leadT1ad

ভারতের সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর।

ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) রায়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে। অধিকাংশ প্রতিবেদনে দেখা যায়, তথ্যভিত্তিক ও প্রক্রিয়াগত দৃষ্টিকোণ থেকে রায়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সালে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নিতে হাসিনাই আইসিটি গঠন করেছিলেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া (টিওআই), হিন্দুস্তান টাইমস (এইচটি), দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (আইই) ও ইন্ডিয়া টুডের (আইটি) মতো সংবাদমাধ্যমগুলো রায়কে ঘিরে বিদ্যমান পরিস্থিতি, ভারতে হাসিনার নির্বাসিত অবস্থান এবং সম্ভাব্য কূটনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেছে। তারা প্রসিকিউটর, ভুক্তভোগী এবং হাসিনা শিবির—সব পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে।

প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু

রায়ের তথ্যগত দিক:

গণমাধ্যমগুলো একযোগে জানায় যে হাসিনাকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে—সহিংসতার উসকানি, ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া এবং নৃশংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতা। জাতিসংঘের হিসাবে এসব ঘটনায় ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়ে দোষ স্বীকার করায় পাঁচ বছরের দণ্ড পেয়েছেন। পুরো বিচারটি অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টি আদালতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, এবং এ সময় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া:

ভারতীয় গণমাধ্যমে হাসিনার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি রায়কে ‘কারসাজি করা’, ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার দাবি—মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন ‘অনির্বাচিত’ অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, তার পক্ষে সুষ্ঠু প্রতিরক্ষার সুযোগ ছিল না।

তিনি মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছেন এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ তার ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন, ভারতের কাছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকলে নির্বাচন বর্জন বা সহিংসতার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। রায় ঘোষণার আগেই হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানদণ্ড রক্ষায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

দ্য হিন্দুতে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর।
দ্য হিন্দুতে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি:

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উত্তেজনা তীব্রভাবে বেড়েছে। কোথাও কোথাও ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকায় অগ্নিসংযোগকারী ও নাশকতাকারীদের গুলি করার নির্দেশনা এবং সামরিক মোতায়েনের বিষয়টিও প্রধান আলোচ্য ছিল। যদিও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা তুলে ধরেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

ভুক্তভোগী ও প্রসিকিউটরের দৃষ্টিভঙ্গি:

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভুক্তভোগী পরিবারের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া উদ্ধৃত করেছে। তারা বলেছে, ‘হাজারবার মৃত্যুদণ্ডও যথেষ্ট নয়।’ প্রসিকিউশন দলের বক্তব্যেও দেখা যায়—তাদের লক্ষ্য ছিল জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা। ইউনুস সরকারের পক্ষেও রায়কে ‘শহীদদের প্রতি ঐতিহাসিক শ্রদ্ধা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রায় সম্পর্কে ভারতীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতীয় গণমাধ্যম রায়কে সতর্কতা ও ভারসাম্যের দৃষ্টিতে দেখেছে। তারা রায়কে একদিকে ২০২৪ সালের সহিংসতার দায় নির্ধারণের প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, তারা রায়কে রাজনৈতিক প্রতিশোধের হাতিয়ার হওয়ার কথাও তুলেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তুলে ধরে বলেছে যে ইউনুস সরকার পক্ষপাতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রায়ের পরবর্তী ধাপ—আপিল প্রক্রিয়া, হাসিনার আত্মসমর্পণের বাধ্যবাধকতা, এবং তাকে ফেরত চাওয়ার কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ—এসব বিষয় বিশ্লেষণ করেছে। ভারত হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে কিনা, সে বিষয়ে গণমাধ্যম সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়া টুডে প্রাক্তন আইজিপির কম সাজাকে কৌশলগত দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে যে এতে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না।

সামগ্রিকভাবে, ভারতীয় গণমাধ্যম নিরপেক্ষ ও বিশ্লেষণধর্মী ভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তারা তবে তারা ভারতের জন্য কূটনৈতিক প্রভাব—বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধিকার ইস্যু ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন—উল্লেখ করেছে। ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও তারা রায়কে সরাসরি সমর্থন করেনি। কারণ, ভারত বর্তমানে শেখ হাসিনার আশ্রয়দাতা এবং এই অবস্থানে থেকে দেশটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত