ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগ কাগজে-কলমে স্বাধীন হয়েছে, এখন আমরা বাস্তবে এর স্বাধীনতা দেখতে চাই।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা করেন।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির অধীনে বিচার বিভাগ থাকা, বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে আইন পেশার সম্মান বাড়বে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দাবি পূরণ হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ বাস্তবে দেখতে চায়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাত থেকে সরে যাওয়ার পর নতুন শঙ্কার কথাও জানান বারের সভাপতি। তিনি বলেন, স্বাধীন হওয়ার পর এখন বিচার বিভাগ যদি প্রভাবিত হয় বা স্বেচ্ছাচারী হয়—সেই ভয় পাচ্ছি। যেহেতু সরকারের এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই বিচার বিভাগের ওপর সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তবে আমি বিশ্বাস করি, যোগ্য বিচারক নিয়োগ দিলে এটা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি জারি করা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫-এর প্রশংসা করলেও এর একটি ধারার সমালোচনা করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, সচিবালয় অধ্যাদেশে বিচারক নিয়োগের নীতিমালায় বিচারকদের প্রতিনিধি রাখা হলেও আইনজীবীদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এটি বৈষম্যমূলক। ভবিষ্যতে এই নীতিমালায় আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, সিনিয়র সহসভাপতি হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সহসভাপতি সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, সহসম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের রায় দেন। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক হলেও প্রশাসনিক ও আর্থিক অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বিশেষ করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাগ্রহণে মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত শাসন বজায় ছিল।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিচার বিভাগের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বা দ্বৈত শাসন অবসান ঘটে। এখন থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত থাকবে।