.png)

সৈকত আমীন

গথাম সিটি এক অদ্ভুত নগর। এখানে আকাশচুম্বী অট্টালিকা যেমন রাত্রির আঁধারে আলো ঝলমল করিয়া ওঠে, তেমনি অলিগলিতে অন্ধকারের ঘন কুয়াশা কখনো কাটে না। এ শহরের নায়ক ব্যাটম্যান, খলনায়ক জোকার। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেন; কিন্তু গথামের মানুষের আরেক বিশেষ দুর্ভোগের নাম কমিশনার পুত্র।
একদা গথামের কমিশনার ছিলেন এক মহাশয়। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও কৌশলী। দুর্নীতিবাজ মাফিয়া, দুর্ধর্ষ ভিলেন আর রঙিন রাজনীতির ফাঁদ—সব ভেদ করিয়া তিনি জনতার আস্থা অর্জন করিয়াছিলেন। তাঁহার মৃত্যু ঘটিল—গথামের মানুষ চোখের জল ফেলিয়া বলিল, ‘এমন কমিশনার আবার কবে আসিবে?’
কিন্তু ভাগ্যদেবী বুঝি বলিলেন, ‘তাহার বংশ হইতেই উত্তরসূরী আসিবে।’ সেই উত্তরসূরী হইলেন কমিশনার পুত্র।
শৈশবকাল হইতেই তাঁহার দেহে রাজনীতির মশাল জ্বলিতে আরম্ভ করিল। স্কুলে কোনো খেলাধুলার আয়োজন হইলে তিনি বলিতেন, ‘আমার পিতা ছিলেন কমিশনার। অতএব বল কেবল আমি কিক করিব।’ কলেজে উঠিয়া তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আমার পিতা ছিলেন সৎ, অতএব আমি নেতৃত্ব দেব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠিয়া বক্তৃতা ফরমাইলেন, ‘আমার জন্মগত অধিকার, কমিশনার হইবার।’
গথাম সিটি কর্পোরেশনে যখন নির্বাচন হইল, তিনি প্রার্থী হইলেন। জনসাধারণ বলিল, ‘আহা, কমিশনার পুত্র! পিতার ন্যায় হইলে মন্দ কী?’ কিন্তু বিধাতার লিখন অন্য। ভোটের খাতা খুলিল—কারচুপি হইল, টেবিলে কালি পড়িল, ব্যালট উল্টে গেল, মেশিন বন্ধ হইল, আবার চালু হইল। শেষ পর্যন্ত ফলাফলে দেখা গেল, কমিশনার পুত্র কমিশনার হইতে পারিলেন না।
তাহার পর হইতে গথামের রাজপথে অদ্ভুত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। হঠাৎ দেখিবেন, সিটি হলের সামনের ফটক ঘেরাও করিয়া দাঁড়াইয়াছেন তিনি। কালো মাইকে আওয়াজ তুলিতেছেন, ‘আমাকে কমিশনার বানাইতে হইবে। অন্যথায় গথাম অচল।’ পরদিন হঠাৎ পুলিশ হেডকোয়ার্টার ঘেরাও। তার পরদিন টাউনহল। তার পরদিন সংবাদপত্র অফিস।
গথামের নাগরিকগণ বিরক্ত হইয়া পড়িলেন। অফিসে যাইবার পথে এক ভদ্রলোক কহিলেন, ‘প্রতিদিনই তো ঘেরাও! একদিন সিটি হল, একদিন হাইকোর্ট, কাল বুঝি আমার বাথরুমও ঘেরাও করিবে।’ অন্য এক বৃদ্ধা কহিলেন, ‘আমার পুত্র বিবাহ করিবে, যদি কমিশনার পুত্র খবর পায় তবে হয়তো বাসরঘরও ঘেরাও করিবে।’
ব্যাটম্যান নিজেও কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত হইয়া পড়িলেন। তিনি তো জোকার, পেঙ্গুইন, রিডলার প্রভৃতি ভিলেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কিন্তু কমিশনার পুত্র তো প্রকৃত ভিলেন নহেন, আবার নায়কও নহেন। কেবল সুযোগের অভাবে ক্ষুব্ধ এক প্রার্থী। ব্যাটম্যান তাই গোপনে কাহারও নিকট বলিলেন, ‘যাহারা ক্ষমতার স্বপ্নে বারবার প্রত্যাখ্যাত হন, তাহাদের হতাশাই কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।’
কমিশনার পুত্র কিন্তু হাল ছাড়িলেন না। প্রত্যেকটি মাইকে তিনি কহেন, ‘আমার পিতা ছিলেন মহান কমিশনার। অতএব আমিও কমিশনার হইবই হইব।’ কেহ প্রশ্ন করে, ‘যোগ্যতা কী?’ তিনি উত্তর দেন, ‘যোগ্যতা তো আমার রক্তে।’
গথামের নাগরিকদের মধ্যে হাস্যরস চলিতে থাকে। চায়ের দোকানে কেহ বলে, ‘আজকে কোথায় ঘেরাও?’ অপরজন উত্তর দেয়, ‘হাসপাতাল।’ তৃতীয়জন বলে, ‘আহা! তবে ডাক্তারেরা আজ অফিস করতে পারিবেন না।’ এক কিশোর মন্ত্রী আবার বলেন, ‘যদি সে কমিশনার হইতেই চায়। তবে গথাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিশনারশাস্ত্র বিভাগ খোলা হোক। সেখানে পরীক্ষা দিয়া পাশ করিলে কমিশনার বানানো যাইবে।’
কিন্তু কমিশনার পুত্র যেন বুঝিতে চান না। তিনি দিনের পর দিন সভা করেন, মিছিল করেন, বক্তৃতা দেন। এমনকি গথামের কবুতরগুলো পর্যন্ত তাহার ভাষণে ক্লান্ত হইয়া গিয়াছে। একদিন এক কবুতর অন্য কবুতরকে কহিল, ‘চল, আমরা অন্য শহরে উড়িয়া যাই। গথামে থাকা দায়। সকাল সকাল ডানা মেললেই শোনা যায়, ‘আমাকে কমিশনার বানাও।’
প্রতিদিন কমিশনার পুত্র নতুন জায়গা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করেন। হয়তো একদিন তিনি ব্যাটম্যানের ব্যাটকেভও ঘেরাও করিবেন। সেদিন গথামের ইতিহাসে লেখা থাকিবে, ‘কমিশনার পুত্র নামক এক চরিত্র, যিনি পিতার গৌরবের ছায়ায় দাঁড়াইয়া সারাজীবন কেবল ঘেরাও করিয়াই কাটাইলেন।’

গথাম সিটি এক অদ্ভুত নগর। এখানে আকাশচুম্বী অট্টালিকা যেমন রাত্রির আঁধারে আলো ঝলমল করিয়া ওঠে, তেমনি অলিগলিতে অন্ধকারের ঘন কুয়াশা কখনো কাটে না। এ শহরের নায়ক ব্যাটম্যান, খলনায়ক জোকার। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেন; কিন্তু গথামের মানুষের আরেক বিশেষ দুর্ভোগের নাম কমিশনার পুত্র।
একদা গথামের কমিশনার ছিলেন এক মহাশয়। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও কৌশলী। দুর্নীতিবাজ মাফিয়া, দুর্ধর্ষ ভিলেন আর রঙিন রাজনীতির ফাঁদ—সব ভেদ করিয়া তিনি জনতার আস্থা অর্জন করিয়াছিলেন। তাঁহার মৃত্যু ঘটিল—গথামের মানুষ চোখের জল ফেলিয়া বলিল, ‘এমন কমিশনার আবার কবে আসিবে?’
কিন্তু ভাগ্যদেবী বুঝি বলিলেন, ‘তাহার বংশ হইতেই উত্তরসূরী আসিবে।’ সেই উত্তরসূরী হইলেন কমিশনার পুত্র।
শৈশবকাল হইতেই তাঁহার দেহে রাজনীতির মশাল জ্বলিতে আরম্ভ করিল। স্কুলে কোনো খেলাধুলার আয়োজন হইলে তিনি বলিতেন, ‘আমার পিতা ছিলেন কমিশনার। অতএব বল কেবল আমি কিক করিব।’ কলেজে উঠিয়া তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আমার পিতা ছিলেন সৎ, অতএব আমি নেতৃত্ব দেব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠিয়া বক্তৃতা ফরমাইলেন, ‘আমার জন্মগত অধিকার, কমিশনার হইবার।’
গথাম সিটি কর্পোরেশনে যখন নির্বাচন হইল, তিনি প্রার্থী হইলেন। জনসাধারণ বলিল, ‘আহা, কমিশনার পুত্র! পিতার ন্যায় হইলে মন্দ কী?’ কিন্তু বিধাতার লিখন অন্য। ভোটের খাতা খুলিল—কারচুপি হইল, টেবিলে কালি পড়িল, ব্যালট উল্টে গেল, মেশিন বন্ধ হইল, আবার চালু হইল। শেষ পর্যন্ত ফলাফলে দেখা গেল, কমিশনার পুত্র কমিশনার হইতে পারিলেন না।
তাহার পর হইতে গথামের রাজপথে অদ্ভুত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। হঠাৎ দেখিবেন, সিটি হলের সামনের ফটক ঘেরাও করিয়া দাঁড়াইয়াছেন তিনি। কালো মাইকে আওয়াজ তুলিতেছেন, ‘আমাকে কমিশনার বানাইতে হইবে। অন্যথায় গথাম অচল।’ পরদিন হঠাৎ পুলিশ হেডকোয়ার্টার ঘেরাও। তার পরদিন টাউনহল। তার পরদিন সংবাদপত্র অফিস।
গথামের নাগরিকগণ বিরক্ত হইয়া পড়িলেন। অফিসে যাইবার পথে এক ভদ্রলোক কহিলেন, ‘প্রতিদিনই তো ঘেরাও! একদিন সিটি হল, একদিন হাইকোর্ট, কাল বুঝি আমার বাথরুমও ঘেরাও করিবে।’ অন্য এক বৃদ্ধা কহিলেন, ‘আমার পুত্র বিবাহ করিবে, যদি কমিশনার পুত্র খবর পায় তবে হয়তো বাসরঘরও ঘেরাও করিবে।’
ব্যাটম্যান নিজেও কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত হইয়া পড়িলেন। তিনি তো জোকার, পেঙ্গুইন, রিডলার প্রভৃতি ভিলেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কিন্তু কমিশনার পুত্র তো প্রকৃত ভিলেন নহেন, আবার নায়কও নহেন। কেবল সুযোগের অভাবে ক্ষুব্ধ এক প্রার্থী। ব্যাটম্যান তাই গোপনে কাহারও নিকট বলিলেন, ‘যাহারা ক্ষমতার স্বপ্নে বারবার প্রত্যাখ্যাত হন, তাহাদের হতাশাই কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।’
কমিশনার পুত্র কিন্তু হাল ছাড়িলেন না। প্রত্যেকটি মাইকে তিনি কহেন, ‘আমার পিতা ছিলেন মহান কমিশনার। অতএব আমিও কমিশনার হইবই হইব।’ কেহ প্রশ্ন করে, ‘যোগ্যতা কী?’ তিনি উত্তর দেন, ‘যোগ্যতা তো আমার রক্তে।’
গথামের নাগরিকদের মধ্যে হাস্যরস চলিতে থাকে। চায়ের দোকানে কেহ বলে, ‘আজকে কোথায় ঘেরাও?’ অপরজন উত্তর দেয়, ‘হাসপাতাল।’ তৃতীয়জন বলে, ‘আহা! তবে ডাক্তারেরা আজ অফিস করতে পারিবেন না।’ এক কিশোর মন্ত্রী আবার বলেন, ‘যদি সে কমিশনার হইতেই চায়। তবে গথাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিশনারশাস্ত্র বিভাগ খোলা হোক। সেখানে পরীক্ষা দিয়া পাশ করিলে কমিশনার বানানো যাইবে।’
কিন্তু কমিশনার পুত্র যেন বুঝিতে চান না। তিনি দিনের পর দিন সভা করেন, মিছিল করেন, বক্তৃতা দেন। এমনকি গথামের কবুতরগুলো পর্যন্ত তাহার ভাষণে ক্লান্ত হইয়া গিয়াছে। একদিন এক কবুতর অন্য কবুতরকে কহিল, ‘চল, আমরা অন্য শহরে উড়িয়া যাই। গথামে থাকা দায়। সকাল সকাল ডানা মেললেই শোনা যায়, ‘আমাকে কমিশনার বানাও।’
প্রতিদিন কমিশনার পুত্র নতুন জায়গা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করেন। হয়তো একদিন তিনি ব্যাটম্যানের ব্যাটকেভও ঘেরাও করিবেন। সেদিন গথামের ইতিহাসে লেখা থাকিবে, ‘কমিশনার পুত্র নামক এক চরিত্র, যিনি পিতার গৌরবের ছায়ায় দাঁড়াইয়া সারাজীবন কেবল ঘেরাও করিয়াই কাটাইলেন।’
.png)

১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর মুহাম্মদ ইকবাল জন্মেছিলেন, পাঞ্জাবের সিয়ালকোটে—যা বর্তমানে পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাব অঞ্চলে অবস্থিত। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। পরে সপ্তদশ শতকে মুঘল আমলে তাঁরা ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।
৩ ঘণ্টা আগে
ফেসবুকে নতুন গৃহযুদ্ধের সূচনা যেন একদম দরজায় এসে থেমে আছে। এখনও সবার জন্য সেই ভয়ঙ্কর অস্ত্র কমেন্টে ‘ডিসলাইক’ বাটন চালু হয়নি। খুব শিগগিরই হয়ত একদিন সকালে চা হাতে ফোন খুলে দেখবেন, কমেন্টের নিচে একটা ছোট্ট থাম্বস নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
আজকাল প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার কথা ভাবলেই নাকে এসে লাগে গরম পপকর্নের ঘ্রাণ। দুনিয়াজুড়েই এই খাবার ছাড়া আজকের সময়ে সিনেমা দেখাটা অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু কীভাবে ভুট্টার খই কীভাবে হয়ে উঠল সিনেমা-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ? এর পেছনের গল্প কিন্তু সিনেমার কাহিনীর চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়।
১২ ঘণ্টা আগে
এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা গভীর দুঃখ, কষ্ট বা মানসিক আঘাতে চাইলেও কাঁদতে পারেন না। কিন্তু কেন এমন হয়? এই বিষয়টিকে শারীরবৃত্তীয়, মানসিক ও সামাজিক নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।
১ দিন আগে