.png)
আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। টয়লেট বিষয়ে দার্শনিকেরা রহস্যজনকভাবে নীরব। কিন্তু কেন?—জিজ্ঞাসার উত্তর খোজার চেষ্টা এই লেখা।

কে এম রাকিব

পরিচ্ছন্ন টয়লেট আমার বেশ পছন্দের জায়গা। অসামান্য আরাম ও স্বস্তির জায়গা। হালকা হইতে হইতে দিন-দুনিয়া নিয়া গভীর সব চিন্তা-ভাবনা করার জায়গা। সত্যি-মিথ্যা জানি না; তবে শুনছি যে সলিমুল্লাহ খানের টয়লেটেও নাকি বুক শেল্ফ আছে।
আমি জানি, এই কথাগুলা পইড়া আপনি– হে প্রিয় পাঠক–আমার সম্পর্কে কিছু জাজমেন্টেও চলে যাইতে পারেন। ইয়াং পিপল হইলে ভাবতে পারেন: eww!
কিন্তু গ্রুদেব রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম।’ কঠিনেরে গ্রুদেব বোধহয় সব সময় ভালোবাসতে পারেন নাই। (পাঠকের জানা ভালো, গ্রুদেব জীবনে প্রথম ইউএস গেছিলেন কঠিন পাইলসের সমস্যা নিয়া।)
যাহোক, সত্যির পাশাপাশি, আমি পরিচ্ছন্ন টয়লেটও ভালোবাসি। আরেকটা সত্যি হইতেছে, পরিচ্ছন্ন সুন্দর একটা টয়লেট মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অথচ মানবজাতি এই টয়লেটের যথেষ্ট কদর করে নাই। এই লেখারে বলতে পারেন টয়লেটরে কদর করার সবে শুরু। বাদায়ে,
মানবজাতি যে টয়লেটের তেমন কদর করে নাই– এর প্রমাণ কী? প্রমাণ হইতেছে সিরিয়াস দার্শনিকদের টয়লেট বিষয়ক তেমন কোনো লেখাপত্র নাই। অন্তত একজন টয়লেট-এন্থুজিয়াস্ট হিসেবে আমি টয়লেট নিয়া কোনো দার্শনিক লেখা খুঁজে পাই নাই। একপর্যায়ে আমার এমন সন্দেহ হইলো যে, দার্শনিকেরা কি আদৌ টয়লেটে যাইতেন? গেলে তারা এই বিষয়ে এমন রহস্যজনকভাবে নীরব কেন? নাকি তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ছিলো?
দুনিয়ার সবচে বেশি লোক খোলা জায়গারে টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করে যে দেশে, সেই দেশটার নাম ইন্ডিয়া। অদ্ভুত ব্যাপার হইতেছে, টয়লেটের ব্যাপারে যা কিছু সিরিয়াস আলাপ প্রাচীন ও আদি-মধ্যযুগের দুনিয়ায় আছে–তা করছে ইন্ডিয়ান থিংকাররাই!
প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য ও ডিজাইনের শাস্ত্রের নাম বাস্তুশাস্ত্র। বাস্তশাস্ত্রে টয়লেট বিষয়ে অল্প কিছু আলাপ আছে। অথর্ববেদের স্থাপত্যবেদ নামে একটা উপবেদ আছে, যা একটু মাইনর বেদ। এইখান থেকেই বাস্তুশাস্ত্রের শুরুয়াত। বাস্তুশাস্ত্র মতে, ব্রহ্মস্থানে যদি টয়লেট রাখা হয় তাহলে অশুভ শক্তির প্রবাহ ঘটে। বাড়ির কেন্দ্রীয় স্থানরে বৈদিক শাস্ত্রে বলে ব্রহ্মস্থান বা গৃহনাভী। এখানে টয়লেট রাখা যাবে না। টয়লেট রাখতে হবে ঘরের বাইরে। ব্রহ্মস্থানে যেমন টয়লেট রাখা যাবে না, তেমনি বাড়ির উত্তর-পূর্বে, দক্ষিণ-পশ্চিমেও রাখা যাবে না। টয়লেটের আর্দশ স্থান হইতেছে পশ্চিম দিক ও উত্তরচ-পশ্চিম কোনায়। বিকল্পে দক্ষিণ-পূর্বেও টয়লেট থাকা যাইতে পারে। আবার, সেই টয়লেটের পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক করে কমোড বসানো মঙ্গলজনক।

টয়লেট: এক প্রেম কাথা (২০১৭) নামে মুভি আছে। মুভিতে অক্ষয় কুমারের স্ত্রী হুমকি দেয় যে ঘরের মধ্যে যদি টয়লেট না বানায়, তাহলে সে স্বামীরে ছেড়ে চলে যাবে। টয়লেট: এক প্রেম কাথা মোটামুটি শিটি মুভি যা দেখলে মনে হবে মুভির মূল মেসেজ মাত্র দুইটা:
১. আপনি যদি ক্রিপি ব্যাটালোক হন, আর লম্বা সময় ধরে কোনো মেয়েরে স্টক করতে থাকেন, মেয়েটা আপনার প্রেমে পড়বেই।
২. প্রত্যেক ঘরে অন্তত একটা টয়লেট থাকা উচিৎ।
আমি দুই নাম্বার মেসেজের সাথে একমত।
আর্টের দুনিয়ায় একটা খটকার মতো
টয়লেট নিয়া আলাপ করলে এক ফরাসি চিত্রশিল্পী ও পেশাদার দাবারুর নাম আসবেই। ভদ্রলোকের নাম মার্সেল ডুশাম্প। ১৯১৭ সালে নিউইয়র্কের সোসাইটি অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্টস–এর এক্সিবিশনে একটা আর্টওয়ার্ক সাবমিট করেন ডুশাম্প। তিনি একটা ইউরিনাল কিনে সেখানে আর. মুট নামে সাইন করে জমা দেন। এইটা তুমুল তর্ক-বিতর্কের জন্ম দেয়; কী আর্ট হইতে পারে, আর কী আর্ট হইতে পারে না–কী কী ক্রাইটেরিয়ায় কোনো কিছুরে আর্ট বলা যাবে, নাকি যাবে না—এই বিতর্কের মীমাংসা আজও হয় নাই। এবং এই ইউরিনাল বা আর্টওয়ার্ক শিল্পকলার ইতিহাসে একটা বিখ্যাত খটকার মতো ঝুলে আছে।
টয়লেট বিষয়ে একমাত্র উল্লেখযোগ্য যে দার্শনিক কথাবার্তা বলছেন তিনি স্লাভয় জিজেক। তাও ঠিক টয়লেট নিয়াও উনি বলেন নাই। টয়লেটের উছিলায় আলাপ দিছেন আইডিওলজি বা ভাবাদর্শ নিয়া। ২০১১ সালে দ্য হারমেনিউটিক্স অব টয়লেটস নামে জিজেক একটা লেকচার দেন। জ্বি, শব্দটা আমিও প্রথম শুনলাম। গুগলায়ে জানতে পারলাম– ব্যাখ্যা বা তাফসিরের তত্ত্ব ও পদ্ধতিরে বলে হারমেনিউটিক্স। মূলত পুরান টেক্সট ও ডকুমেন্ট ইন্টারপ্রেট করতে কাজ করে এই শাস্ত্র। জিজেক অবশ্য স্থাপত্যে এই জিনিস এপ্লাই করছেন। এবং দেখাইছেন যে, যেখানে ভাবাদর্শিক প্রভাব থাকতে পারে বইলা আমরা কল্পনাও পারি না সেইখানেও ভাবাদর্শ কাজ করে।
জিজেকের আইডিয়াটা মোটামুটি এমন:
ট্রাডিশনাল জার্মান টয়লেটে, ফ্ল্যাশ দিলে যেখানে মল অদৃশ্য হয়া যায় সেই ছেদাটা থাকে সামনে। ফলে জার্মান টয়লেটে মল সামনে ভেসে থাকে এবং তা দেখে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ আছে কিনা যাচাই করতে পারে।
অন্যদিকে, ফরাসি টয়লেটে ছেদাটা থাকে পিছে। মানে মল যত দ্রুত সম্ভব অদৃশ্য হইলে বেটার।
আর আম্রিকান বা এ্যাংলো-স্যাক্সন টয়লেট বিপরীত এই দুই প্রকার টয়লেটের মধ্যস্থতা হাজির করে। কমোডের বেসিনটা পানিতে ভরা থাকে, যাতে অল্প সময় ভেসে থাকে কিন্তু দেখা গেলেও ঠিক দেখার জন্য না।
জিজেকের মতে, এইটা ভাবাদর্শের ডায়ালেক্টিকাল সিন্থেসিস।
টয়লেটের এই ভ্যারাইটিগুলা কোনোটাই ঠিক ফাংশনালিটি বা উপযোগিতা দিয়া ব্যাখ্যা করা যায় না। এগুলার সাথে আছে ভাবাদর্শগত ধারণা। মল-মূত্রের প্রতি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কিত বোঝাপড়ার প্রতিফলন আছে। যেমন–
১. জার্মানদের একটু ধ্যানী, মেটিকুলাস বা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার ধরন। মল-মূত্র দেখে তারা সিদ্ধান্তে আসতে চায়, কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা।
২. ফরাসিদের বৈপ্লবিক তাড়াহুড়া। ১৯ শতকের রেভ্যোলুশনারি আইডিয়াগুলার জন্মভূমি। এইসব জিনিস তারা দেখতেই চায় না।
৩. অন্যদিকে, ইংলিশ প্র্যাগম্যাটিজম।
জিজেকের মতে, পলিটিক্সের নজরে দেখলে এই তিনরে জার্মান রক্ষণশীলতা, ফরাসি বিপ্লবী উগ্রবাদ আর ইংলিশ লিবারেলিজম হিসাবে পাঠ করা যায়।
ডিয়ার রিডার, আলাপটা কি জটিল ঠেকতেছে? এই লিংকে গিয়া ভিডিওটা দেখে আসেন।
এইসব তুলনা দিয়া জিজেক বলেন, বুদ্ধিজীবীরা প্রায়ই দাবি করে যে আমরা একটা পোস্ট-আইডিওলজিকাল বা ভাবাদর্শ-উত্তর দুনিয়ায় বাস করি। অথচ গরম গরম আলাপ দিয়া তারা যখন টয়লেটে যান, তখন কিন্তু ঠিকই ভাবাদর্শের গভীরে ডুবে যান।
এগুলা টয়লেট সম্পর্কে দার্শনিক জিজেকের পর্যবেক্ষণ ও বোঝাপড়া। একজন টয়লেট-এন্থুজিয়াস্ট হিসেবে আমারও তো পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে। মজলিসে হাজিরান, বলেন, ঠিক কিনা?
‘পোস্টমডার্ন’ দুনিয়ায় চিরন্তন সত্যি বলে কিছু নাই। দুনিয়াতে এমন কোনো বিবৃতি নাই, যা সব কালচার, যুগ ও ভূগোলজুড়ে একটা জেন্ডারের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত এবং পরম সত্য। তবে চিরন্তন সত্যির কাছাকাছি একটা বিবৃতি আছে, একটামাত্র ব্যতিক্রম আছে–
পুরুষদের টয়লেটগুলা সব সময় বেশি নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত হয়।

পরিচ্ছন্ন টয়লেট আমার বেশ পছন্দের জায়গা। অসামান্য আরাম ও স্বস্তির জায়গা। হালকা হইতে হইতে দিন-দুনিয়া নিয়া গভীর সব চিন্তা-ভাবনা করার জায়গা। সত্যি-মিথ্যা জানি না; তবে শুনছি যে সলিমুল্লাহ খানের টয়লেটেও নাকি বুক শেল্ফ আছে।
আমি জানি, এই কথাগুলা পইড়া আপনি– হে প্রিয় পাঠক–আমার সম্পর্কে কিছু জাজমেন্টেও চলে যাইতে পারেন। ইয়াং পিপল হইলে ভাবতে পারেন: eww!
কিন্তু গ্রুদেব রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম।’ কঠিনেরে গ্রুদেব বোধহয় সব সময় ভালোবাসতে পারেন নাই। (পাঠকের জানা ভালো, গ্রুদেব জীবনে প্রথম ইউএস গেছিলেন কঠিন পাইলসের সমস্যা নিয়া।)
যাহোক, সত্যির পাশাপাশি, আমি পরিচ্ছন্ন টয়লেটও ভালোবাসি। আরেকটা সত্যি হইতেছে, পরিচ্ছন্ন সুন্দর একটা টয়লেট মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অথচ মানবজাতি এই টয়লেটের যথেষ্ট কদর করে নাই। এই লেখারে বলতে পারেন টয়লেটরে কদর করার সবে শুরু। বাদায়ে,
মানবজাতি যে টয়লেটের তেমন কদর করে নাই– এর প্রমাণ কী? প্রমাণ হইতেছে সিরিয়াস দার্শনিকদের টয়লেট বিষয়ক তেমন কোনো লেখাপত্র নাই। অন্তত একজন টয়লেট-এন্থুজিয়াস্ট হিসেবে আমি টয়লেট নিয়া কোনো দার্শনিক লেখা খুঁজে পাই নাই। একপর্যায়ে আমার এমন সন্দেহ হইলো যে, দার্শনিকেরা কি আদৌ টয়লেটে যাইতেন? গেলে তারা এই বিষয়ে এমন রহস্যজনকভাবে নীরব কেন? নাকি তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ছিলো?
দুনিয়ার সবচে বেশি লোক খোলা জায়গারে টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করে যে দেশে, সেই দেশটার নাম ইন্ডিয়া। অদ্ভুত ব্যাপার হইতেছে, টয়লেটের ব্যাপারে যা কিছু সিরিয়াস আলাপ প্রাচীন ও আদি-মধ্যযুগের দুনিয়ায় আছে–তা করছে ইন্ডিয়ান থিংকাররাই!
প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য ও ডিজাইনের শাস্ত্রের নাম বাস্তুশাস্ত্র। বাস্তশাস্ত্রে টয়লেট বিষয়ে অল্প কিছু আলাপ আছে। অথর্ববেদের স্থাপত্যবেদ নামে একটা উপবেদ আছে, যা একটু মাইনর বেদ। এইখান থেকেই বাস্তুশাস্ত্রের শুরুয়াত। বাস্তুশাস্ত্র মতে, ব্রহ্মস্থানে যদি টয়লেট রাখা হয় তাহলে অশুভ শক্তির প্রবাহ ঘটে। বাড়ির কেন্দ্রীয় স্থানরে বৈদিক শাস্ত্রে বলে ব্রহ্মস্থান বা গৃহনাভী। এখানে টয়লেট রাখা যাবে না। টয়লেট রাখতে হবে ঘরের বাইরে। ব্রহ্মস্থানে যেমন টয়লেট রাখা যাবে না, তেমনি বাড়ির উত্তর-পূর্বে, দক্ষিণ-পশ্চিমেও রাখা যাবে না। টয়লেটের আর্দশ স্থান হইতেছে পশ্চিম দিক ও উত্তরচ-পশ্চিম কোনায়। বিকল্পে দক্ষিণ-পূর্বেও টয়লেট থাকা যাইতে পারে। আবার, সেই টয়লেটের পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক করে কমোড বসানো মঙ্গলজনক।

টয়লেট: এক প্রেম কাথা (২০১৭) নামে মুভি আছে। মুভিতে অক্ষয় কুমারের স্ত্রী হুমকি দেয় যে ঘরের মধ্যে যদি টয়লেট না বানায়, তাহলে সে স্বামীরে ছেড়ে চলে যাবে। টয়লেট: এক প্রেম কাথা মোটামুটি শিটি মুভি যা দেখলে মনে হবে মুভির মূল মেসেজ মাত্র দুইটা:
১. আপনি যদি ক্রিপি ব্যাটালোক হন, আর লম্বা সময় ধরে কোনো মেয়েরে স্টক করতে থাকেন, মেয়েটা আপনার প্রেমে পড়বেই।
২. প্রত্যেক ঘরে অন্তত একটা টয়লেট থাকা উচিৎ।
আমি দুই নাম্বার মেসেজের সাথে একমত।
আর্টের দুনিয়ায় একটা খটকার মতো
টয়লেট নিয়া আলাপ করলে এক ফরাসি চিত্রশিল্পী ও পেশাদার দাবারুর নাম আসবেই। ভদ্রলোকের নাম মার্সেল ডুশাম্প। ১৯১৭ সালে নিউইয়র্কের সোসাইটি অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্টস–এর এক্সিবিশনে একটা আর্টওয়ার্ক সাবমিট করেন ডুশাম্প। তিনি একটা ইউরিনাল কিনে সেখানে আর. মুট নামে সাইন করে জমা দেন। এইটা তুমুল তর্ক-বিতর্কের জন্ম দেয়; কী আর্ট হইতে পারে, আর কী আর্ট হইতে পারে না–কী কী ক্রাইটেরিয়ায় কোনো কিছুরে আর্ট বলা যাবে, নাকি যাবে না—এই বিতর্কের মীমাংসা আজও হয় নাই। এবং এই ইউরিনাল বা আর্টওয়ার্ক শিল্পকলার ইতিহাসে একটা বিখ্যাত খটকার মতো ঝুলে আছে।
টয়লেট বিষয়ে একমাত্র উল্লেখযোগ্য যে দার্শনিক কথাবার্তা বলছেন তিনি স্লাভয় জিজেক। তাও ঠিক টয়লেট নিয়াও উনি বলেন নাই। টয়লেটের উছিলায় আলাপ দিছেন আইডিওলজি বা ভাবাদর্শ নিয়া। ২০১১ সালে দ্য হারমেনিউটিক্স অব টয়লেটস নামে জিজেক একটা লেকচার দেন। জ্বি, শব্দটা আমিও প্রথম শুনলাম। গুগলায়ে জানতে পারলাম– ব্যাখ্যা বা তাফসিরের তত্ত্ব ও পদ্ধতিরে বলে হারমেনিউটিক্স। মূলত পুরান টেক্সট ও ডকুমেন্ট ইন্টারপ্রেট করতে কাজ করে এই শাস্ত্র। জিজেক অবশ্য স্থাপত্যে এই জিনিস এপ্লাই করছেন। এবং দেখাইছেন যে, যেখানে ভাবাদর্শিক প্রভাব থাকতে পারে বইলা আমরা কল্পনাও পারি না সেইখানেও ভাবাদর্শ কাজ করে।
জিজেকের আইডিয়াটা মোটামুটি এমন:
ট্রাডিশনাল জার্মান টয়লেটে, ফ্ল্যাশ দিলে যেখানে মল অদৃশ্য হয়া যায় সেই ছেদাটা থাকে সামনে। ফলে জার্মান টয়লেটে মল সামনে ভেসে থাকে এবং তা দেখে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ আছে কিনা যাচাই করতে পারে।
অন্যদিকে, ফরাসি টয়লেটে ছেদাটা থাকে পিছে। মানে মল যত দ্রুত সম্ভব অদৃশ্য হইলে বেটার।
আর আম্রিকান বা এ্যাংলো-স্যাক্সন টয়লেট বিপরীত এই দুই প্রকার টয়লেটের মধ্যস্থতা হাজির করে। কমোডের বেসিনটা পানিতে ভরা থাকে, যাতে অল্প সময় ভেসে থাকে কিন্তু দেখা গেলেও ঠিক দেখার জন্য না।
জিজেকের মতে, এইটা ভাবাদর্শের ডায়ালেক্টিকাল সিন্থেসিস।
টয়লেটের এই ভ্যারাইটিগুলা কোনোটাই ঠিক ফাংশনালিটি বা উপযোগিতা দিয়া ব্যাখ্যা করা যায় না। এগুলার সাথে আছে ভাবাদর্শগত ধারণা। মল-মূত্রের প্রতি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কিত বোঝাপড়ার প্রতিফলন আছে। যেমন–
১. জার্মানদের একটু ধ্যানী, মেটিকুলাস বা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার ধরন। মল-মূত্র দেখে তারা সিদ্ধান্তে আসতে চায়, কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা।
২. ফরাসিদের বৈপ্লবিক তাড়াহুড়া। ১৯ শতকের রেভ্যোলুশনারি আইডিয়াগুলার জন্মভূমি। এইসব জিনিস তারা দেখতেই চায় না।
৩. অন্যদিকে, ইংলিশ প্র্যাগম্যাটিজম।
জিজেকের মতে, পলিটিক্সের নজরে দেখলে এই তিনরে জার্মান রক্ষণশীলতা, ফরাসি বিপ্লবী উগ্রবাদ আর ইংলিশ লিবারেলিজম হিসাবে পাঠ করা যায়।
ডিয়ার রিডার, আলাপটা কি জটিল ঠেকতেছে? এই লিংকে গিয়া ভিডিওটা দেখে আসেন।
এইসব তুলনা দিয়া জিজেক বলেন, বুদ্ধিজীবীরা প্রায়ই দাবি করে যে আমরা একটা পোস্ট-আইডিওলজিকাল বা ভাবাদর্শ-উত্তর দুনিয়ায় বাস করি। অথচ গরম গরম আলাপ দিয়া তারা যখন টয়লেটে যান, তখন কিন্তু ঠিকই ভাবাদর্শের গভীরে ডুবে যান।
এগুলা টয়লেট সম্পর্কে দার্শনিক জিজেকের পর্যবেক্ষণ ও বোঝাপড়া। একজন টয়লেট-এন্থুজিয়াস্ট হিসেবে আমারও তো পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে। মজলিসে হাজিরান, বলেন, ঠিক কিনা?
‘পোস্টমডার্ন’ দুনিয়ায় চিরন্তন সত্যি বলে কিছু নাই। দুনিয়াতে এমন কোনো বিবৃতি নাই, যা সব কালচার, যুগ ও ভূগোলজুড়ে একটা জেন্ডারের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত এবং পরম সত্য। তবে চিরন্তন সত্যির কাছাকাছি একটা বিবৃতি আছে, একটামাত্র ব্যতিক্রম আছে–
পুরুষদের টয়লেটগুলা সব সময় বেশি নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
.png)

আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। শিবরাম থেকে স্লাভয় জিজেক— নানা ধরণের টয়লেট চিন্তা ও টয়লেট সম্পর্কিত চিন্তা নিয়ে এই লেখা।
৪ ঘণ্টা আগে
ফেলুদা যুক্তি খোঁজেন, শার্লক খোঁজেন প্রমাণ—আর অনলাইন রিপোর্টার খোঁজেন ক্লিক। আধুনিক সাংবাদিকতা যেন গোয়েন্দাগিরির নতুন সংস্করণ, যেখানে কেস ফাইল নয়, কাজ করে ট্রেন্ডিং টপিক, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) আর অ্যালগরিদম।
২ দিন আগে
এই যে ‘কচ্ছপ টচ্ছপ আবার ভোট দেয় নাকি?’ — এই ডায়লগটা শুইনা আপনি যদি হাসেন, তাইলে কংগ্রাচুলেশন্স! আপনি সেই দেশের নাগরিক, যাদের নৈতিক দেউলিয়াত্ব এখন সরকারি গেজেটে ছাপা বাকি।
৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদের সিনেমায় অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ‘হুজুর’ বা মাওলানা। কীভাবে হুমায়ূনের সিনেমায় হুজুর বা মাওলানারা চিত্রিত হয়েছেন? কীভাবে ভাল-মন্দের বাইনারিরে বাইরে হাজির করেছেন রক্তমাংসের মানুষ? এইসব জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা এই লেখা।
৬ দিন আগে