কলকারখানার ন্যূনতম ২০ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’– অধ্যাদেশের গেজেট জারি হয়েছে। এ সুযোগকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংশোধিত আইনে শিল্পকারখানায় অস্থিরতা বাড়বে।
তাদের ভাষ্য, স্বার্থন্বেষী মহল বিদেশি এজেন্টদের তাবেদার হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন সব বিধান যুক্ত করেছে, যা তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করবে। এর ফলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে, তা আরও খর্ব হবে বলে মত ব্যবসায়ীদের।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা স্ট্রিমকে বলেছেন, বলা হচ্ছে, আইনে পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। বাস্তবে শ্রমিকদের অধিকার আরও সংকুচিত হবে। তাছাড়া এ বিধানের ফলে দেশের শিল্পখাতে একটি স্থায়ী অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, যার প্রভাব পড়বে কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানিতে।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প ধ্বংস করার জন্য বিদেশি শক্তির ইন্ধনে এসব বিধান যুক্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্বেষী মহল শ্রম আইন পরিবর্তনের জন্য গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব বিধান যুক্ত করেছে। এটি দেশীয় শিল্পের ধ্বংস ডেকে আনবে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সংশোধিত আইনের গেজেট জারি করে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কমপক্ষে ২০ শ্রমিক একত্রিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রি করার আবেদন করতে পারবেন। কোনো কলকারখানায় শ্রমিকদের মোট সংখ্যা অনুযায়ী কতজন মিলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আবেদন করলে তা নিবন্ধন দেওয়া হবে, সে বিষয়েও অধ্যাদেশে বলা হয়েছে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার সুযোগ ছিল ন্যূনতম ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে। এটির বাইরে বিভিন্ন সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং শ্রমিকদের জন্য ভবিষ্যত তহবিল গঠনসহ বেশকিছু বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শ্রম আইনের পরিবর্তনে শঙ্কা দেখছেন তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত উদ্যোক্তারাও। জানতে চাইলে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা স্ট্রিমকে বলেন, নতুন আইনের বিষয়ে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে আমি মনে করি, আইন পরিবর্তন করে যেসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে, তা শিল্পখাতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দেশীয় শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সংশোধিত অধ্যাদেশের যৌক্তিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
তবে এ নিয়ে শ্রমিক ও নারী অধিকার কর্মী তাসলিমা আখতার বলেছেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সরকার শ্রম আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা দেশের শ্রমিক এবং শিল্প খাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত শ্রম কমিশন এবং জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে (এনটিসিসি) দীর্ঘ আলোচনার ফসল এই সংশোধনী। যদিও রাতারাতি সবকিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে এই গেজেটটি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০০ জন হলে ন্যূনতম ২০ জন; ৩০১ থেকে ৫০০ জন পর্যন্ত ৪০; ৫০১ থেকে এক হাজার ৫০০ জন পর্যন্ত ১০০; এক হাজার ৫০১ থেকে তিন হাজার পর্যন্ত ৩০০; এবং তিন হাজার এক থেকে তদূর্ধ্ব পর্যন্ত চার হাজার শ্রমিকের সম্মতি থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।