leadT1ad

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘ডাকসু নেতাদের কাজ না এমন অনেক কিছুই করছেন তাঁরা’

ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন, সেগুলোর প্রশংসা করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিদ্বন্দ্বী এমনকি জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক নেতাও প্রতিনিধিদের সমালোচনা করেছেন।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। সংগৃহীত ছবি

ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নেতাদের কাজ না হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেসব কাজ করছেন বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিদ্বন্দ্বী এমনকি জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক নেতাও ডাকসু নেতাদের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করেছেন। আবার কেউ কেউ তাঁদের উদ্যোগকে ইতিবাচক বলেও মন্তব্য করেছেন। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যক্রম সম্পর্কে এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩টি পদে জয় পায় শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। ১১ সেপ্টেম্বর উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি নিয়াজ আহমদ খান নবনির্বাচিতদের কাছে দায়িত্বগ্রহণের চিঠি পাঠান। দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৩ দিন যেতে না যেতেই নতুন প্রতিনিধিদের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

দায়িত্ব গ্রহণের পর মুহসীন হলের ভিপি ছাদিক হোসেন সিকদার গণরুমে ১০০ সিটে খাটের ব্যবস্থা করেছেন—এমন একটি খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলামের জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ হল প্রশাসনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। ডাকসুর আগেই হলে নিয়োজিত হাউজ টিউটররা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা প্রস্তুত করেন এবং এর ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগে এসব আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে সূর্যসেন হলের নবনির্বাচিত ভিপি আজিজুল হক খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার এবং হাফ প্যান্ট পরে রান্না করার অভিযোগে সূর্যসেন ক্যাফেটেরিয়াকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ‘ছাত্র সংসদের নির্বাচিতদের এই এখতিয়ার নেই’ বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদের কাজ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও কল্যাণের জন্য কাজ করা এবং তা অবশ্যই প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে করা।’

অন্যদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বাসরুটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ডাকসু প্রতিনিধিরা। সেখানে ভিপি, জিএস, এজিএস ও ছাত্র পরিবহন সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বাসের লাইভ ট্র্যাকিং অ্যাপ সম্পর্কে জানানো হয় এবং ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে ওই অ্যাপের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়।

সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে স্ট্রিমের পক্ষ থেকে ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিতদের কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।

যে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ, সেই নির্বাচনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না: আবিদুল

ডাকসুতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। আমরা প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু বিষয়ের অসঙ্গতি তুলে ধরে সেগুলো সমাধানের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছি। যে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ, সেই নির্বাচনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

এর আগে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রদল নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং অনিয়মের যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রশাসনের পক্ষ থেকে না পেলে ডাকসু নির্বাচন বৈধতা দেবে না ছাত্রদল।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের অভিযোগ ছিল, নিরাপত্তাকর্মীরা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে; বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে এবং অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হয়েছে ও ভোট গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। ডাকসুতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান না জানানো পর্যন্ত তারা নির্বাচনকে বৈধতা দিতে পারবেন না।

ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ডাকসুর কাছে ছেড়ে দিলে হবে না: মেঘমল্লার বসু

প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল থেকে জিএস পদে অংশ নেওয়া মেঘমল্লার বসু বলেন, তাঁর উদ্বেগের জায়গা দুটি। তাঁর মতে, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ডাকসুর কাছে ছেড়ে দিলে হবে না। এতে আপাতত জনকল্যাণমূলক কাজ হলেও পরবর্তীতে এটি অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। আর ফান্ডিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে এটি স্পন্সরশিপ বা সফট প্রাইভেটাইজেশনের দিকে না আগায়।

মেঘমল্লার আরও বলেন, ‘এটি জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বাইরে থেকে স্পন্সরশিপ নিয়ে আসা হলে সেটা ধীরে ধীরে প্রাইভেটাজাইশনের দিকে যেতে পারে। তাই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

রুহুল কবির রিজভীর সমালোচনা

ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যক্রম নিয়ে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা কি এতিমখানা না কি যে আপনি সেখানে লোহার খাট দেবেন? এটা কি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা ডাকসুর দায়িত্ব? আপনি ছাত্রদের দাবিদাওয়া নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে বারগেনিং করবেন, আন্দোলন করবেন।’

যদিও মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়, বরং হল প্রশাসন ডাকসুর আগেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দোকানে জরিমানা করা নিয়েও ওই অনুষ্ঠানে সমালোচনা করেন রিজভী। তাঁদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে কি না, প্রশ্ন করেন তিনি। এই জরিমানার টাকা জামায়াতে ইসলামীর বায়তুল মালে জমা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

শিক্ষার্থীরা কী বলছেন

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী জুনায়েত রাসেল স্ট্রিমকে বলেন, ‘ডাকসু নেতাদের কাজ না এমন অনেক কিছুই তাঁরা করছে। যদিও সমস্যাগুলো বাস্তব এবং সমাধান হওয়া জরুরি। আমার মনে হয়, ডাকসু নেতৃবৃন্দ নিজেদের কাজগুলো (গঠনতন্ত্র অনুযায়ী) বুঝে করলে ভালো হয়।’

রাসেল আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো সমাধানে প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া দরকার। কিছু কাজ তাঁদের এখতিয়ারবহির্ভূত হলেও শিক্ষার্থীরা কিন্তু এতে খুশি। তার মানে সমস্যাগুলো বাস্তব। আর আমার মনে হয় এসব কাজের বড় ধরনের সমালোচনা ক্যাম্পাসের বাইরে হচ্ছে।’

ইংরেজি বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিয়া সরকার স্ট্রিমকে বলেন, ‘এখানে আমার একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। সূর্যসেন হলে টেস্টিং সল্ট পাওয়ায় যে অ্যাকশনটা নেওয়া হইছে, সেটার পক্ষে আমি মত দিচ্ছি। কিন্তু হাফ প্যান্ট পরে খাবার সার্ভ করছে, এতে কোনো প্রবলেম হওয়া উচিত না। তবে জরিমানাটা যদি আইনবহির্ভূত হয়, সেই ক্ষেত্রে আমি এটাকে সাপোর্ট করি না।’

এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাজ সন্তোষজনক বলে স্ট্রিমকে জানান অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী আহনাফ মেরাজ মাহী। তিনি বলেন, ‘বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ শিক্ষার্থীদের বহুদিনের চাহিদা ছিল। শুরুতেই সেটি নিয়ে কাজ করাটা ভালো লক্ষণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে পারলে দিনশেষে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতপক্ষে লাভবান হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত