leadT1ad

জরিপে ইবি উপাচার্যকে ব্যর্থ বলছেন শিক্ষার্থীরা, ১০-এ পেলেন ২.৪৫

২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নসরুল্লাহ। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি সেপ্টেম্বরের ১৮ থেকে ২৩ পর্যন্ত অনলাইন ও অফলাইনে জরিপটি পরিচালনা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্মটি।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ০৬
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। সংগৃহীত ছবি

কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্য (ভিসি) উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তিতে ‘মূল্যায়ন জরিপ’ করেছে শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। ইকসু গঠন, নিয়মিত ক্লাস, শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধিসহ মান নির্ধারণী ১০টি রেটিং ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করেছে তারা। এতে দায়িত্বপালনে রেটিংয়ে ১০-এর মধ্যে গড় ২ দশমিক ৫৪ নম্বর পেয়েছেন বর্তমান উপাচার্য ড. নসরুল্লাহ। যা ‘খারাপ’ ক্যাটাগরিতে পড়ায় জরিপে তাকে ব্যর্থ উপাচার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে জরিপের বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নসরুল্লাহ। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্মটি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশে এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্যরা। স্ট্রিম ছবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশে এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্যরা। স্ট্রিম ছবি

২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নসরুল্লাহ। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি সেপ্টেম্বরের ১৮ থেকে ২৩ পর্যন্ত অনলাইন ও অফলাইনে জরিপটি পরিচালনা করে প্ল্যাটফর্মটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের মোট ১ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

জরিপ পরিচালনাকারী সদস্য রাহাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘এটি আমাদের প্রাথমিক জরিপ। পরবর্তীতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত জরিপ করা হবে।’

যেভাবে জরিপে, যা ছিল

জরিপে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মটি কয়েকটি দিক মূল্যায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সেশনজট নিরসনে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা তদারকি ও পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট নিরসন, সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকীকরণ (অনলাইন ব্যাংকিং, ল্যাব, সনদ উত্তোলন ও ওয়েবসাইট উন্নয়ন), আবাসিক হলের খাবারের মান ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, মেডিকেল সেন্টারের সেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও ছাত্রী কমনরুম নিশ্চিতকরণ এবং পরিবহন সংকট নিরসনে বাস বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের জরিপের ফলাফল। সংগৃহীত ছবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের জরিপের ফলাফল। সংগৃহীত ছবি

ভিসির দায়িত্বগ্রহণ জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের মোট ১ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ৮৭৬ জন আবাসিক ও ৪৩৬ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৩৪৫ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৬ জন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১৮১ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ২৯৩ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ২৭৪ জন এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১৩৩ জন শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেন।

চলতি সেপ্টেম্বরের ১৮ থেকে ২৩ পর্যন্ত অনলাইন ও অফলাইনে জরিপটি পরিচালনা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্মটি। এতে ১ থেকে ১০ নম্বর স্কেলে মূল্যায়ন করা এই জরিপে মোট প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩,২১৬। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী অনুপাতে যার গড় দাঁড়িয়েছে ২.৪৫। জরিপে রেটিং ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১ থেকে ৩ নম্বরকে ‘খারাপ’ ধরা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত মূল্যায়নে উপাচার্যের এক বছরের কার্যক্রমকে ‘খারাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আয়োজকরা যা বলছেন

সংবাদ সম্মেলনে জরিপ পরিচালনাকারী সদস্য রাহাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জরিপ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, রেটিং মার্কে কেন মাইনাস মার্কিং রাখা হয়নি! অধিকাংশ শিক্ষার্থী মাইনাস ১০ বা মাইনাস ৫ মার্কিংয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। এই জরিপে উপাচার্য কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এবং শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মন্তব্য ছিল– ‘দায়িত্ব পালন করতে না পারলে এ অযোগ্য প্রশাসনের সরে দাঁড়ানো উচিত।’

আরেক সদস্য খন্দকার সায়েম বলেন, ‘এই জরিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করেছে যে, তাঁরা উপাচার্যের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন। জরিপ অনুযায়ী উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ভোটে ফেল করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, আগামীকাল দুপুরে আমরা প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করব এবং প্রশাসনকে হলুদ কার্ড দেখাব। আমরা চাইলে লাল কার্ডও দেখাতে পারতাম, তবে সতর্কবার্তা হিসেবে আপাতত হলুদ কার্ড দেখাব।’

যা বললেন উপাচার্য

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে জরিপের বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনো ধরনের জরিপকে স্বাগত জানাই। তবে যারা জরিপটি করেছেন, তাদের জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। জরিপে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

তবে জরিপ পরিচালনাকারী সদস্য রাহাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘গত এক বছরে উপাচার্য যে কাজ করেছেন, তাতে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাঁর কোনো কাজ শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি তিনি যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোতেও নানা অসংগতি রয়েছে, যা আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত