের কাছে স্পষ্ট—সমাজ মারসোর অপরাধের জন্য ততটা উদ্বিগ্ন নয়, যতটা তার ‘সংবেদনহীন’ আচরণের জন্য ক্রোধান্বিত। কিন্তু তার এই ‘অসংবেদনশীল’ আচরণের কার্যকারণ কেউই জিজ্ঞাসা করে না। সমাজে সবার মধ্যেই রয়েছে এক চরম সংবেদনহীন বোধ। এসব কারণেই মারসো অ্যাবসার্ড মানব কিন্তু সে সত্যিকারের মানুষ। কামু বলেন, “Meursault dies for the truth he refuses to lie about.” লেখক বুঝিয়ে দেন, জীবনের অর্থহীনতা সত্ত্বেও সত্যনিষ্ঠ থাকাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব।
আলবেয়ার কামু দ্য প্লেগ উপন্যাসটি লেখেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আলজেরিয়ার ওরান নামক একটি শহরে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হলে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ পালিয়ে যায়, কেউ প্রবেশ করে মৃত্যুর গহ্বরে, কেউ হয়ে পড়ে ভীষণ অসহায়। কিন্তু কয়েকজন সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়—তারা লড়বে, মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ভীষণ বিপদ জেনেও, তারা যতটুকু সম্ভব মানুষকে সাহায্য করে। এই উপন্যাসটি শুধু অনিরাময়যোগ্য ব্যাধির গল্প হয়ে থাকে না, বরং ফ্যাসিবাদ ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে। লেখকের ভাবনা—অন্ধকার যতই গভীর হোক, তার মধ্যে মানুষের আশার প্রদীপ নেভে না। দ্য প্লেগ-এ কামু মহামারির মধ্যেও মানবিক অসহায়ত্ব, নৈতিক দায়িত্ব ও প্রতিরোধের প্রশ্ন তুলেছেন। এখানে ‘অ্যাবসার্ড’-এর সঙ্গে মানবিক সংহতি, দ্রোহ কিংবা প্রতিরোধ সমীকৃত হয়েছে। ড. রিও চরিত্রের মাধ্যমে কামু তা স্পষ্ট করেছেন। জীবনের সমূহ বিপর্যয় ও অর্থহীনতা জেনেও সে অন্যের যন্ত্রণার পাশে দাঁড়াতে পেরেছে। প্লেগ তাই নিছক কোনো রোগ নয়, তা হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপীয় বাস্তবতার রূপক। সেখানে মানবতার বোধ হয়ে ওঠে মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা। যুদ্ধ, নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিক নিস্পৃহতার মধ্যেও চিকিৎসক বার্নার্ড রিও ঐকান্তিকভাবে অন্যের সমব্যথী। এই সাধারণ মানবিকতাই আলবেয়ার কামুর দর্শনকে অত্যন্ত উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এই ভাবনার ধারাবাহিকতা থেকেই উঠে আসে দ্য রেবেল-এর মতো উপন্যাস। কামু আত্মবিধ্বংসী নৈরাশ্যবাদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে চান। তিনি তাদেরকে নৈতিক বিদ্রোহের আহ্বান জানান। তাঁর ভাষ্যে, “আই রেবেল—দেয়ারফর উই এক্সিস্ট।’ এই বিদ্রোহ ধ্বংস নয়; বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানব মর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের ঘোষণা। অন্যদিকে লেখক অমানবিক সহিংসতার সমালোচক হয়ে ওঠেন। তিনি ঐতিহাসিক সহিংসতার বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। কামুর মতে, সত্যিকারের বিপ্লব তখনই ন্যায়সম্মত, যখন তা মানবিক সীমার মধ্যে থাকে। তাকে অবশ্যম্ভাবীরূপে জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়। কামুর বিদ্রোহী মানবের অবয়ব তাই নৈতিক চিন্তাপাশে আবদ্ধ, যেখানে ‘অন্যের স্বাধীনতা’ মানে নিজের স্বাধীনতা। কামুর বিদ্রোহ তাই বিধ্বংসী বাস্তবতা নয়। তাঁর কাছে বিদ্রোহ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক অসীম ক্ষমতা। যেটি মানবিক চৈতন্যের ভেতর গলে আসে। রাষ্ট্রিক ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে যে মানুষ দাঁড়ায়, কামুর কাছে সেই হচ্ছে আসল মানুষ। কারণ সে শুধু নিজের নয়, সকল মানুষের মর্যাদার পক্ষ অবলম্বন করে। এমনকি বিপ্লবও যদি অমানবিক হয়ে যায়, তবে তা অন্যায়ের মতোই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তাই তাঁর কাছে বিদ্রোহ মানে নৈতিক সীমা রক্ষা করে আবশ্যিকভাবেই মানবতার পক্ষে থাকা। রাশিয়ার বিপ্লব, নৈরাজ্যবাদ ও নাৎসিবাদের ইতিহাস মাথায় রেখে তিনি ভেবেছেন—মানুষ নিশ্চয়ই অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে।
পরিশেষে বলা যায়, কামুর শিল্পকর্ম এমন এক নৈতিকতা, যা শুধু ‘অযৌক্তিকতা’ বা ‘অ্যাবসার্ডিটি’র প্রতিবেদন নয়। তাকে এড়িয়ে যাওয়াও নয়, বরং সাংঘাতিকভাবে তার মুখোমুখি হওয়া। আলবেয়ার কামুর চিন্তা আজকের পৃথিবীতে খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে প্রতিনিয়ত নৈতিক বিভ্রান্তি, যুদ্ধ ও অস্তিত্বের অনিশ্চয়তার প্রতিধ্বনি। সাম্প্রতিক সংকট, সহিংসতা কিংবা শূন্যতার মধ্যে কামুর অ্যাবসার্ড ‘নৈতিক মানব’ হওয়ার ধারণা যেন নতুন অর্থে অভিষিক্ত হতে পারে।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
.png)

মুক্তিযুদ্ধের একজন কিংবদন্তী সেক্টর কমান্ডার হয়েও ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই সামরিক আদালতে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি কর্নেল তাহের। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নিঃসঙ্কচিত্তের বীর, বিপ্লবী ও ট্র্যাজিক হিরো।
৬ ঘণ্টা আগে
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গতিপথ নির্ধারণী দিন। এ দিন সিপাহী-জনতার বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই সময়ে ৮ নভেম্বরের সংবাদপত্রের সব খবর ছিল তাঁকে ঘিরেই।
১১ ঘণ্টা আগে
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গতিপথ নির্ধারণী দিন। এ দিন সিপাহী-জনতার বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন, নিহত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ। ঘটনাপ্রবাহের অন্যতম নায়ক কর্নেল আবু তাহেরের জন্য অপেক্ষা করছিল এক করুণ পরিণতি।
১৪ ঘণ্টা আগে
গভীর রাতে ঘুমিয়ে আছেন গ্রিক পুরাণের চরিত্র তরুণ মেলাম্পাস। তাঁর পাশে রাখা একটি পুরোনো লাঠি। আর বিছানার নিচে কিছু ভেষজপাতা। হঠাৎ করে ঘরের ঢুকে দুটি সাপ। মেলাম্পাস ঘুমন্ত, কিছুই টের পাননি। সাপ দুটি নিঃশব্দে এসে তাঁর কানে লালা ঘষে দেয়, যেন সাপ তার সন্তানদের আদর করছেন।
১ দিন আগে