জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। অধুনা দুনিয়ায় বহুল আলোচিত একটি প্রজন্ম-পরিভাষা। জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা এরা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাঁদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। জেন-জি পরিচয়ে আসলে কারা অন্তর্ভুক্ত? শুধু তুলনামূলক সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণেরা, নাকি এর ভেতরে আছেন সুবিধাবঞ্চিতরাও? এ প্রজন্ম সত্যিই কি শুধু প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে, নাকি তাদের আছে সীমাবদ্ধতাও? এ আয়োজনে রয়েছে এসবের অনুসন্ধান।
ফারিহা নওশীন
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে খুব জনপ্রিয় হয়েছে জেন-জি শব্দটি, বিশেষ করে আন্দোলনের সামনের সারিতে তরুণদের অবস্থানের কারণে। কিন্তু এই পরিচয় আসলে কার? শুধুই শহুরে সামর্থ্যবানদের, নাকি প্রান্তে বাস করা সুবিধবঞ্চিত তরুণদেরও?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রো স্টেশনের পাশে বসে শিশু-সন্তানকে খাওয়াচ্ছিলেন ১৯ বছরের কুলসুম। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে তাঁর। তখন থেকে একরকম রাস্তাতেই জীবন কাটান তিনি। মাঝে মাঝে কারো কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে টিকটক চালান। টিকটক চিনলেও, ‘জেন-জি’ চেনেন না কুলসুম। তিনি নিজেও যে একজন ‘জেন-জি’ সেই কথা জানেন না তিনি।
জীবন নিয়ে বড় কোনো প্রত্যাশা নেই কুলসুমের। ভাবলেশহীন গলায় বললেন, ‘মাথার ওপরে একটা ছাদ আর দ্যাশে শান্তি থাকলেই চলবো আমার।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে খুব জনপ্রিয় হয়েছে জেন-জি শব্দটি। বিশেষ করে আন্দোলনের সামনের সারিতে এই তরুণদের অবস্থানের কারণে। কিন্তু এই পরিচয় আসলে কার? রাস্তায় জীবন কাটানো কুলসুম বা দেশের প্রান্তে থাকা সুবিধাবঞ্চিতরাও কি এই অভিধা ধারণ করেন?
অক্সফোর্ড ডিকশনারি বলছে, যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মেছেন, তাঁরাই জেনারেশন জুমার্স বা জেন-জি।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় জেন-জিরা সাধারণভাবে যেমন প্রযুক্তিতে পারদর্শী তেমনি সমাজ সচেতনও। তারা জন্মেছে এক তথ্য প্রযুক্তির সমাজে। স্বভাব তাঁদের সারাক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে থাকা। মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক জ্য টোয়েং এজন্য তাঁদের নাম দিয়েছেন ‘আই-জেন’। মানে, ইনফর্মেশন জেনারেশন।
কিন্তু এমন বাস্তবতা কি বাংলাদেশের মতো সমাজের জন্যও সমান সত্য, যেখানে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ এখনো গ্রামে বা মফস্বলে বাস করে? শিক্ষা, প্রযুক্তি, অধিকার—এসব সুযোগও তো সমাজের সবাই সমানভাবে পায় না।
মিরপুর-১০ এলাকার টুইংকলস স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার বলছিলেন, ‘মাসখানের আগে টিভিতে বলতে শুনছি শব্দটা। কিন্তু জেন-জি আসলে কি আমি বুঝি না।’
‘আমি আন্দোলনে যাইনি, রাজনীতি, প্রযুক্তি এগুলো কিছুই ভালো বুঝি না এখনো, ফোন বা ফেসবুক কিছুই নেই আমার। আন্দোলনের সময় অনেক চিন্তা হচ্ছিল। বাসার সবাই কত কি আলোচনা করত, কিন্তু আন্দোলনে যাওয়া হয়নি।’ এক নাগারে বলে গেল নাসরিন।
নাসরিনের বাসার কাছে ময়লার স্তুপের পাশে ছোট্ট চায়ের দোকান ১৬ বছরের আল-আমিনের। টিকটকে অ্যাকাউন্ট আছে তার। ফলোয়ারও অনেক!
আল-আমিনের বন্ধুরা আন্দোলনে গিয়েছিল, কিন্তু বাসা থেকে মানা করায় সে যেতে পারেনি। জেন-জি কথাটা আগে কখনও শুনেছে কিনা জানতে চাইলে হেসে ফেলল আল-আমিন, শোনেনি আগে।
এই তিন তরুণই ঢাকায় বাস করে। কিন্তু কত তফাৎ তাদের সামাজিক বাস্তবস্তায়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের করা ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএল) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু যুক্ত আছে শিশুশ্রমসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।
২০২৩ সালের ইউনিসেফের এক রিপোর্ট জানায়, দেশের ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়েছিল ১৮ বছর বয়সের আগে। ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয় বয়স ১৫ হওয়ার আগেই। আর শহর এলাকায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ বাস করে ও ঘুমায় রাস্তায়, স্টেশন অথবা পার্কের মতো খোলা জায়গায়। দেশের মানুষের এই অংশের সংগ্রাম ‘হ্যাশট্যাগ’ বা ‘পপুলার ক্যাফে’ নিয়ে নয় বরং কেবল বেঁচে থাকা নিয়ে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আশরাফ বলেন, ‘জেন-জি ধারণাটি পশ্চিমা জীবনধারা থেকে ধার নেওয়া। তা আত্মস্থ করেছে একটি বিশেষ আর্থ-সামাজিক শ্রেণি। মূলত মধ্য ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত তরুণরাই পরিচিত এই সংস্কৃতির সঙ্গে। কিন্তু এই বয়সের সবাইকে ঢালাওভাবে জেন-জি বলে দেওয়া একটা শ্রেণির বিষয়, এটা এক ধরনের সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স।’
এই অভিধা বাংলাদেশের লাখো সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের মোটেও উপস্থাপন করে না বলে মন্তব্য করেন বুলবুল আশরাফ। তিনি বলেন, ‘শুধু বয়স দিয়ে প্রজন্ম নির্ধারণ করা উচিৎ নয়। কে কতটুকু শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা সামিয়ার বয়স ১৫। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট আছে। কোরিয়ান ড্রামার মতো হাল আমলের কন্টেন্টও দেখে সে। গ্রামে থাকলেও শহরের তরুণদের থেকে মোটেই পিছিয়ে নেই সামিয়া। কিন্তু জেন-জি কথাটা সামিয়াও জানে না।
গহিন পার্বত্য গ্রামের বাসিন্দা ২৪ বছরের উ থান্ট শ্যুই মারমা। প্রযুক্তি আর শহুরে সংস্কৃতি নিয়ে তেমন কিছুই জানার সুযোগ নেই তার। জেন-জি কথাটা শ্যুই মারমার না জানাটাই স্বাভাবিক।
মারমার মতো তরুণদের সংগ্রাম শহরের মানুষের সামনে প্রথম আসে কোভিডের সময়, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের। গ্রামে ইন্টারনেট না থাকায় সেই সময় তাদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাংলাদেশে সামাজিক পরিচয় নির্মাণে ভৌগোলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বয়সের সীমায় পড়েও কি শ্যুই মারমা জেন-জি প্রজন্মের বলে গন্য হবেন?
মোবাইল ফোন ছাড়া নাসরিন, টিকটকে পরিচিত মুখ আল-আমিন অথবা শিশু-সন্তানসহ ফুটপাতে বাস করা কুলসুমরা বয়সের বিচারে একই প্রজন্মের হলেও সামাজিক বাস্তবতায় প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা পুরোপুরি আলাদা।
শহুরে সংস্কৃতিতে জেন-জি পরিচয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও তা সামান্যই তুলে ধরে মূলধারার বাইরে থাকা অজস্র তরুণের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
যাদের আমরা পথশিশু, শিশুশ্রমিক, বা রাস্তায় রাত কাটানো দুর্ভাগা হিসেবে জানি, তাদের জীবনে ‘ক্যান্সেল কালচার’ বা ‘ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম’ কথাগুলো কী অর্থ বহন করতে পারে!
বাংলাদেশে জেন-জি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রবল বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। শহরের শিক্ষিত ও প্রযুক্তি-সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণরা সহজেই এই পরিচয়ের ভেতরে নিজেদের খুঁজে পান। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের কাছে এটি প্রায় অচেনা একটি শব্দ। অথচ বয়সের হিসাবে সবাই একই প্রজন্মের অংশ। এই ব্যবধানই মনে করিয়ে দেয়, তরুণদের অভিজ্ঞতা ও পরিচয় কেবল বয়স দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। সামাজিক অবস্থান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য মিলিয়েই তৈরি হয় তাঁদের বাস্তবতা। তাই বাংলাদেশে জেন-জি বোঝার জন্য আমাদের হয়তো প্রজন্ম নয়, বরং সেই ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতার দিকে তাকানো জরুরি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে খুব জনপ্রিয় হয়েছে জেন-জি শব্দটি, বিশেষ করে আন্দোলনের সামনের সারিতে তরুণদের অবস্থানের কারণে। কিন্তু এই পরিচয় আসলে কার? শুধুই শহুরে সামর্থ্যবানদের, নাকি প্রান্তে বাস করা সুবিধবঞ্চিত তরুণদেরও?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রো স্টেশনের পাশে বসে শিশু-সন্তানকে খাওয়াচ্ছিলেন ১৯ বছরের কুলসুম। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে তাঁর। তখন থেকে একরকম রাস্তাতেই জীবন কাটান তিনি। মাঝে মাঝে কারো কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে টিকটক চালান। টিকটক চিনলেও, ‘জেন-জি’ চেনেন না কুলসুম। তিনি নিজেও যে একজন ‘জেন-জি’ সেই কথা জানেন না তিনি।
জীবন নিয়ে বড় কোনো প্রত্যাশা নেই কুলসুমের। ভাবলেশহীন গলায় বললেন, ‘মাথার ওপরে একটা ছাদ আর দ্যাশে শান্তি থাকলেই চলবো আমার।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে খুব জনপ্রিয় হয়েছে জেন-জি শব্দটি। বিশেষ করে আন্দোলনের সামনের সারিতে এই তরুণদের অবস্থানের কারণে। কিন্তু এই পরিচয় আসলে কার? রাস্তায় জীবন কাটানো কুলসুম বা দেশের প্রান্তে থাকা সুবিধাবঞ্চিতরাও কি এই অভিধা ধারণ করেন?
অক্সফোর্ড ডিকশনারি বলছে, যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মেছেন, তাঁরাই জেনারেশন জুমার্স বা জেন-জি।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় জেন-জিরা সাধারণভাবে যেমন প্রযুক্তিতে পারদর্শী তেমনি সমাজ সচেতনও। তারা জন্মেছে এক তথ্য প্রযুক্তির সমাজে। স্বভাব তাঁদের সারাক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে থাকা। মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক জ্য টোয়েং এজন্য তাঁদের নাম দিয়েছেন ‘আই-জেন’। মানে, ইনফর্মেশন জেনারেশন।
কিন্তু এমন বাস্তবতা কি বাংলাদেশের মতো সমাজের জন্যও সমান সত্য, যেখানে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ এখনো গ্রামে বা মফস্বলে বাস করে? শিক্ষা, প্রযুক্তি, অধিকার—এসব সুযোগও তো সমাজের সবাই সমানভাবে পায় না।
মিরপুর-১০ এলাকার টুইংকলস স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার বলছিলেন, ‘মাসখানের আগে টিভিতে বলতে শুনছি শব্দটা। কিন্তু জেন-জি আসলে কি আমি বুঝি না।’
‘আমি আন্দোলনে যাইনি, রাজনীতি, প্রযুক্তি এগুলো কিছুই ভালো বুঝি না এখনো, ফোন বা ফেসবুক কিছুই নেই আমার। আন্দোলনের সময় অনেক চিন্তা হচ্ছিল। বাসার সবাই কত কি আলোচনা করত, কিন্তু আন্দোলনে যাওয়া হয়নি।’ এক নাগারে বলে গেল নাসরিন।
নাসরিনের বাসার কাছে ময়লার স্তুপের পাশে ছোট্ট চায়ের দোকান ১৬ বছরের আল-আমিনের। টিকটকে অ্যাকাউন্ট আছে তার। ফলোয়ারও অনেক!
আল-আমিনের বন্ধুরা আন্দোলনে গিয়েছিল, কিন্তু বাসা থেকে মানা করায় সে যেতে পারেনি। জেন-জি কথাটা আগে কখনও শুনেছে কিনা জানতে চাইলে হেসে ফেলল আল-আমিন, শোনেনি আগে।
এই তিন তরুণই ঢাকায় বাস করে। কিন্তু কত তফাৎ তাদের সামাজিক বাস্তবস্তায়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের করা ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএল) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু যুক্ত আছে শিশুশ্রমসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।
২০২৩ সালের ইউনিসেফের এক রিপোর্ট জানায়, দেশের ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়েছিল ১৮ বছর বয়সের আগে। ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয় বয়স ১৫ হওয়ার আগেই। আর শহর এলাকায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ বাস করে ও ঘুমায় রাস্তায়, স্টেশন অথবা পার্কের মতো খোলা জায়গায়। দেশের মানুষের এই অংশের সংগ্রাম ‘হ্যাশট্যাগ’ বা ‘পপুলার ক্যাফে’ নিয়ে নয় বরং কেবল বেঁচে থাকা নিয়ে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আশরাফ বলেন, ‘জেন-জি ধারণাটি পশ্চিমা জীবনধারা থেকে ধার নেওয়া। তা আত্মস্থ করেছে একটি বিশেষ আর্থ-সামাজিক শ্রেণি। মূলত মধ্য ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত তরুণরাই পরিচিত এই সংস্কৃতির সঙ্গে। কিন্তু এই বয়সের সবাইকে ঢালাওভাবে জেন-জি বলে দেওয়া একটা শ্রেণির বিষয়, এটা এক ধরনের সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স।’
এই অভিধা বাংলাদেশের লাখো সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের মোটেও উপস্থাপন করে না বলে মন্তব্য করেন বুলবুল আশরাফ। তিনি বলেন, ‘শুধু বয়স দিয়ে প্রজন্ম নির্ধারণ করা উচিৎ নয়। কে কতটুকু শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা সামিয়ার বয়স ১৫। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট আছে। কোরিয়ান ড্রামার মতো হাল আমলের কন্টেন্টও দেখে সে। গ্রামে থাকলেও শহরের তরুণদের থেকে মোটেই পিছিয়ে নেই সামিয়া। কিন্তু জেন-জি কথাটা সামিয়াও জানে না।
গহিন পার্বত্য গ্রামের বাসিন্দা ২৪ বছরের উ থান্ট শ্যুই মারমা। প্রযুক্তি আর শহুরে সংস্কৃতি নিয়ে তেমন কিছুই জানার সুযোগ নেই তার। জেন-জি কথাটা শ্যুই মারমার না জানাটাই স্বাভাবিক।
মারমার মতো তরুণদের সংগ্রাম শহরের মানুষের সামনে প্রথম আসে কোভিডের সময়, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের। গ্রামে ইন্টারনেট না থাকায় সেই সময় তাদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাংলাদেশে সামাজিক পরিচয় নির্মাণে ভৌগোলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বয়সের সীমায় পড়েও কি শ্যুই মারমা জেন-জি প্রজন্মের বলে গন্য হবেন?
মোবাইল ফোন ছাড়া নাসরিন, টিকটকে পরিচিত মুখ আল-আমিন অথবা শিশু-সন্তানসহ ফুটপাতে বাস করা কুলসুমরা বয়সের বিচারে একই প্রজন্মের হলেও সামাজিক বাস্তবতায় প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা পুরোপুরি আলাদা।
শহুরে সংস্কৃতিতে জেন-জি পরিচয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও তা সামান্যই তুলে ধরে মূলধারার বাইরে থাকা অজস্র তরুণের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
যাদের আমরা পথশিশু, শিশুশ্রমিক, বা রাস্তায় রাত কাটানো দুর্ভাগা হিসেবে জানি, তাদের জীবনে ‘ক্যান্সেল কালচার’ বা ‘ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম’ কথাগুলো কী অর্থ বহন করতে পারে!
বাংলাদেশে জেন-জি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রবল বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। শহরের শিক্ষিত ও প্রযুক্তি-সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণরা সহজেই এই পরিচয়ের ভেতরে নিজেদের খুঁজে পান। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের কাছে এটি প্রায় অচেনা একটি শব্দ। অথচ বয়সের হিসাবে সবাই একই প্রজন্মের অংশ। এই ব্যবধানই মনে করিয়ে দেয়, তরুণদের অভিজ্ঞতা ও পরিচয় কেবল বয়স দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। সামাজিক অবস্থান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য মিলিয়েই তৈরি হয় তাঁদের বাস্তবতা। তাই বাংলাদেশে জেন-জি বোঝার জন্য আমাদের হয়তো প্রজন্ম নয়, বরং সেই ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতার দিকে তাকানো জরুরি।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)-এর মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিনগেজ বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি দুবাইয়ে হওয়া এ বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়।
৩০ মিনিট আগেপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
৩২ মিনিট আগেটিসিবির দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি মাসে প্রায় ২০ মিলিয়ন (দুই কোটি) লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা রয়েছে, যার অধিকাংশই স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংস্থাটি। তবে সরকার নির্ধারিত দামে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন দরপত্রে অংশ নেয় না। ফলে নিয়মিত তেল সরবরাহে হিমশিম অবস্থা তাদের।
২ ঘণ্টা আগেঅধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, এই প্রস্তাবিত কাঠামো কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য ধ্বংস করবে, নারী শিক্ষা সংকুচিত করবে এবং শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক পদকে হুমকির মুখে ফেলবে।
২ ঘণ্টা আগে