পাকিস্তানের বক্তব্যে ‘শত্রু’ বলতে সাধারণত প্রতিবেশী ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারতকেই বোঝানো হয়। এই ঘোষণার কয়েকদিন পর ভারত ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-ভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ পরীক্ষার সঙ্গে পাকিস্তানের নতুন বাহিনী গঠনের সরাসরি সম্পর্ক নেই।
স্ট্রিম ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রায় ৪ মাস পর পাকিস্তান একটি নতুন রকেট কমান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নতুন এই আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দেন। এই বাহিনী সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হবে এবং সব দিক থেকে শত্রুপক্ষকে আঘাত করার সক্ষমতা রাখবে। শরিফের মতে, এটি পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
পাকিস্তানের বক্তব্যে ‘শত্রু’ বলতে সাধারণত প্রতিবেশী ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারতকেই বোঝানো হয়। এই ঘোষণার কয়েকদিন পর ভারত ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-ভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ পরীক্ষার সঙ্গে পাকিস্তানের নতুন বাহিনী গঠনের সরাসরি সম্পর্ক নেই।
এআরএফসি গঠনের পেছনে মূল কারণ ছিল গত মে মাসে পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাত। সে সময় উভয় দেশ বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ড্রোন আক্রমণে একে অপরের সামরিক স্থাপনা টার্গেট করে। এতে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরোধ সক্ষমতার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। প্রায় তিন দশক ধরে এ নীতি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এর ব্যবহার নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান বজায় রেখেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু পাকিস্তান নয় বরং বিশ্বজুড়েই আধুনিক রকেট বাহিনী গঠনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধগুলো— যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং ইসরায়েল-ইরান ও হিজবুল্লাহর মুখোমুখি অবস্থান— প্রমাণ করেছে, আধুনিক যুদ্ধে নিখুঁতভাবে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ ইউনিটের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নতুন শাখা। এর লক্ষ্য হলো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা।
পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন (এসপিডি)। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)।
এসপিডি–তে কর্মরত সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসি মূলত গাইডেড কনভেনশনাল রকেট সিস্টেমে মনোযোগ দেবে। এটি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত নয়।
সালিকের ব্যাখ্যায়, প্রচলিত অস্ত্রের পাল্লা যেখানে প্রায় ৩০–৩৫ কিলোমিটার, সেখানে এআরএফসি শুধুমাত্র গাইডেড রকেট ব্যবহার করবে। এগুলো সম্পূর্ণ অপারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা। পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে এসপিডি এবং এনসিএ-র হাতে। অন্যদিকে এআরএফসি নিয়ন্ত্রণ করবে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারস (জিএইচকিউ)।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাবেক ব্রিগেডিয়ার তুঘরল ইয়ামিনের মতে, এআরএফসি গঠনের উদ্দেশ্য হলো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো ও কার্যকরভাবে প্রস্তুতি নেওয়া। এটি শুধু কোনো একটি ঘটনা বা সীমান্ত সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নয় বরং সামগ্রিক আঞ্চলিক হুমকির প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।
বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নয়টি কোর পরিচালনা করে। পাশাপাশি রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত কমান্ড— এয়ার ডিফেন্স, সাইবার এবং স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (যা পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থাপনা করে)।
এআরএফসি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে একজন থ্রি-স্টার জেনারেলকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থ্রি-স্টার জেনারেলদের কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্পস ও বিভাগগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এআরএফসি কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি সামরিক কৌশলের অংশ। ব্রিগেডিয়ার তুঘরল ইয়ামিন বলেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো পাকিস্তানের জন্য জরুরি বার্তা দিলেও এআরএফসি আসলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল। এটি কোনো একক পরীক্ষার বা মে মাসের সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়।
মার্কিন রাজনীতি বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্লেরি একই মত দেন। তাঁর মতে, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে সংঘাতে ব্যবহারের জন্য আরও বেশি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক দায়িত্বে থাকা স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড এবং প্রচলিত হামলার দায়িত্বে থাকা রকেট ফোর্সকে আলাদা করা যৌক্তিক পদক্ষেপ।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মনসুর আহমেদ বলেন, পাকিস্তান বহু বছর ধরে প্রচলিত পাল্টা হামলার সক্ষমতা তৈরি করছে। তাঁর মতে, সব পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রই প্রচলিত কৌশলগত অস্ত্র বিকশিত করেছে। তাই এআরএফসি পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করছে।
তিনি আরও যুক্ত করেন, ভারতের ‘ফার্স্ট-স্ট্রাইক ভঙ্গি’ এবং দীর্ঘপাল্লার নিখুঁত হামলার ক্ষমতা পাকিস্তানকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। মে মাসের সংঘর্ষ কেবল এই প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করেছে।
পাকিস্তানের হাতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে— ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠে, আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে, এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য। এর মধ্যে কিছু পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম হলেও এআরএফসি নিয়ন্ত্রণ করবে মূলত স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র।
সাবেক কর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এই বাহিনীতে বর্তমানে রয়েছে— ফাতেহ-১ (পাল্লা সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার); ফাতেহ-২ (পাল্লা ২৫০–৪০০ কিলোমিটার); হাতফ-১ ও আব্দালি (পাল্লা ৫০০ কিলোমিটারের কম)। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মে মাসের সংঘর্ষেও ব্যবহার করা হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মনসুর আহমেদ বলেন, নতুন কমান্ড পাকিস্তানকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে গভীর আঘাত হানার সক্ষমতা দেবে। তবে এতে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
তিনি আরও যোগ করেন, মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম এবং নিখুঁত প্রচলিত হামলার ক্ষমতা গড়ে তোলা হচ্ছে এআরএফসি-র প্রধান লক্ষ্য। এর মাধ্যমে পাকিস্তান কার্যকর করতে চায় তাদের ‘কুইড প্রো কুও প্লাস’ নীতি।
এই নীতির অর্থ হলো— ভারতের আক্রমণের জবাবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কেবল সমপরিমাণ হবে না বরং আরও ব্যাপক বা কঠোর হতে পারে। এতে সংঘাত তীব্র হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও, সেটি সীমিত রাখা হবে যাতে পারমাণবিক পর্যায়ে না পৌঁছে।
মে মাসের লড়াইয়ের প্রথম দিনেই পাকিস্তান দাবি করে যে তারা ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। প্রথমে ভারত কোনো বিমান হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করে যে বিমান হারিয়েছে, তবে সঠিক সংখ্যা জানায়নি।
ভারত পাল্টা আঘাত হানে। তারা পাকিস্তানের ভেতরে গভীর হামলা চালায়। এ সময় একাধিক এয়ারবেস ও স্থাপনায় আঘাত হানা হয়। সিন্ধু প্রদেশের ভোলারি এয়ারবেসে আঘাত করে ভারতের ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে তৈরি করেছে।
চার দিনের সংঘর্ষ ১০ মে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, দেশটি কেবল সামরিক অভিযান ‘স্থগিত’করেছে। প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, ভারত ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ সহ্য করবে না। তাঁর দাবি, ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী সরকার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করবে না।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মনসুর আহমেদ বলেন, এআরএফসি গঠনের একটি উদ্দেশ্য হলো ভারতের ‘ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ’ নীতি মোকাবিলা করা। ভারতের এই কৌশল পাকিস্তানের প্রচলিত পাল্টা আঘাতের সক্ষমতায় ফাঁকফোকর কাজে লাগাতে চায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নীতিতে বহু বছর ধরে পারমাণবিক অস্ত্রই প্রধান ভরসা। তারা বিশেষভাবে ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন বা স্বল্পপাল্লার ক্ষুদ্র ক্ষমতার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। এগুলো শত্রুর সেনাবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে টার্গেট করার জন্য, বড় কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত করার জন্য নয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বৃহৎ আক্রমণ ঠেকানো।
কিন্তু ২০২৫ সালের সংঘর্ষ ছিল ছয় বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার, যখন ভারত ও পাকিস্তান প্রায় পারমাণবিক পর্যায়ের সংঘাতে পৌঁছে গিয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত পাকিস্তানি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়ে বলে যে তারা সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আঘাত করেছে।
পাকিস্তানের এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেন, মে মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সময় পাকিস্তান তার বাবর ক্রুজ মিসাইল প্রচলিত ভূমিকায় ব্যবহার করতে পারেনি। কারণ বাবর ক্ষেপণাস্ত্র কেবল পারমাণবিক মিশনের জন্য এসপিডি ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাবর বা হাতফ-৭ হলো স্থলভিত্তিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার এবং এটি ২০১০ সাল থেকে চালু রয়েছে। কিন্তু এটি এখনও পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে বাঁধা।
উক্ত বিশ্লেষকের মতে, নতুন রকেট ফোর্স গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক নীতির সীমাবদ্ধতা মেনে নিচ্ছে। আগে শুধু ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে ভারতকে ঠেকানো সম্ভব ছিল না। ২০১৯ এবং ২০২৫ সালের সংঘাত দেখিয়েছে, ভারত এই প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটানোর পথ খুঁজে নিয়েছে। তাই এখন পাকিস্তানের প্রয়োজন প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি, যা ভারতের ভেতরে আঘাত হানতে পারবে এবং তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রায় ৪ মাস পর পাকিস্তান একটি নতুন রকেট কমান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নতুন এই আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দেন। এই বাহিনী সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হবে এবং সব দিক থেকে শত্রুপক্ষকে আঘাত করার সক্ষমতা রাখবে। শরিফের মতে, এটি পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
পাকিস্তানের বক্তব্যে ‘শত্রু’ বলতে সাধারণত প্রতিবেশী ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারতকেই বোঝানো হয়। এই ঘোষণার কয়েকদিন পর ভারত ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-ভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ পরীক্ষার সঙ্গে পাকিস্তানের নতুন বাহিনী গঠনের সরাসরি সম্পর্ক নেই।
এআরএফসি গঠনের পেছনে মূল কারণ ছিল গত মে মাসে পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাত। সে সময় উভয় দেশ বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ড্রোন আক্রমণে একে অপরের সামরিক স্থাপনা টার্গেট করে। এতে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরোধ সক্ষমতার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। প্রায় তিন দশক ধরে এ নীতি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এর ব্যবহার নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান বজায় রেখেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু পাকিস্তান নয় বরং বিশ্বজুড়েই আধুনিক রকেট বাহিনী গঠনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধগুলো— যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং ইসরায়েল-ইরান ও হিজবুল্লাহর মুখোমুখি অবস্থান— প্রমাণ করেছে, আধুনিক যুদ্ধে নিখুঁতভাবে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ ইউনিটের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নতুন শাখা। এর লক্ষ্য হলো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা।
পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন (এসপিডি)। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)।
এসপিডি–তে কর্মরত সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসি মূলত গাইডেড কনভেনশনাল রকেট সিস্টেমে মনোযোগ দেবে। এটি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত নয়।
সালিকের ব্যাখ্যায়, প্রচলিত অস্ত্রের পাল্লা যেখানে প্রায় ৩০–৩৫ কিলোমিটার, সেখানে এআরএফসি শুধুমাত্র গাইডেড রকেট ব্যবহার করবে। এগুলো সম্পূর্ণ অপারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা। পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে এসপিডি এবং এনসিএ-র হাতে। অন্যদিকে এআরএফসি নিয়ন্ত্রণ করবে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারস (জিএইচকিউ)।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাবেক ব্রিগেডিয়ার তুঘরল ইয়ামিনের মতে, এআরএফসি গঠনের উদ্দেশ্য হলো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো ও কার্যকরভাবে প্রস্তুতি নেওয়া। এটি শুধু কোনো একটি ঘটনা বা সীমান্ত সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নয় বরং সামগ্রিক আঞ্চলিক হুমকির প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।
বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নয়টি কোর পরিচালনা করে। পাশাপাশি রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত কমান্ড— এয়ার ডিফেন্স, সাইবার এবং স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (যা পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থাপনা করে)।
এআরএফসি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে একজন থ্রি-স্টার জেনারেলকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থ্রি-স্টার জেনারেলদের কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্পস ও বিভাগগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এআরএফসি কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি সামরিক কৌশলের অংশ। ব্রিগেডিয়ার তুঘরল ইয়ামিন বলেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো পাকিস্তানের জন্য জরুরি বার্তা দিলেও এআরএফসি আসলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল। এটি কোনো একক পরীক্ষার বা মে মাসের সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়।
মার্কিন রাজনীতি বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্লেরি একই মত দেন। তাঁর মতে, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে সংঘাতে ব্যবহারের জন্য আরও বেশি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক দায়িত্বে থাকা স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড এবং প্রচলিত হামলার দায়িত্বে থাকা রকেট ফোর্সকে আলাদা করা যৌক্তিক পদক্ষেপ।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মনসুর আহমেদ বলেন, পাকিস্তান বহু বছর ধরে প্রচলিত পাল্টা হামলার সক্ষমতা তৈরি করছে। তাঁর মতে, সব পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রই প্রচলিত কৌশলগত অস্ত্র বিকশিত করেছে। তাই এআরএফসি পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করছে।
তিনি আরও যুক্ত করেন, ভারতের ‘ফার্স্ট-স্ট্রাইক ভঙ্গি’ এবং দীর্ঘপাল্লার নিখুঁত হামলার ক্ষমতা পাকিস্তানকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। মে মাসের সংঘর্ষ কেবল এই প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করেছে।
পাকিস্তানের হাতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে— ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠে, আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে, এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য। এর মধ্যে কিছু পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম হলেও এআরএফসি নিয়ন্ত্রণ করবে মূলত স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র।
সাবেক কর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এই বাহিনীতে বর্তমানে রয়েছে— ফাতেহ-১ (পাল্লা সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার); ফাতেহ-২ (পাল্লা ২৫০–৪০০ কিলোমিটার); হাতফ-১ ও আব্দালি (পাল্লা ৫০০ কিলোমিটারের কম)। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মে মাসের সংঘর্ষেও ব্যবহার করা হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মনসুর আহমেদ বলেন, নতুন কমান্ড পাকিস্তানকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে গভীর আঘাত হানার সক্ষমতা দেবে। তবে এতে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
তিনি আরও যোগ করেন, মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম এবং নিখুঁত প্রচলিত হামলার ক্ষমতা গড়ে তোলা হচ্ছে এআরএফসি-র প্রধান লক্ষ্য। এর মাধ্যমে পাকিস্তান কার্যকর করতে চায় তাদের ‘কুইড প্রো কুও প্লাস’ নীতি।
এই নীতির অর্থ হলো— ভারতের আক্রমণের জবাবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কেবল সমপরিমাণ হবে না বরং আরও ব্যাপক বা কঠোর হতে পারে। এতে সংঘাত তীব্র হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও, সেটি সীমিত রাখা হবে যাতে পারমাণবিক পর্যায়ে না পৌঁছে।
মে মাসের লড়াইয়ের প্রথম দিনেই পাকিস্তান দাবি করে যে তারা ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। প্রথমে ভারত কোনো বিমান হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করে যে বিমান হারিয়েছে, তবে সঠিক সংখ্যা জানায়নি।
ভারত পাল্টা আঘাত হানে। তারা পাকিস্তানের ভেতরে গভীর হামলা চালায়। এ সময় একাধিক এয়ারবেস ও স্থাপনায় আঘাত হানা হয়। সিন্ধু প্রদেশের ভোলারি এয়ারবেসে আঘাত করে ভারতের ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে তৈরি করেছে।
চার দিনের সংঘর্ষ ১০ মে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, দেশটি কেবল সামরিক অভিযান ‘স্থগিত’করেছে। প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, ভারত ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ সহ্য করবে না। তাঁর দাবি, ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী সরকার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করবে না।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মনসুর আহমেদ বলেন, এআরএফসি গঠনের একটি উদ্দেশ্য হলো ভারতের ‘ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ’ নীতি মোকাবিলা করা। ভারতের এই কৌশল পাকিস্তানের প্রচলিত পাল্টা আঘাতের সক্ষমতায় ফাঁকফোকর কাজে লাগাতে চায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নীতিতে বহু বছর ধরে পারমাণবিক অস্ত্রই প্রধান ভরসা। তারা বিশেষভাবে ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন বা স্বল্পপাল্লার ক্ষুদ্র ক্ষমতার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। এগুলো শত্রুর সেনাবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে টার্গেট করার জন্য, বড় কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত করার জন্য নয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বৃহৎ আক্রমণ ঠেকানো।
কিন্তু ২০২৫ সালের সংঘর্ষ ছিল ছয় বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার, যখন ভারত ও পাকিস্তান প্রায় পারমাণবিক পর্যায়ের সংঘাতে পৌঁছে গিয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত পাকিস্তানি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়ে বলে যে তারা সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আঘাত করেছে।
পাকিস্তানের এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেন, মে মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সময় পাকিস্তান তার বাবর ক্রুজ মিসাইল প্রচলিত ভূমিকায় ব্যবহার করতে পারেনি। কারণ বাবর ক্ষেপণাস্ত্র কেবল পারমাণবিক মিশনের জন্য এসপিডি ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাবর বা হাতফ-৭ হলো স্থলভিত্তিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার এবং এটি ২০১০ সাল থেকে চালু রয়েছে। কিন্তু এটি এখনও পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে বাঁধা।
উক্ত বিশ্লেষকের মতে, নতুন রকেট ফোর্স গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক নীতির সীমাবদ্ধতা মেনে নিচ্ছে। আগে শুধু ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে ভারতকে ঠেকানো সম্ভব ছিল না। ২০১৯ এবং ২০২৫ সালের সংঘাত দেখিয়েছে, ভারত এই প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটানোর পথ খুঁজে নিয়েছে। তাই এখন পাকিস্তানের প্রয়োজন প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি, যা ভারতের ভেতরে আঘাত হানতে পারবে এবং তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের সব প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কোটা বাতিল করে বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।
১ দিন আগে২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। ২০২৪ সালে বিজেপির টানা তৃতীয়বারের মতো জয় ভারতীয় সমাজে এমন কিছু সাংবিধানিক, বিচারিক এবং সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যা ভারতের মুসলিম জনগণের দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতি আরও খারাপ
২ দিন আগেরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন খুব সহজ নয়। ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলা গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্য অন্যত ম প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, অন্যদিকে আরাকান আর্মি—উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
২ দিন আগেইসরায়েলি আগ্রাসনে সৃষ্ট গাজার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যার দৃশ্য জার্মানদের মনে করিয়ে দিচ্ছে নিজেদের অতীত ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়—নামিবিয়া, লেনিনগ্রাদ, ওয়ারশ গেটো কিংবা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ভয়াল স্মৃতি। তবুও আজ জার্মানির নেতারা হত্যাকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্রচুক্তি করছে, গণহত্যাকে ‘মানবিক সংকট’ আখ্য
২ দিন আগে