leadT1ad

বিশ্বাসী মুসলিম ও সমাজতন্ত্রী: মামদানি যেভাবে চরম বামপন্থীদের থেকে আলাদা

তিনি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। এই জয় একদিকে বাম রাজনীতির প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বদলে দিয়েছে, অন্যদিকে নতুন করে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের উত্থানের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

নিজের মুসলিম পরিচয়কে মামদানি রাজনীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। স্ট্রিম গ্রাফিক।

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানি যখন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থী হন, তখন তিনি তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ছিলেন। তাঁর সাহসী বামঘেঁষা কর্মসূচি প্রগতিশীলদের উজ্জীবিত করেছে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে আলোড়ন তুলেছে। অভিজ্ঞ প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় মামদানির নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, তারুণ্যদীপ্ত উদ্যম ও বামপন্থী চিন্তাধারা ভোটারদের আকৃষ্ট করে। তাঁকে অনেকে ‘নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ’ হিসেবে গ্রহণ করে।

মেয়র নির্বাচনে মামদানির চমকপ্রদ জয় নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত তৈরি করেছে। বিশ্বের আর্থিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই শহর এখন আরও প্রগতিশীল নীতির পথে হাঁটছে—বিশেষ করে আবাসন, শ্রমের মূল্য ও সমতার ক্ষেত্রে। তিনি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। এই জয় একদিকে বাম রাজনীতির প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বদলে দিয়েছে, অন্যদিকে নতুন করে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের উত্থানের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

মামদানির সমাজতান্ত্রিক নীতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিজম আসলে কী, আর কী নয়। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। জুন মাসে এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মামদানি সরাসরি বলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, তাঁর সমাজতন্ত্রের ধারণা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬১ সালে বলেছিলেন, ‘তাকে গণতন্ত্র বলুন বা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র—এই দেশে ঈশ্বরের প্রতিটি সন্তানের জন্য সম্পদের ন্যায্য বণ্টন হওয়া দরকার।’ মামদানি বলেন, ‘যেখানে জাতীয় পর্যায়ে আয় বৈষম্য কিছুটা কমেছে, নিউইয়র্কে তা বেড়েছে। আমাদের এমন এক শহর গড়তে হবে, যেখানে সবাই উন্নতির সুযোগ পাবে।’

তিনি নিজের মুসলিম পরিচয়কে রাজনীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি নিয়মিত মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট নিয়ে হিন্দি, আরবী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ভিডিও প্রকাশ করেন। এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘জনসমক্ষে মুসলমান হিসেবে দাঁড়ানো মানে কখনও কখনও নিরাপত্তার কিছুটা ত্যাগ করা।’

কে এই মামদানি

মামদানির জন্ম উগান্ডায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের পরিবারে। সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বোডউইন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি স্টুডেন্ট ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

নিজেকে একইসঙ্গে ভারতীয়, আফ্রিকান ও আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় এক সময় তাঁর বিরুদ্ধে পরিচয়-রাজনীতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনপত্রে তিনি নিজ জাতিপরিচয় হিসেবে ‘এশীয়’ ও ‘আফ্রিকান-আমেরিকান’ উভয়ই উল্লেখ করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার পটভূমির পূর্ণতা বোঝাতে চেয়েছিলাম।’

তিনি নিজের মুসলিম পরিচয়কে রাজনীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি নিয়মিত মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট নিয়ে হিন্দি, আরবী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ভিডিও প্রকাশ করেন। এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘জনসমক্ষে মুসলমান হিসেবে দাঁড়ানো মানে কখনও কখনও নিরাপত্তার কিছুটা ত্যাগ করা।’

মামদানির মা মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। দুজনই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। মুসলিম পরিচয়, ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান ও অভিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে তাঁর দৃঢ় অবস্থান অনেকের কাছে সাহসের প্রতীক হয়ে ওঠে।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে মামদানি কুইন্সে নিম্নআয়ের মানুষদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সহায়তা করতেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি নিউইয়র্কের ৩৬তম জেলা থেকে স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন প্রথম দক্ষিণ এশীয়, প্রথম উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ও মাত্র তিনজন মুসলিম সদস্যের একজন যিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হন।

তাদের মতে, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ‘সামাজিক গণতন্ত্র’ বা কল্যাণমূলক পুঁজিবাদের চেয়েও এগিয়ে—এটি কেবল সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদ নয়, বরং কাঠামোগত পরিবর্তনের আহ্বান। তারা এমন একটি ন্যায্য ও মানবিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, যা ‘সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা ও বাজার প্রক্রিয়া—দুইয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র কী?

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র মানে কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল বা রাতারাতি পুঁজিবাদ বিলোপ নয়। এটি অর্থনীতিতে গণতন্ত্রের সম্প্রসারণের আহ্বান—যেখানে প্রধান জনসেবা খাতগুলো জনগণের মালিকানায় থাকবে, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং সম্পদ ন্যায্যভাবে বণ্টিত হবে। সবকিছুই নির্বাচনী রাজনীতির ভেতরে থেকেই করা হবে।

এর বাস্তব উদাহরণ হতে পারে— ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ ধরনের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে সরকারি উচ্চশিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিলিয়নিয়ারদের ওপর কর আরোপ।

এনপিআর-এর থ্রোলাইন পডকাস্টে বলা হয়, এটি কর্তৃত্ববাদী সমাজতন্ত্র থেকে আলাদা। মামদানিরা ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চান, বিপ্লবের মাধ্যমে নয়। সহ-উপস্থাপক আমনা খালিদ বলেন, ‘এটি আসলে নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ—যেখানে বেসরকারি উদ্যোগ থাকবে, তবে পরিবহন ও জ্বালানির মতো মৌলিক সেবা জনস্বার্থে রাষ্ট্রের অধীনে থাকবে।’

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, ‘মামদানির সমাজতন্ত্র মানে সার্বজনীন ভাড়ানিয়ন্ত্রণ, ঘণ্টায় ৩০ ডলারের ন্যূনতম মজুরি এবং খাদ্যঘাটতি দূর করতে পৌর মালিকানাধীন বাজার—সমালোচকদের কল্পিত সরকারি দখলদারি নয়।’

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীরা প্রায়ই নিজেদের অতীতের সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম থেকে দূরে রাখেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে এই শব্দগুলোর নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। তাদের মতে, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ‘সামাজিক গণতন্ত্র’ বা কল্যাণমূলক পুঁজিবাদের চেয়েও এগিয়ে—এটি কেবল সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদ নয়, বরং কাঠামোগত পরিবর্তনের আহ্বান। তারা এমন একটি ন্যায্য ও মানবিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, যা ‘সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা ও বাজার প্রক্রিয়া—দুইয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।

ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব অমেরিকার (ডিএসএ) ওয়েবসাইটে লেখা আছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্রে পৌঁছানোর অনেক পথ আছে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঐতিহাসিক সোশ্যাল ডেমোক্রেসির চেয়েও এগিয়ে এবং কর্তৃত্ববাদী সমাজতন্ত্রের ধারণাকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে।’

অর্থনৈতিক চাপ—মূল্যস্ফীতি, ছাঁটাই ও চাকরির অনিশ্চয়তা—এ আন্দোলনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ২০২৫ সালের পিউ জরিপে দেখা যায়, ৪৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক নীতিকে সমর্থন করেন, যা ২০১৬ সালে ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের উত্থান কেন?

এই আন্দোলনের উত্থান শুরু হয় ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা, অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন, এবং কোভিড-১৯-এর বৈষম্যের সময় থেকে। ওই সময় ধনীরা বিশাল সম্পদ অর্জন করলেও প্রায় ৪ কোটি আমেরিকান উচ্ছেদের মুখে পড়েছিলেন।

২০১৫ সালে যেখানে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব অমেরিকার (ডিএসএ) সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ হাজার ২০২৫ সালে তা এক লাখেরও বেশি হয়েছে। শিকাগো ও সিয়াটলের মতো শহরে এর প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রজন্মগত পরিবর্তনও বড় ভূমিকা রেখেছে। মিলেনিয়াল ও জেন জেড প্রজন্ম, যারা ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের শিক্ষাঋণ ও স্থবির মজুরির বোঝা বহন করছে, তারা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রকে বাস্তবসম্মত বিকল্প হিসেবে দেখছে।

দ্য নেশন-এর সাংবাদিক জন নিকোলস বলেন, ‘লিবারেলিজম ব্যর্থ হয়েছে বলেই সমাজতন্ত্রের উত্থান। বাইডেন প্রশাসন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু দিয়েছে কর্পোরেট সুবিধা। মমদানির জয় দেখায়, ভোটাররা সেই আত্মতুষ্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ৩৫ বছরের নিচের ৭০ শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন করেছে।’

দ্য গার্ডিয়ান-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘যে শহরে মাঝারি মানের ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছেছে এবং গৃহহীনতার সংকট তীব্র, সেখানে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বাসস্থানের মতো বাস্তব সমাধান দিচ্ছে। অনেকটা ভিয়েনা ও স্টকহোমের মডেল অনুসরণে।’

অর্থনৈতিক চাপ—মূল্যস্ফীতি, ছাঁটাই ও চাকরির অনিশ্চয়তা—এ আন্দোলনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ২০২৫ সালের পিউ জরিপে দেখা যায়, ৪৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক নীতিকে সমর্থন করেন, যা ২০১৬ সালে ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।

দ্য গার্ডিয়ান-এর জন হেনলির মতে, ‘এটি আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের ছোট পরিসরের স্কোয়াড নয়—এটি বড় আকারের শাসন পরীক্ষা। এখানে সফলতা মানে ২০২৮ সালের জন্য বামপন্থার বৈধতা প্রতিষ্ঠা।’

মামদানির জয় আন্দোলনের জন্য কী অর্থ বহন করে

মামদানির জয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রকে নতুন গতি দিতে পারে। তিনি দেখিয়েছেন, বিশাল বাজেটের একটি শহরও এই নীতিতে পরিচালিত হতে পারে। যদি তিনি ভাড়া স্থিতিশীল রাখতে পারেন বা সবুজ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ চালু করতে পারেন, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডিএসএ প্রার্থীদের জন্য এটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।

টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোসেফ শোয়ার্টজ বলেন, ‘মামদানির জয় একটি মডেল—সমাজতন্ত্র জেতে তখনই, যখন তা স্থানীয় ও জনগণের সমস্যার প্রতি সরাসরি মনোযোগী হয়। যদি তিনি সামান্যও সফল হন, তা জাতীয় দলকে আরও সাহসী নীতি গ্রহণে বাধ্য করতে পারে।’

তবে ঝুঁকিও আছে। ট্রাম্পের মতো রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যেই তাকে ‘কমিউনিস্ট মেয়র’ বলে আক্রমণ করছেন। বাজেট ঘাটতি বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হলে সেটি আদর্শগত পরাজয় হিসেবে তুলে ধরা হতে পারে।

তবু দ্য গার্ডিয়ান-এর জন হেনলির মতে, ‘এটি আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের ছোট পরিসরের স্কোয়াড নয়—এটি বড় আকারের শাসন পরীক্ষা। এখানে সফলতা মানে ২০২৮ সালের জন্য বামপন্থার বৈধতা প্রতিষ্ঠা।’

‘দিস মুসলিম আমেরিকান লাইফ’ বইয়ের লেখক বিশ্লেষক মুস্তাফা বায়ুমি বলেন, ‘মামদানি 'চরমপন্থী' বাইনারি প্রত্যাখ্যান করে প্রমাণ করেছেন, মুসলিম নেতারা ধর্মীয় পরিচয়েই প্রগতিশীল নেতৃত্ব দিতে পারেন। তিনি বিভাজনের বদলে ঐক্যের প্রতীক।’

মুসলিম পরিচয়ে গর্ব: মামদানির অনন্যতা

চরম বামপন্থীরা যেখানে ধর্মের বিলুপ্তি চান সেখানে মামদানি তার মুসলিম পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে ধারণ করেন। তিনি রমজানে প্রকাশ্যে রোজা রাখেন, বক্তৃতায় মাওলানা রুমির কবিতা উদ্ধৃত করেন এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরোধিতা করেন। তিনি এনপিআর-কে বলেন, ‘বিশ্বাস আমার কাছে ন্যায়বিচারের জ্বালানি।’

তার এই মনখোলা ভাব তাকে আলাদা করেছে। চরম বামপন্থীদের অনেকেই কখনও কখনও কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলেন বা একপাক্ষিক অবস্থান নেন। কিন্তু মামদানি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার যেমন নিন্দা করেছেন, তেমনি ইসরায়েলি দখলদার সহিংসতারও সমালোচনা করেছেন। তিনি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে।

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আসাদ আবুখালিল বলেন, ‘তিনি সাম্রাজ্যবিরোধী হলেও আমেরিকাবিরোধী নন। নিউ ইয়র্ক পুলিশের সংস্কারের পক্ষে, বিলুপ্তির নয়। তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু ইহুদি বিদ্বেষী নন। এই ভারসাম্য তাকে ইহুদি, মুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীলদের আস্থাভাজন করেছে।’

বিবিসি জানায়, নির্বাচনের পর এক আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠানে মমদানি বলেন, ‘ব্রুকলিনের দেয়ালে আঁকা ঘৃণার প্রতীক (স্বস্তিকা) আমাদের সবার ক্ষত—আমার মসজিদ, তোমার সিনাগগ, আমাদের শহর।’

‘দিস মুসলিম আমেরিকান লাইফ’ বইয়ের লেখক বিশ্লেষক মুস্তাফা বায়ুমি বলেন, ‘মামদানি 'চরমপন্থী' বাইনারি প্রত্যাখ্যান করে প্রমাণ করেছেন, মুসলিম নেতারা ধর্মীয় পরিচয়েই প্রগতিশীল নেতৃত্ব দিতে পারেন। তিনি বিভাজনের বদলে ঐক্যের প্রতীক।’

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ ও কর্তৃত্ববাদের উত্থানের এই সময়ে মামদানির রাজনৈতিক উত্থান ঘটে। তবু তিনি তার মূল বার্তায় অটল ছিলেন—নিউইয়র্কের গণমানুষের জীবনযাপনকে আরও সাশ্রয়ী ও মর্যাদাপূর্ণ করা এবং ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি করা।

৯/১১-পরবর্তী প্রজন্মে বেড়ে ওঠা মামদানি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কঠিন দায়িত্বের পদে, নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছেন। সামনে পথ কঠিন, কিন্তু সময় তার পক্ষে আছে বলেই মনে হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, এনপিআর

Ad 300x250

সম্পর্কিত