leadT1ad

সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তোলা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক: আমীর খসরু

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি

জাতীয় সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে, সেগুলো নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানের সেভাবেই আছে। এরপরও আমরা বলেছি গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একইদিন হতে পারে। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তোলা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক।’

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহার প্রণয়নে কীভাবে নাগরিক প্রত্যাশার অধিকতর ও কার্যকর প্রতিফলন করতে পারে, সে বিষয়ে এই সংলাপের আয়োজন করে ট্রেস কনসাল্টিং নামে একটি প্লাটফর্ম।

একই সংলাপে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ অভিযোগ করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন নিয়ে বিএনপি আলোচনায় বসতে ‘রাজি হচ্ছে না’। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। তাঁরা বলেছেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। জামায়াত যেকোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি এবং প্রয়োজনে অন্য রাজনৈতিক দলকেও আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করবে।’

পরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যের সময় জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া থাকতে পারে, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেড আনতে হবে। জনগণ যদি চায় তবেই সেই দাবি পূরণ হতে পারে। অযথা রাস্তায় নেমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে সই করেছি। কথা ছিল পরবর্তী সংসদ এই সনদ বাস্তবায়ন করবে। অথচ এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট হারিয়ে গেল। যেসব সংস্কার আলোচনার টেবিলেই ছিল না, সেগুলো নিয়ে জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক দল জলঘোলা করছে। যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এর বাইরেও অনেক সংস্কার প্রস্তাব থাকতে পারে। তবে সেটার জন্য জনগণের মতামত নিতে হবে, জনগণ কী চায় সেটা প্রাধান্য দিতে হবে।’

সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি সবার চেয়ে এগিয়ে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে আগামীর রাষ্ট্র গঠন ও বিনির্মাণে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঐকমত্য কমিশনে যেসব সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে এগুলো বিএনপি আগেই প্রস্তাবনা দিয়েছে।’

শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতিরও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের সুফল যদি সব বাংলাদেশির কাছে পৌঁছাতে চান, তাহলে সব গোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে হবে। অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ উন্নয়নের সহযোগী হবে।’

‘সফট পাওয়ার’ তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, ‘খেলাধুলা একটি বিশাল অর্থনীতি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—প্রতিটি জেলায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করবো। শুধু ম্যানুফ্যাকচারই জিডিপির অংশ নয়। আমাদের মানুষজন থিয়েটার ভালোবাসে। আমরা থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট তৈরি করো। থিয়েটার দেখার মাধ্যমে জিডিপিতে কন্ট্রিবিউট করবো। আমরা মিউজিকে বিনিয়োগ করি না, এগুলো সফট পাওয়ার। এগুলো সব অর্থনীতির অংশ। আমরা এই সৃজনশীল গোষ্ঠীর মানুষদেরকে মূলধারার অর্থনীতিতে আনতে চাই।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের বেসরকারি খাতকে প্রাণ প্রাধান্য দেওয়া হবে জানিয়ে আমীর খসরু জানান, শুধু বিনিয়োগ করলেই হবে না। বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে কিনা সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সংলাপে আরও অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, ট্রেস-এর প্রধান নির্বাহী ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন এবং ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম। অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ছাড়াও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ডাকসু-জাকসু ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত