leadT1ad

বিতর্কের পর শাজাহান চৌধুরী

জামায়াতের কথায় প্রশাসন উঠবে-বসবে, বুঝাতে চাইনি

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য একান্ত তাঁর নিজস্ব। এটি দলীয় কোনো বক্তব্য নয়। জামায়াত শাহজাহান চৌধুরীর ওই বক্তব্য সমর্থন করছে না।’

চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের জেলার নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে শনিবার বক্তৃতা করেন শাহজাহান চৌধুরী। ছবি সংগৃহীত

‘আমাদের কথায় প্রশাসন উঠবে, আমাদের কথায় বসবে’– জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর এমন বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর দল বলেছে, বক্তব্যটি শাজাহান চৌধুরীর একান্ত ব্যক্তিগত। জামায়াত এ ধরনের বক্তব্য সমর্থন করে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী শাজাহান চৌধুরী বলেছেন, আমার বক্তব্য নিয়ে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমি প্রশাসনকে দলীয় কব্জায় রাখার সেন্সে কথাটি বলিনি।

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য একান্ত তাঁর নিজস্ব। এটি দলীয় কোনো বক্তব্য নয়। জামায়াত শাহজাহান চৌধুরীর ওই বক্তব্য সমর্থন করছে না। অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান, জামায়াতে ইসলামী

আজ ররিবার সাবেক এই সংসদ সদস্য স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের কথায় উঠতে-বসতে বলিনি। আসলে আমি বলেছি– ভারতের কথা তো বলে আসছি। এখানে আধিপত্যবাদীরা অতীতেও নির্বাচনের সময় বস্তা বস্তা টাকা ঢেলেছে। এখন আমাদের দেশে অস্ত্রের ঝনঝনানি। ভারত থেকে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিবেশটা যেটা আছে, সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি বক্তব্যে বোঝাতে চেয়েছি, প্রশাসন আমাদের মানে জামায়াতের কথায় উঠতে-বসতে হবে, ওভাবে না। আপনারা প্রশাসনের যারা আছেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তারা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কাজ করবেন। এতটুকুই।’

যে বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক

গতকাল শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের জেলার নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে বক্তৃতা করেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি নির্বাচনী গণসংযোগে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের কৌশল, ত্রুটি ও করণীয় নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

এক পর্যায়ে শাজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতির টাকা বাদ দেন, বস্তা বস্তা টাকা পার্শ্ববর্তী দেশ হিন্দুস্থান থেকে আমাদের এই দেশে ঢুকবে। আর অস্ত্র ঢুকবে। আমাদের আমিরে জামায়াত যদি থাকত আমি বলতাম, নির্বাচন শুধু জনগণকে দিয়ে নয়।’

এরপরেই পরপর দুইবার ‘প্রশাসনকে অবশ্যই, প্রশাসনকে অবশ্যই’ উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যাশনালি বলব না, যার যার নির্বাচনী এলাকায়– যারা প্রশাসনে আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে (নিয়ন্ত্রণে) নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’

আমাদের কথায় উঠতে-বসতে বলিনি। আসলে আমি বলেছি– ভারতের কথা তো বলে আসছি। এখানে আধিপত্যবাদীরা অতীতেও নির্বাচনের সময় বস্তা বস্তা টাকা ঢেলেছে। এখন আমাদের দেশে অস্ত্রের ঝনঝনানি। ভারত থেকে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিবেশটা যেটা আছে, সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, জামায়াতে ইসলামী

জামায়াত নেতার এই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সামাজিকমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের সময় তিনি মঞ্চে ছিলেন না।

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের সময় মঞ্চে ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান ও চট্টগ্রাম মহানগরের নবনির্বাচিত আমির নজরুল ইসলাম। বক্তব্যের মধ্যে শাহজাহান চৌধুরী কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রটোকল দেবে। টিএনও (ইউএনও) যা উন্নয়ন এসেছে, সব উন্নয়নের হিসাব যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) তাঁর থেকে খুঁজে বের করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য দেন শাজাহান চৌধুরী। বক্তব্যের সমালোচিত অংশ তিনি উচ্চারণ করেন ১৭ মিনিটের মাথায়। শাজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমি আমার দক্ষিণ জেলায় অনেককে সহযোগিতা করেছি। তখন ক্যান্ডিডেট হিসেবে আমার নামও ঘোষণা করা হয়নি। উপদেষ্টাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, লোহাগাড়ায় ১০০ কোটি, সাতকানিয়ায় ১০০ কোটি এবং বাস্তবায়ন করার জন্য লোহাগাড়ায় ১০ কোটি, সাতকানিয়ায় ১০ কোটি (দেওয়া হয়েছে)। আপনি যদি জনগণকে কিছু দিতে না পারেন, জনগণের অভাব, অভিযোগ, চাহিদা বুঝতে হবে। ডেকোরেশনের বয়দের নিয়ে কোনো সম্মেলন হয়েছে। আমরা তো তাদের ভোটারই মনে করছি না। সবাইকে নিয়ে সম্মেলন করতে হবে।’

আমাদের বলতে দেশের কথা বুঝিয়েছি

অনুষ্ঠানটি শাহজাহান চৌধুরীর ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করা হয়, যা এখনও রয়েছে। এতে প্রশাসনকে অস্ত্র উদ্ধারের প্রসঙ্গটি সেখানে নাই জানানোর পরে স্ট্রিমকে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘ওখানে আমাদের বলতে জামায়াতের কথা বুঝাইনি। আমাদের বলতে দেশের কথা বুঝিয়েছি। হয়ত দেশ কথাটা বাদ পড়ে গেছে।’

দলের দায়িত্বশীলদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘আমাদের’ বললে দল হিসেবে জামায়াতকে বোঝায় কিনা– প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওখানে সাংবাদিকও ছিলেন। দায়িত্বশীলও ছিলেন।’

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেন দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে বা পুলিশকে কেন জামায়াত নেতাদের পেছনে হাঁটতে হবে– জানতে চাইলে শাজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি আসলে ওই সেন্সে কথাটি বলি নাই। যারা প্রার্থী থাকেন, এদের অনেক ডিস্টার্ব হয়, এজন্য যদি পুলিশ থাকে তাহলে ডিস্টার্ব হলো না, এইটাই।’

এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য একান্ত তাঁর নিজস্ব। এটি দলীয় কোনো বক্তব্য নয়। জামায়াত শাহজাহান চৌধুরীর ওই বক্তব্য সমর্থন করছে না।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত