দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য তিনটি সূচক অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো— চরম খাদ্য ঘাটতি, তীব্র অপুষ্টি এবং ক্ষুধাজনিত মৃত্যু। সর্বশেষ বিশ্লেষণে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, গাজায় এই তিনটি শর্তই পূরণ হয়েছে।
স্ট্রিম ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহুদিন ধরেই বলে আসছিল ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। অবশেষে গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। এই প্রথমবার জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিল। আধুনিককালের ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি প্রথম দুর্ভিক্ষ। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এই প্রথমবার একসঙ্গে দুর্ভিক্ষদশায় পড়ল এত মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৫ লাখের বেশি বাসিন্দা ‘বিপজ্জনকভাবে’ ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছে।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি জানায়, গাজা সিটি ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে তা পুরো গাজায় ছড়িয়ে পড়বে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল কোনো রহস্য নয়। এটি মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়, নৈতিক ব্যর্থতা এবং মানবতারই পরাজয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের ঘাটতি নয়। এটি হলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে দেওয়া।‘
আইপিসির-র হিসাব অনুযায়ী, আগামী কয়েক সপ্তাহে গাজা গভর্নরেট থেকে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস অঞ্চলে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বারবার জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণমাত্রার মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ, ক্ষুধাজনিত মৃত্যু বাড়ছে, তীব্র অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, আর খাদ্য গ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গাজার লাখো মানুষ টানা কয়েক দিন কোনো খাবার পাচ্ছে না।
ইসরায়েলের দায়
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের সুস্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে তাদের জনগণের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গুতেরেস বলেন, ইসরায়েল তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না এবং এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি যোগ করেন, আর কোনো অজুহাত নয়। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, আগামীকাল নয়।
গাজায় কার্যরত জাতিসংঘ সংস্থাগুলোও মহাসচিবের সঙ্গে একযোগে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে করে বাধাহীনভাবে বৃহৎ পরিসরে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সংস্থাগুলো গাজা সিটিতে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযানের হুমকি এবং সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এই অভিযান সাধারণ মানুষের জন্য আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে, যেখানে ইতিমধ্যেই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক মানুষ— বিশেষ করে অসুস্থ ও অপুষ্ট শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হয়তো কখনোই সরে যেতে সক্ষম হবে না। ফলে তারা ইসরায়েলি হামলায় মারা পড়বে।
দুর্ভিক্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ছে
সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ গাজা উপত্যকায় ৬ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এটি আইপিসির পর্যায় ৫ বা সর্বোচ্চ ঝুঁকির স্তর।
এ ছাড়া আরও ১১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পড়বে পর্যায় ৪-এর ঝুঁকিতে। আরও ৩ লাখ ৯৬ হাজার মানুষ থাকবে পর্যায় ৩ বা ‘সংকটজনক’ অবস্থায়।
উত্তর গাজার পরিস্থিতি গাজা সিটির মতোই ভয়াবহ, এমনকি তার চেয়েও খারাপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য তিনটি সূচক অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো— চরম খাদ্য ঘাটতি, তীব্র অপুষ্টি এবং ক্ষুধাজনিত মৃত্যু। সর্বশেষ বিশ্লেষণে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, গাজায় এই তিনটি শর্তই পূরণ হয়েছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক টম ফ্লেচার বলেন, ‘আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে এই দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করা যেত’।
উর্বরভূমিতে নজিরবিহীন দুর্ভিক্ষ
টম ফ্লেচার বলেন, ‘ইসরায়েলের পদ্ধতিগত বাধার কারণে খাদ্যের চালান সীমান্তে আটকে আছে। কয়েকশ মিটার দূরে খাদ্য মজুদ থাকলেও গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। অথচ গাজা একটি উর্বর ভূমি। এটি সেই দুর্ভিক্ষ, যার বিষয়ে আমরা বারবার সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, যাতে তারা বাস্তব চিত্র তুলে না ধরতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ২০২৫ সালের দুর্ভিক্ষ। একবিংশ শতাব্দীর দুর্ভিক্ষ, যা নজরদারি করছে ড্রোন ও আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি। ইসরায়েলি নেতারা খাদ্যকে প্রকাশ্যে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।’
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ফ্লেচার বলেন, ‘এটি বিশ্বের দুর্ভিক্ষ। এটি এমন এক দুর্ভিক্ষ, যা ভবিষ্যতে প্রশ্ন করবে– কিন্তু তোমরা কী করেছিলে? এটি এমন এক দুর্ভিক্ষ, যা আমাদের সবাইকে তাড়া করবে।’
জাতিসংঘ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় শিশুদের অপুষ্টি ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে। শুধু জুলাই মাসেই ১২ হাজারের বেশি শিশুকে তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মাসিক সংখ্যা এবং বছরের শুরু থেকে ছয় গুণ বেশি।
ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ইসরায়েল সরকারের নীতির সরাসরি ফল।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ। এর ফলে যে মৃত্যু ঘটছে, তা ইচ্ছাকৃত হত্যার যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে।’
তুর্ক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। গাজা গভর্নরেটে দুর্ভিক্ষ বন্ধ করতে হবে এবং গোটা গাজা উপত্যকায় প্রাণহানি রোধ করতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক সহায়তা দ্রুত প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
লাখ লাখ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে
গত মে মাসের পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা শিশুর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। ২০২৬ সালের জুন শেষে এই সংখ্যা ১৪ হাজার ১০০ থেকে বেড়ে ৪৩ হাজার ৪০০ হতে পারে।
নতুন মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজায় তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টির পরিস্থিতি আইপিসি পর্যবেক্ষণ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জুলাই থেকে গাজায় কিছুটা খাদ্য ও সহায়তা প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল, অনিয়মিত ও সীমিত।
এদিকে গাজার প্রায় ৯৮ শতাংশ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত বা অপ্রবেশযোগ্য হয়ে পড়েছে। কৃষি খাত ও স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ধ্বংস হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহুদিন ধরেই বলে আসছিল ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। অবশেষে গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। এই প্রথমবার জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিল। আধুনিককালের ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি প্রথম দুর্ভিক্ষ। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এই প্রথমবার একসঙ্গে দুর্ভিক্ষদশায় পড়ল এত মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৫ লাখের বেশি বাসিন্দা ‘বিপজ্জনকভাবে’ ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছে।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি জানায়, গাজা সিটি ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে তা পুরো গাজায় ছড়িয়ে পড়বে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল কোনো রহস্য নয়। এটি মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়, নৈতিক ব্যর্থতা এবং মানবতারই পরাজয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের ঘাটতি নয়। এটি হলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে দেওয়া।‘
আইপিসির-র হিসাব অনুযায়ী, আগামী কয়েক সপ্তাহে গাজা গভর্নরেট থেকে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস অঞ্চলে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বারবার জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণমাত্রার মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ, ক্ষুধাজনিত মৃত্যু বাড়ছে, তীব্র অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, আর খাদ্য গ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গাজার লাখো মানুষ টানা কয়েক দিন কোনো খাবার পাচ্ছে না।
ইসরায়েলের দায়
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের সুস্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে তাদের জনগণের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গুতেরেস বলেন, ইসরায়েল তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না এবং এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি যোগ করেন, আর কোনো অজুহাত নয়। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, আগামীকাল নয়।
গাজায় কার্যরত জাতিসংঘ সংস্থাগুলোও মহাসচিবের সঙ্গে একযোগে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে করে বাধাহীনভাবে বৃহৎ পরিসরে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সংস্থাগুলো গাজা সিটিতে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযানের হুমকি এবং সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এই অভিযান সাধারণ মানুষের জন্য আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে, যেখানে ইতিমধ্যেই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক মানুষ— বিশেষ করে অসুস্থ ও অপুষ্ট শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হয়তো কখনোই সরে যেতে সক্ষম হবে না। ফলে তারা ইসরায়েলি হামলায় মারা পড়বে।
দুর্ভিক্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ছে
সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ গাজা উপত্যকায় ৬ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এটি আইপিসির পর্যায় ৫ বা সর্বোচ্চ ঝুঁকির স্তর।
এ ছাড়া আরও ১১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পড়বে পর্যায় ৪-এর ঝুঁকিতে। আরও ৩ লাখ ৯৬ হাজার মানুষ থাকবে পর্যায় ৩ বা ‘সংকটজনক’ অবস্থায়।
উত্তর গাজার পরিস্থিতি গাজা সিটির মতোই ভয়াবহ, এমনকি তার চেয়েও খারাপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য তিনটি সূচক অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো— চরম খাদ্য ঘাটতি, তীব্র অপুষ্টি এবং ক্ষুধাজনিত মৃত্যু। সর্বশেষ বিশ্লেষণে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, গাজায় এই তিনটি শর্তই পূরণ হয়েছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক টম ফ্লেচার বলেন, ‘আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে এই দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করা যেত’।
উর্বরভূমিতে নজিরবিহীন দুর্ভিক্ষ
টম ফ্লেচার বলেন, ‘ইসরায়েলের পদ্ধতিগত বাধার কারণে খাদ্যের চালান সীমান্তে আটকে আছে। কয়েকশ মিটার দূরে খাদ্য মজুদ থাকলেও গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। অথচ গাজা একটি উর্বর ভূমি। এটি সেই দুর্ভিক্ষ, যার বিষয়ে আমরা বারবার সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, যাতে তারা বাস্তব চিত্র তুলে না ধরতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ২০২৫ সালের দুর্ভিক্ষ। একবিংশ শতাব্দীর দুর্ভিক্ষ, যা নজরদারি করছে ড্রোন ও আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি। ইসরায়েলি নেতারা খাদ্যকে প্রকাশ্যে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।’
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ফ্লেচার বলেন, ‘এটি বিশ্বের দুর্ভিক্ষ। এটি এমন এক দুর্ভিক্ষ, যা ভবিষ্যতে প্রশ্ন করবে– কিন্তু তোমরা কী করেছিলে? এটি এমন এক দুর্ভিক্ষ, যা আমাদের সবাইকে তাড়া করবে।’
জাতিসংঘ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় শিশুদের অপুষ্টি ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে। শুধু জুলাই মাসেই ১২ হাজারের বেশি শিশুকে তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মাসিক সংখ্যা এবং বছরের শুরু থেকে ছয় গুণ বেশি।
ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ইসরায়েল সরকারের নীতির সরাসরি ফল।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ। এর ফলে যে মৃত্যু ঘটছে, তা ইচ্ছাকৃত হত্যার যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে।’
তুর্ক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। গাজা গভর্নরেটে দুর্ভিক্ষ বন্ধ করতে হবে এবং গোটা গাজা উপত্যকায় প্রাণহানি রোধ করতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক সহায়তা দ্রুত প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
লাখ লাখ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে
গত মে মাসের পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা শিশুর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। ২০২৬ সালের জুন শেষে এই সংখ্যা ১৪ হাজার ১০০ থেকে বেড়ে ৪৩ হাজার ৪০০ হতে পারে।
নতুন মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজায় তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টির পরিস্থিতি আইপিসি পর্যবেক্ষণ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জুলাই থেকে গাজায় কিছুটা খাদ্য ও সহায়তা প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল, অনিয়মিত ও সীমিত।
এদিকে গাজার প্রায় ৯৮ শতাংশ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত বা অপ্রবেশযোগ্য হয়ে পড়েছে। কৃষি খাত ও স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ধ্বংস হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সোমবার গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই হামলায় ৫ সাংবাদিক ও ১ ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেঅবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মী রয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেআল-গাদ টিভির লাইভ ক্যামেরায় দেখা যায়, হাসপাতালের ক্ষতিগ্রস্ত সিঁড়িতে উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছিলেন, ঠিক তখনই দ্বিতীয় হামলা হয়।
১ দিন আগেফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত ৬ আগস্ট থেকে গাজা সিটিতে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত জেইতুন ও সাবরা এলাকায় এক হাজারের বেশি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।
১ দিন আগে