নাজমুল হোসেন

দেশের ডিজিটাল স্পেসজুড়ে এখন চলছে বটের রাজত্ব। বিটিভির ভাষায় বললে বট আইডির বাম্পার ফলন। ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি বট। মহা সমারোহে চলছে ‘একটি মানুষ একটি বট আইডি’ প্রকল্প। চলুন জানি, নানা ধরণের বটের কর্মকান্ড; ঘুরে আসি বাংলার ডিজিটাল বটমূল।
ফেসবুকের শুরুর দিকে বট আইডিগুলোকে আমরা চিনতাম ফেইক আইডি নামে। আইডিগুলো মূলত ছেলেরা চালাতো, তবে মেয়েদের নামে। উদ্দেশ্য ছিল অন্য ছেলেদের সাথে প্রেমের অভিনয় করা। মাঝে মাঝে টুকটাক মোবাইল রিচার্জ নেয়া; কিংবা ছেলেদের নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরানো। সেসময়ে এই আইডিগুলোর বেশ সুন্দর কিছু নামও দিয়েছিল ফেসবুকবাসীরা। যেমন, পুরুষ আক্তার মহিলা, ভাইয়াপু ইত্যাদি ইত্যাদি। কালের বিবর্তনে নিরীহ ফেইক আইডিগুলোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ব্যবহার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রপাগান্ডা ও রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ফেইক আইডির বিবর্তিত রূপ হয়ে গেলো বট আইডি।
তারও আগে খেয়াল করলে দেখা যাবে, বট মূলত একটা কর্পোরেট কমিউনিকেশন টেকনোলজি। অনলাইন বেজড প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাস্টমারদের সাথে স্বয়ংস্ক্রিয় চ্যাটের মাধ্যমে কাস্টমারদের সময় নষ্ট করার লক্ষ্যে বট আইডির ব্যবহার শুরু করে। বটগুলোতে কিছু নির্দিষ্ট মেসেজ ইনপুট করা থাকতো, কাস্টমার নক দিলে সে অনুযায়ী বট আইডিগুলো কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যেতো। এগুলোকে বলা যেতে পারে চ্যাট জিপিটির গ্রামের চাচাতো ভাই । খুব একটা স্মার্ট না, বাট সফলতার সাথে কাস্টমারের সময় নষ্ট করতে ওস্তাদ।
ফেসবুকের বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্টদের ফেসবুকের কমেন্টবক্স বটআইডির বিচরণভূমি। অভয়আরণ্যও বলা যেতে পারে। এইসব পেজের কমেন্টবক্সে নজর রাখলেই দেখবেন, প্রচুর বট আইডি বিভিন্ন দলের পক্ষে রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো বট আইডি বলছে, আগে পরিবার সমেত বিএনপি করতাম, কিন্তু এইবার ঠিক করেছি জামায়াতে ভোট দিব। কোনো বট আইডি বলছে, আগে পরিবার সমেত জামায়াত করতাম, এইবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিএনপিকে ভোট দিব!
বট আইডির দেখা মিলবে ফেসবুকের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পোলেও। বিএনপিকে ভালোবাসলে লাভ, এনসিপিকে ভালোবাসলে ওয়াও আর জামায়াতকে ভালোবাসলে হাহা দিন—এমন সব পোস্টে জম্বির মতো দৌঁড়ে এসে হাজির হবে বট আইডি। ভোট দিবে এবং পছন্দের দলকে জিতিয়ে দিবে। এই ধরনের ভোটে যে দলের বট আইডি যত সমৃদ্ধ সে দলের জেতার সম্ভাবনা তত বেশি।
এছাড়াও ১৬ বছরের আওয়ামী আমলের নির্বাচনে ভার্চুয়ালের বাইরেও বটআইডির সরাসরি ব্যবহার ছিল। বলা যেতে পারে বটরা সরাসরি ভোট দিয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নাই, মৃত ভোটারদের ভোট যারা দিয়েছে বটের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তারা তো বট আইডিই! কিংবা ধরেন, ভোট দিতে গিয়ে যারা শুনেছেন, আপনার ভোট হয়ে গেছে বাসায় চলে যান, সেই ভোটগুলো কারা দিয়েছেন বলে মনে করেন? হ্যাঁ, বট ভোটাররাই। আপনি একটু দুঃখ করতে পারেন এজন্য। আর প্রার্থনা করতে পারেন, সামনের নির্বাচনে যেন আপনার মূল্যবান ভোটটা কোন বট ভোটার এসে দিয়ে না দেয়!
এই মূহুর্তে মোটাদাগে অনলাইনে ৩ ধরনের বট আইডি আছে। আলবটর, বটফোর্স ও বটলীগ। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, কোন ধরনের বট কাদের রিপ্রেজেন্ট করে! তাও আপনার বোঝার স্বার্থে ও লেখাটায় কিছু ওয়ার্ড বাড়ানোর স্বার্থে বলি—আলবটর এই মূহুর্তে রিপ্রেজেন্ট করছে জামায়াত-শিবিরকে, বটফোর্স কীবোর্ড চালাচ্ছে বিএনপির পক্ষে ও বটলীগ বিদ্রোহ করে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের পক্ষে।
তবে বট আইডির সক্ষমতায় ডিজিটাল বটমূলে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো, এনসিপিকে পিছিয়ে পড়াদের কাতারেই ফেলা যায়। এদের পক্ষে অনলাইনে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত বট নাই। কখনও ক্ষমতায় গেলে কিংবা টাকা-পয়সা হলে তারাও বটের বাম্পার ফলন ফলাবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বট আইডি ছাড়া দল চালানো বেশ কঠিনই বটে।
ডিজিটাল বটমূলে বট আইডির একাধিক বৈশিষ্ট রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো, বেশিরভাগ বট আইডি পর্দা করে, অর্থাৎ আইডিগুলো লক করা থাকে। প্রোফাইল পিকচার রিয়ালিস্টিক হয় না। সেখানে রাজনৈতিক নেতা, নায়ক-নায়িকা কিংবা বিভিন্ন আর্টওয়ার্কের ছবি দেখা যায়। বটআইডির নামের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে। আগে দেখা যেত, বট আইডির নাম সাধারণত একটু অদ্ভূত হতো। যেমন, ই-কোলাই ভাইরাস, সালফিউরিক অ্যাসিড। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল বটমূলে নাম কিছুটা অর্গানিক রাখার চেষ্টা করা হয়। মোহাম্মদ রকিকুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, সানজিদা আক্তার এই ধরনের নামও এখন দেখা যায়, যাতে বট আইডি হলেও তাকে দেখলে বট আইডি মনে না হয়ে রিয়েল আইডি মনে হয়। এছাড়াও বট আইডির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো, গালাগালি। বট আইডিগুলো ফেসবুকের কমেন্টবক্সে মনখুলে গালি দেয়। কখনও কখনও নতুন নতুন বৈচিত্রময় গালির উদ্ভাবনও করে থাকে।
ডিজিটাল বটমূলে বটআইডির কাজ মূলত ৩-৪ ধরনের। প্রথম উদ্দেশ্য নতুন নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ বাজারে ছড়িয়ে দেয়া। কিছু কিছু দূর্দান্ত সফল ন্যারেটিভ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বট আইডিগুলো। সেগুলো নিয়ে পরের প্যারায় আলোচনা করা হবে। এখন আপাতত জেনে নিন, বট আইডির বাকিসব কাজ।
ন্যারেটিভ তৈরির পাশাপাশি পছন্দের দলের পোস্টে লাভ রিঅ্যাক্ট দেয়া ও অপছন্দের দলের পোস্টে হাহা বিপ্লব করাও বট আইডি জেডি অর্থাৎ জব ডিসক্রেপশনের মধ্যে পড়ে। এছাড়া গালাগালি বট আইডির অন্যতম দায়িত্ব। সাধারণত মানুষ লোক-লজ্জার ভয়ে যেসব গালি নিজের আইডি থেকে দিতে পারে না সেসব গালিই বট আইডি থেকে দিয়ে তারা মনকে শান্ত করে।
৫ আগস্টের পর থেকে ডিজিটাল বটমূলে বিচরন করতে গিয়ে আমি একাধিক সফল ক্যাম্পেইনের সাক্ষি হয়েছি। ডিজিটাল বটদের প্রথম সফল ক্যাম্পেইন বলা যেতে পারে, ইউনূস সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাওয়া। ৫ আগস্টের পরের সময়গুলোতে দেখা যায় হুট করেই একটা ক্যাম্পেইন ছড়িয়ে পড়ে। সবাই সমানে নানান নিউজ পোর্টাল, সেলিব্রেটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পোস্টে কমেন্ট করা শুরু করে, ইউসুফ সরকার এতো ভালো করছে, তাদের আসলে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। বট আইডির মুখ থেকে একসময় যা মেইনস্ট্রিম ফেসবুকেও চলে আসে। এমনকি কিছুদিন আগে আল জাজিরার সাংবাদিক মেহদি হাসানের সাথে এক ইন্টারভ্যিউতে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসও বলেছেন, অনেকে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে ৫ বছর, ১০ বছর এমনকি ৫০ বছরও ক্ষমতায় দেখতে চান।
বটআইডির দ্বিতীয় সফল ক্যাম্পেইন বলা যায়, আগেই ভালো ছিলাম ক্যাম্পেইনকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানান সমালোচনা ও ব্যর্থতার মুখে একসময় ডিজিটাল বটমূলে আওয়াজ উঠে, আগেই ভালো ছিলাম, এখন দেশে নানান সমস্যা! যা বট আইডির সীমানা ছাড়িয়ে একসময় সাধারণ মানুষের অর্থাৎ সাধারণ ফেসবুকারদের মুখেও চলে আসে।
ডাকসু নির্বাচনের ঠিক আগের দিন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের কমেন্টবক্স খেয়াল করলে আপনার চোখে একটা কমেন্ট পড়ার কথা। কমেন্টটা এমন, Sorry bro, it's only 22. আপনি হয়তো জানেন টুয়েন্টি টু ছিল বর্তমান ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের ব্যালট নং। প্রচুর বট আইডি একযোগে ছাত্রনেতাদের কমেন্টবক্সে এই কমেন্টটি করতে থাকে। এরপর এই একটি লাইন দিয়ে হতে থাকে প্রচুর স্ট্যাটিক মিম, ভিডিও মিম ও ফানি ওয়ানলাইনার। ফলাফলও হয়েছে চমৎকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার সংখ্যা ৩৯৭৭৫ হলেও সাদিক কায়েমের ব্যালট নং মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল দেশের ১৬ কোটি মানুষের।
লেখাটা শেষ করি কিছু রিয়েল লাইফ বটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। বটের সাধারণত কোনো বিবেক, বুদ্ধি ও নিজস্ব মতামত থাকে না, তাকে চালিত করে আরেকজন, সেই আরেকজন অর্থাৎ বিগবসের কথাই সে বলে বেড়ায় বা সেই বিগবসের ইচ্ছামতোই কাজ করে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কর্তৃত্ববাদি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধানই এক একজন রিয়েল লাইফ বট। যেমন খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিংবা শেখ হাসিনার শাসনামলের ইলেকশন কমিশনার, প্রধান বিচারপতি থেকে ইউনিভার্সিটির ভিসি সবাইকে একেকজন রিয়েল লাইফ বট বলতে পারেন। শিল্প সাহিত্যেও বট দেখা যায়। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বট আইডির নাম ছিল ভানুসিংহ, প্রমথ চৌধুরীর বট আইডির নাম ছিল বীরবল ও বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের বট আইডির নাম ছিল বনফুল। যেতে যেতে একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান, আপনি কখনও শখের বসে বট আইডি খুললে তার নাম কী দিবেন?
লেখক: হিউমারিস্ট

দেশের ডিজিটাল স্পেসজুড়ে এখন চলছে বটের রাজত্ব। বিটিভির ভাষায় বললে বট আইডির বাম্পার ফলন। ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি বট। মহা সমারোহে চলছে ‘একটি মানুষ একটি বট আইডি’ প্রকল্প। চলুন জানি, নানা ধরণের বটের কর্মকান্ড; ঘুরে আসি বাংলার ডিজিটাল বটমূল।
ফেসবুকের শুরুর দিকে বট আইডিগুলোকে আমরা চিনতাম ফেইক আইডি নামে। আইডিগুলো মূলত ছেলেরা চালাতো, তবে মেয়েদের নামে। উদ্দেশ্য ছিল অন্য ছেলেদের সাথে প্রেমের অভিনয় করা। মাঝে মাঝে টুকটাক মোবাইল রিচার্জ নেয়া; কিংবা ছেলেদের নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরানো। সেসময়ে এই আইডিগুলোর বেশ সুন্দর কিছু নামও দিয়েছিল ফেসবুকবাসীরা। যেমন, পুরুষ আক্তার মহিলা, ভাইয়াপু ইত্যাদি ইত্যাদি। কালের বিবর্তনে নিরীহ ফেইক আইডিগুলোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ব্যবহার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রপাগান্ডা ও রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ফেইক আইডির বিবর্তিত রূপ হয়ে গেলো বট আইডি।
তারও আগে খেয়াল করলে দেখা যাবে, বট মূলত একটা কর্পোরেট কমিউনিকেশন টেকনোলজি। অনলাইন বেজড প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাস্টমারদের সাথে স্বয়ংস্ক্রিয় চ্যাটের মাধ্যমে কাস্টমারদের সময় নষ্ট করার লক্ষ্যে বট আইডির ব্যবহার শুরু করে। বটগুলোতে কিছু নির্দিষ্ট মেসেজ ইনপুট করা থাকতো, কাস্টমার নক দিলে সে অনুযায়ী বট আইডিগুলো কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যেতো। এগুলোকে বলা যেতে পারে চ্যাট জিপিটির গ্রামের চাচাতো ভাই । খুব একটা স্মার্ট না, বাট সফলতার সাথে কাস্টমারের সময় নষ্ট করতে ওস্তাদ।
ফেসবুকের বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্টদের ফেসবুকের কমেন্টবক্স বটআইডির বিচরণভূমি। অভয়আরণ্যও বলা যেতে পারে। এইসব পেজের কমেন্টবক্সে নজর রাখলেই দেখবেন, প্রচুর বট আইডি বিভিন্ন দলের পক্ষে রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো বট আইডি বলছে, আগে পরিবার সমেত বিএনপি করতাম, কিন্তু এইবার ঠিক করেছি জামায়াতে ভোট দিব। কোনো বট আইডি বলছে, আগে পরিবার সমেত জামায়াত করতাম, এইবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিএনপিকে ভোট দিব!
বট আইডির দেখা মিলবে ফেসবুকের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পোলেও। বিএনপিকে ভালোবাসলে লাভ, এনসিপিকে ভালোবাসলে ওয়াও আর জামায়াতকে ভালোবাসলে হাহা দিন—এমন সব পোস্টে জম্বির মতো দৌঁড়ে এসে হাজির হবে বট আইডি। ভোট দিবে এবং পছন্দের দলকে জিতিয়ে দিবে। এই ধরনের ভোটে যে দলের বট আইডি যত সমৃদ্ধ সে দলের জেতার সম্ভাবনা তত বেশি।
এছাড়াও ১৬ বছরের আওয়ামী আমলের নির্বাচনে ভার্চুয়ালের বাইরেও বটআইডির সরাসরি ব্যবহার ছিল। বলা যেতে পারে বটরা সরাসরি ভোট দিয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নাই, মৃত ভোটারদের ভোট যারা দিয়েছে বটের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তারা তো বট আইডিই! কিংবা ধরেন, ভোট দিতে গিয়ে যারা শুনেছেন, আপনার ভোট হয়ে গেছে বাসায় চলে যান, সেই ভোটগুলো কারা দিয়েছেন বলে মনে করেন? হ্যাঁ, বট ভোটাররাই। আপনি একটু দুঃখ করতে পারেন এজন্য। আর প্রার্থনা করতে পারেন, সামনের নির্বাচনে যেন আপনার মূল্যবান ভোটটা কোন বট ভোটার এসে দিয়ে না দেয়!
এই মূহুর্তে মোটাদাগে অনলাইনে ৩ ধরনের বট আইডি আছে। আলবটর, বটফোর্স ও বটলীগ। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, কোন ধরনের বট কাদের রিপ্রেজেন্ট করে! তাও আপনার বোঝার স্বার্থে ও লেখাটায় কিছু ওয়ার্ড বাড়ানোর স্বার্থে বলি—আলবটর এই মূহুর্তে রিপ্রেজেন্ট করছে জামায়াত-শিবিরকে, বটফোর্স কীবোর্ড চালাচ্ছে বিএনপির পক্ষে ও বটলীগ বিদ্রোহ করে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের পক্ষে।
তবে বট আইডির সক্ষমতায় ডিজিটাল বটমূলে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো, এনসিপিকে পিছিয়ে পড়াদের কাতারেই ফেলা যায়। এদের পক্ষে অনলাইনে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত বট নাই। কখনও ক্ষমতায় গেলে কিংবা টাকা-পয়সা হলে তারাও বটের বাম্পার ফলন ফলাবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বট আইডি ছাড়া দল চালানো বেশ কঠিনই বটে।
ডিজিটাল বটমূলে বট আইডির একাধিক বৈশিষ্ট রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো, বেশিরভাগ বট আইডি পর্দা করে, অর্থাৎ আইডিগুলো লক করা থাকে। প্রোফাইল পিকচার রিয়ালিস্টিক হয় না। সেখানে রাজনৈতিক নেতা, নায়ক-নায়িকা কিংবা বিভিন্ন আর্টওয়ার্কের ছবি দেখা যায়। বটআইডির নামের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে। আগে দেখা যেত, বট আইডির নাম সাধারণত একটু অদ্ভূত হতো। যেমন, ই-কোলাই ভাইরাস, সালফিউরিক অ্যাসিড। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল বটমূলে নাম কিছুটা অর্গানিক রাখার চেষ্টা করা হয়। মোহাম্মদ রকিকুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, সানজিদা আক্তার এই ধরনের নামও এখন দেখা যায়, যাতে বট আইডি হলেও তাকে দেখলে বট আইডি মনে না হয়ে রিয়েল আইডি মনে হয়। এছাড়াও বট আইডির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো, গালাগালি। বট আইডিগুলো ফেসবুকের কমেন্টবক্সে মনখুলে গালি দেয়। কখনও কখনও নতুন নতুন বৈচিত্রময় গালির উদ্ভাবনও করে থাকে।
ডিজিটাল বটমূলে বটআইডির কাজ মূলত ৩-৪ ধরনের। প্রথম উদ্দেশ্য নতুন নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ বাজারে ছড়িয়ে দেয়া। কিছু কিছু দূর্দান্ত সফল ন্যারেটিভ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বট আইডিগুলো। সেগুলো নিয়ে পরের প্যারায় আলোচনা করা হবে। এখন আপাতত জেনে নিন, বট আইডির বাকিসব কাজ।
ন্যারেটিভ তৈরির পাশাপাশি পছন্দের দলের পোস্টে লাভ রিঅ্যাক্ট দেয়া ও অপছন্দের দলের পোস্টে হাহা বিপ্লব করাও বট আইডি জেডি অর্থাৎ জব ডিসক্রেপশনের মধ্যে পড়ে। এছাড়া গালাগালি বট আইডির অন্যতম দায়িত্ব। সাধারণত মানুষ লোক-লজ্জার ভয়ে যেসব গালি নিজের আইডি থেকে দিতে পারে না সেসব গালিই বট আইডি থেকে দিয়ে তারা মনকে শান্ত করে।
৫ আগস্টের পর থেকে ডিজিটাল বটমূলে বিচরন করতে গিয়ে আমি একাধিক সফল ক্যাম্পেইনের সাক্ষি হয়েছি। ডিজিটাল বটদের প্রথম সফল ক্যাম্পেইন বলা যেতে পারে, ইউনূস সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাওয়া। ৫ আগস্টের পরের সময়গুলোতে দেখা যায় হুট করেই একটা ক্যাম্পেইন ছড়িয়ে পড়ে। সবাই সমানে নানান নিউজ পোর্টাল, সেলিব্রেটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পোস্টে কমেন্ট করা শুরু করে, ইউসুফ সরকার এতো ভালো করছে, তাদের আসলে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। বট আইডির মুখ থেকে একসময় যা মেইনস্ট্রিম ফেসবুকেও চলে আসে। এমনকি কিছুদিন আগে আল জাজিরার সাংবাদিক মেহদি হাসানের সাথে এক ইন্টারভ্যিউতে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসও বলেছেন, অনেকে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে ৫ বছর, ১০ বছর এমনকি ৫০ বছরও ক্ষমতায় দেখতে চান।
বটআইডির দ্বিতীয় সফল ক্যাম্পেইন বলা যায়, আগেই ভালো ছিলাম ক্যাম্পেইনকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানান সমালোচনা ও ব্যর্থতার মুখে একসময় ডিজিটাল বটমূলে আওয়াজ উঠে, আগেই ভালো ছিলাম, এখন দেশে নানান সমস্যা! যা বট আইডির সীমানা ছাড়িয়ে একসময় সাধারণ মানুষের অর্থাৎ সাধারণ ফেসবুকারদের মুখেও চলে আসে।
ডাকসু নির্বাচনের ঠিক আগের দিন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের কমেন্টবক্স খেয়াল করলে আপনার চোখে একটা কমেন্ট পড়ার কথা। কমেন্টটা এমন, Sorry bro, it's only 22. আপনি হয়তো জানেন টুয়েন্টি টু ছিল বর্তমান ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের ব্যালট নং। প্রচুর বট আইডি একযোগে ছাত্রনেতাদের কমেন্টবক্সে এই কমেন্টটি করতে থাকে। এরপর এই একটি লাইন দিয়ে হতে থাকে প্রচুর স্ট্যাটিক মিম, ভিডিও মিম ও ফানি ওয়ানলাইনার। ফলাফলও হয়েছে চমৎকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার সংখ্যা ৩৯৭৭৫ হলেও সাদিক কায়েমের ব্যালট নং মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল দেশের ১৬ কোটি মানুষের।
লেখাটা শেষ করি কিছু রিয়েল লাইফ বটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। বটের সাধারণত কোনো বিবেক, বুদ্ধি ও নিজস্ব মতামত থাকে না, তাকে চালিত করে আরেকজন, সেই আরেকজন অর্থাৎ বিগবসের কথাই সে বলে বেড়ায় বা সেই বিগবসের ইচ্ছামতোই কাজ করে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কর্তৃত্ববাদি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধানই এক একজন রিয়েল লাইফ বট। যেমন খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিংবা শেখ হাসিনার শাসনামলের ইলেকশন কমিশনার, প্রধান বিচারপতি থেকে ইউনিভার্সিটির ভিসি সবাইকে একেকজন রিয়েল লাইফ বট বলতে পারেন। শিল্প সাহিত্যেও বট দেখা যায়। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বট আইডির নাম ছিল ভানুসিংহ, প্রমথ চৌধুরীর বট আইডির নাম ছিল বীরবল ও বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের বট আইডির নাম ছিল বনফুল। যেতে যেতে একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান, আপনি কখনও শখের বসে বট আইডি খুললে তার নাম কী দিবেন?
লেখক: হিউমারিস্ট

শূন্য দশক বাংলা মিউজিকের একটা ক্রান্তিকাল। নিউজিকে নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং ট্রাডিশনাল মিউজিকের নতুন উপস্থাপনের দশক। শিরিনের বিখ্যাত গান পাঞ্জাবিওয়ালাকে কেন্দ্র করে, শূন্য দশকের ফোক ফিউশন নিয়ে এই লেখা।
৭ দিন আগে
আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। টয়লেট বিষয়ে দার্শনিকেরা রহস্যজনকভাবে নীরব। কিন্তু কেন?—জিজ্ঞাসার উত্তর খোজার চেষ্টা এই লেখা।
৮ দিন আগে
আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। শিবরাম থেকে স্লাভয় জিজেক— নানা ধরণের টয়লেট চিন্তা ও টয়লেট সম্পর্কিত চিন্তা নিয়ে এই লেখা।
৮ দিন আগে
ফেলুদা যুক্তি খোঁজেন, শার্লক খোঁজেন প্রমাণ—আর অনলাইন রিপোর্টার খোঁজেন ক্লিক। আধুনিক সাংবাদিকতা যেন গোয়েন্দাগিরির নতুন সংস্করণ, যেখানে কেস ফাইল নয়, কাজ করে ট্রেন্ডিং টপিক, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) আর অ্যালগরিদম।
১০ দিন আগে