স্ট্রিম ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রাণী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার চত্বরের পাশের একটি পুকুরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই একটি পথকুকুর ওই ছানাদের জন্ম দিয়েছিল। জন্মের পর উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচেই ছিল বাচ্চাগুলো।
গত রবিবার রাতে ছানাগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শুরু হয় মা কুকুরের আহাজারি। পরদিন সোমবার সকাল থেকে মা কুকুরটিকে সদ্যোজাত সন্তানদের খোঁজে এদিক সেদিক ছুটতে আর চিৎকার করতে দেখা যায়। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছোটাছুটি এবং আর্তনাদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
দুদিন ধরে মা কুকুরের আর্তনাদের পর কুকুর ছানা নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এরপর জানা যায়, কুকুরটির আটটি বাচ্চাকে একটি বস্তায় ভরে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কোয়ার্টারে অন্যান্য স্টাফদের কাছে ওই নারীর ছেলেই বস্তাবন্দি করে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে পানিতে ফেলার বিষয়টি জানায়। পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে বুধবার কুকুর ছানাগুলোর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিশি রহমান নামে এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯-এর অধীনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কোয়ার্টার থেকে ওই সরকারি কর্মকর্তার বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (১ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ফসলের খেতে যায় বলে বিষ দিয়ে ১০৮টি কবুতর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কবুতরগুলোর মালিক। পরে গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
তার আগে গত অক্টোবর-নভেম্বরে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একাধিক বিড়াল হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত ধানমন্ডি লেকের কাছে চারটি বিড়াল মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের চোখগুলো উপড়ানো ছিল। পশু উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের মতে, এটি স্পষ্ট নির্যাতন।
এসব ঘটনা বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, আইন থাকলেও বাস্তবে মামলার সংখ্যা কম এবং শাস্তি অপর্যাপ্ত বলে নির্যাতনকারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় না।
প্রাণী সুরক্ষায় বাংলাদেশের আইনি কাঠামো
বাংলাদেশে প্রাণী সুরক্ষার দুটি প্রধান আইন রয়েছে—১) প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯। এই আইন গৃহপালিত প্রাণী, পথপ্রাণী এবং সাধারণ নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর; ২) বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২। এই আইন বন্যপ্রাণী, পাখি ও সুরক্ষিত প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
উভয় আইনই অপ্রয়োজনীয় হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। শাস্তি নির্ভর করে প্রাণীর ধরণ, অপরাধের প্রকৃতি এবং তা বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তার ওপর।
প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯: মূল বিধান
প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ পুরোনো ১৯২০ সালের প্রাণী নির্যাতন আইনের পরিবর্তে প্রণীত হয়। এই আইন গৃহপালিত প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগলসহ পথপ্রাণী ও মালিকহীন প্রাণীদের সুরক্ষা দেয়। পোষ্য ও মালিকবিহীন দুই শ্রেণিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।
আইনটিতে ‘প্রাণী নির্যাতন’কে বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—অকারণে কষ্ট দেওয়া, মারধর করা, অতিরিক্ত কাজ করানো, অঙ্গহানি করা, বিষ প্রয়োগ করা বা যথার্থ কারণ ছাড়া প্রাণী হত্যা করা। আইনটিতে বলা হয়, প্রয়োজনে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু এবং বৈধ জবাই বা খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীহত্যা যুক্তিসঙ্গত নয়।
আইনে প্রাণীর তত্ত্বাবধায়ক ও মালিকদের দায়দায়িত্বও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণীর লড়াই আয়োজন বা অযথা আটকে রাখাও নিষিদ্ধ। এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণিকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।
সাধারণ নির্যাতনের ক্ষেত্রে (যেমন মারধর, অতিরিক্ত বোঝা বহন করানো বা কষ্ট দেওয়া) শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয়ই।
গুরুতর নির্যাতনের (যেমন অকারণে হত্যা, বিষ প্রয়োগ, চোখ উপড়ে ফেলা, অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি) শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা উভয়ই।
পোষ্য ও মালিকানাবিহীন উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য।
কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।
এই আইনে গুরুতর নির্যাতনকে ‘সজ্ঞাত অপরাধ’ ধরা হয়। তাই পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। পাবনার কুকুরছানা হত্যা এবং ধানমন্ডির বিড়াল নির্যাতনের ঘটনাগুলো এই ধারার আওতায় পড়ে।
অন্যান্য বিধান: অযথা কোনো প্রাণীকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখা নিষিদ্ধ। অনুমতি ছাড়া প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালত প্রয়োজন হলে চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে বা অপরাধে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে নির্দেশ দিতে পারে। পুলিশ এই আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে এবং মামলা চলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
তবে প্রাণী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল। শাস্তির মাত্রা বাড়ানো এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করে না। অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না।
আইনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করবেন না। আর এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া কেউ মামলা করতে পারবেন না।
দণ্ডবিধির (পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণীর মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কিন্তু একটা রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ হবে? ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণী কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।
আইনে মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করা যাবে না বলা হলেও এর প্রয়োগ নাগরিকের কাছে দেওয়া হয় নাই। অধিদপ্তরের হাতে রাখা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। সেবছরই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। পরে ২০১৯ সালের নতুন প্রাণী কল্যাণ আইনে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২
এই আইন বন্যপ্রাণী, পাখি (অতিথি পাখিসহ) এবং তাদের বাস্তুতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়। সিডিউল বা শ্রেণিভেদে সুরক্ষিত প্রাণীর তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে বাঘ, হাতি, ডলফিন, ঈগল, পেঁচা, বিভিন্ন সরীসৃপসহ বহু প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত।
আইনটিতে অনুমতি ছাড়া সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা, আটক, বেচাকেনা বা নিজের কাছে রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বন্যপ্রাণী হত্যা বৈধ, কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়।
গৃহপালিত পাখি যেমন মুরগি বা কবুতর এই আইনের আওতায় পড়ে না। তবে বন্য বা বিপন্ন প্রজাতির পাখি সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। আইনটি প্রয়োগে বন বিভাগ ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করে।
উচ্চমাত্রায় সুরক্ষিত প্রাণী (যেমন, বাঘ, হাতি: সিডিউল-১) হত্যার শাস্তি দুই থেকে সাত বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ বারো বছর কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। এই শ্রেণির প্রাণী হত্যার অপরাধে দায়ের করা মামলা জামিনযোগ্য নয়।
অন্যান্য সুরক্ষিত স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ (যেমন—গিবন, হরিণ, কুমির, ডলফিন: সিডিউল-১) হত্যায় শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড। জরিমানা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
সুরক্ষিত পাখি ও অভিবাসী প্রজাতি (সিডিউল–১ ও ২) হত্যার শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ১ লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা।
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অপরাধে (যেমন—অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা চামড়া বেচাকেনা, ভুয়া পারমিট তৈরি বা ব্যবহার) শাস্তি এক থেকে তিন বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি আরও বাড়তে পারে। প্রয়োজনে প্রশাসন অপরাধে ব্যবহৃত যানবাহন বা অস্ত্র বাজেয়াপ্তও করতে পারে।
খসড়া বন্যপ্রাণী সুরক্ষা অধ্যাদেশ (২০২৫)
২০২৫ সালের নভেম্বরে একটি নতুন খসড়া বন্যপ্রাণী সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১২ সালের আইন প্রতিস্থাপন করতে পারে।
খসড়াটির মূল প্রস্তাব— ২৪৬টি প্রজাতিকে সুরক্ষার আওতায় আনা। আরও বেশি অপরাধকে অজামিনযোগ্য করা। অধিকাংশ সিডিউলভুক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা। বন্যপ্রাণী উত্ত্যক্ত করা, কিংবা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মতো নতুন অপরাধ যুক্ত করা।
এই আইনগুলো বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ভিত্তি তৈরি করলেও বাস্তব প্রয়োগ এখনো দুর্বল। অভিযোগ রয়েছে, মামলা কম হয়। দণ্ডও খুব কম দেওয়া হয়। আর শাস্তির মাত্রা অনেক সময় যথেষ্ট নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রাণী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার চত্বরের পাশের একটি পুকুরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই একটি পথকুকুর ওই ছানাদের জন্ম দিয়েছিল। জন্মের পর উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচেই ছিল বাচ্চাগুলো।
গত রবিবার রাতে ছানাগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শুরু হয় মা কুকুরের আহাজারি। পরদিন সোমবার সকাল থেকে মা কুকুরটিকে সদ্যোজাত সন্তানদের খোঁজে এদিক সেদিক ছুটতে আর চিৎকার করতে দেখা যায়। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছোটাছুটি এবং আর্তনাদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
দুদিন ধরে মা কুকুরের আর্তনাদের পর কুকুর ছানা নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এরপর জানা যায়, কুকুরটির আটটি বাচ্চাকে একটি বস্তায় ভরে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কোয়ার্টারে অন্যান্য স্টাফদের কাছে ওই নারীর ছেলেই বস্তাবন্দি করে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে পানিতে ফেলার বিষয়টি জানায়। পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে বুধবার কুকুর ছানাগুলোর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিশি রহমান নামে এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯-এর অধীনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কোয়ার্টার থেকে ওই সরকারি কর্মকর্তার বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (১ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ফসলের খেতে যায় বলে বিষ দিয়ে ১০৮টি কবুতর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কবুতরগুলোর মালিক। পরে গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
তার আগে গত অক্টোবর-নভেম্বরে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একাধিক বিড়াল হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত ধানমন্ডি লেকের কাছে চারটি বিড়াল মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের চোখগুলো উপড়ানো ছিল। পশু উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের মতে, এটি স্পষ্ট নির্যাতন।
এসব ঘটনা বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, আইন থাকলেও বাস্তবে মামলার সংখ্যা কম এবং শাস্তি অপর্যাপ্ত বলে নির্যাতনকারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় না।
প্রাণী সুরক্ষায় বাংলাদেশের আইনি কাঠামো
বাংলাদেশে প্রাণী সুরক্ষার দুটি প্রধান আইন রয়েছে—১) প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯। এই আইন গৃহপালিত প্রাণী, পথপ্রাণী এবং সাধারণ নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর; ২) বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২। এই আইন বন্যপ্রাণী, পাখি ও সুরক্ষিত প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
উভয় আইনই অপ্রয়োজনীয় হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। শাস্তি নির্ভর করে প্রাণীর ধরণ, অপরাধের প্রকৃতি এবং তা বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তার ওপর।
প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯: মূল বিধান
প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ পুরোনো ১৯২০ সালের প্রাণী নির্যাতন আইনের পরিবর্তে প্রণীত হয়। এই আইন গৃহপালিত প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগলসহ পথপ্রাণী ও মালিকহীন প্রাণীদের সুরক্ষা দেয়। পোষ্য ও মালিকবিহীন দুই শ্রেণিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।
আইনটিতে ‘প্রাণী নির্যাতন’কে বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—অকারণে কষ্ট দেওয়া, মারধর করা, অতিরিক্ত কাজ করানো, অঙ্গহানি করা, বিষ প্রয়োগ করা বা যথার্থ কারণ ছাড়া প্রাণী হত্যা করা। আইনটিতে বলা হয়, প্রয়োজনে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু এবং বৈধ জবাই বা খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীহত্যা যুক্তিসঙ্গত নয়।
আইনে প্রাণীর তত্ত্বাবধায়ক ও মালিকদের দায়দায়িত্বও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণীর লড়াই আয়োজন বা অযথা আটকে রাখাও নিষিদ্ধ। এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণিকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।
সাধারণ নির্যাতনের ক্ষেত্রে (যেমন মারধর, অতিরিক্ত বোঝা বহন করানো বা কষ্ট দেওয়া) শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয়ই।
গুরুতর নির্যাতনের (যেমন অকারণে হত্যা, বিষ প্রয়োগ, চোখ উপড়ে ফেলা, অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি) শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা উভয়ই।
পোষ্য ও মালিকানাবিহীন উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য।
কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।
এই আইনে গুরুতর নির্যাতনকে ‘সজ্ঞাত অপরাধ’ ধরা হয়। তাই পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। পাবনার কুকুরছানা হত্যা এবং ধানমন্ডির বিড়াল নির্যাতনের ঘটনাগুলো এই ধারার আওতায় পড়ে।
অন্যান্য বিধান: অযথা কোনো প্রাণীকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখা নিষিদ্ধ। অনুমতি ছাড়া প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালত প্রয়োজন হলে চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে বা অপরাধে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে নির্দেশ দিতে পারে। পুলিশ এই আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে এবং মামলা চলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
তবে প্রাণী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল। শাস্তির মাত্রা বাড়ানো এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করে না। অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না।
আইনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করবেন না। আর এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া কেউ মামলা করতে পারবেন না।
দণ্ডবিধির (পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণীর মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কিন্তু একটা রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ হবে? ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণী কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।
আইনে মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করা যাবে না বলা হলেও এর প্রয়োগ নাগরিকের কাছে দেওয়া হয় নাই। অধিদপ্তরের হাতে রাখা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। সেবছরই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। পরে ২০১৯ সালের নতুন প্রাণী কল্যাণ আইনে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২
এই আইন বন্যপ্রাণী, পাখি (অতিথি পাখিসহ) এবং তাদের বাস্তুতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়। সিডিউল বা শ্রেণিভেদে সুরক্ষিত প্রাণীর তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে বাঘ, হাতি, ডলফিন, ঈগল, পেঁচা, বিভিন্ন সরীসৃপসহ বহু প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত।
আইনটিতে অনুমতি ছাড়া সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা, আটক, বেচাকেনা বা নিজের কাছে রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বন্যপ্রাণী হত্যা বৈধ, কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়।
গৃহপালিত পাখি যেমন মুরগি বা কবুতর এই আইনের আওতায় পড়ে না। তবে বন্য বা বিপন্ন প্রজাতির পাখি সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। আইনটি প্রয়োগে বন বিভাগ ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করে।
উচ্চমাত্রায় সুরক্ষিত প্রাণী (যেমন, বাঘ, হাতি: সিডিউল-১) হত্যার শাস্তি দুই থেকে সাত বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ বারো বছর কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। এই শ্রেণির প্রাণী হত্যার অপরাধে দায়ের করা মামলা জামিনযোগ্য নয়।
অন্যান্য সুরক্ষিত স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ (যেমন—গিবন, হরিণ, কুমির, ডলফিন: সিডিউল-১) হত্যায় শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড। জরিমানা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
সুরক্ষিত পাখি ও অভিবাসী প্রজাতি (সিডিউল–১ ও ২) হত্যার শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ১ লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা।
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অপরাধে (যেমন—অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা চামড়া বেচাকেনা, ভুয়া পারমিট তৈরি বা ব্যবহার) শাস্তি এক থেকে তিন বছর কারাদণ্ড। জরিমানা ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা। অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি আরও বাড়তে পারে। প্রয়োজনে প্রশাসন অপরাধে ব্যবহৃত যানবাহন বা অস্ত্র বাজেয়াপ্তও করতে পারে।
খসড়া বন্যপ্রাণী সুরক্ষা অধ্যাদেশ (২০২৫)
২০২৫ সালের নভেম্বরে একটি নতুন খসড়া বন্যপ্রাণী সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১২ সালের আইন প্রতিস্থাপন করতে পারে।
খসড়াটির মূল প্রস্তাব— ২৪৬টি প্রজাতিকে সুরক্ষার আওতায় আনা। আরও বেশি অপরাধকে অজামিনযোগ্য করা। অধিকাংশ সিডিউলভুক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা। বন্যপ্রাণী উত্ত্যক্ত করা, কিংবা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মতো নতুন অপরাধ যুক্ত করা।
এই আইনগুলো বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ভিত্তি তৈরি করলেও বাস্তব প্রয়োগ এখনো দুর্বল। অভিযোগ রয়েছে, মামলা কম হয়। দণ্ডও খুব কম দেওয়া হয়। আর শাস্তির মাত্রা অনেক সময় যথেষ্ট নয়।

পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে এক নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে। ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির যে পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করেছেন, তা নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে তুমুল বিতর্ক।
১৭ ঘণ্টা আগে
মোনরো ডকট্রিনের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকাকে নিজের নিরাপত্তা বলয়ের অংশ হিসেবে দেখে আসছে। আজকের বিশ্বে সেই আগ্রহ নতুন রূপ নিয়েছে—লিথিয়াম, বাণিজ্য, অভিবাসন সংকট আর চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। ফলে এই অঞ্চল এখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাক্ষেত্র।
১ দিন আগে
বাংলাদেশে ‘ভিআইপি’ বা ‘ভিভিআইপি’ মর্যাদা সাধারণত রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। বর্তমান বা সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা সমমানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এই তালিকায় থাকেন। বিদেশি রাষ্ট্রনেতা বা বিশিষ্ট অতিথিরাও এ মর্যাদা পেতে পারেন।
২ দিন আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি সুনির্দিষ্ট শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে, যা কিয়েভ এবং পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক ও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই প্রস্তাবের মূল ভিত্তি হলো যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে তার সার্বভৌম ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষত
৩ দিন আগে