leadT1ad

শহীদ হাদি, অমর রহো ভাই আমার

সানোয়ার রাসেল
সানোয়ার রাসেল

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১৩
ওসমান হাদি। স্ট্রিম গ্রাফিক

ওসমান হাদির সঙ্গে আমার পরিচয় কবিতার সূত্র ধরে। তখন তিনি সীমান্ত শরিফ। একদিন মেসেঞ্জারে সালাম জানিয়ে কথোপকথন শুরু হয়েছিল। প্রসঙ্গ ছিল, তাঁর একটি কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখে দিতে হবে। বলেছিলাম, কবিতার টেক্সটগুলো পাঠান, রাতে দেখব। তিনি পাঠিয়েছিলেন। সেই থেকে আলাপ শুরু।

এরপর বাংলাদেশের বুকে চব্বিশ এল। ছাত্র-জনতার চোখে-মুখে আগুন, চিন্তা ও চেতনায় বিপ্লবের বহ্নিশিখা, নতুন বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশায় জাতির আশায় বুক বাঁধা ইত্যাদি। তারপর যা হয় আরকি। অভ্যুত্থান শেষে শুরু হলো ক্রেডিট নিয়ে ইঁদুর দৌড়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সমঝোতা, বাটপারি ও বিশ্বাসঘাতকতার কাদা–ছোড়াছুড়ি। কেবল একমাত্র হাদিকেই দেখতাম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ভারতের বিরুদ্ধে গলার রগ ফুলিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে কখনো সংবাদ সম্মেলন করছেন, কখনো টক শো করছেন, কখনো কালচারাল প্রতিরোধের কথা বলছেন।

সাদ রহমান একবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, ‘জামায়াতের তৈরি ইনকিলাব মঞ্চ আছিয়ার মৃত্যু নিয়া অপরাজনীতি করতেছে। তাদের কাছে আছিয়া এবং বাংলাদেশের নারীবাদীদের নিরাপত্তা কোনো ম্যাটার না। তারা নারীবিরোধী এবং সেই কারণে এই আন্দোলনকে তারা ইতিমধ্যে শাহবাগ বনাম শাপলার আন্দোলনে পরিণত কইরা ফেলছিল।’ সেই পোস্ট পড়ে হাদিকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘তারা যা-ই বলুক। আপনি বলেন, এটা জামায়াতের তৈরি প্ল্যাটফর্ম কি?’ হাদি বলেছিলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। পারলে কেউ প্রমাণ দিক। আমারে তো সারাদিন বলে শিবির। অথচ সারা জীবনে আমার এক দিন শিবির করার প্রমাণ নাই।’

হাদির এক বক্তব্যের জের ধরে তাঁকে বলেছিলাম, বাংলাদেশে তো আসলেও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি এক্সিস্ট করে। তিনি বলেছিলেন, ‘ভাই, এই যুগে আইসা কারা এদেশে পাকিস্তানি রাজনীতি করবে!’ আমি বলেছিলাম, ‘যারা গোলাম আযমের বাংলায় বলে স্লোগান দেয়, যারা জাতীয় সংগীত বন্ধ করে দেয়।’ হাদি বলেছিলেন, ‘ভাই, এই দুইটা গ্রুপ এক গ্রুপ না। যারা গোলাম আযমের বাংলায় স্লোগান দিছে, এরা হইলো মানে...ওই...পরে আমি ধরছি, শিবিরকেও বলছি। শিবিরও এইটা অ্যাকনলেজ করে নাই। যেটা স্বীকার করছে সেটা হইলো তামিরুল মিল্লাতের কিছু ছোট ছেলেপেলে আসছিল। তো ওরা নিজেরাও মাইক নিয়ে আসছিল, অন্যান্য স্লোগান দিচ্ছিল। তো প্রথম দিনের প্রোগ্রামে অনেক কিছু ব্লান্ডার হইছে। কারণ আমরা যারা সিনিয়র, ওখানে কেউ স্পটে থাকতে পারি নাই, মানে...তো স্বাভাবিকভাবেই অনেক ধরনের মানুষ আসলে তো এই ক্যাওয়াজটা তৈরি হয়...।’

আসলে এসব যে কেন লিখছি! হাদি আজ শাহাদাতের সুধা পান করেছেন। ফেসবুকে এই খবর দেখে মনটা দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে আছে। এই লেখা লিখতে লিখতেই শুনতে পাচ্ছি বাইরে জোর গলায় মিছিল হচ্ছে, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে?’, ‘ভারতীয় দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’...। আমরা তো মাওলার দরবারে হাত তুলেছিলাম হাদির ফিরে আসার জন্য। কিন্তু মাওলা বোধ হয় হাদির মোনাজাতই মঞ্জুর করলেন। যে হাদি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘চাম্বল পাতার মতো উড়ে যায় শিশুদের প্রাণ/ মায়েরা খুলি কুড়িয়ে জোড়া দেয় ছিন্নভিন্ন মাথা/ রক্তের ফিনকিতে ছিঁড়ে যায় আজরাইলের খাতা!’

হাদি জানতেন, বিপ্লবীদের মা মাত্রই সন্তানের মরণের ছবি মনে ভেবে রাখেন। তাই তো তিনি ‘মায় মরণের ছবি আঁকে’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কবরটা হবে কোনখানে? কে পড়াবে জানাজা আমার? আমারে পেলে মায় এ কথাই বলে/ বাড়ির মসজিদটা কি আবাদ হবে না আর!’

শহীদ হাদি, তুমি জাতীয় বীর! বাংলাদেশের মুক্তিকামী ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী জনগণ তোমার জানাজা পড়াবে। তোমার মসজিদ এই বাংলাদেশ, আবার আবাদ করবে বিপ্লবী সাহসী তরুণের দল। তখন না হয় তোমার সঙ্গে কবিতা ও দেশ নিয়ে অনেক অনেক কথা হবে, কেমন! শহীদ হাদি, কবি হাদি, সাহসী হাদি, স্বাপ্নিক হাদি, তুমি অমর রহো ভাই আমার।

সানোয়ার রাসেল: কবি

Ad 300x250

সম্পর্কিত