আজ ২৩ সেপ্টেম্বর চিলির কালজয়ী কবি পাবলো নেরুদার মৃত্যুদিন। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের মতে, নেরুদা হলেন বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কি শুধুই তাঁর কাব্যপ্রতিভা, নাকি তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন আর রহস্যময় মৃত্যুও? জনপ্রিয় এই কবির জীবন ও সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন উম্মে ফারহানা।
উম্মে ফারহানা
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের কোর্সটি পড়ানোর সময় যাঁর লেখা দিয়ে আমি ক্লাস শুরু করি, তিনি হলেন পাবলো নেরুদা, যাঁকে প্রায়ই চিলির জাতীয় কবির উপাধি দেওয়া হয়। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, সেখানে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ‘ভেইন্তে পোয়েমাস দে আমোর ই উনা কান্সিওন দেসেস্পারাদা’—যা ইংরেজি অনুবাদে ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েমস অ্যান্ড আ সং অব ডেসপেয়ার’ নামে পরিচিত—সেই গ্রন্থটি পাঠ্য।
মাঝে একবার এসপানিওল শেখার ভূত মাথায় চেপেছিল বলে বাইলিঙ্গুইয়াল একটি বই সংগ্রহ করেছিলাম। এক পৃষ্ঠায় মূল স্প্যানিশ কবিতা আর পাশের পৃষ্ঠায় ইংরেজি তর্জমা—কবিতাগুলো এভাবে সংকলিত। মাঝে কিছু পাতায় আবার পাবলো পিকাসোর আঁকা কিছু ছবিও আছে।
কবির মাত্র উনিশ বছর বয়সে অবিশ্বাস্য খ্যাতি এনে দেওয়া এই কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে আলাপ করবার সময় আমি সাধারণত বলি তাঁর ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার তথ্য। বছরটি ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ এটি আমাদের স্বাধীনতার বছর। আরও বলি শিরোনামহীন কবিতাগুলোর মধ্যে ষোল নম্বরটির কথাও—‘ইন মাই স্কাই অ্যাট টোয়াইলাইট ইউ আর লাইক আ ক্লাউড’—যেটি আসলে রবি ঠাকুরের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ থেকে অনুপ্রাণিত। সে কথা বলতেও ভুলিনা। তবে প্রকৃতি আর নারীকে একইভাবে উপভোগ করার প্রবণতাটি যে নারীকে বিভিন্নভাবেই অবজেক্টিফাই করে তা টের পেতে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। আমি না বললেও ছাত্রছাত্রীরা কবিতাগুলো পড়েই এই জায়গাটি ধরে ফেলেন।
পাবলো নেরুদা লাতিন আমেরিকার প্রথম কবি নন যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। তবে কোনো জরিপ ছাড়াই বলা যায় যে তিনি ওই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি; সর্বাধিক পঠিত আর চর্চিত বললেও অত্যুক্তি হবে না। শুধু নিজের মহাদেশের মধ্যে নয়, বিশ্বের সব সমসাময়িক কবিদের তালিকায়ও তাঁর স্থান ওপরের দিকে।
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের আরেক মহারথি গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের মতে নেরুদা হলেন বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কি শুধুই তাঁর কাব্যপ্রতিভা, নাকি তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন আর রহস্যময় মৃত্যুও? চিলির আরেক উল্লেখযোগ্য লেখক পাত্রিসিও আলভারাদো বাররিয়া মনে করেন যে নেরুদার গুরুত্ব যতটা একটি বাণিজ্যিক ব্র্যান্ড হিসেবে আর তাঁর আলোচিত রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য, ততটা তাঁর কবিত্বের জন্য নয়। তবে ইসাবেল আলেন্দে এই কথার সঙ্গে একমত নন, তিনি মনে করেন পাবলো নেরুদাকে ব্যক্তি হিসেবে অপছন্দ করলেও তাঁর কাজগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
ব্যক্তি নেরুদা সম্পর্কে দুর্নাম অথবা যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা। ২০১৮ সালে চিলির ব্যস্ততম বিমানবন্দরের নাম পাবলো নেরুদার নামে রাখার পরিকল্পনা করা হলে একদল তরুণ শিক্ষার্থী, যাঁদের মধ্যে অনেকেই নারীবাদী ও মানবাধিকারকর্মী—এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মতে নেরুদা একজন স্বঘোষিত ধর্ষক, আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন শ্রীলংকায় কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত থাকার সময় (১৯২৯ সালে) তিনি একজন গৃহকর্মী নারীকে বলাৎকার করেছিলেন।
নেরুদার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আর ধর্ষণ-সংক্রান্ত আলাপটি আসে বিশ্বব্যাপী হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলন জনপ্রিয় হওয়ার পর। এর আগে মূলত আলোচিত হতো তাঁর রহস্যময় মৃত্যু, যা অনেকের মতেই আসলে ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সান্তিয়াগোর যে ক্লিনিকে নেরুদা প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানকার ডাক্তাররা যদিও বলেছিল কবি মারা গেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, পরবর্তী কালে ফরেনসিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে আসলে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করা হয় হত্যার উদ্দেশ্যেই।
আজীবন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা সালভাদর আলেন্দের পক্ষে থাকার জন্য নেরুদাকে নির্বাসিতও হতে হয়েছিল। সামরিক ক্যু-এর ফলে আলেন্দের সরকার পতিত হওয়ারি ঠিক ১২ দিন পর বহুল আলোচিত এই কবি ও কূটনীতিকের মৃত্যু হয়।
আজ বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এই কবির ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। চিলির রাজনীতিতে স্বৈরাচারবিরোধী ভূমিকা রাখার জন্য সে দেশের জনগণ তাঁকে আজীবন মনে রাখবে। বিমানবন্দরের নাম তাঁর নামে রাখা না হলেও সাহিত্যে নোবেল জিতে চিলিকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে জনপ্রিয় করার জন্য তাঁর প্রতি চিলির জনগণ কৃতজ্ঞ থাকবে, নাকি একজন নারী-নিপীড়ক হিসেবে নতুন প্রজন্ম তাঁকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে, তা জানার জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দশক।
লেখক: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের কোর্সটি পড়ানোর সময় যাঁর লেখা দিয়ে আমি ক্লাস শুরু করি, তিনি হলেন পাবলো নেরুদা, যাঁকে প্রায়ই চিলির জাতীয় কবির উপাধি দেওয়া হয়। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, সেখানে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ‘ভেইন্তে পোয়েমাস দে আমোর ই উনা কান্সিওন দেসেস্পারাদা’—যা ইংরেজি অনুবাদে ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েমস অ্যান্ড আ সং অব ডেসপেয়ার’ নামে পরিচিত—সেই গ্রন্থটি পাঠ্য।
মাঝে একবার এসপানিওল শেখার ভূত মাথায় চেপেছিল বলে বাইলিঙ্গুইয়াল একটি বই সংগ্রহ করেছিলাম। এক পৃষ্ঠায় মূল স্প্যানিশ কবিতা আর পাশের পৃষ্ঠায় ইংরেজি তর্জমা—কবিতাগুলো এভাবে সংকলিত। মাঝে কিছু পাতায় আবার পাবলো পিকাসোর আঁকা কিছু ছবিও আছে।
কবির মাত্র উনিশ বছর বয়সে অবিশ্বাস্য খ্যাতি এনে দেওয়া এই কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে আলাপ করবার সময় আমি সাধারণত বলি তাঁর ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার তথ্য। বছরটি ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ এটি আমাদের স্বাধীনতার বছর। আরও বলি শিরোনামহীন কবিতাগুলোর মধ্যে ষোল নম্বরটির কথাও—‘ইন মাই স্কাই অ্যাট টোয়াইলাইট ইউ আর লাইক আ ক্লাউড’—যেটি আসলে রবি ঠাকুরের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ থেকে অনুপ্রাণিত। সে কথা বলতেও ভুলিনা। তবে প্রকৃতি আর নারীকে একইভাবে উপভোগ করার প্রবণতাটি যে নারীকে বিভিন্নভাবেই অবজেক্টিফাই করে তা টের পেতে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। আমি না বললেও ছাত্রছাত্রীরা কবিতাগুলো পড়েই এই জায়গাটি ধরে ফেলেন।
পাবলো নেরুদা লাতিন আমেরিকার প্রথম কবি নন যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। তবে কোনো জরিপ ছাড়াই বলা যায় যে তিনি ওই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি; সর্বাধিক পঠিত আর চর্চিত বললেও অত্যুক্তি হবে না। শুধু নিজের মহাদেশের মধ্যে নয়, বিশ্বের সব সমসাময়িক কবিদের তালিকায়ও তাঁর স্থান ওপরের দিকে।
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের আরেক মহারথি গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের মতে নেরুদা হলেন বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কি শুধুই তাঁর কাব্যপ্রতিভা, নাকি তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন আর রহস্যময় মৃত্যুও? চিলির আরেক উল্লেখযোগ্য লেখক পাত্রিসিও আলভারাদো বাররিয়া মনে করেন যে নেরুদার গুরুত্ব যতটা একটি বাণিজ্যিক ব্র্যান্ড হিসেবে আর তাঁর আলোচিত রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য, ততটা তাঁর কবিত্বের জন্য নয়। তবে ইসাবেল আলেন্দে এই কথার সঙ্গে একমত নন, তিনি মনে করেন পাবলো নেরুদাকে ব্যক্তি হিসেবে অপছন্দ করলেও তাঁর কাজগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
ব্যক্তি নেরুদা সম্পর্কে দুর্নাম অথবা যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা। ২০১৮ সালে চিলির ব্যস্ততম বিমানবন্দরের নাম পাবলো নেরুদার নামে রাখার পরিকল্পনা করা হলে একদল তরুণ শিক্ষার্থী, যাঁদের মধ্যে অনেকেই নারীবাদী ও মানবাধিকারকর্মী—এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মতে নেরুদা একজন স্বঘোষিত ধর্ষক, আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন শ্রীলংকায় কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত থাকার সময় (১৯২৯ সালে) তিনি একজন গৃহকর্মী নারীকে বলাৎকার করেছিলেন।
নেরুদার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আর ধর্ষণ-সংক্রান্ত আলাপটি আসে বিশ্বব্যাপী হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলন জনপ্রিয় হওয়ার পর। এর আগে মূলত আলোচিত হতো তাঁর রহস্যময় মৃত্যু, যা অনেকের মতেই আসলে ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সান্তিয়াগোর যে ক্লিনিকে নেরুদা প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানকার ডাক্তাররা যদিও বলেছিল কবি মারা গেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, পরবর্তী কালে ফরেনসিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে আসলে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করা হয় হত্যার উদ্দেশ্যেই।
আজীবন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা সালভাদর আলেন্দের পক্ষে থাকার জন্য নেরুদাকে নির্বাসিতও হতে হয়েছিল। সামরিক ক্যু-এর ফলে আলেন্দের সরকার পতিত হওয়ারি ঠিক ১২ দিন পর বহুল আলোচিত এই কবি ও কূটনীতিকের মৃত্যু হয়।
আজ বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এই কবির ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। চিলির রাজনীতিতে স্বৈরাচারবিরোধী ভূমিকা রাখার জন্য সে দেশের জনগণ তাঁকে আজীবন মনে রাখবে। বিমানবন্দরের নাম তাঁর নামে রাখা না হলেও সাহিত্যে নোবেল জিতে চিলিকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে জনপ্রিয় করার জন্য তাঁর প্রতি চিলির জনগণ কৃতজ্ঞ থাকবে, নাকি একজন নারী-নিপীড়ক হিসেবে নতুন প্রজন্ম তাঁকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে, তা জানার জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দশক।
লেখক: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।
গথাম সিটি এক অদ্ভুত নগর। এখানে আকাশচুম্বী অট্টালিকা যেমন রাত্রির আঁধারে আলো ঝলমল করিয়া ওঠে, তেমনি অলিগলিতে অন্ধকারের ঘন কুয়াশা কখনো কাটে না। এ শহরের নায়ক ব্যাটম্যান, খলনায়ক জোকার। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেন; কিন্তু গথামের মানুষের আরেক বিশেষ দুর্ভোগের নাম কমিশনার পুত্র।
৬ ঘণ্টা আগেআজ ২২শে সেপ্টেম্বর। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। চলুন আজ এই দিবসের অজুহাতে একটু কল্পনা করা যাক, পৃথিবীতে ব্যক্তিগত গাড়ি নামক বস্তুটি না থাকলে কেমন হতো আমাদের শহর, আমাদের পৃথিবী?
১ দিন আগেযথারীতি গগণে মেঘ জমিয়াছে, পত্রপল্লব নতশিরে দাঁড়াইয়া আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশ পাইয়াছে ‘অদ্য বিশ্ব গন্ডার দিবস পালিত হইতেছে।’
১ দিন আগেজনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান হঠাৎ করেই মিউজিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন। সংগীতজীবনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় কনসার্ট ট্যুরে আছেন।
১ দিন আগে