আজ কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী
অনেকের আগে ধারণা ছিল, নজরুলের গান ব্যান্ড শিল্পীরা কি গাইতে পারবেন? তাঁর লেখা বিদ্রোহের গানগুলো কি রক মিউজিকের আবহে করা সম্ভব? কিন্তু দেখা গেছে, নজরুলের কিছু গান বাংলা ব্যান্ডে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে।
গৌতম কে শুভ
কাজী নজরুল ইসলামের গান বাংলা সংগীতের অন্যতম স্তম্ভ। তারুণ্যের কবি নজরুল আমাদের কাছে যৌবনের প্রতীক। তাঁর গান ও কবিতায় তরুণদের জন্য অফুরন্ত প্রাণশক্তি, বিদ্রোহী চেতনা আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আছে।
তারুণ্যের প্রসঙ্গ আসলেই বান্ডসংগীতের কথাও চলে আসে। আগে অনেকের ধারণা ছিল, নজরুলের গান ব্যান্ড শিল্পীরা কি গাইতে পারবেন? তাঁর লেখা বিদ্রোহের গানগুলো কি রক মিউজিকে আবহে করা যাবে? কিন্তু দেখা গেছে, নজরুলের কিছু গান বাংলা ব্যান্ডে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে।
ব্যান্ড মিউজিকে গানের চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানছে নজরুলকে। এতে নজরুল গান আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তরুণদের মধ্যে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যান্ড নজরুলের বিদ্রোহের গানে খুঁজে পেয়েছে নিজেদের অভিব্যক্তি, শক্তি ও তরুণদের জন্য বার্তা।
আমাদের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম বা প্রতিবাদের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের জাগরণের গান ‘চল্ চল্ চল্’ জড়িয়ে আছে। গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের ব্যান্ড ‘ডিউ ড্রপস’ এই গানের প্রথম রক ভার্সন রিলিজ করেছিল ‘আগন্তুক’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে। অর্থহীন ব্যান্ডের ‘বেজবাবা’ সুমনের করা এই মিক্সড অ্যালবামে সেই সময়ের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলোর গান রাখা হয়েছিল।
‘ডিউ ড্রপস’ ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন রাসেল হক, সাগর, চিন্টু, কলিন, রাশেদ, শুভ ও সুমন নিজাম। তাঁরা ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে চট্টগ্রামের এক স্টুডিওতে গানটির প্রথম ভার্সন রেকর্ড করেছিলেন। তবে আগন্তুক অ্যালবামে ত্থাকা ভার্সনটি সেই প্রথম রেকর্ডিং থেকে আলাদা।
গানটির স্মৃতিচারণ করে ডিউ ড্রপসের ভোকালিস্ট রাসেল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘নজরুল ওয়াজ অ্যা রকস্টার ইভেন বিফোর দ্য বার্থ অব রক অ্যান্ড রোল। এই জনরার রেবেল যে ব্যাপারটা, সেটা তো নজরুলেরও ছিল। তাই আমাদের মাথায় এসেছিল এটার একটা রক ভার্সন করি।’
রাসেল হক আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে হেভী মেটাল গান শুনতাম আমরা। কোনোকিছু কেয়ার করতাম না, কে কী মনে করলো। বাংলাদেশে তখন মাত্র ইন্টারনেট চালু হয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকের করা প্রথম ভার্সনটা আমরা ‘প্যালটক’ (প্রথম দিকের ভিডিও, ভয়েস চ্যাটিং সফটওয়্যার) এ আপলোড করেছিলাম। অর্থহীনের সুমন ভাই নজরুলের গানটি সেখানেই শোনেন। গানটি শুনে তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন। আমাদের পরিচিতরাও প্রশংসা করেছিলেন। ২০০২ সালের দিকে ‘‘আমাদেরগান ডট কম’’ চালু হলে সেখানে আমাদের গানটি আপলোড হয়। অনেকের প্রশংসা পাচ্ছিলাম সেখানেও। এরপর সুমন ভাই আগন্তুক অ্যালবামের কাজ করার সময় গানটি আবার রেকর্ড করিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ২০০৯ সালে ‘রক ৩০৩’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ গানটি প্রকাশ করেছিল। নজরুলের এই গান রক ভার্সনে করার ফলে তা অনেক শ্রোতার পছন্দের হয়ে ওঠে। মূলত নজরুলের গান নিয়ে নতুন ভাবে কাজ করার পথটা দেখায় আর্টসেল। তাদের মাধ্যমে বড় অংশের রকশ্রোতার সামনে নজরুলের গান নতুনভাবে হাজির হয়েছে।
এরপর আর্টসেল ২০১৫ সালে ‘রায়োটাস ১৪’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে ‘কারার ঐ লৌহ–কপাট’ গানটি প্রকাশ করেছিল। আর্টসেলের ভক্তদের মধ্যে এই গানও তখন বেশ জনপ্রিয়তা পায়। নজরুলের এই দুটি গান রক আঙ্গিকে পরিবেশন করে আর্টসেল শুধু নতুনভাবে শ্রোতাদের কাছে হাজির হয়নি, বরং প্রমাণ করেছে যে বিদ্রোহী কবির গান আধুনিক সাউন্ডে দিয়েও সমান শক্তি নিয়ে বাজানো যায়। ফলে যারা সাধারণত নজরুলসংগীত শোনেন না, তাঁরাও ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে এই গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত হন।
ব্যান্ড দৃক ২০১১ সালে নজরুলের ‘ঝর্ণার মতো চঞ্চল’ গানটির কাজ শেষ করে। আর ২০১২ সালে মিউজিক ভিডিওসহ গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করে তারা। ছোটবেলা থেকেই নজরুলের গান শুনে বড় হয়েছেন দৃকের ভোকাল সাইফ জামান। তিনি নজরুলের গান স্টেজেও পারফর্ম করতেন। ব্যান্ড করার পর তাঁর মনে হয়েছিল, নজরুলের কিছু গান ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যেতে পারে।
গানটি নতুনভাবে হাজির করার প্রসঙ্গে সাইফ জামান স্ট্রিমকে জানান, ‘আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছিল, নজরুলের কিছু গান তো ডেফিনেটলি ব্যান্ডের সঙ্গে যায়। আমরা যে ধরণের মিউজিক করি, সেটার সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে যায়।’
নজরুলের গান নতুনভাবে হাজির করার অনুপ্রেরণা কীভাবে পেয়েছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে সাইফ জামান জানান, ‘যখন আমরা আগন্তুক অ্যালবামের ‘চল্ চল্ চল্’ শুনলাম তখন মনে হয়েছিল, নজরুলের গান রক করা যায় এমন উদাহরণ তো পাওয়া গেল। রেফারেন্স পেলাম, এটা করলে কেমন করলে হতে পারে। এরপর আর্টসেলের 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ যখন রিলিজ হলো, তখন আমি শিওর হলাম যে নজরুলের গান আমরা করবো। ফাইনালি যখন ব্যান্ডের মধ্যে ডিসকাস করলাম, সবাই ব্যাপারটাতে খুবই উৎসাহ পেল। এরপর গানটা করে ফেললাম’।
২০০৭ সালে ‘ডি রকস্টার’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গানের জগতে আসেন পলাশ নূর। তিনি তখন ছিলেন ‘রেডিও অ্যাকটিভ’ ব্যান্ডের ভোকাল। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি সেরা ভোকালিস্ট নির্বাচিত হন।
এরপর তিনি রেডিও অ্যাকটিভ ছেড়ে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড ‘পলাশ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস (পিএনএফ)’। বর্তমানে তিনি ‘ওয়ারফেজ’ ব্যান্ডের মূল ভোকালিস্ট।
২০১৩ সালে পলাশ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস প্রকাশ করে তাদের অ্যালবাম ‘আওয়াজ’। সেখানে নজরুলের গান ‘হারানো হিয়া’ নতুনভাবে রক ভার্সনে হাজির করে ব্যান্ডটি। অ্যালবাম রিলিজের সময় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পলাশ নূর বলেছিলেন, বিদ্রোহী কবিতা যদি এ সময় হতো, নজরুল নিশ্চয়ই বলতেন এটা রক ধারায় করা হোক।
২০১৩ সালে বিশেষ এক উদ্যোগ নেয় ‘মিউজিশিয়ান্স অ্যালায়েন্স’। তারা নজরুলের রণসংগীত ‘চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ নতুনভাবে প্রকাশ করে।
এই গানে একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ১৪টি ব্যান্ডের ১৪ জন শিল্পী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদ, মাইলসের ইকবাল আসিফ জুয়েল, এভোয়েড রাফা ব্যান্ডের রাফা (রাফা তখন অর্থহীন ব্যান্ডে ছিলেন), আর্টসেলের লিংকন, পাওয়ারসার্জ ব্যান্ডের জামশেদ, নেমেসিসের জোহান এবং মেকানিক্স ব্যান্ডের ত্রিদিব।
নজরুলের রণসংগীতে দেশের ১৪ ব্যান্ডশিল্পী একত্রিত হওয়ায় গানটি নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন শক্তি নিয়ে হাজির হয়।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নজরুলের স্বদেশ (বিদ্রোহ) বিষয়ক গান ‘শিকল পরা ছল’ নতুনভাবে পরিবেশন করেন দেশের কয়েকজন জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী। আন্দোলনের উত্তাল সময়ে গানটি ভিডিওসহ প্রকাশ করা হয়। মুহূর্তেই এটি ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
এই উদ্যোগে একসঙ্গে কণ্ঠ মেলান কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যান্ডশিল্পী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের শাকিব চৌধুরী, সোনার বাংলা সার্কাস ব্যান্ডের প্রবর রিপন, অ্যাভোয়েড রাফার রায়েফ আল হাসান রাফা, শিরোনামহীন ব্যান্ডের শেখ ইশতিয়াক, আর পাওয়ারসার্জের জামশেদ চৌধুরী।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী ও জাগরণের ১০টি গান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। ২০২৫ সালের ৩১ মে অ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে ‘নজরুল রক কনসার্ট ২০২৫’ এর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।
এই অ্যালবামে দেশের পরিচিত ব্যান্ডগুলো অংশ নিয়েছে। সোলস, ওয়ারফেজ, আর্ক, দলছুট, শিরোনামহীন, ডিফারেন্ট টাচ, ব্ল্যাক, মিজান অ্যান্ড ব্রাদার্স, রেবেল এবং এফ মাইনর—প্রতিটি ব্যান্ড একটি করে গান করেছে।
নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এই অ্যালবাম তৈরির মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে কোনো ব্যান্ড গানগুলো কাভার করতে চাইলে এগুলো যাতে রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে।
কাজী নজরুল ইসলামের গান বাংলা সংগীতের অন্যতম স্তম্ভ। তারুণ্যের কবি নজরুল আমাদের কাছে যৌবনের প্রতীক। তাঁর গান ও কবিতায় তরুণদের জন্য অফুরন্ত প্রাণশক্তি, বিদ্রোহী চেতনা আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আছে।
তারুণ্যের প্রসঙ্গ আসলেই বান্ডসংগীতের কথাও চলে আসে। আগে অনেকের ধারণা ছিল, নজরুলের গান ব্যান্ড শিল্পীরা কি গাইতে পারবেন? তাঁর লেখা বিদ্রোহের গানগুলো কি রক মিউজিকে আবহে করা যাবে? কিন্তু দেখা গেছে, নজরুলের কিছু গান বাংলা ব্যান্ডে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে।
ব্যান্ড মিউজিকে গানের চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানছে নজরুলকে। এতে নজরুল গান আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তরুণদের মধ্যে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যান্ড নজরুলের বিদ্রোহের গানে খুঁজে পেয়েছে নিজেদের অভিব্যক্তি, শক্তি ও তরুণদের জন্য বার্তা।
আমাদের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম বা প্রতিবাদের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের জাগরণের গান ‘চল্ চল্ চল্’ জড়িয়ে আছে। গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের ব্যান্ড ‘ডিউ ড্রপস’ এই গানের প্রথম রক ভার্সন রিলিজ করেছিল ‘আগন্তুক’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে। অর্থহীন ব্যান্ডের ‘বেজবাবা’ সুমনের করা এই মিক্সড অ্যালবামে সেই সময়ের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলোর গান রাখা হয়েছিল।
‘ডিউ ড্রপস’ ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন রাসেল হক, সাগর, চিন্টু, কলিন, রাশেদ, শুভ ও সুমন নিজাম। তাঁরা ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে চট্টগ্রামের এক স্টুডিওতে গানটির প্রথম ভার্সন রেকর্ড করেছিলেন। তবে আগন্তুক অ্যালবামে ত্থাকা ভার্সনটি সেই প্রথম রেকর্ডিং থেকে আলাদা।
গানটির স্মৃতিচারণ করে ডিউ ড্রপসের ভোকালিস্ট রাসেল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘নজরুল ওয়াজ অ্যা রকস্টার ইভেন বিফোর দ্য বার্থ অব রক অ্যান্ড রোল। এই জনরার রেবেল যে ব্যাপারটা, সেটা তো নজরুলেরও ছিল। তাই আমাদের মাথায় এসেছিল এটার একটা রক ভার্সন করি।’
রাসেল হক আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে হেভী মেটাল গান শুনতাম আমরা। কোনোকিছু কেয়ার করতাম না, কে কী মনে করলো। বাংলাদেশে তখন মাত্র ইন্টারনেট চালু হয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকের করা প্রথম ভার্সনটা আমরা ‘প্যালটক’ (প্রথম দিকের ভিডিও, ভয়েস চ্যাটিং সফটওয়্যার) এ আপলোড করেছিলাম। অর্থহীনের সুমন ভাই নজরুলের গানটি সেখানেই শোনেন। গানটি শুনে তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন। আমাদের পরিচিতরাও প্রশংসা করেছিলেন। ২০০২ সালের দিকে ‘‘আমাদেরগান ডট কম’’ চালু হলে সেখানে আমাদের গানটি আপলোড হয়। অনেকের প্রশংসা পাচ্ছিলাম সেখানেও। এরপর সুমন ভাই আগন্তুক অ্যালবামের কাজ করার সময় গানটি আবার রেকর্ড করিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ২০০৯ সালে ‘রক ৩০৩’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ গানটি প্রকাশ করেছিল। নজরুলের এই গান রক ভার্সনে করার ফলে তা অনেক শ্রোতার পছন্দের হয়ে ওঠে। মূলত নজরুলের গান নিয়ে নতুন ভাবে কাজ করার পথটা দেখায় আর্টসেল। তাদের মাধ্যমে বড় অংশের রকশ্রোতার সামনে নজরুলের গান নতুনভাবে হাজির হয়েছে।
এরপর আর্টসেল ২০১৫ সালে ‘রায়োটাস ১৪’ ব্যান্ড-মিক্সড অ্যালবামে ‘কারার ঐ লৌহ–কপাট’ গানটি প্রকাশ করেছিল। আর্টসেলের ভক্তদের মধ্যে এই গানও তখন বেশ জনপ্রিয়তা পায়। নজরুলের এই দুটি গান রক আঙ্গিকে পরিবেশন করে আর্টসেল শুধু নতুনভাবে শ্রোতাদের কাছে হাজির হয়নি, বরং প্রমাণ করেছে যে বিদ্রোহী কবির গান আধুনিক সাউন্ডে দিয়েও সমান শক্তি নিয়ে বাজানো যায়। ফলে যারা সাধারণত নজরুলসংগীত শোনেন না, তাঁরাও ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে এই গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত হন।
ব্যান্ড দৃক ২০১১ সালে নজরুলের ‘ঝর্ণার মতো চঞ্চল’ গানটির কাজ শেষ করে। আর ২০১২ সালে মিউজিক ভিডিওসহ গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করে তারা। ছোটবেলা থেকেই নজরুলের গান শুনে বড় হয়েছেন দৃকের ভোকাল সাইফ জামান। তিনি নজরুলের গান স্টেজেও পারফর্ম করতেন। ব্যান্ড করার পর তাঁর মনে হয়েছিল, নজরুলের কিছু গান ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যেতে পারে।
গানটি নতুনভাবে হাজির করার প্রসঙ্গে সাইফ জামান স্ট্রিমকে জানান, ‘আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছিল, নজরুলের কিছু গান তো ডেফিনেটলি ব্যান্ডের সঙ্গে যায়। আমরা যে ধরণের মিউজিক করি, সেটার সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে যায়।’
নজরুলের গান নতুনভাবে হাজির করার অনুপ্রেরণা কীভাবে পেয়েছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে সাইফ জামান জানান, ‘যখন আমরা আগন্তুক অ্যালবামের ‘চল্ চল্ চল্’ শুনলাম তখন মনে হয়েছিল, নজরুলের গান রক করা যায় এমন উদাহরণ তো পাওয়া গেল। রেফারেন্স পেলাম, এটা করলে কেমন করলে হতে পারে। এরপর আর্টসেলের 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ যখন রিলিজ হলো, তখন আমি শিওর হলাম যে নজরুলের গান আমরা করবো। ফাইনালি যখন ব্যান্ডের মধ্যে ডিসকাস করলাম, সবাই ব্যাপারটাতে খুবই উৎসাহ পেল। এরপর গানটা করে ফেললাম’।
২০০৭ সালে ‘ডি রকস্টার’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গানের জগতে আসেন পলাশ নূর। তিনি তখন ছিলেন ‘রেডিও অ্যাকটিভ’ ব্যান্ডের ভোকাল। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি সেরা ভোকালিস্ট নির্বাচিত হন।
এরপর তিনি রেডিও অ্যাকটিভ ছেড়ে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড ‘পলাশ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস (পিএনএফ)’। বর্তমানে তিনি ‘ওয়ারফেজ’ ব্যান্ডের মূল ভোকালিস্ট।
২০১৩ সালে পলাশ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস প্রকাশ করে তাদের অ্যালবাম ‘আওয়াজ’। সেখানে নজরুলের গান ‘হারানো হিয়া’ নতুনভাবে রক ভার্সনে হাজির করে ব্যান্ডটি। অ্যালবাম রিলিজের সময় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পলাশ নূর বলেছিলেন, বিদ্রোহী কবিতা যদি এ সময় হতো, নজরুল নিশ্চয়ই বলতেন এটা রক ধারায় করা হোক।
২০১৩ সালে বিশেষ এক উদ্যোগ নেয় ‘মিউজিশিয়ান্স অ্যালায়েন্স’। তারা নজরুলের রণসংগীত ‘চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ নতুনভাবে প্রকাশ করে।
এই গানে একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ১৪টি ব্যান্ডের ১৪ জন শিল্পী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদ, মাইলসের ইকবাল আসিফ জুয়েল, এভোয়েড রাফা ব্যান্ডের রাফা (রাফা তখন অর্থহীন ব্যান্ডে ছিলেন), আর্টসেলের লিংকন, পাওয়ারসার্জ ব্যান্ডের জামশেদ, নেমেসিসের জোহান এবং মেকানিক্স ব্যান্ডের ত্রিদিব।
নজরুলের রণসংগীতে দেশের ১৪ ব্যান্ডশিল্পী একত্রিত হওয়ায় গানটি নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন শক্তি নিয়ে হাজির হয়।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নজরুলের স্বদেশ (বিদ্রোহ) বিষয়ক গান ‘শিকল পরা ছল’ নতুনভাবে পরিবেশন করেন দেশের কয়েকজন জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী। আন্দোলনের উত্তাল সময়ে গানটি ভিডিওসহ প্রকাশ করা হয়। মুহূর্তেই এটি ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
এই উদ্যোগে একসঙ্গে কণ্ঠ মেলান কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যান্ডশিল্পী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের শাকিব চৌধুরী, সোনার বাংলা সার্কাস ব্যান্ডের প্রবর রিপন, অ্যাভোয়েড রাফার রায়েফ আল হাসান রাফা, শিরোনামহীন ব্যান্ডের শেখ ইশতিয়াক, আর পাওয়ারসার্জের জামশেদ চৌধুরী।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী ও জাগরণের ১০টি গান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। ২০২৫ সালের ৩১ মে অ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে ‘নজরুল রক কনসার্ট ২০২৫’ এর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।
এই অ্যালবামে দেশের পরিচিত ব্যান্ডগুলো অংশ নিয়েছে। সোলস, ওয়ারফেজ, আর্ক, দলছুট, শিরোনামহীন, ডিফারেন্ট টাচ, ব্ল্যাক, মিজান অ্যান্ড ব্রাদার্স, রেবেল এবং এফ মাইনর—প্রতিটি ব্যান্ড একটি করে গান করেছে।
নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এই অ্যালবাম তৈরির মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে কোনো ব্যান্ড গানগুলো কাভার করতে চাইলে এগুলো যাতে রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে।
আজ কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুদিন। বিদ্রোহী এই কবিকে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের মানুষেরা কেন আপন করে নিয়েছিল, তার পেছনে রয়েছে সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তত্ত্বিক কারণ। কবির প্রয়াণ দিবসে তার সুলুক-সন্ধান।
৭ ঘণ্টা আগেসারা দুনিয়ায় এমন অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আছেন যারা প্রথমে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, কিন্তু পরে প্রতারণা ও জালিয়াতির কারণে তাঁদের খ্যাতি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পৃথিবীর এমন কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং তাঁদের প্রতারণার কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।
১ দিন আগেগত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল বাংলাবাজারের একটি বাড়ি থেকে সিআইডির কর্মকর্তারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছেন। কিন্তু ২০২২ সালে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তৌহিদ আফ্রিদির সেই ভিডিওর কথা মনে আছে? আফ্রিদির স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী, পুলিশ তাঁর বাসায় আসবে ধরে নিয়ে যেতে।
২ দিন আগে২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। নদী, পাহাড়, সমুদ্র পেরিয়ে এই দিনে বাংলাদেশে নেমেছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। সীমান্তের ওইপারে তখন চলছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীরদের অমানবিক নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমারের মানবিক বিপর্যয়, হত্যা, ধ্বংস আর বাস্তুচ্যুতি নিয়ে লিখেছেন রোহিঙ্গা কবিরা।
৩ দিন আগে