জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে আর পাব না। শেখ হাসিনার ফাঁসি যেন কার্যকর হয়। এটাই আমার চাওয়া।’
সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার পর রংপুরের পীরগঞ্জে আবু সাঈদের বাড়িতে তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও একই সঙ্গে স্বস্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর পীরগঞ্জ উপজেলার বাবুনপুর জাফরপাড়া গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে আর কোনোদিন ফিরে পাব না। আজ শেখ হাসিনার ফাঁসির ঘোষণা হয়েছে, তার ফাঁসি কার্যকর হলে শান্তি পাব।’
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘রায় শুনে আমি খুশি হয়েছি। তবে এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। ভারত থেকে তাকে এনে বাংলার মাটিতে ফাঁসি দিলেই আমি খুশি হব।’
মামলার বাদী ও আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে শহীদ পরিবারগুলোর মনের ভেতর কিছুটা হলেও ক্ষোভের অবসান হলো। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের দাবি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে এই মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তাহলেই শহীদ ভাইদের আত্মা শান্তি পাবে।’
শহীদ আবু সাঈদের আরেক ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘শুধু রায় ঘোষণা করলেই হবে না, বিদেশে পালিয়ে থাকা হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে। এই রায় যেন আগামীতে গণতান্ত্রিক দেশে স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো ভাইকে ফিরে পাব না, কিন্তু আমরা যেন স্বচক্ষে আমাদের ভাইদের খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারি।’
আবু হোসেন শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার কিছু দোসর এখনো বাংলার মাটিতে আছে। তারা গুপ্ত হামলা চালাতে পারে। আমরা চাই রাষ্ট্র যেন শহীদ পরিবারসহ জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সকলের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই ঘটনায় তার ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।