এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির কথাসাহিত্যিক লাজলো ক্রাসনাহোরকাই। তাঁর বিশেষত্ব কোথায়? কেন তাঁর গদ্যের ভেতর ঘোর আর ঘোরের ভেতর গদ্য?
সাজিদ উল হক আবির
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই এ বছর সাহিত্যের নোবেল লরিয়েট। হাঙ্গেরিতে জন্মানো, জার্মানিতে থিতু এই কথাসাহিত্যিকের বিশেষত্ব চিহ্নিত করতে গিয়ে নোবেল কমিটি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘তাঁর শক্তিশালী ও ভাবনাপ্রবণ লেখালেখির জন্য, যা ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে বিশ্বাস করায়।’ অর্থাৎ প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি এক পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে নিজের লেখার শৈল্পিক গুণে তিনি মানুষকে পুনরায় আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন শিল্পের শক্তির ওপর।
পাশ্চাত্য এখনও এক ভৌগোলিক ল্যান্ডস্কেপ, অথবা এক মতাদর্শ যেখানে শিল্পমাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মিতার কদর করা হয়। তাই প্রায় ঘোরগ্রস্তের মতো একটানা লিখে চলা সুবিশাল বাক্যে ক্রাসনাহোরকাইয়ের রচিত আখ্যানসমূহ অর্জন করেছে বুকার প্রাইজ (২০১৫) এবং এ বছরের সাহিত্যে নোবেল (২০২৫)।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের বাবা ছিলেন ইহুদি। কাজেই জন্মসূত্রে তিনিও একজন ইহুদি। কাফকা যে সমাজবাস্তবতায় পৃথিবীতে আসেন, ক্রাসনোহোরকাইয়ের বেড়ে ওঠার দিনে (১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিতে জন্ম তাঁর) ইহুদিদের অবস্থা ততটা দুরূহ ছিল না। কিন্তু বাড়ির ঠিক পাশেই সোভিয়েত রাশিয়া হওয়ার কারণে সমাজতান্ত্রিক জাঁতাকলে তাকেও পিষ্ট হতে হয়েছিল—অন্তত মানসিকভাবে।
প্যারিস রিভিউতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রাসনোহোরকাই জানান, তাঁদের দেশে তাঁর প্রজন্মই প্রথম ছিল, যারা মুক্তকণ্ঠে কমিউনিজমকে অস্বীকার করেছিল। তাঁর শৈশবের কমিউনিস্ট প্রভাববলয়ে থাকা হাঙ্গেরিতে সময় স্থবির ছিল। আকাশ সবসময় ধূসর, বায়ু শান্ত, সমস্ত গাছের পাতা ফুল ফল রংবিহীন। কাফকার মতো নাৎসিবাদের উত্থান তাঁকে দেখতে হয় নি। তিনি ভুগেছেন সমাজতান্ত্রিকতার অত্যাচারে। এখনও যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, তিনি চলতে ফিরতে মানচিত্রে রাশিয়া যেদিকে, সেদিকে ফিরে থুথু দেন। ট্যাঙ্কটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকার এসব জানা গেছে।
কিন্তু কাফকা লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জীবনে এক বড় ভূমিকা রেখেছে। কাফকার লেখাপত্র তিনি প্রায় সময়ই পড়েন। কাফকার লেখা না পড়লে, তা নিয়ে ভাবায় ব্যস্ত থাকেন। তারপর একসময় অস্থির হয়ে ফিরে আসেন তাঁর বইয়ের কাছেই। কাফকা দ্বারা প্রাণিত হয়ে তিনি আইন নিয়েও পড়াশোনা করা শুরু করেছিলেন। যদিও তা শেষ করতে পারেন নি। কাফকার মতোই তাঁকে নাড়া দিয়েছিল ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা।
ফিওদর দস্তয়েভস্কির ‘দা ইডিয়ট’ উপন্যাসের মূল চরিত্র প্রিন্স মিশকিনের ছায়া ক্রাসনোহোরকাইয়ের প্রায় সব উপন্যাসেই ঘুরে ফিরে আসে। বিশেষ করে তাঁর সবশেষ প্রকাশিত উপন্যাস ‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’-এর মূল চরিত্র ফ্লোরিয়ান, প্রিন্স মিশকিনের খুব কাছাকাছি। যদিও ক্রাসনোহোরকাই দাবি করেন, সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো পাপকর্ম সংঘটিত করা মুখ্য চরিত্রের মানসজগত যেভাবে খুলে ধরেন, নাড়াচাড়া করেন, যেভাবে তাঁর চরিত্রগুলো আত্মগ্লানির আগুনে পুড়তে থাকে, ক্রাসনোহোরকাই ঠিক সেভাবে চরিত্রচিত্রণ করেন না। তাঁর চরিত্রগুলো ঘুরে লড়াই করে। অবস্থা বদলানোর জন্য যা করা দরকার, নিজের শক্তিমত্তার ভেতরে থেকে সে অনুরূপ চেষ্টা করে।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের আলোচিত লেখার স্টাইল হলো দীর্ঘ বাক্য। তাঁর সবশেষ প্রকাশিত উপন্যাস ‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’-এর রচনাকৌশল নিয়ে এক সমালোচক এভাবে মন্তব্য করেন, ‘৪০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস ‘‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’’ একটানা গড়িয়ে চলে, যেন এক দীর্ঘ, বহুস্বরিক বাক্য, যাকে থামায় না কোনো অনুচ্ছেদ, এমনকি একটিও পূর্ণচ্ছেদ নয়।’ প্রায় অভাবনীয় এক কাজ। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সে বুক রিভিউর শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘দিস নভেল হ্যাজ ফিউয়ার পিরিয়ডস দ্যান দিস হেডলাইন। অ্যান্ড ইটস ৪০০ পেইজেস।’
একটি মাত্র বাক্যে লেখা একটি উপন্যাসের মধ্যে অসংখ্য কণ্ঠস্বর, এক চিকিৎসক থেকে শুরু করে গৃহবধু, সেখান থেকে আবার এক নিও নাৎসি, বিরতিহীনভাবে এসে হাজির হতে থাকে। তাঁর এই স্টাইলকে ক্রাসনোহোরকাই বলেন, ঘোরগ্রস্থতার ফসল। ট্রান্স মোড, তথা ঘোরে চলে যান তিনি এবং তাঁকে দিয়ে, তাঁর কলম দিয়ে চরিত্রেরা কথা বলতে থাকে। এটা শুনতে পাগলামো বলেই মনে হয়। কিন্তু ক্রাসনোহোরকাই শেক্সপিয়র থেকে ধার করে বলেন, তাঁর এ প্রক্রিয়া ‘ম্যাথডিকাল ম্যাডনেস’। পাগলামো, তবে গোছানো, পরিকল্পিত পাগলামো।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের ২০১৮ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য ওয়ার্ল্ড গৌজ অন’-এর ব্যাপারে সমালোচকদের মন্তব্য ছিল যে এসব গল্পের প্রেক্ষাপট কিয়েভ থেকে নিয়ে সাংহাই পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও গল্পগুলোতে বিচ্ছিন্ন, একাকী, অসহায় পুরুষমানুষের জীবনকেই তুলে আনা হয়েছে নানাভাবে। যদিও তাঁর লেখাপত্রে নারীদের সহিংস, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে দেখা যায় প্রায়ই। এদিক থেকে নারী বিষয়ক অবস্থানে পলিটিক্যালি কারেক্টনেসের ধার না ধেরে ক্রাশনোহোরকাই বলেন, পৃথিবীতে লেডি ম্যাকবেথ একা কোন সত্তা নয়। আর নারী ও পুরুষে প্রতিশোধপরায়ণতা ও সহিংসতা চর্চার প্রকরণ আলাদা হতে পারে, কিন্তু এই প্রবণতাগুলো তারা উভয়েই ধারণ করে। তাই ঠিক ‘ডেলিকেট’ নারীচরিত্র আলাদা করে নির্মাণে তিনি আগ্রহী হননি।
ক্রাশনোহোরকাই সময় থেকে এগিয়ে থাকা সে সব কথাসাহিত্যিকের একজন, যিনি বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের কোলাবরেশনে বিশ্বাস করতেন। তিনি বারোক তথা ১৭-১৮ শতকের ইউরোপিয়ান শিল্পকলা এবং বারোক মায়েস্ত্রো কম্পোজার সাবাস্টিইয়ান বাখের মিউজিক দ্বারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। হাঙ্গেরিয়ান ফিল্মমেকার বেলা তার ক্রাশনোহোরকাইয়ের উপন্যাসের কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন। যদিও ক্রাশনোহোরকাই বলেন যে তাতে আলাদা কোনো চিত্রনাট্য প্রস্তুত করা হয় নি। তাঁর উপন্যাসের নির্যাসটুকু নিয়ে বেলা তার নিজের মতো করে সিনেমা সাজিয়েছেন। আবার জার্মান চিত্রকর ম্যাক্স নিউম্যানের আঁকা ছবির ওপর ভিত্তি করে ক্রাশনোহোরকাই সাজিয়েছেন তাঁর নভেলা ‘অ্যানিমেলইনসাইড’।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জয়জয়কারের যুগে এসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তিনি দারুণ অভিমত পোষণ করেন। তাঁর বিবেচনায়, হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন পর্যন্ত মানুষের সবচেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, তবে মানুষের হাতে যা-ই পড়েছে, তাই নষ্ট হয়েছে। মানুষ চাকা আবিষ্কার করার পর সভ্যতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, অথচ সেই চাকা লাগানো রেলগাড়িতে করেই সৈন্য, অস্ত্র এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাঠানো যায়। উড়োজাহাজ আবিষ্কার যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করেছে। অথচ এই উড়োজাহাজে করেই নিরাপরাধ মানুষের ওপর বোমা ফেলা যায়।
লেখাকে তিনি তাঁর জগতজুড়ে ঘটতে থাকা সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রসঙ্গে ক্রাশনোহোরকাই বলেন, শিল্পীর ক্রমাগত কথা বলে যাওয়া উচিৎ। ইহুদি বংশোদ্ভূত এই লেখক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার হলেও গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যা নিয়ে নোবেল বিজয়ী এই কথাসাহিত্যিকের কোনো বিবৃতি ইন্তারনেটের কোথাও পাওয়া যায় না। নিশ্চয়ই এর কোনো জবাব তাঁর কাছে আছে। আপাতত উদযাপন করা যাক তাঁর নোবেলপ্রাপ্তি।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই এ বছর সাহিত্যের নোবেল লরিয়েট। হাঙ্গেরিতে জন্মানো, জার্মানিতে থিতু এই কথাসাহিত্যিকের বিশেষত্ব চিহ্নিত করতে গিয়ে নোবেল কমিটি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘তাঁর শক্তিশালী ও ভাবনাপ্রবণ লেখালেখির জন্য, যা ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে বিশ্বাস করায়।’ অর্থাৎ প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি এক পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে নিজের লেখার শৈল্পিক গুণে তিনি মানুষকে পুনরায় আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন শিল্পের শক্তির ওপর।
পাশ্চাত্য এখনও এক ভৌগোলিক ল্যান্ডস্কেপ, অথবা এক মতাদর্শ যেখানে শিল্পমাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মিতার কদর করা হয়। তাই প্রায় ঘোরগ্রস্তের মতো একটানা লিখে চলা সুবিশাল বাক্যে ক্রাসনাহোরকাইয়ের রচিত আখ্যানসমূহ অর্জন করেছে বুকার প্রাইজ (২০১৫) এবং এ বছরের সাহিত্যে নোবেল (২০২৫)।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের বাবা ছিলেন ইহুদি। কাজেই জন্মসূত্রে তিনিও একজন ইহুদি। কাফকা যে সমাজবাস্তবতায় পৃথিবীতে আসেন, ক্রাসনোহোরকাইয়ের বেড়ে ওঠার দিনে (১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিতে জন্ম তাঁর) ইহুদিদের অবস্থা ততটা দুরূহ ছিল না। কিন্তু বাড়ির ঠিক পাশেই সোভিয়েত রাশিয়া হওয়ার কারণে সমাজতান্ত্রিক জাঁতাকলে তাকেও পিষ্ট হতে হয়েছিল—অন্তত মানসিকভাবে।
প্যারিস রিভিউতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রাসনোহোরকাই জানান, তাঁদের দেশে তাঁর প্রজন্মই প্রথম ছিল, যারা মুক্তকণ্ঠে কমিউনিজমকে অস্বীকার করেছিল। তাঁর শৈশবের কমিউনিস্ট প্রভাববলয়ে থাকা হাঙ্গেরিতে সময় স্থবির ছিল। আকাশ সবসময় ধূসর, বায়ু শান্ত, সমস্ত গাছের পাতা ফুল ফল রংবিহীন। কাফকার মতো নাৎসিবাদের উত্থান তাঁকে দেখতে হয় নি। তিনি ভুগেছেন সমাজতান্ত্রিকতার অত্যাচারে। এখনও যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, তিনি চলতে ফিরতে মানচিত্রে রাশিয়া যেদিকে, সেদিকে ফিরে থুথু দেন। ট্যাঙ্কটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকার এসব জানা গেছে।
কিন্তু কাফকা লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জীবনে এক বড় ভূমিকা রেখেছে। কাফকার লেখাপত্র তিনি প্রায় সময়ই পড়েন। কাফকার লেখা না পড়লে, তা নিয়ে ভাবায় ব্যস্ত থাকেন। তারপর একসময় অস্থির হয়ে ফিরে আসেন তাঁর বইয়ের কাছেই। কাফকা দ্বারা প্রাণিত হয়ে তিনি আইন নিয়েও পড়াশোনা করা শুরু করেছিলেন। যদিও তা শেষ করতে পারেন নি। কাফকার মতোই তাঁকে নাড়া দিয়েছিল ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা।
ফিওদর দস্তয়েভস্কির ‘দা ইডিয়ট’ উপন্যাসের মূল চরিত্র প্রিন্স মিশকিনের ছায়া ক্রাসনোহোরকাইয়ের প্রায় সব উপন্যাসেই ঘুরে ফিরে আসে। বিশেষ করে তাঁর সবশেষ প্রকাশিত উপন্যাস ‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’-এর মূল চরিত্র ফ্লোরিয়ান, প্রিন্স মিশকিনের খুব কাছাকাছি। যদিও ক্রাসনোহোরকাই দাবি করেন, সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো পাপকর্ম সংঘটিত করা মুখ্য চরিত্রের মানসজগত যেভাবে খুলে ধরেন, নাড়াচাড়া করেন, যেভাবে তাঁর চরিত্রগুলো আত্মগ্লানির আগুনে পুড়তে থাকে, ক্রাসনোহোরকাই ঠিক সেভাবে চরিত্রচিত্রণ করেন না। তাঁর চরিত্রগুলো ঘুরে লড়াই করে। অবস্থা বদলানোর জন্য যা করা দরকার, নিজের শক্তিমত্তার ভেতরে থেকে সে অনুরূপ চেষ্টা করে।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের আলোচিত লেখার স্টাইল হলো দীর্ঘ বাক্য। তাঁর সবশেষ প্রকাশিত উপন্যাস ‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’-এর রচনাকৌশল নিয়ে এক সমালোচক এভাবে মন্তব্য করেন, ‘৪০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস ‘‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’’ একটানা গড়িয়ে চলে, যেন এক দীর্ঘ, বহুস্বরিক বাক্য, যাকে থামায় না কোনো অনুচ্ছেদ, এমনকি একটিও পূর্ণচ্ছেদ নয়।’ প্রায় অভাবনীয় এক কাজ। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সে বুক রিভিউর শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘দিস নভেল হ্যাজ ফিউয়ার পিরিয়ডস দ্যান দিস হেডলাইন। অ্যান্ড ইটস ৪০০ পেইজেস।’
একটি মাত্র বাক্যে লেখা একটি উপন্যাসের মধ্যে অসংখ্য কণ্ঠস্বর, এক চিকিৎসক থেকে শুরু করে গৃহবধু, সেখান থেকে আবার এক নিও নাৎসি, বিরতিহীনভাবে এসে হাজির হতে থাকে। তাঁর এই স্টাইলকে ক্রাসনোহোরকাই বলেন, ঘোরগ্রস্থতার ফসল। ট্রান্স মোড, তথা ঘোরে চলে যান তিনি এবং তাঁকে দিয়ে, তাঁর কলম দিয়ে চরিত্রেরা কথা বলতে থাকে। এটা শুনতে পাগলামো বলেই মনে হয়। কিন্তু ক্রাসনোহোরকাই শেক্সপিয়র থেকে ধার করে বলেন, তাঁর এ প্রক্রিয়া ‘ম্যাথডিকাল ম্যাডনেস’। পাগলামো, তবে গোছানো, পরিকল্পিত পাগলামো।
ক্রাসনোহোরকাইয়ের ২০১৮ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য ওয়ার্ল্ড গৌজ অন’-এর ব্যাপারে সমালোচকদের মন্তব্য ছিল যে এসব গল্পের প্রেক্ষাপট কিয়েভ থেকে নিয়ে সাংহাই পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও গল্পগুলোতে বিচ্ছিন্ন, একাকী, অসহায় পুরুষমানুষের জীবনকেই তুলে আনা হয়েছে নানাভাবে। যদিও তাঁর লেখাপত্রে নারীদের সহিংস, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে দেখা যায় প্রায়ই। এদিক থেকে নারী বিষয়ক অবস্থানে পলিটিক্যালি কারেক্টনেসের ধার না ধেরে ক্রাশনোহোরকাই বলেন, পৃথিবীতে লেডি ম্যাকবেথ একা কোন সত্তা নয়। আর নারী ও পুরুষে প্রতিশোধপরায়ণতা ও সহিংসতা চর্চার প্রকরণ আলাদা হতে পারে, কিন্তু এই প্রবণতাগুলো তারা উভয়েই ধারণ করে। তাই ঠিক ‘ডেলিকেট’ নারীচরিত্র আলাদা করে নির্মাণে তিনি আগ্রহী হননি।
ক্রাশনোহোরকাই সময় থেকে এগিয়ে থাকা সে সব কথাসাহিত্যিকের একজন, যিনি বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের কোলাবরেশনে বিশ্বাস করতেন। তিনি বারোক তথা ১৭-১৮ শতকের ইউরোপিয়ান শিল্পকলা এবং বারোক মায়েস্ত্রো কম্পোজার সাবাস্টিইয়ান বাখের মিউজিক দ্বারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। হাঙ্গেরিয়ান ফিল্মমেকার বেলা তার ক্রাশনোহোরকাইয়ের উপন্যাসের কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন। যদিও ক্রাশনোহোরকাই বলেন যে তাতে আলাদা কোনো চিত্রনাট্য প্রস্তুত করা হয় নি। তাঁর উপন্যাসের নির্যাসটুকু নিয়ে বেলা তার নিজের মতো করে সিনেমা সাজিয়েছেন। আবার জার্মান চিত্রকর ম্যাক্স নিউম্যানের আঁকা ছবির ওপর ভিত্তি করে ক্রাশনোহোরকাই সাজিয়েছেন তাঁর নভেলা ‘অ্যানিমেলইনসাইড’।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জয়জয়কারের যুগে এসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তিনি দারুণ অভিমত পোষণ করেন। তাঁর বিবেচনায়, হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন পর্যন্ত মানুষের সবচেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, তবে মানুষের হাতে যা-ই পড়েছে, তাই নষ্ট হয়েছে। মানুষ চাকা আবিষ্কার করার পর সভ্যতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, অথচ সেই চাকা লাগানো রেলগাড়িতে করেই সৈন্য, অস্ত্র এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাঠানো যায়। উড়োজাহাজ আবিষ্কার যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করেছে। অথচ এই উড়োজাহাজে করেই নিরাপরাধ মানুষের ওপর বোমা ফেলা যায়।
লেখাকে তিনি তাঁর জগতজুড়ে ঘটতে থাকা সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রসঙ্গে ক্রাশনোহোরকাই বলেন, শিল্পীর ক্রমাগত কথা বলে যাওয়া উচিৎ। ইহুদি বংশোদ্ভূত এই লেখক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার হলেও গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যা নিয়ে নোবেল বিজয়ী এই কথাসাহিত্যিকের কোনো বিবৃতি ইন্তারনেটের কোথাও পাওয়া যায় না। নিশ্চয়ই এর কোনো জবাব তাঁর কাছে আছে। আপাতত উদযাপন করা যাক তাঁর নোবেলপ্রাপ্তি।
গতকাল প্রয়াত হয়েছেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। কেন তিনি অতীতের বর্তমান এবং একই সঙ্গে আগামী দিনের পাঠকের ভবিষ্যতের স্মৃতি হয়ে থাকবেন? লিখেছেন এই সময়ের এক কথাসাহিত্যিক।
৬ ঘণ্টা আগেআজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১১ অক্টোবর পালিত হয় এ দিবস। ব্যস্ত ঢাকা শহরে কন্যাশিশুকে লালন-পালন করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হন মায়েরা? এই লেখক কেন এক কন্যাশিশুর মা হিসেবে নিজেকে ‘অপরাধী’ভাবছেন?
১০ ঘণ্টা আগেউনিশ শতকের শেষতম দশক। গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক স্কুল শিক্ষক। এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে পরশপাথরের মতো খুঁজে ফিরছেন ‘অতি সামান্য’জিনিস, পরোনো পুঁথি। মনে হতে পারে, আহা মরি কিছু নয়। উচ্চবর্গের ‘উচ্চ সংস্কৃতি’র কাছে এর বিশেষ কদর থাকার কথাও নয়। কিন্তু কেউ কেউ এর মূল্য বুঝেছিলেন ভবিষ্যতের বিচারে; সেই জনাকয়েক সমঝদ
১৩ ঘণ্টা আগেযা লিখলাম, যা ভাবছি, যা লিখতে চাই, তা আমার বড় নিজস্ব কথা। কারণ, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে আমার যে শোক, তা আমার একান্তই পারিবারিক, ব্যক্তিগত।
১ দিন আগে