ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনাটি আবারও ইসরায়েলের পক্ষেই ঝুঁকে আছে।
স্ট্রিম ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেটি গ্রহণ করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ হাজার ১০০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি হলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ইতিবাচক কিছু নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও বিশ্লেষক ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘গণহত্যা বন্ধ করার বিষয়টিও এমনভাবে বাঁধা হয়েছে, যেখানে অপরাধী পক্ষই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। গণহত্যা চালানো ইসরায়েল এবং এতে অর্থায়ন করা যুক্তরাষ্ট্রই ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য ঠিক করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিটি পড়লে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটিও নিশ্চয়তা নেই। সব নিশ্চয়তাই দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলকে।’ বুত্তু ২০০০-২০০৫ সালের ফিলিস্তিনি আলোচক দলের সদস্য ছিলেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। বিনিময়ে হামাসকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, যাদের মধ্যে জীবিত ও মৃত উভয়ই রয়েছে। ইসরায়েলকেও শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং নিহতদের মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে। ক্ষমতা যাবে ‘বোর্ড অব পিস’-এর হাতে, যা একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী প্রশাসন। ট্রাম্প থাকবেন এর প্রধান। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও, যিনি ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী ছিলেন।
যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেবে, তারা ক্ষমা পাবে। অন্যরা চাইলে গাজা ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার নিরাপদ পথ পাবে। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তা ফের চালু হবে। শর্ত পূরণের পর ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে এই প্রত্যাহার কে নিশ্চিত করবে, তা স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে গাজায় ব্যবস্থা নিতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পাশে থাকবে। অথচ মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।
তবে পরিকল্পনায় বহু প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নাম পরিকল্পনায় থাকলেও তাদের কোনো তাৎক্ষণিক ভূমিকা নেই। আগে তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু কী ধরনের সংস্কার তা পরিষ্কার নয়। অতীতে পিএকে শাসনব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি দূরীকরণ, শিক্ষা কারিকুলাম বদলানো এবং বন্দিদের পরিবারের সহায়তা কর্মসূচি পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
পিএ বন্দিদের পরিবারভিত্তিক ভাতা সংস্কার করেছে। তবুও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পুরোনো নীতির সমালোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত পিএ গাজা শাসন করতে পারবে না। লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সহায়তা পৌঁছে দেবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট। তবে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই সংস্থার কারণে সহায়তার অপেক্ষায় থাকা ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
সেলুম বলেন, ‘এটি একটি তড়িঘড়ি করা পরিকল্পনা মনে হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হবে।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পরপরই ফ্রান্স ও পর্তুগালসহ আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ একই পদক্ষেপ নেয়। বিশ্বনেতারা ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’কে শ্রদ্ধা জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মূলত একটি কূটনৈতিক রক্ষাকবচ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১২ সেপ্টেম্বর দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাবে ভোট দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ বাস্তবে আর প্রাসঙ্গিক নয়। প্রশ্ন হলো—যদি ইসরায়েলের দুই বছরব্যাপী গাজা অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধও হয়, বাস্তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেমন অবস্থায় থাকবে?
সাধারণত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলতে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে বোঝানো হয়। কিন্তু এসব অঞ্চল ক্রমেই ভাঙাচোরা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরায়েলি নীতির কারণে। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন বেড়ে সম্ভাব্য রাষ্ট্রের আয়তন আরও সঙ্কুচিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মহলেরও নীরব সম্মতি আছে।
৭ অক্টোবর ২০২৩-এর আগেও এ বাস্তবতা ছিল। এরপর চলাচলে বাধা, জমি দখল, বসতি সম্প্রসারণ, সহিংসতা ও বাড়িঘর ধ্বংস আরও বেড়েছে। গাজার যুদ্ধ শুরুর আগে গাজা ছিল ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় একটানা ভূখণ্ড। তবু গাজার মানুষ পশ্চিম তীরে যেতে পারত না, আর পশ্চিম তীর থেকেও গাজায় যাওয়া ছিল অসম্ভব। ফিলিস্তিনের বাইরে ভ্রমণও ইসরায়েলের কারণে ছিল প্রায় বন্ধ।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নতুন পরিকল্পনা গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। এতে শুধু একবারই ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য পথ’ উল্লেখ করা হয়েছে। তাও শর্তসাপেক্ষ— ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে একটি অস্পষ্ট সংস্কার কর্মসূচি ‘সততার সঙ্গে সম্পন্ন’ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, তাহলে কোন ভিত্তি থেকে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে? বিশ্লেষক ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘এটা কোটি টাকা মূল্যের একটি প্রশ্ন। সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, অথচ একই সঙ্গে রাষ্ট্রটিকে ধ্বংস করা হচ্ছে— এটাই মূল সমস্যা।’
ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের বাইরের শক্তির সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। যেমন— ইসরায়েল যদি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে, ফিলিস্তিনিদের কিছু করার পথ থাকবে না। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু বারবার শপথ করেছেন যে তিনি কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে দেবেন না। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটের একদিন আগে তিনি নতুন বসতি স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করেন। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।’
বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনাটি টিকে আছে দুটি জিনিসের ওপর—নেতানিয়াহুর সদিচ্ছা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা। কিন্তু নেতানিয়াহুর অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, তিনি শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছেন এবং দখলদারিত্ব আরও গভীর করেছেন। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দোহা ইনস্টিটিউটের মুহান্নাদ সেলুম মন্তব্য করেন, ‘এটি কাগজে কার্যকর মনে হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতায় অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট।’
ফিলিস্তিনিরা আগেও ইসরায়েলের সঙ্গে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি অনুযায়ীও ১৯৯০-র দশকের শুরুতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটিরও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ও দুই বছরের গাজায় গণহত্যার পর বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
অসলো প্রক্রিয়ায় পিএলওর আইন উপদেষ্টা ছিলেন ডায়ানা বুত্তু। তিনি বলেন, ‘এটি অসলো থেকেও খারাপ। অসলোতে অন্তত ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর ছিল, এখন (ট্রাম্পের পরিকল্পনায়) তাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা আবার সেই যুগে ফিরে গেছি, যখন অন্যরা আমাদের হয়ে কথা বলত।’
২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প আরব ও ইসলামি দেশের নেতাদের সঙ্গে তার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফিলিস্তিনি নেতাকে ডাকেননি। তবুও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের যুদ্ধ থামানোর দায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব কম নিশ্চয়তা দেয়—এমন চুক্তি যদি হামাস মেনে না নেয়, তাহলে ইসরায়েলের গণহত্যা চলতেই থাকবে, এমনকি আরও বেড়ে যেতে পারে। বুত্তু বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই গণহত্যা দুই বছর ধরে চলছে, আর এখন নিজেদের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনিদের আলোচনায় বসতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
সূত্র: আল-জাজিরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেটি গ্রহণ করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ হাজার ১০০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি হলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ইতিবাচক কিছু নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও বিশ্লেষক ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘গণহত্যা বন্ধ করার বিষয়টিও এমনভাবে বাঁধা হয়েছে, যেখানে অপরাধী পক্ষই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। গণহত্যা চালানো ইসরায়েল এবং এতে অর্থায়ন করা যুক্তরাষ্ট্রই ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য ঠিক করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিটি পড়লে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটিও নিশ্চয়তা নেই। সব নিশ্চয়তাই দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলকে।’ বুত্তু ২০০০-২০০৫ সালের ফিলিস্তিনি আলোচক দলের সদস্য ছিলেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। বিনিময়ে হামাসকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, যাদের মধ্যে জীবিত ও মৃত উভয়ই রয়েছে। ইসরায়েলকেও শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং নিহতদের মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে। ক্ষমতা যাবে ‘বোর্ড অব পিস’-এর হাতে, যা একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী প্রশাসন। ট্রাম্প থাকবেন এর প্রধান। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও, যিনি ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী ছিলেন।
যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেবে, তারা ক্ষমা পাবে। অন্যরা চাইলে গাজা ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার নিরাপদ পথ পাবে। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তা ফের চালু হবে। শর্ত পূরণের পর ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে এই প্রত্যাহার কে নিশ্চিত করবে, তা স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে গাজায় ব্যবস্থা নিতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পাশে থাকবে। অথচ মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।
তবে পরিকল্পনায় বহু প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নাম পরিকল্পনায় থাকলেও তাদের কোনো তাৎক্ষণিক ভূমিকা নেই। আগে তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু কী ধরনের সংস্কার তা পরিষ্কার নয়। অতীতে পিএকে শাসনব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি দূরীকরণ, শিক্ষা কারিকুলাম বদলানো এবং বন্দিদের পরিবারের সহায়তা কর্মসূচি পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
পিএ বন্দিদের পরিবারভিত্তিক ভাতা সংস্কার করেছে। তবুও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পুরোনো নীতির সমালোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত পিএ গাজা শাসন করতে পারবে না। লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সহায়তা পৌঁছে দেবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট। তবে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই সংস্থার কারণে সহায়তার অপেক্ষায় থাকা ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
সেলুম বলেন, ‘এটি একটি তড়িঘড়ি করা পরিকল্পনা মনে হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হবে।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পরপরই ফ্রান্স ও পর্তুগালসহ আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ একই পদক্ষেপ নেয়। বিশ্বনেতারা ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’কে শ্রদ্ধা জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মূলত একটি কূটনৈতিক রক্ষাকবচ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১২ সেপ্টেম্বর দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাবে ভোট দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ বাস্তবে আর প্রাসঙ্গিক নয়। প্রশ্ন হলো—যদি ইসরায়েলের দুই বছরব্যাপী গাজা অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধও হয়, বাস্তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেমন অবস্থায় থাকবে?
সাধারণত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলতে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে বোঝানো হয়। কিন্তু এসব অঞ্চল ক্রমেই ভাঙাচোরা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরায়েলি নীতির কারণে। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন বেড়ে সম্ভাব্য রাষ্ট্রের আয়তন আরও সঙ্কুচিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মহলেরও নীরব সম্মতি আছে।
৭ অক্টোবর ২০২৩-এর আগেও এ বাস্তবতা ছিল। এরপর চলাচলে বাধা, জমি দখল, বসতি সম্প্রসারণ, সহিংসতা ও বাড়িঘর ধ্বংস আরও বেড়েছে। গাজার যুদ্ধ শুরুর আগে গাজা ছিল ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় একটানা ভূখণ্ড। তবু গাজার মানুষ পশ্চিম তীরে যেতে পারত না, আর পশ্চিম তীর থেকেও গাজায় যাওয়া ছিল অসম্ভব। ফিলিস্তিনের বাইরে ভ্রমণও ইসরায়েলের কারণে ছিল প্রায় বন্ধ।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নতুন পরিকল্পনা গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। এতে শুধু একবারই ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য পথ’ উল্লেখ করা হয়েছে। তাও শর্তসাপেক্ষ— ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে একটি অস্পষ্ট সংস্কার কর্মসূচি ‘সততার সঙ্গে সম্পন্ন’ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, তাহলে কোন ভিত্তি থেকে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে? বিশ্লেষক ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘এটা কোটি টাকা মূল্যের একটি প্রশ্ন। সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, অথচ একই সঙ্গে রাষ্ট্রটিকে ধ্বংস করা হচ্ছে— এটাই মূল সমস্যা।’
ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের বাইরের শক্তির সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। যেমন— ইসরায়েল যদি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে, ফিলিস্তিনিদের কিছু করার পথ থাকবে না। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু বারবার শপথ করেছেন যে তিনি কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে দেবেন না। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটের একদিন আগে তিনি নতুন বসতি স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করেন। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।’
বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনাটি টিকে আছে দুটি জিনিসের ওপর—নেতানিয়াহুর সদিচ্ছা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা। কিন্তু নেতানিয়াহুর অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, তিনি শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছেন এবং দখলদারিত্ব আরও গভীর করেছেন। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দোহা ইনস্টিটিউটের মুহান্নাদ সেলুম মন্তব্য করেন, ‘এটি কাগজে কার্যকর মনে হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতায় অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট।’
ফিলিস্তিনিরা আগেও ইসরায়েলের সঙ্গে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি অনুযায়ীও ১৯৯০-র দশকের শুরুতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটিরও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ও দুই বছরের গাজায় গণহত্যার পর বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
অসলো প্রক্রিয়ায় পিএলওর আইন উপদেষ্টা ছিলেন ডায়ানা বুত্তু। তিনি বলেন, ‘এটি অসলো থেকেও খারাপ। অসলোতে অন্তত ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর ছিল, এখন (ট্রাম্পের পরিকল্পনায়) তাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা আবার সেই যুগে ফিরে গেছি, যখন অন্যরা আমাদের হয়ে কথা বলত।’
২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প আরব ও ইসলামি দেশের নেতাদের সঙ্গে তার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফিলিস্তিনি নেতাকে ডাকেননি। তবুও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের যুদ্ধ থামানোর দায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব কম নিশ্চয়তা দেয়—এমন চুক্তি যদি হামাস মেনে না নেয়, তাহলে ইসরায়েলের গণহত্যা চলতেই থাকবে, এমনকি আরও বেড়ে যেতে পারে। বুত্তু বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই গণহত্যা দুই বছর ধরে চলছে, আর এখন নিজেদের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনিদের আলোচনায় বসতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
সূত্র: আল-জাজিরা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনের ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা একমত হতে পারেননি। তাই অর্থ বছরের শেষ দিনে বিলটি পাস হয়নি। এতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের আংশিক শাটডাউন (অচল) হয়ে পড়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেজাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব। মিয়ানমারের সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না।
৬ ঘণ্টা আগে‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ এখন গাজার উপকূল থেকে মাত্র ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে। বহরটিতে ৫০টির বেশি জাহাজ রয়েছে। এর যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শিল্পী শহীদুল আলম ও সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গসহ প্রায় ৪৫টি দেশের ৫০০-র বেশি কর্মী অংশ নিয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী বহরটি আটকানোর হুমকি দিয়েছে। পূ
৭ ঘণ্টা আগেফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা আদতে কোনো প্রস্তাব নয়, এটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতি তাঁর ‘আলটিমেটাম’।
৮ ঘণ্টা আগে