leadT1ad

গাজা দখলের ইসরায়েলি সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১০
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১৮
গাজা দখলের ইসরায়েলি সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়। সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের পুরো গাজা দখলের সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। এর পরিণতিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) গাজার সবচেয়ে বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানানোর একদিন পরই এই ঘোষণা আসে।

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বৃদ্ধির এই পরিকল্পনায় দখলকৃত উপত্যকার মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গণবাস্তুচ্যুত বাড়িয়ে তুলবে। ইসরায়েলের এই পরিকল্পনায় বিশ্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা নিচে দেওয়া হলো:

জাতিসংঘের মহাসচিব

গাজা শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণের ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে ‌‌‘মারাত্মকভাবে শঙ্কিত’ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ অবনতি হবে এবং ইতিমধ্যে বিপর্যয়ের শিকার হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনি ও জিম্মি ইসরায়েলিদের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধপরিস্থিতির এই অবনতি আরও বাস্তুচ্যুত, হত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে নিয়ে আসবে।

তিনি জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান

এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ভলকার টুর্ক বলেছেন, ইতিমধ্যে দখলকৃত গাজাকে আরও নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের রায়ে বলা আছে যতদ্রুত সম্ভব গাজা দখল বন্ধ, দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিতে সমাধান এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসরায়েলের গাজা দখলের সিদ্ধান্ত এই রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ অপরাধ। একে তিনি গণহত্যা, পদ্ধতিগত হত্যা, খাদ্য সংকট এবং দখলের ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ পদক্ষেপ নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

হামাস

ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে নিয়ে যাবে এবং গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের ‌‘ব‌লিদান’ বাড়িয়ে তুলবে।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, গাজা দখলের এই সিদ্ধান্তে এটি নিশ্চিত করেছে যে অপরাধী নেতানিয়াহু এবং তাঁর নাৎসি সরকারের কাছে জিম্মিদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তারা জানে আগ্রাসন বাড়ানো মানে জিম্মিদের জীবন দেওয়া।

ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ

ফিলিস্তিনি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি নির্মূলে যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়।

বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, ইহুদিবাদী সরকার গাজায় গণহত্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য আরব বিশ্ব ও পশ্চিমারা দায়ী।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট

ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যান্তোনিও কোস্টা বলেছেন, গাজা শহর দখলে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইইউ-ইসরায়েলে সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ইসরায়েলে সরকারকে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটি শুধু (দখলের সিদ্ধান্ত) ১৯ জুলাইয়ে ইইউর হাই রিপ্রেজেন্টিটিভের ঘোষিত চুক্তির লঙ্ঘনই নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি ও সর্বজনীন মূল্যবোধকেও ক্ষুণ্ন করে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাহী শাখার প্রধান উরসুলা ভন ডার লিন এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, গাজা শহরে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণে ইসরায়েলি সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য

শুক্রবার রাতে দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে ফেলবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে, জিম্মিদের জীবনকে বিপদে ফেলবে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গণবাস্তুচ্যুতির অধিক ঝুঁকি তৈরি করবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার গাজায় সামরিক অভিযানের ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে ‌‘ভুল’ আখ্যায়িত করে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গাজায় আক্রমণ বৃদ্ধির ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত ভুল। আমরা অবিলম্বে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।

স্টারমার আরও বলেন, এই পদক্ষেপ যুদ্ধ বন্ধে কিছু বয়ে আনবে না বা জিম্মিদের মুক্তিতে কোনো সাহায্য করবে না। এতে কেবল আরও রক্তপাত হবে।

জার্মান চ্যান্সেলর

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় ব্যবহার হতে পারে এমন সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে রপ্তানিতে জার্মানি অনুমোদন দেবে না।

তিনি বলেন, গত রাতে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কঠোর সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়। ইসরায়েলের উদ্দেশ্য কীভাবে সাধন হবে তা দেখা জার্মান সরকারের পক্ষে ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

ফান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্স সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে সংঘাতের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হবে এবং সম্পূর্ণ অচলাবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এটি একটি কার্যকর, সার্বভৌম রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাসে ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুণ্ন করবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গাজা দখলে ইসরায়েলের পরিকল্পনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটি অবিলম্বে ইসরায়েলকে বিপজ্জনক এ কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি গাজার মানবিক সংকট সমাধান এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার সঠিক উপায়।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তুরস্ক বলেছে, গাজা নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জোর করে বিতাড়িত করা। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

দেশটি বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঠেকাতে তাদের দায়িত্ব পালন করে। কারণ এর লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে জোরদার করা, গাজায় ফিলিস্তিনি নির্মূল চালিয়ে যাওয়া, ফিলিস্তিনের জনগণের জীবনের সব উপাদানকে নির্মূল করা, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্রের বাস্তবায়নকে ক্ষুণ্ন করা এবং ফিলিস্তিনি উদ্দেশ্যকে নিশ্চিহ্ন করা। এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর খাদ্য সংকট, নৃশংস আচরণ এবং জাতিগত নির্মূলের মতো অপরাধ করায় ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের কঠোর নিন্দা জানাই।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাঘেই বলেছেন, এটি গাজায় ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূলের এবং তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ইহুদিবাদী সরকারের সুনির্দিষ্ট অভিপ্রায়ের আরেকটি স্পষ্ট লক্ষণ।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে যুদ্ধ পরিস্থিতির ‌‘বিপজ্জনক অবনতি’ উল্লেখ করে কাতার সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে চলমান মানবিক সংকটকে আরও বাড়ানোর মতো ঝুঁকিতে ফেলবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে।

ইসরায়েলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা দিতে ‌‘অবিলম্বে পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জর্ডানের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আম্মান। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়। এছাড়া এটি দ্বি-রাষ্ট্রের ভিত্তিতে সংকট সমাধানকে অবমূল্যায়ন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে খর্ব করে।

আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সংযুক্ত আরব আমিরাত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ ডেকে আনবে। এতে গাজার মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে, বাড়াবে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের একপাক্ষিক এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে ইন্দোনেশিয়া।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে হুমকিতে ফেলবে এবং গাজায় মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পশ্চিম তীরকে ক্রমশ উপনিবেশ বানানোর ইসরায়েলি আকাঙ্ক্ষায় বেলজিয়াম সম্পূর্ণ অসম্মতি জানাচ্ছে। ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বেলজিয়াম জোরালো তৎপরতা চালাবে।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেজ বলেছেন, আমরা গাজা দখলে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। এটি কেবল ধ্বংসযজ্ঞ এবং কষ্ট আরও বাড়াবে।

তিনি বলেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, অবিলম্বে বড় আকারে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং সব জিম্মিকে মুক্তি জরুরি।

সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মারিয়া মালমার স্টেনগার্ড বলেছেন, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়াকে কঠিন করে তুলবে।

তিনি বলেন, ইসরায়েল সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি। আমাদের যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে।

স্টেনগার্ড আরও বলেন, আমি আগেও বার বার বলেছি গাজার পরিবর্তন, হ্রাস বা দখলের যেকোনো পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে।

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালটোনেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটি গাজায় মানবিক সংকটকে তীব্র ও দুর্ভিক্ষ ডেকে আনবে বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলিদের মুক্তির আশা করছি।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজায় সামরিক অভিযান তীব্র করার সিদ্ধান্তকে ভুল মন্তব্য করে অবিলম্বে তা পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন।

নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে একে ‘ভুল পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প।

তিনি বলেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভুল। গাজায় মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। অবিলম্বে পরিস্থিতির উন্নতি দরকার। কিন্তু ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত তাতে কোনো সাহায্য করবে না এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করবে না।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ উল্লেখ করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, এটি অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবনকে বড় ঝুঁকিতে ফেলবে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও হুঁশিয়ারি জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, এই পদক্ষেপ শান্তির যেকোনো সম্ভাবনাকে ভুণ্ডুল করে দেবে।

তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে থাকা ফিলিস্তিন জনগণের জন্য আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে পতিত হওয়ার সমতুল্য। সামরিক অভিযানের এ সম্প্রসারণ বিদ্যমান মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে এবং এই অঞ্চলে যেকোনো ধরনের শান্তির সম্ভাবনাকে ভুণ্ডুল করে দেবে।

তিনি বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এবং ইসরায়েলের এই অযৌক্তিক আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা

ইসরায়েল সরকারের গাজা শহর দখলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন খোদ ইসরায়েলেরই বিরোধী দলের নেতা ইয়ার ল্যাপিড।

তিনি বলেন, এটি ধ্বংসযজ্ঞ যা আরও ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে।

অতি ডানপন্থি মন্ত্রিদের চাপের কাছে নেতানিয়াহু নতি স্বীকার করেছেন অভিযোগ এনে ল্যাপিড বলেন, সামরিক উপদেশ এবং ইসরায়েলি সেনাদের ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত বিপর্যয়কর হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজা দখলের ইসরায়েলি সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ন্যাক্কারজনক এবং আপত্তিকর।

এক বিবৃবিতে তিনি বলেন, গাজা শহরে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের ফলে অতিরিক্ত যে গণহত্যা সংঘটিত হবে, তা কোনোভাবেই ন্যায্যতা পেতে পারে না।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আরও বলেন, যেমনটা ভেবেছিলাম, আমরা ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের যুদ্ধ ব্যবস্থার ফলে গাজায় ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটসহ গণহত্যার সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও বেদনাদায়ক অধ্যায়গুলি সামনে আসতে দেখেছি। গাজা শহরে সামরিক অভিযান বাড়ানোর পরিকল্পনায় এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, প্রকৃতপক্ষে সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। যেটি এখনো দেখা হয়নি।

আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন রুহুল আমিন

Ad 300x250

সম্পর্কিত