leadT1ad

আমদানি সুবিধার আগেই বেড়েছে রমজানের পণ্যের ঋণপত্র খোলা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩২
পবিত্র রমজানে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, মটর ডাল, চিনিসহ ৬ ধরনের পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। সংগৃহীত ছবি

পবিত্র রমজানে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, মটর ডাল, চিনিসহ ৬ ধরনের পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। তবে পেঁয়াজ, রসুন, আদা আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। সামনের মাসে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা সাধারণত অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য আগেভাগেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বাড়িয়ে দিয়েছেন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোনো কোনো পণ্যের ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ১১ থেকে ২৯৪ শতাংশ পর্যন্ত। ঋণপত্র খোলার পর পণ্য আসতে তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ফলে ফেব্রুয়ারির আগেই এসব পণ্য দেশে চলে আসবে। চলতি মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে আরও বেশি পরিমাণ ঋণপত্র খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

এদিকে গত ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানির ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য ১০ ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় নগদ মার্জিন বা নগদ জমার সীমা ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর—এই ১০ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে। নির্দেশনাটি তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে।

একই সময়ে অন্য এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ৯০ দিনের বাকিতে আমদানি করা যাবে। বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব পণ্য আমদানি করা যায়, এ ক্ষেত্রে দেশীয় ব্যাংকগুলো আমদানিকারকের পক্ষে সেই ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়। আর আমদানিকারক এই ঋণ ৯০ দিন পর পরিশোধ করতে পারবেন। এই সুবিধাটিও আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফলে সুবিধার আগেই ভোগপন্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোগপন্য ব্যবসায়ীরা জানান,এবার ডলারের সংকট না থাকায় ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হয়নি। ফলে সবাই নিজের মতো ঋণপত্র খুলে ফেলেছে। কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবিধার জন্য অপেক্ষা করেনি।

ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ১১ থেকে ২৯৪ শতাংশ

দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে খেজুর আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে ৩ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন খেজুর আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছি। চলতি বছরের একই সময়ে ১০ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। মটর ডাল পণ্যে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ২৯৪ শতাংশ বেড়েছে। যা ১০ পণ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ৪১ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে চলতি বছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন।

গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ৩৬% বেড়েছে। এই সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টনের, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চলতি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর যা বেড়ে হয়েছে ৫৪ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন।

মটর ডাল ব্যতীত অন্যান্য ডালের আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। ২৬ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। চিনি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ১১ শতাংশ বেড়েছে, পরিমাণে যা ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন।

কমেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার ঋণপত্র

পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার পরিমাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ কমে গেছে। ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন থেকে নেমে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০৩ মেট্রিক টনে। সাধারণত, দেশীয় উৎপাদন বাড়লে আমদানি কমে যায়। সামনে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এ জন্য আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা। এ ছাড়া রসুনের ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ৮৯ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৬১৪ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। আদার ক্ষেত্রেও ঋণপত্র খোলা ২২ শতাংশ কমে গেছে। দেখা গেছে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সময়ে ১৪ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন আদা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। পেয়াজ আমদানিতে এখন সরকারের অনুমোদন নেই। পেয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়েছে, দাম না কমলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।

কেটেছে ডলারের সংকট

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা এখন ঘোষিত দামেই ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন। গতকাল ব্যাংকগুলোতে আমদানিতে ডলারের দাম ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে ডলারের কারণে ব্যাংক থেকে ফেরত যাচ্ছেন না। ডলার সংকট কাটায় সার্বিক ঋণপত্র খোলাও বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ। আর চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণপত্র খোলা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলাও বেড়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত