leadT1ad

অনলাইন বই বিক্রি: কমেছে নাকি বেড়েছে, কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ২০
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের অনলাইন বইবাজারে বিক্রি বেড়েছে নাকি কমেছে—এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্মই বলছে, সার্বিক পরিস্থিতি ‘মোটামুটি স্থিতিশীল’। তবে বিক্রির ধরনে স্পষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। ক্রেতারা আগের মতো ধারাবাহিকভাবে ফিকশন বা কবিতার বই না কিনে—সমসাময়িক রাজনীতি, ইতিহাস, একাডেমিক ও ইসলামিক বইয়ের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। মানহীন লেখা বা দুর্বল অনুবাদকে বিক্রি কমার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিক্রেতারা।

বাতিঘরের অপারেশন ম্যানেজার তারেক আব্দুর রব মনে করেন, বাজারের মন্দা বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো কারণ থাকলেও মানসম্পন্ন লেখার চাহিদা এখনো অটুট। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন বেঙ্গলবুকস থেকে প্রকাশিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ইতিহাসে, স্মৃতিতে—বইটি প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই প্রথম মুদ্রণ প্রায় শেষ।

তারেক স্ট্রিমকে বলেন, ‘মান ভালো হলে পাঠক কিনবেই। গল্প-উপন্যাসের সামগ্রিক বিক্রি কমলেও ভালো লেখা হলে সেটি ঠিকই চলে।’

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রকমারির হেড অব মার্কেটিং শরীফুল আলম শুভ স্ট্রিমকে জানান, একাডেমিক বইয়ের বিক্রি গত কয়েক মাসে দৃশ্যত বেড়েছে। পাশাপাশি ইসলামিক ও নন-ফিকশন বইও বিক্রির তালিকায় উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আছে।

তবে নন-ফিকশনের সামগ্রিক বিক্রি কমতির দিকে—বিশেষ করে সেল্ফ-হেল্প ছাড়া অন্যান্য শ্রেণি ততটা বিক্রি পাচ্ছে না।

বিদেশি বইয়ের ক্ষেত্রেও তারা প্রত্যাশিত বিক্রি পাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিদেশি বইয়ের বাজার আমাদের জন্য ছোট। তা ছাড়া এদিকে আমরা বেশি ফোকাস দিতে পারি না।’

শরীফুল আলম আরও মনে করেন, শুধু অরিজিনাল বই বিক্রি করায় রকমারিকে পাইরেটেড বইয়ের সস্তা প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নতুন বই প্রকাশ কমে যাওয়ায় বাজার স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনলাইন বুকশপ ওয়াফিলাইফের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ সুফিয়ান সোহাগ জানান, তাদের বিক্রি না উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, না কমেছে। ব্যবসা আগের মতোই চলছে বলে স্ট্রিমকে জানান তিনি।

বাতিঘরের অপারেশন ম্যানেজার তারেক আব্দুর রব স্ট্রিমকে বলেন, রাজনৈতিক ইস্যু এবং বিশেষ করে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা বইগুলোই এখন বিক্রির তালিকায় শীর্ষে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দ্রুত পরিবর্তিত ঘটনাবলির কারণে পাঠক আগ্রহও বাড়ছে।

তবে তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে সেল্ফ-হেল্প বইয়ের জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

অনুবাদ বইয়ের বিক্রি কমার কারণ হিসেবে ‘দুর্বল অনুবাদ’-কে দায়ী করেছেন তারেক আব্দুর রব।

অরুন্ধতী রায়ের মাদার মেরি কামস টু মি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, বইটির ইংরেজি সংস্করণ তিন শর বেশি কপি বিক্রি হলেও বাংলা অনুবাদটি ২০ কপিও বিক্রি হয়নি। একই পরিস্থিতি হয়েছে ড্যান ব্রাউনের নতুন বই সিক্রেটস অব সিক্রেট–এর ক্ষেত্রেও।

প্রথমা ডটকমের ইনচার্জ রাসেল রায়হান মনে করেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা পাঠকদের মধ্যে ‘কনজিউমার কনফিডেন্স’ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বই কেনার প্রবণতা আগের মতো নেই।

তবে রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও সমসাময়িক ইস্যুর বইয়ের বিক্রি কিছুটা বাড়লেও ফিকশন ও কবিতার বইয়ের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।

তবে রাসেল জানান, বছরের শুরুতে বিক্রি কম ছিল। তবে মাঝামাঝি থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নতুন বই প্রকাশ কমে যাওয়াকেও তিনি বাজারের ধীরগতির একটি কারণ হিসেবে দেখছেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত