leadT1ad

ন্যাপকিন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ‘নারীবিদ্বেষী মন্তব্য’, ৩০৪ নাগরিকের নিন্দা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২
স্ট্রিম গ্রাফিক

বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনের ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে দেওয়া দুটি পোস্ট ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরইমধ্যে পোস্টগুলো তিনি সরিয়ে নিয়ে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছেন। তবে তাঁর এই বক্তব্যের ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন ৩০৪ জন নাগরিক। তাঁরা বলছেন, ‘বিজ্ঞানকে বিকৃত করে নারীর স্বাস্থ্যকে হেয় করা শুধু অবৈজ্ঞানিক ও বিভ্রান্তিমূলকই নয়, বরং এটি নারী বিদ্বেষ, শিশু অধিকার, নারীর মর্যাদা এবং শিক্ষার প্রতি সরাসরি আঘাত।’ একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের বক্তব্যকে উপেক্ষা করতে পারে না বলেও উল্লেখ করেছেন বিবৃতিদাতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন তার ফেসবুক আইডি থেকে দুইটি পোস্ট করেন। তার প্রকাশিত একটি পোস্টে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং লেখেন, ‘বাংলাদেশে স্কুল ও পাবলিক স্পেসে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনা হচ্ছে অন্ধভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ’। এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এনজিও ও গণমাধ্যমকে মাসিককে “স্বাভাবিকীকরণ” করে এটিকে একটি বাণিজ্যিক শিল্পে রূপ দিয়েছে”।

পাশাপাশি তিনি আরোও বলেন, ‘২০০৫ সালের আগে বাংলাদেশে মাসিক নিয়ে পাঠ্যপুস্তক বা জনসচেতনতার কোনো বিষয় ছিল না, এবং এনজিওর কারণে অযথা এটি বড় ইস্যু বানানো হচ্ছে। পশ্চিমা প্রভাবনধর্ম ও লজ্জাশীলতার সংস্কৃতি নষ্ট করছে এবং মাসিককে উন্মুক্ত আলোচনায় আনা উচিত নয়।’

মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন পোস্টগুলো ডিলেট করলেও সেগুলোর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মুছে ফেলা পোস্টে তিনি লিখেন, ‘১০০ বছর আগে মেয়েদের গড়ে ৪০টি মাসিক সাইকেল হতো, এখন তা ৪০০ হয়েছে কারণ মেয়েরা সন্তান নিতে চাচ্ছে না।’

মোহাম্মদ সরোয়ারের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, ৩০৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আমরা বলতে চাই, মাসিক বা পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে উন্মুক্ত ও যথাযথ আলোচনা হওয়া জরুরি, ড. হোসেনের এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য সমাজকে বিভ্রান্ত করছে এবং নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।

তারা আরোও বলেন, মাসিক বিষয়ে তাঁর বক্তব্য বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। মেয়েদের মাসিক চক্র জৈবিক প্রক্রিয়া, যা বয়স, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত, সন্তান নেওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে নয়। এভাবে অকাল সন্তান জন্মদানকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং বাল্যবিবাহকে নীরবে বৈধতা দেয়। মাসিককে ‘বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি নারীর স্বাস্থ্য অধিকারকে তুচ্ছ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে, মাসিক একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং এটি নারী স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই সঙ্গে, স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে মাসিক অন্তর্ভুক্তিকে তিনি ‘অশ্লীলতা’ ও ‘ধর্মবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণ ভুল এবং নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।’

তারা উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলে জানান, এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই ধর্মীয় রীতিনীতি ব্যবহার করে নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈষম্য ছড়াচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এটি, অকাল মাতৃত্ব ও বাল্যবিবাহকে স্বাভাবিকীকরণ করে, যা বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী; শিশু অধিকার ক্ষুণ্ণ করে, কারণ শিশু আইন ২০১৩ এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী কিশোর-কিশোরীদের বৈজ্ঞানিক স্বাস্থ্য শিক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে; আইইউবির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে, যেখানে একজন বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে সঠিক তথ্য প্রচারের পরিবর্তে তিনি অবৈজ্ঞানিক, বিভ্রান্তিমূলক এবং নারী বিদ্বেষী মনোভাব ছড়াচ্ছেন।

মোহাম্মদ সরোয়ারের কর্মক্ষেত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর কর্তৃপক্ষের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন বিবৃতিদাতারা। তাঁদের দাবিগুলো হলো-

১. ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. তাঁকে সর্বজনীন ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে ঘৃণা ও বিভ্রান্তি না ছড়ানোর লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

৩ . বিশ্ববিদ্যালয়কে লিঙ্গসমতা, বৈজ্ঞানিক সততা এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করতে হবে।

বিবৃতিতে ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিকা ডি মাদ্রিদের গবেষক মিম আরাফাত মানব, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফেডারেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গোলাম মোস্তফা, নারীপক্ষের আইনজীবী কামরুন নাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, দি ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শাভিনা আনামসহ মোট ৩০৪ জন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত