leadT1ad

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ আগারওয়ালার বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৬
দীলিপ আগারওয়ালা। ফাইল ছবি

স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে ৬৭৮ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দীন খানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দিলীপ কুমার আগারওয়াল অবৈধভাবে স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহের মাধ্যমে ৬৭৮ কোটি টাকা পাচার করে। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মামলা করেছে সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।’

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান স্ট্রিমকে জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ করে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করেছে। প্রাথমিক তথ্য–প্রমাণে চোরাচালান ও উৎসহীন অর্থ উপার্জনের সত্যতা পাওয়ায় ১৭ নভেম্বর দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়।

৫৭ বছর বয়সী দিলীপ কুমার আগারওয়ালের পিতার নাম অমিয় কুমার আগারওয়ালা ওরফে ওম প্রকাশ। তাঁর মায়ের নাম তারা দেবী আগরওয়ালা। তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা চুয়াডাঙ্গা সদরের বাজারপাড়া গ্রামে। বর্তমানে বনানীতে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

সিআইডি জানায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে স্বর্ণ ও হীরা ব্যবসা পরিচালনার আড়ালে অর্থ পাচার ও চোরাকারবারি করে আসছিলেন দিলীপ আগারওয়াল।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে মোট ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকার স্বর্ণবার, অলংকার, লুজ ডায়মন্ড ও অন্যান্য দ্রব্য বৈধভাবে আমদানি করে। একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়, বিনিময় বা পরিবর্তন পদ্ধতিতে মোট ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকার স্বর্ণ ও হীরা সংগ্রহ করে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সিআইডিকে এর উৎস বা সরবরাহকারী সংক্রান্তে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। বৈধ নথি না থাকায় এসব বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও হীরা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।

চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ও অপরাধলব্ধ অর্থ রূপান্তর, হস্তান্তর বা ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য ও নথিপত্র পর্যবেক্ষণে মানিলন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা প্রাথমিক সত্যতা মেলায় অনুসন্ধান প্রতিবেদন সিআইডি প্রধানের কাছে সরবরাহ করা হয়। গত ১৬ নভেম্বর সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই মামলা দায়ের করে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার( মিডিয়া) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন খান আরো জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় করা মানিলন্ডারিং মামলাটি সিআইডির তফসিলভুক্ত। তাই প্রয়োজনীয় নথি, ব্যাংক লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য যাচাই করে আইনানুযায়ী নিবিড় তদন্ত শুরু করবে সিআইডি।

প্রসঙ্গত, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

এর আগে ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন তাঁকে আদালতে তোলা হয়। এরপর তাঁকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিন তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

গত ১৩ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ও তার স্ত্রী সবিতা আগারওয়ালার আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখেছেন। এছাড়া তার নিজ নামে ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে ৭৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। এসব অর্থ দুর্নীতি, ঘুষ ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত বলে অভিযোগ করেছে দুদক।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত