leadT1ad

জাফর ইকবাল সিনেমায় আসার আগে ছিলেন ব্যান্ডের ভোকাল-গিটারিস্ট

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর জাফর ইকবালের জন্মদিন। আমরা তাঁকে চিনি বাংলা সিনেমার ‘স্টাইলিশ হিরো’ হিসেবে। কিন্তু জানেন কি, সিনেমার নায়ক হবার আগে তিনি ছিলেন গায়ক, গিটারবাদক ও ব্যান্ডলিডার?

সিনেমায় আসার আগে জাফর ইকবাল ছিলেন ব্যান্ডের ভোকাল-গিটারিস্ট। স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশি সিনেমায় ‘সুদর্শন’ নায়কের হিসেব করলে যে দুই-একজনের নাম মাথায় আসে, তাঁদের একজন জাফর ইকবাল। স্বণার্লী যুগের এই ‘স্মার্ট-স্টাইলিশ’ হিরোকে আমরা সবাই কমবেশি জানি। সত্তর-আশির দশকে দর্শকদের মনে তিনি আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

সিনেমায় আসার আগে জাফর ইকবাল ছিলেন পুরোদস্তুর গানের মানুষ। এই দিকটার কথা সচরাচর আলোচনা হয় না। জাফর ইকবাল অভিনেতা হওয়ার আগে ছিলেন মিউজিশিয়ান। গান তো গাইতেনই, ভালো গিটার বাজাতে পারতেন।

আমাদের এই ভূখন্ডের ব্যান্ড মিউজিকের ইতিহাস লিখতে গেলে জাফর ইকবালের নামটি অবধারিতভাবে চলে আসবে। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন জাফর ইকবারের সঙ্গে ব্যান্ড মিউজিকের কানেকশন কি! মূলত, ষাটের দশকের শেষদিকে তিনি 'র‍্যাম্বলিং স্টোন’ নামে একটি ব্যান্ড বানিয়েছিলেন।

ষাটের দশকে কোনো এক অনুষ্ঠানে শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও জাফর ইকবাল। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
ষাটের দশকে কোনো এক অনুষ্ঠানে শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও জাফর ইকবাল। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

জাফর ইকবালের ব্যান্ড

১৯৬৬-৬৭ সালের দিকের কথা। তখন সবেমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যান্ড মিউজিক কালচার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘আইওলাইটস’, ‘লাইটেনিংস’, ‘ইনসেক্স ডুই’-সহ কয়েকটি ব্যান্ড গানবাজনা শুরু করে দিয়েছে। সে সময় জাফর ইকবালের ব্যান্ড র‍্যাম্বলিং স্টোন ঢাকায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে, বিশেষ করে হোটেলপাড়ায়।

জাফর ইকবাল, ফারুক, তোতা, মাহমুদ, কাইয়ুম চৌধুরী, শাহীর কাদের ছিলেন এই ব্যান্ডের সদস্য। এই কাইয়ুম চৌধুরী নেসেসিস ব্যান্ডের ভোকাল জোহাদ রেজা চৌধুরীর বাবা। তোতা থাকেন কানাডায়। আর শাহীর কাদের থাকেন অস্ট্রেলিয়াতে। ঢাকার নবাব পরিবারের শাহীর কাদের স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের প্রথম ড্রামার সাব্বির কাদেরের ছোটভাই।

সে সময়ের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিখ্যাত ‘চাম্বেলি রুমে’ও র‍্যাম্বলিং স্টোনকে নিয়মিত বাজাতে দেখা যেত। ষাটের দশকে স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলো কিন্তু বাংলা গান গাইতো না। তারা ইংরেজি গান গাইত। আর সেই গানের বেশিরভাগই ছিল কভার আইটেম।

জাফর ইকবালদের ব্যান্ড এলভিস প্রিসলির গান বেশি কভার করত। রকেন রোলের এলভিস তখন গোটাবিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়। জাফর ইকবাল শৈশব থেকেই এলভিসকে আদর্শ মানতেন। ক্লাস সেভেনে থাকা অবস্থায় প্রথম গিটার বাজানো শুরু করেছিলেন।

আশির দশকে সিনেমায় প্লেব্যাক করতেন জাফর ইকবাল। রুনা লায়লার সঙ্গে রেকর্ডিং স্টুডিওতে। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
আশির দশকে সিনেমায় প্লেব্যাক করতেন জাফর ইকবাল। রুনা লায়লার সঙ্গে রেকর্ডিং স্টুডিওতে। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী ববিতা বলেছিলেন, ‘জাফর ইকবাল খুব ভালো ইংরেজি গান গাইতে পারতেন। গিটার বাজিয়ে তার কণ্ঠে ইংলিশ গান শোনাটা আমাদের সময়কার যেকোনো মেয়ের জন্য স্বপ্নের একটি মুহূর্ত।’

তবে ১৯৬৯ সালে ব্যান্ডের প্র‍্যাকটিসের জায়গা পুড়ে যাওয়ায় জাফর ইকবালদের ব্যান্ড ভেঙে যায়। ব্যান্ডের কয়েকজন তখন ‘টাইম এগো ইমোশন’ নামে আরেকটি ব্যান্ডে চলে যান। ব্যান্ডপর্ব শেষে জাফর ইকবাল ১৯৬৯ সালের দিকে পুরোপুরিভাবে চলে আসেন অভিনয়ে। এরপর ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

নায়ক, পাশাপাশি গায়ক

জাফর ইকবাল ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে সংগীতআবহে বড় হয়েছিলেন। তাঁর বোন শাহনাজ রহমতউল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী। আর বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন দেশের প্রথম সারির সুরকার-সংগীত পরিচালক। জাফর ইকবালের মনেও বাসা বাঁধে সুর। পশ্চিমা পপ-রক মিউজিক তাঁকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তাই তৈরি করেছিলেন ব্যান্ড।

জাফর ইকবালের অডিও অ্যালবাম। ইউটিউব থেকে নেওয়া ছবি
জাফর ইকবালের অডিও অ্যালবাম। ইউটিউব থেকে নেওয়া ছবি

জাফর ইকবালের গায়ক, গিটারবাদক, ব্যান্ডলিডার থেকে নায়ক বনে যাওয়াটাও কিন্তু সেই গানের সূত্র ধরেই। ১৯৬৯ সালের এক শোতে খান আতাউর রহমান তাঁকে গাইতে দেখেন। অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তখনই। সেই বছরেই খান আতাউর রহমানের ‘আপন পর’ সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে পর্দায় হাজির হন জাফর ইকবালের।

প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের ‘পীচ ঢালা পথ’ সিনেমায় বিভিন্ন গিটার-ওয়ার্ক জাফর ইকবালের করা। সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গেও অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন তিনি।

জাফর ইকবালের গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে আছে 'সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, 'তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন', 'হয় যদি বদনাম হোক আরও'। আশির দশকে 'কেন তুমি কাঁদালে' নামে তাঁর একটি অডিও অ্যালবামও বের হয়েছিল।

চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবাল প্রায় ১৫০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বেঁচে থাকলে আজ ৭৫-এ পা রাখতেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে তিনি চলে গেছেন অনন্তলোকে। তবে জাফর ইকবাল বেঁচে থাকবেন শ্রোতা-দর্শকের হৃদয়ে, গান দিয়ে-সিনেমা দিয়ে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত