leadT1ad

আমি চোখের পানি ছাড়লে লুলা হয়ে যাবা: শাহজাহান চৌধুরী

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি

আবার আলোচনায় জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর মন্তব্য। সামাজিকমাধ্যমে তাঁর অন্তত দুটি বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর একটিতে সমালোচকদের হুঁশিয়ারি করে আঞ্চলিক ভাষায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চুদুর-বুদুর নো গোরিও, লুলা ওইও যাইবা। আঁই যদি চোখর পানি ছাড়ি, ইতা লুলা ওই যাইব। আঁই বড় কষ্ট পাইয়্যি।’ অন্য ভিডিওতে জামায়াতের এই নেতা দাবি করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁকে ‘গার্ডিয়ান অব চিটাগাং’ ঘোষণা করেছেন।

ভিডিওতে শাহজাহান চৌধুরী মাইক্রোফোন হাতে উপস্থিতদের উদ্দেশে আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ কেউ তাঁকে নিয়ে ‘উল্টাপাল্টা’ কথা বলছেন, এমনটা শুনেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খবরদার খবরদার, আঁই হইলাম শাহজাহান চৌধুরী। আঁরে যারা ন চিনে, ইতারা এহনো পর্যন্ত মাটিত তলেত বসবাস গরের। আঁই চোখ তুলি দেহি, আঁর লাই আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে। আল্লাহর মেহেরবানী, আল্লাহই বলি সূর্য টিহাইয় থাইব। আল্লাহতায়ালা আঁরে এরম মর্যাদা দিয়্যে। আপনরা দোয়া গরি যান। আঁর চোখর পানি বৃথা নো যায়।’

বিগত ১৮ বছরের মধ্যে ৯ বছর জেল খেটেছেন উল্লেখ করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, তিনি টাকাপয়সা, ধন-দৌলত, কাপড়-চোপড়, পরিবার চাননি, তিনি সবার দুয়ারে এসেছেন দোয়া নিতে।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, এই চরতি এলাকা তাঁর শায়েখ, ওস্তাদ মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরীর জন্মস্থান। এই এলাকা, এলাকার মাটিকে সম্মান করেন তিনি। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। এখানে আর কোনো মার্কা নেই, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মার্কা একটাই, দাঁড়িপাল্লা।

চট্টগ্রাম জামায়াতের একাধিক নেতা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, গত ১৩ নভেম্বর সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় গণসংযোগকালে শাহজাহান চৌধুরী এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ভিডিওটি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে এক সপ্তাহে তিনি তিনবার আলোচনায় এলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) শাহজাহান চৌধুরী স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা আসলে বক্তৃতার সময়... আসলে বলেছি, আপনেরা (সমালোচকরা) এমনটা করছেন। আল্লাহতায়ালা এগুলো বরদশাত করবেন না।’

আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘মাঠে-ময়দানে কাজ করতে গিয়ে অনেক বক্তব্য মানুষের... (বাক্য শেষ করেননি)। আমরা তো সেখানে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, গরীব... আর এগুলো তো ইন্টেলেকচুয়াল লোকদের সঙ্গে না। দোয়া করেন, আর আপনারা সবাই সহযোগিতা করেন। আর আমি তো চাই মানুষের দেশ ও জাতির স্বার্থ, মানেুষের অধিকার। আমাকে তো সবাই চেনে-জানে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার শাহজাহান চৌধুরীর আরেকটি বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বক্তব্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এক বছর কাজ করার জন্য ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন শাহজাহান চৌধুরী গার্ডিয়ান অব চিটাগাং।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ নভেম্বর রাতে জামায়াতের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি এই বক্তব্য দেন।

৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দুইবারের এমপি, চারবার পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছি। ৪২ বছর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার জনসাধারণকে বুকে নিয়ে আমি বারবার আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আমাকে সম্মানিত করেছেন। ১৯৯১-তে এমপি বানিয়েছেন, ২০০১ সালে নির্বাচিত করেছেন। আজকে বাংলার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া নয়, পুরো চট্টগ্রামে এক বছর ধরে কাজ করার জন্যই ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন, শাহজাহান চৌধুরী গার্ডিয়ান অব চিটাগাং। চট্টগ্রামের অভিভাবক হচ্ছেন শাহজাহান চৌধুরী।’

এ ব্যাপারে শাহজাহান চৌধুরী স্ট্রিমকে বলেন, ‘ড. ইউনূস কেন ঘোষণা করবেন? জনগণ বলছে– ড. ইউনূস কেন বলবে? ড. ইউনূস কি আমার এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য বসে আছেন, একজন উপদেষ্টা (প্রধান উপদেষ্টা)। এই বক্তব্যটা সার্কিট হাউজে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে..., এগুলো লোকেরা বলে। আপনি যেমনটা বললেন, এ রকম উপাধি তো না।’

‘প্রধান উপদেষ্টাই ঘোষণা করেছেন’, বক্তব্যে এমনটা বলেছেন স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘না না, এটা আমার মনে হয় সঠিক না। আমিও বলে থাকলে সেটা অবচেতন মনে। আমি এ রকম বলার কথা না। যদি বলেও থাকি, তাহলে অবচেতন মনে।’

এর আগে ২২ নভেম্বর জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে প্রশাসনকে কব্জায় আনা নিয়ে তিনি বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন।

শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে দলের ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’

তাঁর এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ওই বক্তব্যের জেরে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানিয়েছে, গতকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর) তাঁকে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে তিনি কারণ দর্শাবেন। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা নোটিশে বলা হয়, আপনার (শাজাহান চৌধুরী) এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। আমরা বক্তব্যটি দেখেছি, যা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা ও মূল স্পিডকে স্পষ্টভাবে ব্যাহত করেছে। আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে, এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।

এতে আরও বলা হয়, ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আপনি এই ধরনের সাংগঠনিক ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ও শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। যার ফলে আপনাকে কয়েকবার সতর্ক ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমিরে জামায়াতও আপনাকে ডেকে দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সতর্ক করেছেন। এর পরও আপনার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত