পরিবার একটি, তবে তাঁদের মালিকানায় আছে দেশের দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনপুষ্ট পরিবারটির কয়েক সদস্য গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন। যাঁদের মধ্যে আছেন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানও। এখন অনলাইনে পাওয়া নির্দেশনাতেই চলছে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয় দুটি হলো– রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে অনুমোদন পায় রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায়। এখানে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। শিক্ষক আছেন ৩০ জনের মতো।
অন্যদিকে, দেশের ১০৮তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর অনুমোদন পায় শেখ হাসিনা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার বাঁশগাড়ী গ্রামে অস্থায়ীভাবে স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমোদন পাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালুও হয়। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নাম পাল্টে করা হয় ড. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল ওরফে এইচ বি এম ইকবাল। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য। ডা. মমতাজ বেগম হলেন এইচ বি এম ইকবালের প্রয়াত স্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় দুটির পরিচালনায় রয়েছে পৃথক ট্রাস্টি বোর্ড। তবে দুই বোর্ডেই রয়েছেন একই ব্যক্তিরা। তাঁদের প্রায় সবাই এইচ বি এম ইকবালের পরিবার সংশ্লিষ্ট।
এর মধ্যে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার ট্রাস্টি বোর্ড ৯ সদস্যের। চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালের পাশাপাশি ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে আছেন তাঁর ছেলে মঈন ইকবাল, ইমরান ইকবাল ও মেয়ে নওরীন ইকবাল। এ ছাড়া বোর্ডে রয়েছেন জামাল জি আহমেদ, ইয়াসনা পূজা ইকবাল, জারা আলী, এইচবিএম শোয়েব রহমান ও এলিজা রহমান। তাঁরাও এইচবিএম ইকবালের পরিবারসংশ্লিষ্ট। অবশ্য তাঁদের সুস্পষ্ট সম্পর্ক যাচাই করতে পারেনি স্ট্রিম।
এই সদস্যদের মধ্যে এলিজা রহমান ছাড়া বাকি আটজনই রয়েছেন ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ট্রাস্টি বোর্ডে। ১০ সদস্যের এই ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবাল। বোর্ডের বাকি দুজন হলেন এইচবিএম লুৎফর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মুহাম্মদ আজিজুল হক।
বিদেশে চেয়ারম্যান, নির্দেশনা আসে অনলাইনে
এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবৈধভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় গত বছরের নভেম্বরে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর বর্তমান স্ত্রী অভিনেত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তিন সন্তান মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইমরান ইকবাল ও নওরীন ইকবালের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। তাঁদের একক মালিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে সে হিসাবও ফ্রিজ করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ওই নির্দেশনা জারি করে। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচবিএম ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এইচবিএম ইকবালসহ তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি কীভাবে চলছে তা জানতে চাওয়া হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কাছে। তাঁরা বলছেন, চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাগুলোতে অনলাইনে যুক্ত থাকেন। সার্বিক বিষয়ে বিদেশ থেকেই তাঁরা অনলাইনে নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার স্থায়ী ক্যাম্পাস রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায়। এখানে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। শিক্ষক আছেন ৩০ জনের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল দেশের বাইরে থাকায় তাঁর ছেলে ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল দেশে থেকেই সার্বিক বিষয়ের দেখভাল করছেন। সভাগুলোতে এইচ বি এম ইকবালসহ অন্যরা অনলাইনে যুক্ত থেকে দিক-নির্দেশনা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মশিউর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে না। ট্রাস্টি বোর্ডের অনেক সদস্য দেশে আছেন। চেয়ারম্যানও অনলাইনের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন বলে জানি।
এদিকে ড. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও অন্যরা অনলাইনে কানেক্টেড (যুক্ত) থাকেন। আর তাঁর মনোনীত প্রতিনিধিরা এখানে আছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহায়তা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি এইচ বি এম ইকবাল ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে তাঁর পরিবারের বাইরে আর কোনো অংশীদার নেই। সেই কারণে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলেও তাঁরাই ট্রাস্টি বোর্ডে রয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন।