leadT1ad

উত্তাল জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল ইনুর

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
স্ট্রিম গ্রাফিক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৯টি কথোপকথন গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রসিকিউশন হাতে পেয়েছে। সেই কথোপকথনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে প্রসিকিউশন দল জানিয়েছে, এই কণ্ঠ হাসিনারই।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এসব তথ্য জানান ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। এই মামলার ৫৩ নম্বর সাক্ষী তিনি। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে তিনি প্রসিকিউশন এবং তদন্ত দলেরও সদস্য।

বুধবার পুরো শুনানি ফেসবুকসহ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আদালতে তিনজনের সঙ্গে হাসিনার চারটি কথোপকথনের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। হাসিনা গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

ট্রাইব্যুনালে হাসিনার যেসব ফোনালাপ শোনানো হয়েছে, সেগুলো মামলার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে মনে করছে প্রসিকিউশন।

ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপের কথোপকথন-

হাসিনা ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ইনু কল দিলে হাসিনা ফোন রিসিভ করেন। এরপর ইনু সালাম দেন হাসিনাকে।

: হ্যালো, জি। জি। স্লামালাইকুম।

হাসিনা সালামের জবাব দিয়ে বলেন, হ্যাঁ। কী হয়েছে?

ইনু বলেন, বলছিলাম না একটা কথা? আমি মনে করি যে, আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে, এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং…

হাসিনা এসময় বলেন, না। রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে।

ইনু বলেন, শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...

হাসিনা তখন জবাব দেন, হ্যাঁ। জানি। না, খালি মোল্লা না, ওইখানে অনেক মাদ্রাসা।

ইনু জানান, মাদ্রাসা আছে ওই...

হাসিনা বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা... নামাচ্ছি।

ইনু তখন বলেন, ও আচ্ছা। এরপর হাসিনা বলেন, না, আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নাই, ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো। ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুইপাশ দিয়ে ধরবে। মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে, সেনা পাঠানো হচ্ছে, আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। র‍্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে উপর দিয়ে মারবে।

এ সময় ইনু বলেন, আচ্ছা। উপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি। ঠিক আছে, আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন, দুই/পাঁচ দিন, যা চললো। কিন্তু কারফিউয়ের পরে যাতে আর মিছিল না নামতে পারে, সেজন্য একট হোমওয়ার্ক করতে, করা দরকার; যে রকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে, সেগুলো চিহ্নিত করেছি। ছাত্রদল, বিএনপির ছেলেমেয়েরা, শিবিরের, মানে ধরেন রিজভীকে অ্যারেস্ট করা বা রুহুলকে অ্যারেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না। ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে, যে মিছিলটা লিড করেছে। আমার কুষ্টিয়া জেলাতে এসপি সেভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলেছে। ওখানে কনে সংঘর্ষ হয়নি, একটা ছররা গুলি শুধু একজনের পায়ে লেগেছে, উনি ম্যানেজ করছে। ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলোর তালিকা করতেছে। তা, আমি বললাম যে, ছেলেগুলোকে আজ রাতের ভেতরে পিকআপ করে নাও।

হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। শিওর।

ইনু বলেন, যাতে মিছিলটা লিড না করতে পারে। তা, আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে, আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা?

হাসিনা এ সময় বলেন, খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।

ইনু উল্লেখ করেন, লোকাল লিডার ওখানে এমপি খসরু চৌধুরী আছে এবং হাসান হাবিব আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট হাসান হাবিব কিন্তু। ও রাগ করে খসরুর উপরে ছেড়ে দিছে যে, এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক।

হাসিনা তখন মত দেন, খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না, হাসান তো লোকাল, ওদেরতো লোকজন আছে।

ইনু তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বলেন, লোকাল না তো রাইট, হাসান হাবিব নামেনি, আর এখানে ওয়াকিলও সামলাতে পারেনি, ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। তো আমার কথা হচ্ছে যে, একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে, আজকের রাতের ভেতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন, তাহলে কোন জায়গায় আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিলো, কাল আপনি রাত বারোটায় গিয়ে খুব ভালো করেছেন। (নইলে) আজ কিন্তু গণভবন ঘেরাও করতো কিন্তু। মোহাম্মদপুরে ওখান থেকে রেডি হচ্ছিল কাল, মানে এটা, সুতরাং...

হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। এটা কয়েকদিন ধরে করতেছে।

জবাবে ইনু বলেন, এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরো নিউজে ফ্লাড করে দিলাম, (সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ বিএনপি-জামায়াতের)।

ইনু প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

হাসিনা তাকে ইংরেজিতে ধন্যবাদ দেন দুবার। বলেন, আমরা হলো রণক্ষেত্রের সাথী।

ইনু বলেন, রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে...এই পিকআপটা করতে বলেন…

হাসিনা বলেন, না। এটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।

ইনু উল্লেখ করেন, ওটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন। করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন আজ। মানে, সবই অ্যারেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।

হাসিনা বলেন, লিসেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান। অ্যারেস্ট করে...

ইনু বলেন, আরেকটা রিকোয়েস্ট আমার, যে ইন্টারনেট আমার মনে হয়, চালু করতে পারেন, এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।

হাসিনা এ সময় জবাব দেন, কি যে চালু করবো, সবতো পুড়িয়ে দিয়েছে। ডাটা সেন্টারও পুড়িয়ে দিয়েছেই, পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ওই নতুন তারতুর কিনে জোড়া লাগাতে হবে।

ইনু বলেন, আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা... আমি একাত্তরে (একাত্তর টিভিতে) রাত আটটার সময় যাবো, একা কথা বলবো। আমি বলবো যে, সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।

হাসিনা এ সময় ইনুর এ মত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, না। ওটা তো বলা হয়েছে। ওটা আমি নিজেও বলছি...।

জবাবে ইনু বলেন, এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরো নিউজে ফ্লাড করে দিলাম, (সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ বিএনপি-জামায়াতের)। হাসিনা তখন বলেন, ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনে আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে। আমি দিয়েছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াতে থাকুক, ওটা চলতে হবে...

জবাবে ইনু বলেন, এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরো নিউজে ফ্লাড করে দিলাম, (সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ বিএনপি-জামায়াতের)।

হাসিনা তখন বলেন, ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনে আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে। আমি দিয়েছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াতে থাকুক, ওটা চলতে হবে...

ইনু বলেন, অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।

হাসিনা বলেন, আসুক, না আমি আর পারবো না। (আমি ক্ষমতা থেকে) যাচ্ছি এখন।

ইনু অনুরোধ করেন, না। না। যাওয়া দরকার নেই।

তখন হাসিনা বলেন, (ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে) জামায়াতকে শায়েস্তা করে থুয়ে যেতে হবে।

(ইনুর কথা অস্পষ্ট)

ইনুকে হাসিনা বলেন, আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে, তালিকাগুলো আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।

ইনু বলেন, আপনি এই, জামায়াত-শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।

হাসিনা বলেন, একেবারে।

ইনু বলেন, এক্সপোজ হয়েছে আরকি, একটু দেখেন। আর আমি বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন, আমি ইনশাআল্লাহ করবো, কোনো অসুবিধা নেই।

হাসিনা বলেন, না। ওই তালিকাগুলো একটু করিয়ে ফালান। এই ছুতায় যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন।

ইনু বলেন, বুঝেছি, আমি বুঝেছি। জি। স্লামুয়ালাইকুম, বলে ইনু কথা শেষ করেন।

হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আচ্ছা।

ইনু আবারও বলেন, জি। স্লামুয়ালাইকুম। হাসিনা বলেন, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।

ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার আরেকটি ফোনালাপ

ইনুর সঙ্গে হাসিনার অন্য একটি ফোনালাপের অডিওতে শোনা যায়, হাসিনা তাকে হ্যালো বলছেন। জবাবে ইনু বলেন, হ্যালো। জি, স্লামালাইকুম। আমি ইনু বলছিলাম। হ্যালো।

হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। বলেন।

ইনু উল্লেখ করেন, জি। না, আমি একটু পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু উদ্বেগের ভেতরে ছিলাম। তো, আমি মনে করি যে, সিদ্ধান্তটা খুব সঠিক হয়েছে আরকি। তো, আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে, কারফিউটা একটু কঠোর কারফিউ আরকি (দেওয়া দরকার)। তো, সারা ঢাকা শহরে যদি মাইক নামিয়ে দিতো প্রশাসন থেকে, কারফিউ কি করা উচিত না? তাহলে একটু সুবিধা হতো মনে হয়।

হাসিনা উল্লেখ করেন, আমি হোম মিনিস্টারকে বলছি এখনি, সব জায়গায় মাইকিং করার জন্য। চারজন আহত, জেলায় জেলায় ডিসি অফিস....।

ইনু বলেন, হ্যাঁ। ওইগুলো সব পেয়েছি আমি, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, আওয়ামী লীগের বাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, এগুলোর প্রত্যেকের লিস্ট আমি পেয়েছি... ।

হাসিনা বলেন, আমি এখন ঢাকায় আসবো।

ইনু বলেন, আচ্ছা। তো এখন আমার কথা হচ্ছে যে, কারফিউটা মানে, এমন হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট করবে, গুলি হবে না। (গুলি না করার তথ্য) সেটা আপনার আমার ভেতরে (থাকবে)। গুলি নেই, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবটা এমন হবে, কঠোর মানে কঠোর একেবারে। তো, সেজন্য...।

হাসিনা বলেন, আজ আমি, সত্যি কথা বলতে কি, বলি আপনাকে। আমি, কমিটি আছে তো, মিটিং করছিলাম, করার আগেই আমি দিয়েছি, তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বসেছিলাম।

ইনু জানান, এ বিষয়টি তিনি দেখেছেন।

হাসিনা বলেন, বললাম যে একটু সিচুয়েশনটা একটু ভালো হচ্ছে। তাহলে আস্তে আস্তে আর্মি, যেসব জেলা শান্ত আছে, ওখান থেকে (প্রত্যাহার করে) উঠিয়ে ফেলো, আর এখানে আস্তে আস্তে অ্যাজ ইয়ুজ্যুয়ালি তুলে ফেলো। এই ডিসিশনটা দিয়ে দিয়েছি।

হাসিনা এরপর বলেন, পরিণাম শুনলাম, তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে, তোমরা বলো কী করবে, কারফিউটা এগিয়ে দিচ্ছে, আর কি পয়েন্টগুলো যেগুলো ওদের কতগুলো জায়গা, ওরা সিলেক্ট করছে যেখানে হামলা করবে। তার প্রটেকশন দেবে আর র‍্যাব-পুলিশ টহল দেবে। আর সেনাবাহিনীর অবশিষ্টের মধ্যে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয়, তোমরা টহল দেবে। যেটা বলছো, ওটা ঠিক, ওই প্রেশারটা থাকতে হবে।

ইনু বলেন, আচ্ছা।

হাসিনা বলেন, মানুষ একটু ইয়ে থাকুক। ওমা, ওইখানে বসা অবস্থায় শুনলাম যে শুরু হয়ে গেছে।

ইনু বলেন, ওতো টার্গেটেড। উপজেলা লেভেলেরও ইউএনও অফিস ভাঙচুর করছে...

হাসিনা এরপর বলেন, পরিণাম শুনলাম, তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে, তোমরা বলো কী করবে, কারফিউটা এগিয়ে দিচ্ছে, আর কি পয়েন্টগুলো যেগুলো ওদের কতগুলো জায়গা, ওরা সিলেক্ট করছে যেখানে হামলা করবে। তার প্রটেকশন দেবে আর র‍্যাব-পুলিশ টহল দেবে। আর সেনাবাহিনীর অবশিষ্টের মধ্যে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয়, তোমরা টহল দেবে। যেটা বলছো, ওটা ঠিক, ওই প্রেশারটা থাকতে হবে।

ইনু মত দেন, প্রেশারটা থাকতে হবে, মানে প্রেশারটা থাকতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, যেটা কাল আলাপ করছিলাম যে, আপনার পার্টি নেটওয়ার্কে আমাদের পার্টি নেটওয়ার্কে, রেডি করা (দরকার) যে কারফিউ উঠে গেলে, এক লক্ষ লোক ঢাকা দখল করবো আমরা। বসবো।

হাসিনা বলেন, ওরা জেলায় আসবে, আমাদেরও জেলা থেকে লোক আসতে চাচ্ছে, বলেছি ঠিক আছে, আসেন।

ইনু মনে করেন, হ্যাঁ। এটা আনা দরকার। এটা কারেক্ট। তিনি বলেন, আমি কাল বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে শহীদ মিনার, শাহবাগ চত্ত্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, প্রেস ক্লাবের সামনে, পল্টনে...।

হাসিনা বলেন, আমাদের নিয়ে নিতে হবে।

জবাবে ইনু বলেন, এটা আমরা নেবো, আমরা বসবো এখানে এবং কারফিউ যেদিন রিলাক্স হবে, সেদিনই মিছিলের নগরী হয়ে যাবে একেবারে। এবং কিছুই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই। ছাত্ররা বাড়ি যাও, ফেরত যাও, ফেরত যাও। সন্ত্রাস দমন করো (এসব স্লোগান হবে)।

হাসিনা জানান, তিনি এই স্লোগান স্কুলে দিতে বলেছেন যে, তোমরা ছাত্ররা সব ঘরে ফেরো। গার্ডিয়েনদের বলছেন, এখানে কিন্তু জঙ্গি হামলা হয়েছে।

ইনু বলেন, হ্যাঁ। রাইট, রাইট।

হাসিনা বলেন, না। এটা আমাকে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইয়ে পেয়েছি। তারা এটাকে (গণঅভ্যুত্থানকে) জঙ্গি হামলা হিসেবে কনসিডার, মানে বলতেছে।

ইনু বলেন, হ্যাঁ। (সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে) জঙ্গি হামলাই হয়েছে। এই (জঙ্গি) কার্ডটা খেলবো আমরা এখন।

হাসিনা বলেন, না। (জঙ্গি) কার্ড খেলা না। এটা আমি আগে করিনি। কিন্তু আমাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আমাকে মেসেজটা দিছে যে, এটা জঙ্গি হামলা।

ইনু বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করছে এখন সরকার। হাসিনা জানান, তারা তাকে এটাই বলছে যে, এটা জঙ্গি হামলা। (এই তথ্য) দিয়ে দিবো পেপারে (মিডিয়াতে)।

হাসিনা বলেন, না। (জঙ্গি) কার্ড খেলা না। এটা আমি আগে করিনি। কিন্তু আমাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আমাকে মেসেজটা দিছে যে, এটা জঙ্গি হামলা।

ইনু বলেন, আচ্ছা। এটা একটা ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে যে, দুটা ভাগ। একটা হচ্ছে ছাত্রদের (আন্দোলন) কোটা আন্দোলনকারী, একটা হচ্ছে উৎখাতকারী; উৎখাতকারীরা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় চলে গেছে। কোটা সংস্কারকারীদের ব্যাপারে আপনার, আমার সরকারের সমবেদনা আছে। উৎখাতকারীকে আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো, কোনো ছাত্র যদি উৎখাতকারীর সঙ্গে জড়িত হয়, সেই দায়িত্ব আমি নেবো না।

হাসিনা বলেন, এটা আপনারা বলেন, এটা আপনারা বলেন না কেন?

ইনু বলেন, আমি তো বলবো।

হাসিনা বলেন, আরে আমি তো (আন্দোলনকারীদের দৃষ্টিতে) শত্রু। আপনারা বললে তখন মনে করবে যে, অন্যান্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে।

ইনু বলেন, আমি তো অবশ্যই বলবো।

হাসিনা এ সময় বলেন, বাকি দেখতেছি না, কমিউনিস্ট পার্টি, তারা এখন শেষ হয়ে গেছে।

ইনু বলেন, তো, দেখি আমি ওদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি, সেলিম; সবার সঙ্গে।

হাসিনা বলেন, কি জানি উনার নাম? সাইফুল হক নাকি?

ইনু জানান, তার নাম সাইফুল। ইনু এরপর বলেন, জোনায়েদ সাকি। জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক। আচ্ছা, আমি জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হকের সঙ্গে একটু লিয়াজোঁ করি।

হাসিনা বলেন, তোমরা (সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে) কোথায় নিচ্ছো দেশটাকে? ওদের মধ্যে যে সমর্থন দিচ্ছো, তা (তাতে) এখন দেখো পুরো জঙ্গি হামলা হচ্ছে।

ইনু বলেন, আচ্ছা। এটা একটা ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে যে, দুটা ভাগ। একটা হচ্ছে ছাত্রদের (আন্দোলন) কোটা আন্দোলনকারী, একটা হচ্ছে উৎখাতকারী; উৎখাতকারীরা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় চলে গেছে। কোটা সংস্কারকারীদের ব্যাপারে আপনার, আমার সরকারের সমবেদনা আছে। উৎখাতকারীকে আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো, কোনো ছাত্র যদি উৎখাতকারীর সঙ্গে জড়িত হয়, সেই দায়িত্ব আমি নেবো না।

ইনু বলেন, আরেকটা পয়েন্ট কি খেয়াল করছেন, আপনি যে আনু মুহাম্মদরা স্যরি, শিক্ষকরা যারা সমর্থন দিয়েছে, তারা একটা অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে বলতে চাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হেন-তেন নিয়ে হবে, ছায়া সরকার করবে এবং সংবিধান বাতিল করার জন্য একটা সংবিধান সভা করতে হবে। মানে, সংবিধানই বাতিল করে দেবে। হ্যাঁ, সংবিধান বাতিল চায়। আমি, ভাইকে একটু আগে বলেছি যে, ভাই, এটা খুবই অ্যালার্মিং কথা, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আর ম্যুরাল ভেঙে ফেলতেছে, তার মানে আমার পয়েন্টটা নিতে হবে যে, এদের অ্যাট্যাকটা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের বেসিক অর্জনের উপরে (বিরুদ্ধে)। সুতরাং, তারা তো খালি সরকার বদল চাচ্ছে না, মানে কোটা আন্দোলন করে কোটা চায়নি। তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে। আর এক দফা আন্দোলনের মানে, তারা হচ্ছে সরকারের মানে, রাষ্ট্রের বেসিক সংবিধান উড়িয়ে দিচ্ছে, (দিতে) চাচ্ছে তারা। তার মানে, এই জায়গায় (এই দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবে) পলিটিক্সটা অ্যাট্যাক করতে হবে, আমাকে, দাঁড় করাতে হবে এখন।

হাসিনা বলেন, ওই যে সেভেনটি ফাইভের পর করছিলো।

ইনু বলেন, এক্সাক্টলি। তো, এখন আপনি কি অ্যাডজাস্ট করবেন, এটা ছোটোখাটো পাঁচ, দশ মিনিটের, আরো দুদিন একদিন পরে?

হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা যাক, দেখি।

ইনু বলেন, আজকের দিনটা যাক, আমি প্ল্যানগুলো সাজাই। আপনাকে আমি আমার বিবেচনা যেগুলা আছে, দিবোনি আপনাকে। আর আমি বলি যে, কারফিউটা (চলাকালে), বডি ল্যাংগুয়েজে অনেক কঠোর হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট, গুলি না; মানে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবে। মানে টেলিভিশনে যে শান্তিনিকেতন (শান্তিনগর) থেকে ৩০ জন অ্যারেস্ট হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলে পাঠাবো না, থানায় রাখবো। দশ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দেবেন আরকি। বুঝলেন না?

ইনু বলেন, আজকের দিনটা যাক, আমি প্ল্যানগুলো সাজাই। আপনাকে আমি আমার বিবেচনা যেগুলা আছে, দিবোনি আপনাকে। আর আমি বলি যে, কারফিউটা (চলাকালে), বডি ল্যাংগুয়েজে অনেক কঠোর হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট, গুলি না; মানে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবে। মানে টেলিভিশনে যে শান্তিনিকেতন (শান্তিনগর) থেকে ৩০ জন অ্যারেস্ট হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলে পাঠাবো না, থানায় রাখবো। দশ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দেবেন আরকি। বুঝলেন না?

হাসিনা বলেন, বেশ। আচ্ছা।

ইনু বলেন, গরিব মানুষই তো। কিন্তু প্রোপাগান্ডা হবে ঘর থেকে বেরোলেই, মানে গুলি হবে। গুলি শব্দ (মিডিয়ায়) বলবো না, আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কঠোর (একথা বলতে হবে)। কেউ ঘরের বাইরে বেরোবে না। মানে, রিল্যাক্স; কারফিউ না আরকি। আপনার অফিসের মানে, বাসার চারপাশে একটু মানে, এই মানিক মিয়া এভিনিউর এখান থেকে প্রোডাকশন বাড়ান। ইনু আবার বলেন, না। ওটা না। ওরা যে ঢাকা চলো বলছে, গণভবন আক্রমণ করবে; এগুলা বলছে।

হাসিনা বলেন, গণভবন, বঙ্গভবন সব আক্রমণ করবে।

ইনু বলেন, তা ঠিক আছে, আল্লাহ ভরসা। আমি, আমার কথা হচ্ছে যে, আমাদের পরে যে, জনতার ঢাকা এটা প্রমাণ করার জন্য, হোমওয়ার্কটাই আজকের চব্বিশ ঘণ্টায় করে ফেলতে হবে। ওয়ার্ড থেকে দুই হাজার লোক রেডি করতে হবে। এবং জেলাগুলোতেও আমি আমার যত নেটওয়ার্ক আছে, আমি বলছি কারফিউ উঠবে, (কারফিউ প্রত্যাহার হলে) সাথে সাথে মিছিল বের হবে কুষ্টিয়া শহরে তিন হাজার লোকের, পাঁচ হাজার লোকের; রংপুর শহরে, ময়মনসিংহ শহরে। মানে শান্তি চাই, সংঘাত চাই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই, ছাত্ররা ঘরে ফেরত যাও। এই মিছিল (দিয়ে) দখল করে নিতে হবে।

হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আপনারা আগে বলেন যে, ছাত্ররা পরে যাও।

ইনু বলেন, আমিও বলতেছি, আমি অবশ্যই বলবো। কিন্তু আপনার পার্টিটাকে একটু চাঙ্গা করেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত