সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে কাতারের এরকম সহায়তা দেওয়ার একাধিক নজির আছে।
বিশ্বের অন্যতম তেলগ্যাস-সমৃদ্ধ ছোট দেশটি কেবল অর্থনীতিতেই নয়, বরং ‘এয়ারক্রাফট ডিপ্লোম্যাসি’ বা বিমান কূটনীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতিতে এক নীরব অথচ প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মুহূর্তে কাতার প্রায়শই তাদের বিমানবহর ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বা সংকট-কবলিত গোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ায়। এই ভূমিকা তাদের আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।
তালিকা দীর্ঘ
খালেদা জিয়ার ঘটনা প্রথম নয়। কাতার এর আগেও নানা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরাসরি বিমান সুবিধা দিয়ে বা বিশেষ উড়ানের ব্যবস্থা করে তাদের কূটনৈতিক তত্পরতা প্রমাণ করেছে।
২০২১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবার প্রক্রিয়ায় কাতার ছিল মূল কেন্দ্রবিন্দু। তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্বকে দোহা-ভিত্তিক রাজনৈতিক কার্যালয়ে থাকার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সেতু তৈরি করে।
শুধু তাই নয়, বহু পশ্চিমা কূটনীতিক, সহযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ আফগান নাগরিকদের কাবুল থেকে বের করে আনতে কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষ বিমানগুলো মূল ভূমিকা পালন করেছিল। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কাতারের বিমানগুলো ছিল আস্থার প্রতীক।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অন্যতম প্রধান পক্ষ হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বহু বছর ধরে দোহায় অবস্থান করছে। তাদের যাতায়াত ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য কাতারের এয়ারক্রাফট বা কূটনৈতিক লজিস্টিকস অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা রাখে।
আফ্রিকার বহু সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাতার প্রায়শই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয়। ইথিওপিয়ার তিগ্রায় অঞ্চলসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংকটে কাতারের নেতারা প্রায়শই ব্যক্তিগত জেট ব্যবহার করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট নেতাদের এক জায়গায় আলোচনায় বসাতে সাহায্য করে।
রাজনৈতিকভাবে সংঘাতপূর্ণ দেশ সুদান, সোমালিয়া বা অন্যান্য আফ্রিকান দেশে যখনই কোনো শান্তি আলোচনা বা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজন হয়েছে, কাতার দ্রুত বৈঠকের আয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট নেতাদের যাতায়াতের বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে।
খালেদা জিয়ার জন্য বিমান
এবারের আগে গত জানুয়ারিতে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করেই বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেবার মে মাসে তাদের বিমানে করেই তিনি দেশে ফিরেছিলেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কাতারের ‘সফট পাওয়ার’ কূটনীতিরই অংশ। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কাতার বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মানবিক ও কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের আস্থা ও অবস্থান আরও দৃঢ় করল।
২০১৮ সালে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে কাস্টম-মেড বোয়িং ৭৪৭-৮০০ জেট উপহার দেন। এই বিশাল ও বিলাসবহুল উপহারটি দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার একটি উচ্চ-প্রোফাইল কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটি তাদের বিপুল আর্থিক সক্ষমতা ব্যবহার করে সংকট বা আলোচনায় থাকা নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অপরিহার্যতা প্রতিষ্ঠা করে চলেছে।