leadT1ad

শ্রম আইন অধ্যাদেশের গেজেট

শ্রম আইনে বেআইনি ধর্মঘট ও প্ররোচনায় ৩ মাস জেল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

কোনো শ্রমিক বেআইনিভাবে কারখানায় ধর্মঘট করলে তিন মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে। ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’– এ এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) অধ্যাদেশের গেজেট জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

অধ্যাদেশে বেআইনি ধর্মঘটে (লক-আউট) প্ররোচনার দণ্ড কী হবে, সে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেআইনি ধর্মঘটের জন্য অর্থ খরচ বা সরবরাহ অথবা কোনোভাবে সে ধর্মঘট এগিয়ে নিতে কোনো ব্যক্তিকে প্ররোচিত করলে তার তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, অন্যূন ২০ হাজার থেকে অনধিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ঢিমেতালে কাজে অংশ নিলে বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তাতে অংশগ্রহণে প্ররোচিত বা উৎসাহিত করলে অথবা কোনোভাবে এমন ধরনের কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কাজ করলে তার তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ২০ হাজার থেকে অনধিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

অ-রেজিস্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডের দণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি অ-রেজিস্ট্রিকৃত অথবা রেজিস্ট্রি বাতিল হয়েছে– এমন কোনো ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তি-সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত বা প্ররোচিত করলে অথবা এমন কোনো ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের জন্য সদস্য চাঁদা ছাড়া অন্য কোনো চাঁদা আদায় করলে, তিনি দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এ ছাড়া একই ব্যক্তি যদি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হন, তাহলে তিনি দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

অধ্যাদেশে কর্মজগতে ও কর্মস্থলে সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যক্তির দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। মালিক, নিয়োগকর্তা ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের কথাও বলা হয়েছে– কর্মস্থলে সহিংসতা, হয়রানি প্রতিরোধে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যেন বৈরী না হয় তা নিশ্চিত করবেন তারা। পাশাপাশি, যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধে যেসব নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশ করবেন; কর্মস্থলে যৌন হয়রানিমূলক সব ধরনের ঘটনাকে প্রতিরোধ করতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন; সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে একটি কর্মস্থল নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবেন; পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সহিংসতা, হয়রানি এবং সংশ্লিষ্ট মনোসামাজিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এবং সহিংসতা ও হয়রানির ঝুঁকি চিহ্নিত ও মূল্যায়ন করে তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া কর্মরত কর্মী ও শ্রমিকদের জন্য চিহ্নিত ঝুঁকি ও বিপদ সম্পর্কে এবং প্রতিরোধ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা, তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রশিক্ষণ দেবেন; কর্মস্থলের ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির বিবরণ প্রদান করবেন; প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করার জন্য যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে কোনো নারী নিযুক্ত থাকলে তিনি যে পদমর্যাদারই হোন না কেন, তার প্রতি প্রতিষ্ঠানের কোনো সহকর্মী বা অন্য কেউ এমন কোনো আচরণ করতে পারবেন না, যা অশ্লীল কিংবা অভদ্রজনোচিত বলে গণ্য হতে পারে, কিংবা যা ওই নারীর শালীনতা ও সম্ভ্রমের পরিপন্থী।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেক মালিক সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৈষম্য, সহিংসতা ও হয়রানির অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করবেন এবং উক্ত কমিটিতে পাঁচজন সদস্য থাকবেন, যেখানে প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী প্রতিনিধি থাকবেন এবং প্রধান হবেন একজন নারী। কমিটিতে দুজন সদস্যকে জেন্ডার এবং যৌন নির্যাতন-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে। কমিটি প্রতিটি অভিযোগ বা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন গ্রহণ, তদন্ত ও পরিচালনা করবে এবং বৈষম্য, সহিংসতা ও হয়রানির ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করবে।

এ ছাড়া কমিটি গোপনীয়তা রক্ষা এবং মানব মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কাজ পরিচালনা করবে এবং অভিযোগ বা প্রতিবেদন গ্রহণ, তদন্ত ও ব্যবস্থাপনায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির পর অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ট্রেড ইউনিয়ন ২০ শ্রমিকে, ব্ল্যাক লিস্ট অবৈধ

কলকারখানার ন্যূনতম ২০ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’– অধ্যাদেশের গেজেট জারি হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এ গেজেট জারি করে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কমপক্ষে ২০ শ্রমিক একত্রিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রি করার আবেদন করতে পারবেন। কোনো কলকারখানায় শ্রমিকদের মোট সংখ্যা অনুযায়ী কতজন মিলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আবেদন করলে তা নিবন্ধন দেওয়া হবে, সে বিষয়েও অধ্যাদেশে বলা হয়েছে।

শ্রমিকদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০০ জন হলে ন্যূনতম ২০ জন; ৩০১ থেকে ৫০০ জন পর্যন্ত ৪০; ৫০১ থেকে এক হাজার ৫০০ জন পর্যন্ত ১০০; এক হাজার ৫০১ থেকে তিন হাজার পর্যন্ত ৩০০; এবং তিন হাজার এক থেকে তদূর্ধ্ব পর্যন্ত চার হাজার শ্রমিকের সম্মতি থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।

বর্তমান শ্রম আইনে কোনো কলকারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ শতাংশের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়। শ্রম আইন সংশোধন করে এ বিধান পরিবর্তন করা হলো। ফলে সর্বনিম্ন ২০ শ্রমিক থাকলেই ট্রেড ইউনিয়নের গঠনের পথ তৈরি হলো।

গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে শ্রম আইনকে আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্মত এবং শ্রমিক ও উদ্যোক্তা উভয়পক্ষের জন্য অধিক ভারসাম্যপূর্ণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটি যুগান্তকারী। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কমিটি অব এক্সপার্টসের সুপারিশ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রের মতামত এবং ত্রিপক্ষীয় কমিটির (শ্রমিক-মালিক-সরকার) আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধনগুলো করা হয়েছে।’

সংশোধিত শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও নাবিকদের শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে তারা শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন। নন-প্রফিট সংস্থার ক্ষেত্রেও শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে।

শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত বা ব্ল্যাক লিস্টিং প্রথা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই কাজের জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বেতন বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে।

কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠনের বিধান আনা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াও আরও কার্যকর করা হয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত