বেথ জনসন সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে অনিশ্চয়তার সঙ্গে অভ্যস্ত। প্রতি তিন বছর পরপর তাকে পরিবার-সহ স্থান পরিবর্তন করতে হয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, তা তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা।
সরকারের কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ায় তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। এই স্বস্তি অনুভব করেছিলেন আরও লাখো আমেরিকান।
এ সপ্তাহের শুরুতে ওয়াশিংটনের রাজনীতিকরা সরকারের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে সম্মত হন। ৪৩ দিনের এ অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম শাটডাউন হিসেবে চিহ্নিত হয়।
কিন্তু এই স্বস্তি খুব বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে। বর্তমান অর্থায়ন আগামি জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাবে। তখন কংগ্রেসকে আবারও একই ব্যয়ের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।
বেথ জনসন বলেন, পরিবারের একমাত্র আয় যখন ফেডারেল সরকারের ওপর নির্ভর করে, তখন জীবনের প্রতিটি দিকেই এর প্রভাব পড়ে। তার ভাষায়, এই অনিশ্চয়তা একেবারেই পঙ্গু করে দেয়।
টেনেসির এই দুই সন্তানের মা প্রায় ২০ বছর ধরে সাতটি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেছেন। তার স্বামী ২০ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাদের এ জীবনযাত্রা শুরু।
প্রতি তিন বছর অন্তর বাসস্থান বদলানোর কারণে তার এবং অন্যান্য সামরিক সদস্যদের স্ত্রীদের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে জনসন পরিবারকে একমাত্র সরকারি বেতনের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
শাটডাউনের সময় সামরিক সদস্যরা বেতন পাবেন কি না, তা না জানায় তাদের পরিবার কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে পড়ে।
মোট ১৩ লাখ সক্রিয় সামরিক সদস্য শাটডাউনের সময় বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলেও দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হন। তবে শরতের শাটডাউন চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসন দুবার তহবিল পুনর্বণ্টন করে তাদের বেতন নিশ্চিত করে।
কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা না থাকায় বহু পরিবারকে খরচ কমাতে বাধ্য হতে হয়। জনসনের এক ছেলে পর্যন্ত প্রস্তাব দেয় যে, এ বছর কম ক্রিসমাস উপহার নিলেও চলবে। সে মাকে বলে, ‘কোনো সমস্যা নেই, আমাদের এগুলো দরকার নেই।’
জনসন মনে করেন, লাখো আমেরিকানকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তা অপ্রয়োজনীয় ছিল। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘সবকিছুর উদ্দেশ্য কী ছিল? আমরা কেন ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অনিশ্চয়তায় ভুগলাম? কী ঘটবে তা না জেনেই কষ্ট করলাম?’
তার মতে, জানুয়ারিতে হয়তো আবারও একই পরিস্থিতি দেখা দেবে, আর তাই এসব ত্যাগের অর্থ কোথায় তা তিনি বোঝেন না।
এই সপ্তাহে কংগ্রেস যে চুক্তিতে পৌঁছেছে, তাতে পরবর্তী দুই মাস সরকার পরিচালনার মতো অর্থ নিশ্চিত হয়েছে। এ চুক্তিতে অচলাবস্থার সময়কালের জন্য সব ফেডারেল কর্মীর বেতন পরিশোধের নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম (এসএনএপি)—যা প্রতি আটজন আমেরিকানের একজনকে খাদ্য সহায়তা দেয়—তাও আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থায়ন পাবে।
সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রী বেথ জনসন পরবর্তী সরকারি অচলবাস্থার জন্য অর্থ সঞ্চয় করছেন। ছবি: বিবিসি।সিয়েরা বার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সেই ৪ কোটি ২০ লাখের বেশি নাগরিকের একজন, যারা পরিবারের খাদ্যচাহিদা মেটাতে এসএনএপি সহায়তার ওপর নির্ভর করেন। ফ্লোরিডার এই চার সন্তানের মা প্রতি মাসে প্রায় ৯০০ ডলার পান।
কিন্তু শাটডাউনের কারণে তার এই অর্থ বিলম্বিত হয়, কারণ সুবিধাগুলো ব্যয় বিলের জটিলতায় আটকে ছিল। তিনি বলেন, শাটডাউনের সময় ‘কষ্ট করে টিকে ছিলেন’ এবং সপ্তাহান্তে তার এসএনএপি কার্ডে পুনরায় অর্থ যোগ হবে। এতে তিনি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন।
তবে তিনি আশঙ্কা করেন, সামনে আবার শাটডাউন হতে পারে। এই আশঙ্কায় তিনি খাদ্য মজুত রাখার পরিকল্পনা করছেন, যাতে প্রয়োজনে বাঁচার মতো ব্যবস্থা থাকে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘মানুষের কাছে যখন প্রয়োজনীয় জিনিস থাকবে না, তখন তারা যা দরকার তা নিতেই বাধ্য হবে। মানুষের খাবারের বিষয়ে খেলা করবেন না।’
যদিও এসএনএপি সুবিধা পুনরায় চালু হয়েছে, তবে স্বাস্থ্যবিমার ভর্তুকি এখনো ফেরেনি। ডেমোক্র্যাটরা এ ভর্তুকি চালু রাখার দাবিতে লড়াই করতে চেয়েছিলেন। এ দাবিই শাটডাউন দীর্ঘ হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল।
ডেমোক্র্যাটরা আগে বলেছিলেন, ভর্তুকি বাদ দিয়ে তারা বাজেটে সম্মতি দেবেন না। কিন্তু মঙ্গলবার আটজন ডেমোক্র্যাট রিপাবলিকানদের সঙ্গে মিলে ভর্তুকিবিহীন ব্যয় পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।
সিয়েরা বলেন, ‘আমি এক ধরনের দুশ্চিন্তার বদলে আরেক দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’ তার মতে, সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা এসএনএপি-র চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয়।
তিনি বলেন, তিনি প্রয়োজনে পরিবারকে ভাত-ডাল খাইয়ে টিকে থাকতে পারেন, কিন্তু নিজের ওষুধের প্রয়োজন তিনি উপেক্ষা করতে পারেন না।
শাটডাউনের সময় শুধু খাদ্য সংকটে থাকা মানুষই ভুগেননি। ১৪ লাখেরও বেশি ফেডারেল কর্মী ৪৩ দিন ধরে বেতনহীন ছিলেন।
উটাহ অঙ্গরাজ্যের ইন্টেরিয়র ডিপার্টমেন্টের কর্মী সারা তাদের একজন। তিনি নিজের শেষ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
সারা শাটডাউন শুরু হওয়ার দিন, অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকেই ছুটিতে ছিলেন। দিন ও সপ্তাহ পেরোতে পেরোতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কারণ হয়তো তাকে নতুন কোনো উপার্জনের পথ খুঁজতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম, হয়তো ফেডারেল খাত পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশায় যেতে হবে।’ সারা একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ। এটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশা। তাই তার দক্ষতা অন্য কোনো চাকরি বা খাতে ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব।
সরকার পুনরায় চালু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তিনি কয়েক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো কাজে যোগ দেন। তবে জানুয়ারিতে আবার শাটডাউন হলে সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে তিনি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘ছুটির মৌসুম সামনে। তাই আমি খুব বেশি খরচ করব না।’ তিনি আরও জানান, ঘরের কিছু সংস্কার কাজও আপাতত স্থগিত রেখেছেন। তার মতে, আবার শাটডাউন হলে তা মোটেই বিস্ময়ের বিষয় হবে না।
এদিকে, সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রী বেথ জনসনও আগামী সম্ভাব্য ৮০ দিনের মধ্যে শাটডাউনের ঝুঁকি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর চেষ্টা করছি এবং যতটুকু সম্ভব সঞ্চয় করছি। যাতে বড় ধরনের সঞ্চয় থাকে। কারণ জানুয়ারিতে আবার শাটডাউন হলে সক্রিয় সামরিক সদস্যরা বেতন পাবেন—এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
সূত্র: বিবিসি