.png)
২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সরকারে এসে দলের নামে সরকারি জমি কেনা ও বরাদ্দ নেওয়া, দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত, এবং এই সুবিশাল ভবনের নির্মাণ—সবকিছু আইন বিশেষজ্ঞরা ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন। ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধ ভোগদখলের পর এই কার্যালয় তৈরি হওয়ায় নীতিগত ও আইনি প্রশ্ন উঠেছে।

মাইদুল ইসলাম

১০ তলা ভবন। ৩৪ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল অফিস। কিন্তু এসবের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালানোর পর জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে এই রাজনৈতিক কার্যালয় এখন ধ্বংসপ্রায়।
তবে ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে (বর্তমানে শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ) আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় স্থাপনে পদে পদে ছিল অনিয়ম। আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, নিজস্ব অর্থায়নে দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন এই ভবন। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু। ২০১৮ সালের ২৩ জুন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টি মোট সোয়া ছয় কাঠা বা ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এই জমির মালিকানা আবার সরকারের দুইটি ভিন্ন সংস্থার। একটি অংশ অর্থাৎ ৩ দশমিক ৮৩ কাঠা বা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছ থেকে। এই অংশের ব্যাপারে আইনবিদেরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকারি মালিকানাধীন এই জমি নিজেদের নামে কিনে নিয়েছে, যা স্পষ্টতই ক্ষমতার অপব্যবহার।

আর বাদবাকি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বন্দোবস্ত নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আলোকে এই জমি আওয়ামী লীগকে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালায় রাজনৈতিক দলকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া এই ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমির মূল মালিকানা ভূমি মন্ত্রণালয়ের নয়। এর মালিকানা দাবি করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই জমি উদ্ধারের জন্য কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।
২৮ বছরের বেশি সময় ভোগদখলের পর ক্ষমতায় এসে সরকারি সম্পত্তি কেনা এবং খাসজমি বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টিকে দখলদারি বলা অত্যুক্তি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
স্ট্রিমকে শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘এই সব জমি কেনা এবং বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লিখে নিতে পারেনি, ক্ষমতায় আসায় পর নিয়ে নিলো। এটা সরকারের একেবারে সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা ছাড়া সম্ভব না।’

১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ গুলিস্তানের ২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) দলীয় কার্যক্রম শুরু করে। তবে জমির একটি অংশের মালিকানা ছিল সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছে। পরে ১৯৯৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়, তখন তারা ভোগদখল করতে থাকা জমির বৈধতা আদায় করতে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মালিকানায় থাকা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি কেনার প্রস্তাব দেয়।
প্রস্তাব অনুসারে জমির দাম নির্ধারণ করা হয় ৯০ লাখ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের ৫ শতাংশ অর্থাৎ, ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঢাকার জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসে জমাও দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৮ সালের ৩১ আগস্ট এই টাকা জমা দেওয়া হয়। ওই সময় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
এই সব জমি কেনা এবং বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লিখে নিতে পারেনি, ক্ষমতায় আসায় পর নিয়ে নিলো। এটা সরকারের একেবারে সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা ছাড়া সম্ভব না। ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
কিন্তু গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের আবেদন ও জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে বরাদ্দের কার্যক্রম শেষ করে যেতে পারেনি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দলটির দখলে থাকা জমিটির বরাদ্দের বিষয়টিও অনিষ্পন্ন থেকে যায়।
এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ফের জমি বরাদ্দ নেওয়ার কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ২২ জুলাই জমির মূল্য বাবদ অবশিষ্ট ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

অবশ্য এর আগের দিনই ২১ জুলাই পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ৬৯তম সভায় সরকারের পক্ষে গত বিক্রয়চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তি অনুসারে ওই বছরই জমিটি আওয়ামী লীগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ তো গেল কার্যালয়ের জমির একটি অংশ কেনার গল্প। কার্যালয়ের আরেকটি অংশ আবার সরকারের কাছে বরাদ্দ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন আসি সেই অংশের গল্পে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাকি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমির এখতিয়ার গণপূর্তের। কিন্তু ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসন বরাবর জমি বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বরাদ্দপত্র জারি করে। ওই বছরের ৬ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নামে ওই জায়গা দলিলমূলে কবলা (রেজিস্ট্রেশন) করে দেন। ১২ জুন দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত হিসেবে জমি বুঝে পায় আওয়ামী লীগ। এ দলিলের মেয়াদ ২১১১ সালের ১১ জুন শেষ হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জমির বরাদ্দপত্রে বলা হয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব ও সুপারিশের আলোকে ঢাকা জেলার মতিঝিল মৌজার মহানগর ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৮০৫ নম্বর দাগের শূন্য দশমিক শূন্য ৪১২ একর খাস জমি আওয়ামী লীগের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের বিনিময়ে সরকার চার কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৫ টাকা সেলামি নেয়।
এই জমির তথ্য বের করতে গিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার এই জমিটুকুর (৪ দশমিক ১২ শতাংশ) মালিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর খাজনা ও কর বকেয়া থাকায় জায়গাটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় নেওয়া হয়।

অবশ্য ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালের দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে সরকার। এই কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা- ১৯৯৫-এর ১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালায় মোট ১১টি অনুচ্ছেদ আছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রয়োজনে দপ্তর বা সংস্থাকে জমি দেওয়ার নিয়ম স্পষ্ট। ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, কবরস্থান ও শ্মশানের জন্যও সীমিত জমি বরাদ্দের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, জাতীয় অবদানের জন্য বিশেষ ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশফেরত বাংলাদেশি বা সরকারি কর্মচারীদের সমবায় আবাসন, শিল্প বা কৃষি প্রকল্পের জন্যও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে জমি লিজ দেওয়া যায়।
কিন্তু রাজনৈতিক দল বা সংস্থাকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। নীতিমালার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যতিক্রমের সুযোগ দেয় এবং সেই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সরকার প্রধানের এখতিয়ার সংরক্ষিত থাকে। ২০১২ সালে জমি বরাদ্দ দেওয়ার সময় সরকার প্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। আইন বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন, সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ এই জমি নিজের নামে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে নিয়েছে, যা নীতিমালার পরিপন্থী। শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘এখানে ন্যাচারাল ফেয়ারনেস (স্বচ্ছতা) ছিল না। সরকার প্রধান যদি নীতিমালার ক্ষমতা ব্যবহার করেও থাকেন, তা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বার্থে করা যায়। কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে। রাজধানীর এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে নেওয়া নীতিমালার পরিপন্থী।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে দলটির স্থায়ী কোন কার্যালয় ছিল না। ১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ চালানো হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোড।
সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলীয় কার্যালয় খোলেন। ১৯৮১ সালের দিকে শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এই ঠিকানায় আসে।
ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের।
চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ছিল আওয়ামী লীগের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তম তলা বরাদ্দ ছিল দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য।
অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের সুপরিসর অফিস। নবম তলায় দলের সভাপতি। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়। এই কক্ষের সঙ্গে ছিল বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। দশম তলায় ছিল ক্যাফেটেরিয়া।
দ্বিতীয় তলায় মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ। কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। তৃতীয় তলায়ও ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। এই ফ্লোরের সামনের অংশে ছিল ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। আর ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় ছিল।

এছাড়া ভবনে ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন ছিল। কার্যালয়ের সামনে স্টিলের বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। পাশেই দলীয় প্রতীক নৌকা। সবার উপরে ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফুট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফুট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে ভবনটি তৈরি করা হয়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিধ্বস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকের সামনে টানানো হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইন্সটিটিউট’ লেখা ব্যানার। কার্যালয়ের সামনে বসেছে দোকানপাট। স্ট্রিট ফুড ও কাপড় বেচাকেনা চলছে।
অবশ্য এটি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সম্ভব ছিল না মন্তব্য করেছেন এই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। কার্যালয়ের সামনে একটি ছোট চায়ের স্টল দিয়েছেন আবদুল জলীল নামে এক ব্যক্তি। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এ বছরের আগস্ট মাসে এই দোকান দিয়েছি। আগে এখানে ময়লার ভাগাড় ছিল, মানুষ এসে প্রস্রাব করত। সেসব পরিষ্কার করে এই দোকান দিয়েছি।’
কোন সমস্যা হচ্ছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিছুদিন আগে কয়েকজন এসে এখানে অন্য অফিস করার চেষ্টা করে। পরে তাদের আর দেখা যায়নি। এখন এখানে কেউ থাকে না। কয়েকজন পুলিশ নিয়মিত এই ভবনের সামনে বসে থাকে।’ পবন নামে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কনস্টেবল স্ট্রিমকে বলেন, ‘এখানে কেউ যেন এখানে ঝামেলা করতে না পারে সেসব দেখার জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
কার্যালয়ের পাশে আরেক চায়ের দোকানে কথা হয় একজন প্রাইভেটকার চালকের সঙ্গে। নাম মুজিবুর রহমান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘যেমন কর্ম করেছে, তেমন ফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ। কেউ পাপ করলে আল্লাহ তার শাস্তি দেবেনই।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিবেদক হাসিবুর রহমান, ঢাকা]

১০ তলা ভবন। ৩৪ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল অফিস। কিন্তু এসবের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালানোর পর জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে এই রাজনৈতিক কার্যালয় এখন ধ্বংসপ্রায়।
তবে ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে (বর্তমানে শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ) আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় স্থাপনে পদে পদে ছিল অনিয়ম। আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, নিজস্ব অর্থায়নে দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন এই ভবন। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু। ২০১৮ সালের ২৩ জুন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টি মোট সোয়া ছয় কাঠা বা ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এই জমির মালিকানা আবার সরকারের দুইটি ভিন্ন সংস্থার। একটি অংশ অর্থাৎ ৩ দশমিক ৮৩ কাঠা বা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছ থেকে। এই অংশের ব্যাপারে আইনবিদেরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকারি মালিকানাধীন এই জমি নিজেদের নামে কিনে নিয়েছে, যা স্পষ্টতই ক্ষমতার অপব্যবহার।

আর বাদবাকি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বন্দোবস্ত নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আলোকে এই জমি আওয়ামী লীগকে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালায় রাজনৈতিক দলকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া এই ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমির মূল মালিকানা ভূমি মন্ত্রণালয়ের নয়। এর মালিকানা দাবি করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই জমি উদ্ধারের জন্য কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।
২৮ বছরের বেশি সময় ভোগদখলের পর ক্ষমতায় এসে সরকারি সম্পত্তি কেনা এবং খাসজমি বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টিকে দখলদারি বলা অত্যুক্তি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
স্ট্রিমকে শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘এই সব জমি কেনা এবং বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লিখে নিতে পারেনি, ক্ষমতায় আসায় পর নিয়ে নিলো। এটা সরকারের একেবারে সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা ছাড়া সম্ভব না।’

১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ গুলিস্তানের ২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) দলীয় কার্যক্রম শুরু করে। তবে জমির একটি অংশের মালিকানা ছিল সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছে। পরে ১৯৯৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়, তখন তারা ভোগদখল করতে থাকা জমির বৈধতা আদায় করতে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মালিকানায় থাকা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি কেনার প্রস্তাব দেয়।
প্রস্তাব অনুসারে জমির দাম নির্ধারণ করা হয় ৯০ লাখ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের ৫ শতাংশ অর্থাৎ, ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঢাকার জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসে জমাও দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৮ সালের ৩১ আগস্ট এই টাকা জমা দেওয়া হয়। ওই সময় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
এই সব জমি কেনা এবং বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লিখে নিতে পারেনি, ক্ষমতায় আসায় পর নিয়ে নিলো। এটা সরকারের একেবারে সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা ছাড়া সম্ভব না। ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
কিন্তু গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের আবেদন ও জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে বরাদ্দের কার্যক্রম শেষ করে যেতে পারেনি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দলটির দখলে থাকা জমিটির বরাদ্দের বিষয়টিও অনিষ্পন্ন থেকে যায়।
এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ফের জমি বরাদ্দ নেওয়ার কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ২২ জুলাই জমির মূল্য বাবদ অবশিষ্ট ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

অবশ্য এর আগের দিনই ২১ জুলাই পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ৬৯তম সভায় সরকারের পক্ষে গত বিক্রয়চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তি অনুসারে ওই বছরই জমিটি আওয়ামী লীগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ তো গেল কার্যালয়ের জমির একটি অংশ কেনার গল্প। কার্যালয়ের আরেকটি অংশ আবার সরকারের কাছে বরাদ্দ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন আসি সেই অংশের গল্পে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাকি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমির এখতিয়ার গণপূর্তের। কিন্তু ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসন বরাবর জমি বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বরাদ্দপত্র জারি করে। ওই বছরের ৬ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নামে ওই জায়গা দলিলমূলে কবলা (রেজিস্ট্রেশন) করে দেন। ১২ জুন দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত হিসেবে জমি বুঝে পায় আওয়ামী লীগ। এ দলিলের মেয়াদ ২১১১ সালের ১১ জুন শেষ হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জমির বরাদ্দপত্রে বলা হয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব ও সুপারিশের আলোকে ঢাকা জেলার মতিঝিল মৌজার মহানগর ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৮০৫ নম্বর দাগের শূন্য দশমিক শূন্য ৪১২ একর খাস জমি আওয়ামী লীগের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের বিনিময়ে সরকার চার কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৫ টাকা সেলামি নেয়।
এই জমির তথ্য বের করতে গিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার এই জমিটুকুর (৪ দশমিক ১২ শতাংশ) মালিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর খাজনা ও কর বকেয়া থাকায় জায়গাটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় নেওয়া হয়।

অবশ্য ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালের দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে সরকার। এই কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা- ১৯৯৫-এর ১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালায় মোট ১১টি অনুচ্ছেদ আছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রয়োজনে দপ্তর বা সংস্থাকে জমি দেওয়ার নিয়ম স্পষ্ট। ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, কবরস্থান ও শ্মশানের জন্যও সীমিত জমি বরাদ্দের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, জাতীয় অবদানের জন্য বিশেষ ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশফেরত বাংলাদেশি বা সরকারি কর্মচারীদের সমবায় আবাসন, শিল্প বা কৃষি প্রকল্পের জন্যও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে জমি লিজ দেওয়া যায়।
কিন্তু রাজনৈতিক দল বা সংস্থাকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। নীতিমালার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যতিক্রমের সুযোগ দেয় এবং সেই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সরকার প্রধানের এখতিয়ার সংরক্ষিত থাকে। ২০১২ সালে জমি বরাদ্দ দেওয়ার সময় সরকার প্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। আইন বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন, সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ এই জমি নিজের নামে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে নিয়েছে, যা নীতিমালার পরিপন্থী। শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘এখানে ন্যাচারাল ফেয়ারনেস (স্বচ্ছতা) ছিল না। সরকার প্রধান যদি নীতিমালার ক্ষমতা ব্যবহার করেও থাকেন, তা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বার্থে করা যায়। কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে। রাজধানীর এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে নেওয়া নীতিমালার পরিপন্থী।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে দলটির স্থায়ী কোন কার্যালয় ছিল না। ১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ চালানো হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোড।
সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলীয় কার্যালয় খোলেন। ১৯৮১ সালের দিকে শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এই ঠিকানায় আসে।
ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের।
চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ছিল আওয়ামী লীগের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তম তলা বরাদ্দ ছিল দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য।
অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের সুপরিসর অফিস। নবম তলায় দলের সভাপতি। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়। এই কক্ষের সঙ্গে ছিল বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। দশম তলায় ছিল ক্যাফেটেরিয়া।
দ্বিতীয় তলায় মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ। কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। তৃতীয় তলায়ও ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। এই ফ্লোরের সামনের অংশে ছিল ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। আর ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় ছিল।

এছাড়া ভবনে ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন ছিল। কার্যালয়ের সামনে স্টিলের বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। পাশেই দলীয় প্রতীক নৌকা। সবার উপরে ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফুট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফুট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে ভবনটি তৈরি করা হয়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিধ্বস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকের সামনে টানানো হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইন্সটিটিউট’ লেখা ব্যানার। কার্যালয়ের সামনে বসেছে দোকানপাট। স্ট্রিট ফুড ও কাপড় বেচাকেনা চলছে।
অবশ্য এটি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সম্ভব ছিল না মন্তব্য করেছেন এই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। কার্যালয়ের সামনে একটি ছোট চায়ের স্টল দিয়েছেন আবদুল জলীল নামে এক ব্যক্তি। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এ বছরের আগস্ট মাসে এই দোকান দিয়েছি। আগে এখানে ময়লার ভাগাড় ছিল, মানুষ এসে প্রস্রাব করত। সেসব পরিষ্কার করে এই দোকান দিয়েছি।’
কোন সমস্যা হচ্ছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিছুদিন আগে কয়েকজন এসে এখানে অন্য অফিস করার চেষ্টা করে। পরে তাদের আর দেখা যায়নি। এখন এখানে কেউ থাকে না। কয়েকজন পুলিশ নিয়মিত এই ভবনের সামনে বসে থাকে।’ পবন নামে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কনস্টেবল স্ট্রিমকে বলেন, ‘এখানে কেউ যেন এখানে ঝামেলা করতে না পারে সেসব দেখার জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
কার্যালয়ের পাশে আরেক চায়ের দোকানে কথা হয় একজন প্রাইভেটকার চালকের সঙ্গে। নাম মুজিবুর রহমান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘যেমন কর্ম করেছে, তেমন ফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ। কেউ পাপ করলে আল্লাহ তার শাস্তি দেবেনই।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিবেদক হাসিবুর রহমান, ঢাকা]
.png)

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত জাতীয় পার্টিতে (জাপা) এবার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে শুরু হয়েছে টানাটানি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারও (সিইসি) নিশ্চিত নন লাঙলের আসল মালিক ভেঙে যাওয়া জাপার তিন উপদলের মধ্যে কোন পক্ষ।
৪ দিন আগে
সড়কে চলাচলকারীদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে যানবাহন থামার স্থানগুলোতে নির্মাণ করা হয় যাত্রীছাউনি। তবে রাজধানীর বনানী থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এমন কিছু যাত্রীছাউনি চোখে পড়বে যেগুলো রোদ দূরে থাক বৃষ্টি থেকেও যাত্রীদের বাঁচাতে পারে না।
৪ দিন আগে
কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, বাংলাদেশি যুবকরা নিজেদের ‘বীরত্ব’ নিয়ে গর্ব করছে। এসব দৃশ্য বাংলাদেশে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে—এরা কি স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করছে, নাকি জোরপূর্বক প্রচারণার অংশ?
৬ দিন আগে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিটি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। সাভারের বিরুলিয়ায় ৪০ বিঘা জমিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৫ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী ও ২০৮ শিক্ষকের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে কোনো গবেষণাই হয়নি।
১০ দিন আগে