leadT1ad

মানিকগঞ্জের ভাড়া বাসায় প্রবাসীর স্ত্রীসহ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার

প্রায় তিন বছর আগে শিখা আক্তারের বিয়ে হয় জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্দামানিক এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে দেওয়ান শাহীনের সঙ্গে। এটা দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে শাহীন ও শিখা জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়ার মুক্তাদির নামে একজনের বাড়ির দোতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
মানিকগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৬
মানিকগঞ্জে একটি ভাড়া বাসা থেকে মাসহ দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্ট্রিম ছবি

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী ও তাঁর দুই শিশু সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ এসে পাশের ভবন থেকে জানালা দিয়ে বন্ধ ঘরের ভেতর শিশুদের মরদেহ মেঝেতে ও গৃহবধূকে খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখে।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে পৌরসভার পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার কবি মহিদুর সড়কের একটি দোতলা বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা-পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, দুই সন্তানকে বিষপান করিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন গৃহবধূ শিখা আক্তার।

নিহতরা হলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী দেওয়ান শাহীন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী শিখা আক্তার (২৯), তাঁর দুই সন্তান আরাফাত ইসলাম আলভি (৯) ও মেয়ে সাইফা আক্তার (২)। সন্তনদের মধ্যে ছেলে আলভি শিখার প্রথম স্বামীর সন্তান এবং মেয়ে সাইফা আক্তার শাহীনের ঔরষজাত সন্তান। আলভি মানিকগঞ্জের বেসরকারি শাহীন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

প্রায় তিন বছর আগে শিখা আক্তারের বিয়ে হয় জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্দামানিক এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে দেওয়ান শাহীনের সঙ্গে। এটা দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে শাহীন ও শিখা জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়ার মুক্তাদির নামে একজনের বাড়ির দোতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বাড়ি মালিক জানা গেছে, দেওয়ান শাহীন আগে থেকেই মালোশিয়ায় থাকতেন। গত আগস্টের ১৫/১৬ তারিখে শাহীন ও শিখা পশ্চিম বান্দুটিয়ায় তাঁর বাসাটি ভাড়া নেয়। এর পর দিনই শাহীন মালোশিয়া ফিরে গেলে শিখাও বাসা থেকে চলে যান। চলতি সেপ্টেম্বরের ৭/৮ তারিখে সন্তানদের নিয়ে পুনরায় ওই বাসায় উঠেন শিখা।

এদিকে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দিতে শিখার ফ্ল্যাটের দরজায় নক করেন প্রতিবেশী আলমগীর। পরে মঙ্গলবার সকালের আবারও বিদুৎ বিলের কাগজ দিতে গিয়ে বাসা বন্ধ পান তিনি। দরজায় শব্দ করেও কোনো সাড়া না পেয়ে বিষয়টি তিনি বাসার মালিককে জানান। বাসার মালিক শিখার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তা রিসিভ করেননি। পরে ৯৯৯ নাম্বারে কল করেন মুক্তাদির। শিখার প্রতিবেশীদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার পুলিশ এসে পাশের ভবন থেকে জানালা দিয়ে বন্ধ ঘরের ভেতর ফ্লোরে ও খাটের ওপর মরদেহ পড়ে দেখে। পরে বন্ধ কক্ষ খুলে ভেতরে ঢুকে বিষাক্ত ট্যাবলেটের একটি খালি কৌটা পায়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাতে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দিতে শিখার বাসার দরজায় নক করলেও কোনো সাড়া পাইনি। ভেবেছিলাম সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকালে আবারও কল করলে সাড়া না পেয়ে বাড়িওয়ালাকে বিষয়টা জানাই।’

বাড়ির মালিক মুক্তাদির বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত বাসায় এসে ৯৯৯-এ ফোন দিই। পরে পুলিশ এসে পাশের বিল্ডিং থেকে জানালা দিয়ে ভেতরে তিনজনের লাশ দেখতে পান। দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে খাটে শিখা আক্তারের লাশ এবং ফ্লোর থেকে ছেলে ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।’

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ‘মা ও সন্তানসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে ‘

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন বলেন, নিহত শিখা আক্তার শাহীন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং শাহীন আহমেদও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, শিখা আক্তার দুই সন্তানকে বিষপান করিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত