leadT1ad

শৈলকুপায় রাতে মন্দিরের ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর, ভিডিও ফুটেজ দেখে একজন আটক

শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়ার মাত্র দুদিন পর রাতে হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় বিব্রত স্থানীয় সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ ঘটনায় তাদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই বলে জানিয়েছেন অনেকে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
ঝিনাইদহ
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৭
শৈলকুপার হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরের ছয়টি প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। স্ট্রিম ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় রাতে একটি মন্দিরে দুর্গা পূজার জন্য তৈরি ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মনজের আলী নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৪টার পরে উপজেলার ফুলহরি গ্রামের হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।

আটক মনজের আলী (৫১) ফুলহরি গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি মানসিকভাবে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বলে জানা গেছে। সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা গেছে, মনজের আলী একাই মন্দিরে প্রবেশ করেন। একে একে ছয়টি প্রতিমার মাথা ভেঙে সরিয়ে দিচ্ছেন। পরে তা পানিতে চুবাচ্ছেন তিনি।

মন্দির কমিটির সভাপতি বিকাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সোমবার রাত ৪টার পর্যন্ত আমাদের লোকজন মন্দির পাহারায় ছিল। এরপর মনজের আলী এই কাজটি (ভাঙচুর) করেছে। সে অসুর, কার্তিক, স্বরসতিসহ ৬টি বিগ্রহের মাথা ভেঙেছে। সকাল ৯টার দিকে আমরা এসে দেখতে পাই যে, প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।’

এদিকে আটকের পর মনজের আলীকে শৈলকুপা থানা হেফোজতে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। মন্দির কমিটির সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এতে আটক মনজের আলীকে (৫১) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ব্যক্তিকে আসামি করা হতে পারে।

শৈলকুপার হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে রাতে প্রতিমা ভাঙেন মনজের আলী। সিভি টিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি।
শৈলকুপার হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে রাতে প্রতিমা ভাঙেন মনজের আলী। সিভি টিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি।

কী বলেছে মন্দির কমিটির লোকজন

শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়ার মাত্র দুদিন পর রাতে হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় বিব্রত স্থানীয় সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ ঘটনায় তাদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই বলে জানিয়েছেন অনেকে। মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, ঘটনার আগের দিনও মনজের আলীকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কাদাছেনার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে অনেকে মনে করছেন, কেউ হয়তো তাকে উসকানি দিয়ে এ কাজ করিয়েছে।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপশ বিশ্বাস বলেন, ‘মনজের বিশ্বাস কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। যেখানে পূজা হয়, সে সেখানে যায়। আমাদের এই মন্দিরেও সে আসে। আমাদের এখানে খাওয়া-দাওয়া করে। এখন এই ভাঙচুর তার মানসিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো ষড়যন্ত্র, তা খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

যা বলছে পুলিশ প্রশাসন

এদিকে প্রতিমা ভাঙচুরের খবরে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল ইসলাম, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম খালিদ সিদ্দিকী, শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান। গণমাধ্যমকর্মীদের তাঁরা জানান, ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

ওসি মাসুম খান জানান, ‘প্রাথমিকবাবে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে আটক করেছি। অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে মন্দির পরিদর্শন করেছেন। তারা জানান, প্রাথমিকভাবে এটি একজন ‘মানসিক প্রতিবন্ধীর’ কর্মকাণ্ড বলেই মনে হলেও, পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত