নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সড়কে সরকারি রাস্তার পাশের ৩১টি মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি এক ইউনিয়ন সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের দিঘলী–আলমপুর সড়ক পাকা করার অযুহাতে গাছগুলো কাটেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ভুঁইয়া সুমন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দিনে গাছ কাটার পর রাতে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু গাছ আটক করে প্রশাসনকে জানায়। এই ঘটনায় তদন্তকমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নাম করে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায় বিএনপি নেতা সুমন ভুঁইয়ার লোকজন। গাছগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৯ লাখ টাকা।
দিঘলী গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, ২৫-৩০ বছর আগে মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাদিস-এর সময়ে এসব গাছ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দিনে সরকারি রাস্তার গাছ কাটে ইউনিয়ন বিএনপি নেতার লোকজন। রাতে সেগুলো পরিবহনের সময় কিছু গাছ আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।
দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা জিলু মিয়া জিলু মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাদের জমির পাশে রাস্তায় গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, গাছ বিক্রি হলে আমরা কিছু অংশ পাব। কিন্তু রাস্তা পাকা করার অজুহাতে ইউএনওর নাম বলে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। ৩০ বছর ধরে পাহারা দেওয়া গাছ, কাউকে না জানিয়েই কেটে নিল!’ প্রায় একই কথা বলে ওই গ্রামের সনজু রহমান।
দিনে কাটানো রাতে সরানোর চেষ্টার কথা জানিয়ে স্থানীয় স্থানীয় যুবক নোবেল বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুমন ভাই দিনের বেলায় গাছ কাটিয়েছেন। পরে রাতে নেওয়ার সময় কিছু গাছ আমরা আটক করি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সরকারি রাস্তার গাছ কাটতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগের অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া লাগে। কিন্তু এই রাস্তায় গাছ কাটার আগে এসব নিয়ম মানা হয়নি। এটি পরিষ্কার অপরাধ। উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছিল টেন্ডার শেষে গাছ কেটে রাস্তার কাজ শুরু করা।
কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার জানান, ‘মাসকার দিঘলী জিপিএস থেকে মাছিয়ালি গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকা করা হবে। এ কারণে ৩১টি গাছ কাটা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গাছ কাটায় কিছু নিয়ম মানা হয়নি।’ তিনি আরও জানান, রাস্তা পাকা করতে গিয়ে আরও কিছু গাছ কাটার প্রয়োজন হতে পারে।
গাছ কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার স্ট্রিমকে বলেন, ‘ ইউএনওর নাম ভাঙিয়ে কেউ সরকারি গাছ কাটলে, তা অপরাধ। আমরা বিষয়টি বন বিভাগকে জানিয়েছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গাছ কাটার কথা স্বীকার করে মাসকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ভুঁইয়া সুমন বলেন, ‘রাস্তা পাকা করার জন্য আমার নিজ খরচে গাছ কাটিয়ে এক জায়গায় রেখেছি। এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) স্যারকে জানিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ মাস থেকে ২ বছর আগে গাছ কাটা যায় না, কিন্তু রাস্তার কাজের সময়সীমা কম থাকায় দ্রুত সময়েই গাছ কাটতে হয়েছে।’