জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া নির্গমন এবং ইট-পাথরের ঘনবসতিপূর্ণ নগর জীবনযাত্রা বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাকে মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ৪২০ পিপিএম অতিক্রম করেছে, যা বিগত শতকের শেষে ছিল ৩৫০ পিপিএমের নিচে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি নিরাপদ সীমার অনেক ওপরে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা নগরীর বায়ু পরিশোধনে যুগান্তকারী আবিষ্কার ‘লিকুইড ট্রি’-র প্রোটোটাইপ উদ্ভাবন করেছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন রাহাত চৌধুরী।
স্ট্রিম ডেস্ক
বায়ুদূষণ নিয়ে আলোচনায় সাধারণত ধুলোবালি, নাইট্রোজেন অক্সাইড বা ধোঁয়ার বিষয়গুলোই সামনে আসে। তবে এসবের পাশাপাশি যে দূষণ ক্রমশ নীরবে বাড়ছে, সেটি হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া নির্গমন এবং ইট-পাথরের ঘনবসতিপূর্ণ নগর জীবনযাত্রা বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাকে মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ৪২০ পিপিএম অতিক্রম করেছে, যা বিগত শতকের শেষে ছিল ৩৫০ পিপিএমের নিচে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি নিরাপদ সীমার অনেক ওপরে। এই অদৃশ্য দূষক শুধু জলবায়ু পরিবর্তনকেই ত্বরান্বিত করছে না, বরং সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
শুধু যে বাইরের (আউটডোর) বাতাসেই কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য রয়েছে, তা কিন্তু নয়। অভ্যন্তরীণ (ইনডোর) বাতাসেও কার্বন ডাই অক্সাইড জমে থাকে, যা দৃশ্যমান নয়। অথচ এটির স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক। আধুনিক জীবনে এখন ক্লাসরুম, মিটিং রুম, কনফারেন্স হল, অফিস কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এসব স্থানে অধিক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড দ্রুত জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ইনডোর সেটআপে (ঘরবাড়ি বা অফিস-আদালত) অনেকক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ২ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে, যা নিরাপদ সীমার (৬০০-৮০০ পিপিএম) চাইতে অনেক বেশি। এর ফলে সেখানে বসবাসকারীদের মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ সীমার বাইরে অতিরিক্ত মাত্রার কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিবেশে থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
তাই পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে এবং বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমাতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যার মতো এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো লিকুইড ট্রি আবিষ্কার।
লিকুইড ট্রি এর আবিষ্কার
বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই-অক্সাইড নিরসনে গাছ লাগানোর বিকল্প হিসেবে ২০২১ সালে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে প্রথম লিকুইড ট্রি প্রোটোটাইপ স্থাপন করা হয়েছিল। শহরের দূষণ কমানোর লক্ষ্যে বেলগ্রেড ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চের এক দল গবেষক এই ‘লিকুইড ট্রি’ তৈরি করেন। মূলত, বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে সার্বিয়ার বেলগ্রেড শহরে ১ হাজার ৮০০ মানুষ যায়। তাই নিজ শহরকে বাঁচাতে জাতিসংঘের সহায়তায় এই উদ্ভাবন করেন দেশটির ওই গবেষকরা।
লিকুইড ট্রি কী
লিকুইড ট্রি বা ‘তরল গাছ’ হলো এক প্রকারের শৈবাল-ভিত্তিক ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর, যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন তৈরি করে। এটি মূলত একটি কাচের ট্যাঙ্ক বা বদ্ধ সিস্টেম যেখানে বিশেষ অণুজীব থাকে, যা বায়ু দূষণ কমাতে এবং ইনডোর পরিবেশ উন্নত করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ এর মত দেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সমস্যা বিশেষভাবে গুরুতর। কারণ দ্রুত বাড়তে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট অফিস ও কনফারেন্স সুবিধাগুলো প্রায়শই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলেও যথাযথ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অদৃশ্য এই কার্বন ডাই অক্সাইড জনগণের জন্য এক নীরব হুমকি হয়ে উঠছে। ঢাকার বায়ু দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। বায়ুদূষণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছে আমাদের এই সমস্যা দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। ওই দিন ১৯৩ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২০ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। ২০২৩ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আই-কিউ এয়ার। এতে উঠে এসেছে, বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার স্থান ছিল বিশ্বে দ্বিতীয়। কংক্রিট এর শহর ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় শহরগুলো আউটডোর দূষণে মারাত্মক সংকটে আছে। ধূলোবালি সহ কণা (পার্টিকেল) জাতীয় দূষণের বিষয়ে অনেক আলোকপাত করা হলেও এর আড়ালে যানবাহন, ইটভাটা, সিমেন্ট কারখানা, ট্যানারি, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও বনভূমি উজাড় মিলিয়ে নগর বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে।
বায়ুদূষণের এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে সবুজায়নের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন হলেও দিন দিন কমছে গাছপালার সংখ্যা। গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা গেছে, ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকায় স্বাস্থ্যকর সবুজ এলাকা ৮৮ শতাংশ হারিয়ে গেছে। আর ২০২২ সালে বৃক্ষ-আচ্ছাদন নেমে এসেছে মাত্র ২ শতাংশে। ফলে এই নগর প্রাকৃতিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ ক্ষমতা হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নগর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ বাড়াচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও তীব্র করছে।
বাংলাদেশের গবেষকদের লিকুইড ট্রি প্রোটোটাইপ উদ্ভাবন
ঢাকা শহরের মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে দিন দিন গাছপালা কমে যাওয়া এবং গাছ লাগানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সার্বিয়ার বেলগ্রেডের আদলে ঢাকাতেও লিকুইড ট্রি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন একদল গবেষক। সেই প্রেরণা থেকেই তারা সম্পূর্ণ দেশীয় অ্যালগি (শৈবাল) এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছেন লিকুইড ট্রি প্রটোটাইপ।
বায়োরিসোর্সেস টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি ল্যাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরআইসি এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকারের ইডিজিই প্রজেক্টের আওতায় গবেষক দল উদ্ভাবন করেছে এই লিকুইড ট্রি প্রটোটাইপ। এটি দিয়ে ঘরের ভেতরে ও বাইরে উভয় পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
এই গবেষক দলে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দিন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. এম জি সরওয়ার হোসেইন এবং ইপিএল সল্যুশনস এর এম শাকিলুর রাহমান।
গবেষকরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত লিকুইড ট্রি হলো এক ধরনের ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর, যেখানে মাইক্রোঅ্যালগি ব্যবহার করা হয়। সূর্যের আলো (আউটডোর মডেল) বা কৃত্রিম আলো (ইনডোর মডেল) ব্যবহার করে মাইক্রোঅ্যালগি সালোকসংশ্লেষণ চালায়। এর ফলে তারা ঠিক প্রাকৃতিক গাছের মতো কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে। সাধারণ গাছের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হারে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সার্বিয়ার বেলগ্রেডে যে লিকুইড ট্রি স্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল আউটডোর স্পেসে (রাস্তা-ঘাট, খোলা জায়গায়)। আর সার্বিয়া হলো শীতপ্রধান দেশ। কিন্তু গবেষক দল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং নিজস্ব অ্যালগি এর মাধ্যমে দুটি মডেল তৈরি করেছেন। এর একটি আউটডোর মডেল, অপরটি ইনডোর। গবেষকদের মতে, আউটডোর লিকুইড ট্রি মডেল রাস্তাঘাটের ডিভাইডার, ফুটপাত, ছাদ, পার্কিং এলাকা, শিল্পাঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য। এগুলো যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং স্থানীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অপরদিকে ইনডোর লিকুইড ট্রি মিটিং রুম, ক্লাসরুম, অফিস, কনফারেন্স হলের মতো বন্ধ পরিবেশে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এগুলো উপস্থিত মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখে।
গবেষকরা জানান, পরীক্ষায় দেখা গেছে এই লিকুইড ট্রি প্রচলিত গাছের মতো বা ক্ষেত বিশেষে গাছের চেয়েও দ্রুত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম। ছোট জায়গায় স্থাপনযোগ্য হওয়ায় এটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জন্য উপযোগী। গবেষকদের উদ্ভাবিত মডেল দুটি ২৫০ লিটারের এবং এর প্রতিটি একেকটি পূর্ণবয়স্ক গাছের সমপরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে শোষণ করতে পারে। যেখানে বেলগ্রেডে লিকুইড ট্রি ছিল ৬০০ লিটারের এবং সমপরিমাণ কার্বণ শোষণ করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে তৈরি প্রটোটাইপের সক্ষমতা বেশি। ইনডোর মডেল কৃত্রিম আলোর সাহায্যে সারাবছর কাজ করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যেকোনো নতুন প্রযুক্তির মতো লিকুইড ট্রিতেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরোর মেথোডে ইনডোর প্রোটোটাইপটি তৈরিতে আমাদের প্রায় এক লাখ টাকা এবং সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি যুক্ত তুলনামূলক বড় আকারের আউটডোর প্রোটোটাইপটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যেকোনো একক কোনো প্রোটোটাইপ তৈরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এটিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে নিয়ে গেলে খরচ বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের ইচ্ছা আছে, এটাকে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজের মাধ্যমে এটিকে শহরে বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়ে যাওয়া, যাতে মানুষ মনে করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কাগজভিত্তিক গবেষণাই হয় না, এখানে মানবকল্যাণে প্রাকটিক্যাল গবেষণা কাজ হয়।’
এছাড়া প্রয়োজন উপযোগী স্থানীয় অ্যালগি প্রজাতি উন্নয়ন। ড. গোলাম মঈনুদ্দিন আরও জানান, আমাদের দেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির অ্যালগি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী অ্যালগি খুঁজে বের করতে গবেষণা চলমান রয়েছে। এছাড়া অ্যালগি ব্যবহারের পর সেগুলো থেকে সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব ।
তবে গবেষকরা ব্যবহৃত অ্যালগি থেকে জীবনরক্ষাকারী ড্রাগ বা ওষুধ তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন বলে জানান গবেষকদলের আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ব্যবহৃত অ্যালগি থেকে সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন হবে। কিন্তু আমরা এটি থেকে বিভিন্ন রোগের ড্রাগ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছি। এজন্য আমাদের গবেষণা চলমান আছে। এখন আমাদের যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে জনসচেতনতা। মানুষকে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।’
নগর নকশায় লিকুইড ট্রি একীভূত করার সুযোগ আছে। এই নতুন প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারে। লিকুইড ট্রি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নেতৃত্বের সুযোগ রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের মতো দ্রুত নগরায়নশীল দেশে লিকুইড ট্রি শুধু প্রতীকী উদ্ভাবন নয়, বাস্তব সমাধান। বিশেষ করে ইনডোর মডেলের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পথপ্রদর্শক হতে পারে। এটি শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, শিক্ষার পরিবেশ ও কর্মস্থলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বর্তমান সময়ে পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের উপর জোর দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অফিস-আদালত বা শিল্প-কারখানায় গাছ লাগানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে লিকুইড ট্রি হতে পারে পরিবেশ রক্ষায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। লিকুইড ট্রি কখনোই প্রাকৃতিক গাছের বিকল্প নয়, বরং একটি সম্পূরক প্রযুক্তি। শহরের সংকীর্ণ জায়গা ও বন্ধ ইনডোর পরিবেশে এটি দ্রুত স্থাপনযোগ্য এক কার্যকর সমাধান। তাই লিকুইড ট্রি কে শুধু একটি গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় পরিসরে এর পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সঠিক বাস্তবায়ন সবুজ অর্থনীতির বিকাশে যুগান্তকারী অবদান রাখবে।
বায়ুদূষণ নিয়ে আলোচনায় সাধারণত ধুলোবালি, নাইট্রোজেন অক্সাইড বা ধোঁয়ার বিষয়গুলোই সামনে আসে। তবে এসবের পাশাপাশি যে দূষণ ক্রমশ নীরবে বাড়ছে, সেটি হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া নির্গমন এবং ইট-পাথরের ঘনবসতিপূর্ণ নগর জীবনযাত্রা বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাকে মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ৪২০ পিপিএম অতিক্রম করেছে, যা বিগত শতকের শেষে ছিল ৩৫০ পিপিএমের নিচে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি নিরাপদ সীমার অনেক ওপরে। এই অদৃশ্য দূষক শুধু জলবায়ু পরিবর্তনকেই ত্বরান্বিত করছে না, বরং সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
শুধু যে বাইরের (আউটডোর) বাতাসেই কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য রয়েছে, তা কিন্তু নয়। অভ্যন্তরীণ (ইনডোর) বাতাসেও কার্বন ডাই অক্সাইড জমে থাকে, যা দৃশ্যমান নয়। অথচ এটির স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক। আধুনিক জীবনে এখন ক্লাসরুম, মিটিং রুম, কনফারেন্স হল, অফিস কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এসব স্থানে অধিক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড দ্রুত জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ইনডোর সেটআপে (ঘরবাড়ি বা অফিস-আদালত) অনেকক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ২ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে, যা নিরাপদ সীমার (৬০০-৮০০ পিপিএম) চাইতে অনেক বেশি। এর ফলে সেখানে বসবাসকারীদের মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ সীমার বাইরে অতিরিক্ত মাত্রার কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিবেশে থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
তাই পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে এবং বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমাতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যার মতো এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো লিকুইড ট্রি আবিষ্কার।
লিকুইড ট্রি এর আবিষ্কার
বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই-অক্সাইড নিরসনে গাছ লাগানোর বিকল্প হিসেবে ২০২১ সালে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে প্রথম লিকুইড ট্রি প্রোটোটাইপ স্থাপন করা হয়েছিল। শহরের দূষণ কমানোর লক্ষ্যে বেলগ্রেড ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চের এক দল গবেষক এই ‘লিকুইড ট্রি’ তৈরি করেন। মূলত, বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে সার্বিয়ার বেলগ্রেড শহরে ১ হাজার ৮০০ মানুষ যায়। তাই নিজ শহরকে বাঁচাতে জাতিসংঘের সহায়তায় এই উদ্ভাবন করেন দেশটির ওই গবেষকরা।
লিকুইড ট্রি কী
লিকুইড ট্রি বা ‘তরল গাছ’ হলো এক প্রকারের শৈবাল-ভিত্তিক ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর, যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন তৈরি করে। এটি মূলত একটি কাচের ট্যাঙ্ক বা বদ্ধ সিস্টেম যেখানে বিশেষ অণুজীব থাকে, যা বায়ু দূষণ কমাতে এবং ইনডোর পরিবেশ উন্নত করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ এর মত দেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সমস্যা বিশেষভাবে গুরুতর। কারণ দ্রুত বাড়তে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট অফিস ও কনফারেন্স সুবিধাগুলো প্রায়শই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলেও যথাযথ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অদৃশ্য এই কার্বন ডাই অক্সাইড জনগণের জন্য এক নীরব হুমকি হয়ে উঠছে। ঢাকার বায়ু দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। বায়ুদূষণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছে আমাদের এই সমস্যা দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। ওই দিন ১৯৩ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২০ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। ২০২৩ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আই-কিউ এয়ার। এতে উঠে এসেছে, বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার স্থান ছিল বিশ্বে দ্বিতীয়। কংক্রিট এর শহর ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় শহরগুলো আউটডোর দূষণে মারাত্মক সংকটে আছে। ধূলোবালি সহ কণা (পার্টিকেল) জাতীয় দূষণের বিষয়ে অনেক আলোকপাত করা হলেও এর আড়ালে যানবাহন, ইটভাটা, সিমেন্ট কারখানা, ট্যানারি, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও বনভূমি উজাড় মিলিয়ে নগর বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে।
বায়ুদূষণের এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে সবুজায়নের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন হলেও দিন দিন কমছে গাছপালার সংখ্যা। গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা গেছে, ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকায় স্বাস্থ্যকর সবুজ এলাকা ৮৮ শতাংশ হারিয়ে গেছে। আর ২০২২ সালে বৃক্ষ-আচ্ছাদন নেমে এসেছে মাত্র ২ শতাংশে। ফলে এই নগর প্রাকৃতিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ ক্ষমতা হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নগর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ বাড়াচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও তীব্র করছে।
বাংলাদেশের গবেষকদের লিকুইড ট্রি প্রোটোটাইপ উদ্ভাবন
ঢাকা শহরের মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে দিন দিন গাছপালা কমে যাওয়া এবং গাছ লাগানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সার্বিয়ার বেলগ্রেডের আদলে ঢাকাতেও লিকুইড ট্রি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন একদল গবেষক। সেই প্রেরণা থেকেই তারা সম্পূর্ণ দেশীয় অ্যালগি (শৈবাল) এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছেন লিকুইড ট্রি প্রটোটাইপ।
বায়োরিসোর্সেস টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি ল্যাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরআইসি এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকারের ইডিজিই প্রজেক্টের আওতায় গবেষক দল উদ্ভাবন করেছে এই লিকুইড ট্রি প্রটোটাইপ। এটি দিয়ে ঘরের ভেতরে ও বাইরে উভয় পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
এই গবেষক দলে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দিন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. এম জি সরওয়ার হোসেইন এবং ইপিএল সল্যুশনস এর এম শাকিলুর রাহমান।
গবেষকরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত লিকুইড ট্রি হলো এক ধরনের ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর, যেখানে মাইক্রোঅ্যালগি ব্যবহার করা হয়। সূর্যের আলো (আউটডোর মডেল) বা কৃত্রিম আলো (ইনডোর মডেল) ব্যবহার করে মাইক্রোঅ্যালগি সালোকসংশ্লেষণ চালায়। এর ফলে তারা ঠিক প্রাকৃতিক গাছের মতো কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে। সাধারণ গাছের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হারে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সার্বিয়ার বেলগ্রেডে যে লিকুইড ট্রি স্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল আউটডোর স্পেসে (রাস্তা-ঘাট, খোলা জায়গায়)। আর সার্বিয়া হলো শীতপ্রধান দেশ। কিন্তু গবেষক দল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং নিজস্ব অ্যালগি এর মাধ্যমে দুটি মডেল তৈরি করেছেন। এর একটি আউটডোর মডেল, অপরটি ইনডোর। গবেষকদের মতে, আউটডোর লিকুইড ট্রি মডেল রাস্তাঘাটের ডিভাইডার, ফুটপাত, ছাদ, পার্কিং এলাকা, শিল্পাঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য। এগুলো যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং স্থানীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অপরদিকে ইনডোর লিকুইড ট্রি মিটিং রুম, ক্লাসরুম, অফিস, কনফারেন্স হলের মতো বন্ধ পরিবেশে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এগুলো উপস্থিত মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখে।
গবেষকরা জানান, পরীক্ষায় দেখা গেছে এই লিকুইড ট্রি প্রচলিত গাছের মতো বা ক্ষেত বিশেষে গাছের চেয়েও দ্রুত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম। ছোট জায়গায় স্থাপনযোগ্য হওয়ায় এটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জন্য উপযোগী। গবেষকদের উদ্ভাবিত মডেল দুটি ২৫০ লিটারের এবং এর প্রতিটি একেকটি পূর্ণবয়স্ক গাছের সমপরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে শোষণ করতে পারে। যেখানে বেলগ্রেডে লিকুইড ট্রি ছিল ৬০০ লিটারের এবং সমপরিমাণ কার্বণ শোষণ করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে তৈরি প্রটোটাইপের সক্ষমতা বেশি। ইনডোর মডেল কৃত্রিম আলোর সাহায্যে সারাবছর কাজ করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যেকোনো নতুন প্রযুক্তির মতো লিকুইড ট্রিতেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরোর মেথোডে ইনডোর প্রোটোটাইপটি তৈরিতে আমাদের প্রায় এক লাখ টাকা এবং সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি যুক্ত তুলনামূলক বড় আকারের আউটডোর প্রোটোটাইপটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যেকোনো একক কোনো প্রোটোটাইপ তৈরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এটিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে নিয়ে গেলে খরচ বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের ইচ্ছা আছে, এটাকে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজের মাধ্যমে এটিকে শহরে বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়ে যাওয়া, যাতে মানুষ মনে করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কাগজভিত্তিক গবেষণাই হয় না, এখানে মানবকল্যাণে প্রাকটিক্যাল গবেষণা কাজ হয়।’
এছাড়া প্রয়োজন উপযোগী স্থানীয় অ্যালগি প্রজাতি উন্নয়ন। ড. গোলাম মঈনুদ্দিন আরও জানান, আমাদের দেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির অ্যালগি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী অ্যালগি খুঁজে বের করতে গবেষণা চলমান রয়েছে। এছাড়া অ্যালগি ব্যবহারের পর সেগুলো থেকে সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব ।
তবে গবেষকরা ব্যবহৃত অ্যালগি থেকে জীবনরক্ষাকারী ড্রাগ বা ওষুধ তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন বলে জানান গবেষকদলের আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ব্যবহৃত অ্যালগি থেকে সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন হবে। কিন্তু আমরা এটি থেকে বিভিন্ন রোগের ড্রাগ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছি। এজন্য আমাদের গবেষণা চলমান আছে। এখন আমাদের যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে জনসচেতনতা। মানুষকে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।’
নগর নকশায় লিকুইড ট্রি একীভূত করার সুযোগ আছে। এই নতুন প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারে। লিকুইড ট্রি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নেতৃত্বের সুযোগ রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের মতো দ্রুত নগরায়নশীল দেশে লিকুইড ট্রি শুধু প্রতীকী উদ্ভাবন নয়, বাস্তব সমাধান। বিশেষ করে ইনডোর মডেলের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পথপ্রদর্শক হতে পারে। এটি শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, শিক্ষার পরিবেশ ও কর্মস্থলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বর্তমান সময়ে পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের উপর জোর দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অফিস-আদালত বা শিল্প-কারখানায় গাছ লাগানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে লিকুইড ট্রি হতে পারে পরিবেশ রক্ষায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। লিকুইড ট্রি কখনোই প্রাকৃতিক গাছের বিকল্প নয়, বরং একটি সম্পূরক প্রযুক্তি। শহরের সংকীর্ণ জায়গা ও বন্ধ ইনডোর পরিবেশে এটি দ্রুত স্থাপনযোগ্য এক কার্যকর সমাধান। তাই লিকুইড ট্রি কে শুধু একটি গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় পরিসরে এর পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সঠিক বাস্তবায়ন সবুজ অর্থনীতির বিকাশে যুগান্তকারী অবদান রাখবে।
তিন দাবিতে করা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন নিয়ে স্ট্রিমের পক্ষ থেকে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাতের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। জবাবে আইনুন নিশাত তাঁর মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং দেশের স্বার্থে এগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। আমি এই প্রসঙ্গে
২ ঘণ্টা আগেমুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বেরোনো এসব বইয়ের অনেকগুলোয় এখন বাংলা একাডেমির স্টোরে পড়ে আছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে বইগুলো বাংলা একাডেমি এখন আর বিক্রি করছে না। বন্ধ রেখেছে বইয়ের প্রদর্শনীও।
২ দিন আগেবর্তমানে দেশের ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময় পরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এ তালিকায় আছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির নামও। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে তড়িঘড়ি করে স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধন করে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
৪ দিন আগেসিলেটসহ সারা দেশের পাথর কোয়ারি থেকে সরকার রাজস্ব পায় বছরে সাড়ে ৬ কোটি টাকারও কম। অন্যদিকে শুধু সিলেটেই পর্যটন খাতে বছরে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার বেশি। সিলেটের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ পাথর। সেই পাথর সরিয়ে ফেলায় পর্যটন স্পটগুলো সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
৫ দিন আগে