স্ট্রিম ডেস্ক
এ মাসের শুরতে গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এটি ছিল একটি বেসামরিক মানবিক মিশন, যার উদ্দেশ্য ছিল গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা। এতে প্রায় ৪৫০ জন আন্তর্জাতিক অধিকার কর্মী আটক হন। ইতালি, স্পেন, নিউজিল্যান্ড, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা ফেরত গিয়ে অভিযোগ করেছেন, আটক অবস্থায় তারা গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে ছিল শারীরিক সহিংসতা, মৌলিক প্রয়োজন অস্বীকার এবং মানসিক অপমান। তবে ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, সব অধিকার বজায় রাখা হয়েছিল। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১৭০ জন কর্মী দেশে ফেরত গেছেন। তবে অনেকেই এখনও আটক আছেন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ ও কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মিশন
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আগস্টের শেষ দিকে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এতে ছিল ৪০টির বেশি জাহাজ। এগুলো প্রতীকী মানবিক সাহায্য বহন করছিল— খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ। উদ্যোগটি নেয় আন্তর্জাতিক কর্মীদের একটি জোট। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্ববাসীর সামনে গাজা অবরোধের মানবিক প্রভাব তুলে ধরা। গাজা প্রায় ১৮ বছর ধরে ইসরায়েলের সর্বাত্মক— স্থল, আকাশ ও নৌ অবরোধে আছে।
এই উদ্যোগের পেছনে ছিল ইসরায়েল-হামাস সংঘাত, যা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর। ফ্লোটিলায় যোগ দেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা, ব্রাজিলিয়ান অধিকার কর্মী থিয়াগো আভিলা এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫০ জন বা আরও বেশি। তারা এসেছিলেন ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে।
সমর্থকেরা একে অহিংস প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখেন। তারা একে বলছেন ‘গ্লোবাল সুমুদ’ বা বৈশ্বিক অটলতা বা প্রতিরোধ। ২০১০ সালের মাভি মারমারা ঘটনার সঙ্গেও এটির তুলনা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য একে উসকানি বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, তাদের নিরাপত্তার জন্য গাজার ওপর অবরোধ বৈধ।
আটক ও প্রাথমিক অবস্থান
গত ১ অক্টোবর (বুধবার) রাত থেকে ৩ অক্টোবর (শুক্রবার) পর্যন্ত ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ফ্লোটিলার ৪০টিরও বেশি ছোট-বড় জাহাজ আটক করে। তারা জাহাজের সব আরোহীকে গ্রেপ্তার করে। আটক ব্যক্তিদের সামরিক হেফাজত থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রধানত তাদের রাখা হয় কেটজিওত কারাগারে, যা নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত। এটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন একটি কারাগার হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ করা হয়েছে, আটক অবস্থায় পরিবহনের সময় কর্মীরা গাদাগাদি করা ভ্যানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তাদের হাত প্লাস্টিকের টাই দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথা নিচু করে রাখতে এবং প্রহরীদের সঙ্গে চোখাচোখি এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। আইনজীবীর সহায়তা, বিশুদ্ধ পানি বা চিকিৎসা সেবার সুযোগ সরবরাহ করা হয়নি। এতে করে গ্রেপ্তারের সময় আহত ও অসুস্থদের অবস্থা আরও খারাপ হয়।
দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের ধরন
ফেরত আসা অধিকার কর্মীরা একাধিক অভিযোগ করেছেন। তাদের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে পরিকল্পিত অমানবিকতার চিত্র।
মৌলিক প্রয়োজন অস্বীকার: অনেকেই জানিয়েছেন, খাবার ও পানির অভাবে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। কেউ কেউ টয়লেটের পানি খেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতালীয় কর্মী পাওলো দে মন্তিস জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। মাথা তুলে তাকালে তাকে চড় মারা হয় এবং খাবার দেওয়া হয়নি।
মালয়েশিয়ার হেলিজা ও হাজওয়ানি হেলমি নামের দুই বোন বলেন, অসুস্থদের প্রতিও প্রহরীরা উদাসীন ছিল। তাদের ভাষায় ইসরায়েলি সেনাদের মনোভাব ছিল এমন— ‘মরে গেছে? না হলে সেটা আমার সমস্যা নয়।’
স্প্যানিশ অধিকার কর্মী গোরেত্তি সারাসিবার জানান, বন্দিদের সারাদিন না খাইয়ে রাখা হতো এবং মানসিক চাপে রাখতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ভয়াবহ ভিডিও জোর করে দেখানো হতো।
শারীরিক ও মৌখিক সহিংসতা: অনেকের ওপর মারধর করা হয়েছে, অস্ত্র ও কুকুর দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় ডাচ কর্মী মারকো তেশ জানান, মুখে কিছু চাপা দেওয়ায় তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না।
স্প্যানিশ সংসদ সদস্য হুয়ান বর্দেরা অভিযোগ করেন, তাদের পচা খাবার, দূষিত পানি দেওয়া হতো এবং নিয়মিত প্রহার করা হতো। সশস্ত্র প্রহরীরা সেলে ঢুকে বন্দিদের মাটিতে ফেলে টেনে নিয়ে যেত।
ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি অভিযোগ করেন, ওষুধ নিয়ে নেওয়া হতো এবং বন্দিদের ‘বানরের মতো’ উপহাস করা হতো। এক মুসলিম নারীকে জোর করে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়।
অপমান ও প্রচারণা: গ্রেটা থুনবার্গ অভিযোগ করেন, তাকে মাটি দিয়ে টেনে-হিচঁড়ে নেওয়া হয় এবং ইসরায়েলের পতাকা চুম্বন করানো হয়। এমনকি সাজানো ছবিতেও তাকে ইসরায়েলি পতাকা হাতে দাঁড় করানো হয়।
নিউজিল্যান্ডের স্যামুয়েল লিসনকে পানি ছাড়া গাদাগাদি করা একটি ঘরে রাখা হয়, যেখানে ছিল ছারপোকায় ভরা খাট। ইতালির চেজারে তোফানি ও ইয়াসিন লাফরাম জানান, তাদের হয়রানি করা হয়েছে এবং অস্ত্র তাক করা হয়েছে।
তারা বলেন, একটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। লরেঞ্জো দ’আগোস্তিনো অভিযোগ করেন, তাদের জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে এবং লেজার-সাইটেড বন্দুক দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।
এসব অভিযোগ মূলত প্রকাশ পায় কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরার পর— ইস্তাম্বুল, রোম, মাদ্রিদসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে। এতে করে এখনও ইসরায়েলে আটক থাকা প্রায় ২৮০ অধিকার কর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অনশন শুরু করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: অস্বীকার ও কঠোর অবস্থান
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, সব বন্দির অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। তারা পানি, খাবার, টয়লেট, আইনজীবীর সুযোগ পেয়েছেন এবং কোনো শারীরিক নির্যাতন হয়নি। কর্মকর্তারা জানান, গ্রেটা থুনবার্গসহ কয়েকজন দ্রুত দেশ ছাড়তে অস্বীকার করায় তাদের আটক দীর্ঘ হয়েছে।
ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, তিনি এই আচরণে ‘গর্বিত।’ তার ভাষায়, ‘সন্ত্রাসের সমর্থকদের সাথে সন্ত্রাসীর মতোই আচরণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ ভেবে থাকে এখানে এসে লাল গালিচা ও বাঁশির সুরে স্বাগত পাবেন, তবে তারা ভুল করেছেন।’ তাকে ভিডিওতেও ফেরত আসা বন্দিদের বিদ্রূপ করতেও দেখা গেছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে দাবি করে, আটক অবস্থায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাদের মতে, মুক্তির পর এসব অভিযোগ করা হয়েছে কেবল প্রচারণার উদ্দেশ্যে।
আটকদের ধাপে ধাপে মুক্তি ও চলমান আটক
৬ অক্টোবরের মধ্যে অন্তত ১৭০ জন অধিকার কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ৪–৫ অক্টোবর ২৬ জন ইতালীয় ইস্তাম্বুল ও রোম হয়ে দেশে ফেরেন। ২৯ জন ফেরেন রোববার। ৫ অক্টোবর ২১ জন স্প্যানিশ কর্মী, যাদের মধ্যে ছিলেন গোরেত্তি সারাসিবার ও রাফায়েল বোরেগো, মাদ্রিদে পৌঁছান। ৬–৭ অক্টোবর ৭০ জনের বেশি অধিকার কর্মীকে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ২৮ জন ফরাসি, ২৭ জন গ্রিক (সোমবার আসার কথা), ১৫ জন ইতালীয় এবং ৯ জন সুইডিশ (গ্রেটা থুনবার্গসহ)।
নিউজিল্যান্ডের তিন বন্দি— রানা হামিদা, ইউসুফ সাম্মুর ও স্যামুয়েল লিসন— কনস্যুলার সাক্ষাৎ পেলেও তারা সাম্প্রতিক ফ্লাইটে ছিলেন না। তাদের পরিবার ও সমর্থকেরা দ্রুত ফেরত আনার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড গ্রিন পার্টির সহনেত্রী ক্লোয়ি সোয়ারব্রিক সরাসরি উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেন, বলেন এটি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’, কিন্তু আটক বা অবরোধ নিয়ে সমালোচনা করেননি।
ফ্লোটিলা আটক বিশ্বজুড়ে আবারও ইসরায়েলের গাজা নীতি নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। পাকিস্তান, তুরস্ক, কলম্বিয়া ও গ্রিসের পক্ষ থেকে নিন্দা এসেছে। বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
নিউজিল্যান্ডে বিষয়টি রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স অংশগ্রহণকারীদের ‘অ্যাটেনশন সিকার’ বলেছেন। অন্যদিকে সমর্থকেরা, যেমন সামার সাম্মুর, সরকারের কাছে ‘নৈতিক সাহস’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা গাজা অবরোধ ও তথাকথিত গণহত্যার বিষয়টি তুলেছেন।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস ফেরত আসা নাগরিকদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আইনি সংগঠন আদালাহ আটক কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আটকের ঝুঁকি তুলে ধরছে।
এই ঘটনা স্থায়ী উত্তেজনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকার কর্মীরা ফ্লোটিলাকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় নৈতিক দায়িত্ব মনে করেন। অন্যদিকে ইসরায়েল হামাসের হুমকির অজুহাত তুলে ধরে নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপ ও গ্লোবাল সাউথের সম্পর্ক আরও খারাপ করতে পারে।
একজন ফেরত আসা কর্মীর ভাষায়, গাজায় পৌঁছাতে না পারা আসলে অবরোধকে আরও ‘অদৃশ্য’ করে তুলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। সামনে মুক্তির অগ্রগতি ও সম্ভাব্য মামলার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা জরুরি হবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন
এ মাসের শুরতে গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এটি ছিল একটি বেসামরিক মানবিক মিশন, যার উদ্দেশ্য ছিল গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা। এতে প্রায় ৪৫০ জন আন্তর্জাতিক অধিকার কর্মী আটক হন। ইতালি, স্পেন, নিউজিল্যান্ড, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা ফেরত গিয়ে অভিযোগ করেছেন, আটক অবস্থায় তারা গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে ছিল শারীরিক সহিংসতা, মৌলিক প্রয়োজন অস্বীকার এবং মানসিক অপমান। তবে ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, সব অধিকার বজায় রাখা হয়েছিল। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১৭০ জন কর্মী দেশে ফেরত গেছেন। তবে অনেকেই এখনও আটক আছেন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ ও কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মিশন
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আগস্টের শেষ দিকে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এতে ছিল ৪০টির বেশি জাহাজ। এগুলো প্রতীকী মানবিক সাহায্য বহন করছিল— খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ। উদ্যোগটি নেয় আন্তর্জাতিক কর্মীদের একটি জোট। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্ববাসীর সামনে গাজা অবরোধের মানবিক প্রভাব তুলে ধরা। গাজা প্রায় ১৮ বছর ধরে ইসরায়েলের সর্বাত্মক— স্থল, আকাশ ও নৌ অবরোধে আছে।
এই উদ্যোগের পেছনে ছিল ইসরায়েল-হামাস সংঘাত, যা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর। ফ্লোটিলায় যোগ দেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা, ব্রাজিলিয়ান অধিকার কর্মী থিয়াগো আভিলা এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫০ জন বা আরও বেশি। তারা এসেছিলেন ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে।
সমর্থকেরা একে অহিংস প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখেন। তারা একে বলছেন ‘গ্লোবাল সুমুদ’ বা বৈশ্বিক অটলতা বা প্রতিরোধ। ২০১০ সালের মাভি মারমারা ঘটনার সঙ্গেও এটির তুলনা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য একে উসকানি বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, তাদের নিরাপত্তার জন্য গাজার ওপর অবরোধ বৈধ।
আটক ও প্রাথমিক অবস্থান
গত ১ অক্টোবর (বুধবার) রাত থেকে ৩ অক্টোবর (শুক্রবার) পর্যন্ত ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ফ্লোটিলার ৪০টিরও বেশি ছোট-বড় জাহাজ আটক করে। তারা জাহাজের সব আরোহীকে গ্রেপ্তার করে। আটক ব্যক্তিদের সামরিক হেফাজত থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রধানত তাদের রাখা হয় কেটজিওত কারাগারে, যা নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত। এটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন একটি কারাগার হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ করা হয়েছে, আটক অবস্থায় পরিবহনের সময় কর্মীরা গাদাগাদি করা ভ্যানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তাদের হাত প্লাস্টিকের টাই দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথা নিচু করে রাখতে এবং প্রহরীদের সঙ্গে চোখাচোখি এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। আইনজীবীর সহায়তা, বিশুদ্ধ পানি বা চিকিৎসা সেবার সুযোগ সরবরাহ করা হয়নি। এতে করে গ্রেপ্তারের সময় আহত ও অসুস্থদের অবস্থা আরও খারাপ হয়।
দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের ধরন
ফেরত আসা অধিকার কর্মীরা একাধিক অভিযোগ করেছেন। তাদের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে পরিকল্পিত অমানবিকতার চিত্র।
মৌলিক প্রয়োজন অস্বীকার: অনেকেই জানিয়েছেন, খাবার ও পানির অভাবে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। কেউ কেউ টয়লেটের পানি খেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতালীয় কর্মী পাওলো দে মন্তিস জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। মাথা তুলে তাকালে তাকে চড় মারা হয় এবং খাবার দেওয়া হয়নি।
মালয়েশিয়ার হেলিজা ও হাজওয়ানি হেলমি নামের দুই বোন বলেন, অসুস্থদের প্রতিও প্রহরীরা উদাসীন ছিল। তাদের ভাষায় ইসরায়েলি সেনাদের মনোভাব ছিল এমন— ‘মরে গেছে? না হলে সেটা আমার সমস্যা নয়।’
স্প্যানিশ অধিকার কর্মী গোরেত্তি সারাসিবার জানান, বন্দিদের সারাদিন না খাইয়ে রাখা হতো এবং মানসিক চাপে রাখতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ভয়াবহ ভিডিও জোর করে দেখানো হতো।
শারীরিক ও মৌখিক সহিংসতা: অনেকের ওপর মারধর করা হয়েছে, অস্ত্র ও কুকুর দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় ডাচ কর্মী মারকো তেশ জানান, মুখে কিছু চাপা দেওয়ায় তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না।
স্প্যানিশ সংসদ সদস্য হুয়ান বর্দেরা অভিযোগ করেন, তাদের পচা খাবার, দূষিত পানি দেওয়া হতো এবং নিয়মিত প্রহার করা হতো। সশস্ত্র প্রহরীরা সেলে ঢুকে বন্দিদের মাটিতে ফেলে টেনে নিয়ে যেত।
ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি অভিযোগ করেন, ওষুধ নিয়ে নেওয়া হতো এবং বন্দিদের ‘বানরের মতো’ উপহাস করা হতো। এক মুসলিম নারীকে জোর করে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়।
অপমান ও প্রচারণা: গ্রেটা থুনবার্গ অভিযোগ করেন, তাকে মাটি দিয়ে টেনে-হিচঁড়ে নেওয়া হয় এবং ইসরায়েলের পতাকা চুম্বন করানো হয়। এমনকি সাজানো ছবিতেও তাকে ইসরায়েলি পতাকা হাতে দাঁড় করানো হয়।
নিউজিল্যান্ডের স্যামুয়েল লিসনকে পানি ছাড়া গাদাগাদি করা একটি ঘরে রাখা হয়, যেখানে ছিল ছারপোকায় ভরা খাট। ইতালির চেজারে তোফানি ও ইয়াসিন লাফরাম জানান, তাদের হয়রানি করা হয়েছে এবং অস্ত্র তাক করা হয়েছে।
তারা বলেন, একটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। লরেঞ্জো দ’আগোস্তিনো অভিযোগ করেন, তাদের জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে এবং লেজার-সাইটেড বন্দুক দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।
এসব অভিযোগ মূলত প্রকাশ পায় কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরার পর— ইস্তাম্বুল, রোম, মাদ্রিদসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে। এতে করে এখনও ইসরায়েলে আটক থাকা প্রায় ২৮০ অধিকার কর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অনশন শুরু করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: অস্বীকার ও কঠোর অবস্থান
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, সব বন্দির অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। তারা পানি, খাবার, টয়লেট, আইনজীবীর সুযোগ পেয়েছেন এবং কোনো শারীরিক নির্যাতন হয়নি। কর্মকর্তারা জানান, গ্রেটা থুনবার্গসহ কয়েকজন দ্রুত দেশ ছাড়তে অস্বীকার করায় তাদের আটক দীর্ঘ হয়েছে।
ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, তিনি এই আচরণে ‘গর্বিত।’ তার ভাষায়, ‘সন্ত্রাসের সমর্থকদের সাথে সন্ত্রাসীর মতোই আচরণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ ভেবে থাকে এখানে এসে লাল গালিচা ও বাঁশির সুরে স্বাগত পাবেন, তবে তারা ভুল করেছেন।’ তাকে ভিডিওতেও ফেরত আসা বন্দিদের বিদ্রূপ করতেও দেখা গেছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে দাবি করে, আটক অবস্থায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাদের মতে, মুক্তির পর এসব অভিযোগ করা হয়েছে কেবল প্রচারণার উদ্দেশ্যে।
আটকদের ধাপে ধাপে মুক্তি ও চলমান আটক
৬ অক্টোবরের মধ্যে অন্তত ১৭০ জন অধিকার কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ৪–৫ অক্টোবর ২৬ জন ইতালীয় ইস্তাম্বুল ও রোম হয়ে দেশে ফেরেন। ২৯ জন ফেরেন রোববার। ৫ অক্টোবর ২১ জন স্প্যানিশ কর্মী, যাদের মধ্যে ছিলেন গোরেত্তি সারাসিবার ও রাফায়েল বোরেগো, মাদ্রিদে পৌঁছান। ৬–৭ অক্টোবর ৭০ জনের বেশি অধিকার কর্মীকে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ২৮ জন ফরাসি, ২৭ জন গ্রিক (সোমবার আসার কথা), ১৫ জন ইতালীয় এবং ৯ জন সুইডিশ (গ্রেটা থুনবার্গসহ)।
নিউজিল্যান্ডের তিন বন্দি— রানা হামিদা, ইউসুফ সাম্মুর ও স্যামুয়েল লিসন— কনস্যুলার সাক্ষাৎ পেলেও তারা সাম্প্রতিক ফ্লাইটে ছিলেন না। তাদের পরিবার ও সমর্থকেরা দ্রুত ফেরত আনার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড গ্রিন পার্টির সহনেত্রী ক্লোয়ি সোয়ারব্রিক সরাসরি উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেন, বলেন এটি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’, কিন্তু আটক বা অবরোধ নিয়ে সমালোচনা করেননি।
ফ্লোটিলা আটক বিশ্বজুড়ে আবারও ইসরায়েলের গাজা নীতি নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। পাকিস্তান, তুরস্ক, কলম্বিয়া ও গ্রিসের পক্ষ থেকে নিন্দা এসেছে। বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
নিউজিল্যান্ডে বিষয়টি রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স অংশগ্রহণকারীদের ‘অ্যাটেনশন সিকার’ বলেছেন। অন্যদিকে সমর্থকেরা, যেমন সামার সাম্মুর, সরকারের কাছে ‘নৈতিক সাহস’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা গাজা অবরোধ ও তথাকথিত গণহত্যার বিষয়টি তুলেছেন।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস ফেরত আসা নাগরিকদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আইনি সংগঠন আদালাহ আটক কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আটকের ঝুঁকি তুলে ধরছে।
এই ঘটনা স্থায়ী উত্তেজনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকার কর্মীরা ফ্লোটিলাকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় নৈতিক দায়িত্ব মনে করেন। অন্যদিকে ইসরায়েল হামাসের হুমকির অজুহাত তুলে ধরে নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপ ও গ্লোবাল সাউথের সম্পর্ক আরও খারাপ করতে পারে।
একজন ফেরত আসা কর্মীর ভাষায়, গাজায় পৌঁছাতে না পারা আসলে অবরোধকে আরও ‘অদৃশ্য’ করে তুলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। সামনে মুক্তির অগ্রগতি ও সম্ভাব্য মামলার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা জরুরি হবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন
এই বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তিন গবেষক—মেরি ই. ব্রানকাও, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য তাঁরা এ সম্মানজনক পদকে ভূষিত হচ্ছেন।
৫ ঘণ্টা আগেমাউন্ট এভারেস্টের তিব্বত এলাকায় দুর্গম পূর্ব ঢালে ভয়াবহ তুষারঝড়ে প্রায় এক হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন। এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৯০০ মিটার (১৬ হাজার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। প্রবল বরফে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত গ্রামবাসী ও উদ্ধারকর্মী পথ পরিষ্কারের কাজ চালাচ্ছেন।
৯ ঘণ্টা আগেইন্দোনেশিয়ার সিদোয়ারজোতে একটি ইসলামি বোর্ডিং স্কুলের নামাজঘর ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ধসের পর থেকে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেসেপ্টেম্বরের শেষদিকে তালেবানরা আফগানিস্তানে হঠাৎ করে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়। এতে ৪৩ মিলিয়ন মানুষ টানা ৪৮ ঘণ্টা ডিজিটাল বিচ্ছিন্নতায় পড়ে। মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট টিভি এবং ল্যান্ডলাইন যোগাযোগও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
১ দিন আগে