বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের বাজার এক উত্তাল সময় পার করছে। সরকারের একটি প্রযুক্তিগত উদ্যোগকে কেন্দ্র করে একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও রাজস্ব আদায়ের প্রশ্ন, অন্যদিকে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর জীবিকা এবং কোটি গ্রাহকের সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন কেনার অধিকার নিয়ে তৈরি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি। ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার’ বা এনইআইআর নামক এই ব্যবস্থা চালুর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক এখন রাজপথে গড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট, হুমকি, এবং একজন ব্যবসায়ী নেতার আটকের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি অবৈধ ফোনের বিরুদ্ধে একটি সরকারি অভিযান মনে হলেও এর গভীরে রয়েছে শুল্ক কাঠামো, বাজারের প্রতিযোগিতা এবং একটি সম্ভাব্য সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে পুরো মোবাইল ফোন ব্যবসার প্রতিবেশ নাড়া খেয়েছে। এই প্রতিবেদনে এনইআইআর ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে বর্তমান সংঘাত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ বিশ্লেষণ করে এই বিতর্কের মূল কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
এনইআইআর: প্রেক্ষাপট ও সরকারি পরিকল্পনা
অবৈধভাবে আমদানি, ক্লোন করা বা চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় মাথাব্যথার কারণ। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে এসব ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অনেক বছর ধরেই একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার তৈরির পরিকল্পনা করে আসছিল। এর উদ্দেশ্য প্রতিটি মোবাইল ফোনের পরিচয়কে বৈধভাবে নিবন্ধিত করা। কিন্তু নানা কারণে বিষয়টি আর অগ্রসর হয়নি। তবে সম্প্রতি মোবাইল আমদানি থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর বিষয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির কারণে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এই রাজস্ব ফাঁকি রোধে বিটিআরসির সহযোগিতা চায় এনবিআর। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে এনইআইআর ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে উদ্যোগী হয় বিটিআরসি।
এনইআইআর মূলত একটি প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম এটি প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের স্বতন্ত্র ১৫-সংখ্যার ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং তার ব্যবহৃত সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করে একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থাটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারের দাবী
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: এনইআইআর চালু হলে প্রতিটি হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত থাকবে। ফলে, কোনো ফোন চুরি বা ছিনতাই হলে তার আইএমইআই নম্বর ব্লক করে দেওয়া সম্ভব হবে, যা ফোনটিকে দেশের কোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলবে। এতে চুরি ও অবৈধ ফোনের ব্যবহার কমবে।
রাজস্ব বৃদ্ধি: বর্তমানে দেশের মোবাইল ফোনের বাজারের একটি বড় অংশ আনঅফিশিয়াল বা 'গ্রে' মার্কেটের দখলে। এসব ফোন অবৈধ পথে, অর্থাৎ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। বলা হয়, এর ফলে প্রতিবছর সরকার প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব বা শুল্ক হারাচ্ছে। এনইআইআর কার্যকর হলে শুধু বৈধভাবে আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত ফোনগুলোই নেটওয়ার্কে সক্রিয় হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়কে বহুগুণে বাড়বে।
অবৈধ আমদানি রোধ: ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অবৈধ পথে আসা কোনো নতুন হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে সক্রিয় করা যাবে না। এটি চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যবহারকারীদের জন্য আশ্বাস: জনমনে সৃষ্ট উদ্বেগ দূর করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বস্ত করেছে যে, বর্তমানে ব্যবহৃত কোনো মোবাইল ফোন—তা বৈধ বা অবৈধ যে পথেই কেনা হোক না কেন—বন্ধ হবে না। চলমান সব হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। শুধুমাত্র নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং কেনার আগে এসএমএসের মাধ্যমে ফোনের বৈধতা যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়া, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটির পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও একটি ফোন শুল্ক ছাড়া আনতে পারবেন।
অফিশিয়াল ফোনের বাজার
অফিশিয়াল ফোন বলতে মূলত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানির কারখানায় সংযোজিত এবং উৎপাদিত মোবাইল ফোনকে নির্দেশ করা হয়। এছাড়া অল্পকিছু হ্যান্ডসেট সরাসরি দেশের বাহির থেকে আমদানি করা হয়। ইংরেজী দৈনিক দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড এর প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে দেশের বৈধ বা অফিসিয়াল চাহিদাও প্রায় ৯৫% থেকে ৯৯% ফোন দেশীয় কারখানাতেই তৈরি বা সংযোজন করা হয়। বর্তমানে দেশে স্যামসাং, শাওমি, ভিভো, অপো, রিয়েলমি, টেকনো, সিম্ফনি এবং ওয়ালটনসহ প্রায় ১৭টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন করছে। উৎপাদনের দিক থেকে এখনো ফিচার ফোনের সংখ্যাই বেশি (প্রায় ৬০-৭০%), তবে স্মার্টফোনের উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক কোটির বেশি ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে। আর এ সময়ে ৬৭.৩৬ লাখ ৪জি মোবাইল এবং আড়াই লাখ ৫জি মোবাইল তৈরি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে এক কোটি ৮৭ লাখের বেশি ফিচার ফোন, ৮১ লাখ ৩৯ হাজার ৪জি এবং ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ৫জি উৎপাদিত হয়।
উৎপাদনের পাশাপাশি মোবাইল ফোন আমদানিও হয়েছে। ২০২৫-এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বৈধপথে ৪জি ফোন আমদানি হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৬৯৮টি, আর ৫জি ফোন আমদানি হয়েছে দুই হাজার ১৪৪টি। ২০২৪ সালে আমদানি হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৩০টি ৪জি মোবাইল এবং ছয় হাজার ২৫৩টি ৫জি মোবাইল। আর ২০২৩ সালের ২৪ হাজার ১৯টি ৪জি এবং ১৮ হাজার ৬৬৪টি ৫জি মোবাইল আমদানি করা হয়।
উচ্চ শুল্ক এবং বাজারের বাস্তবতার বিতর্ক
সরকারের এনইআইআর নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির মূল কারণ হলো বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক। বর্তমানে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রায় ৫৮ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। আর ফিচার ফোনের ওপর শুল্ক-করের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। এই বিপুল পরিমাণ শুল্কের কারণে বৈধভাবে আমদানি করা বা দেশে অ্যাসেম্বল করা ফোনের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়।
এর ফলে, দেশে একটি বিশাল অনানুষ্ঠানিক বাজার গড়ে উঠেছে। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপায়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ফোন আমদানি করেন। ফলে তারা অফিশিয়াল বা বৈধ ফোনের চেয়ে অনেক কম দামে একই মডেলের ফোন বিক্রি করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারের ৪০% থেকে ৬০% ফোনই আনঅফিশিয়াল বা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। সাধারণ গ্রাহক, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের মানুষ নিজেদের সামর্থের মধ্যে ভালো ফিচারের একটি স্মার্টফোন কেনার জন্য এই অনানুষ্ঠানিক বাজারের ওপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার উচ্চ শুল্কের বিষয়টি সমাধান না করে এনইআইআর ব্যবস্থার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তাদের মতে, এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশের প্রায় ২৫ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী পথে বসবেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে।
অভিযোগের তীর সিন্ডিকেটের দিকে
পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে যখন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি) অভিযোগ তোলে যে, এনইআইআর ব্যবস্থাটি মূলত হাতে গোনা কয়েকজন আমদানিকারক ও দেশীয় অ্যাসেম্বলারকে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে। সংগঠনটির মিডিয়া পরামর্শক মিজানুর রহমান সোহেল দাবি করেন, এই ব্যবস্থার ফলে দেশের মাত্র ৯টি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পুরো বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যা একটি প্রতিযোগিতাহীন পরিবেশ তৈরি করবে। তার অভিযোগ, এই ৯ প্রতিষ্ঠানের একটির স্বত্ত্বাধিকারী বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বন্ধু।
ব্যবসায়ীদের মতে, এটি দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী। যেখানে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে, সেখানে এমন একটি ব্যবস্থা কীভাবে চালু হতে পারে যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিলুপ্ত করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করবে?
হুমকি, আটক এবং ধর্মঘট
এনইআইআর বাস্তবায়নের তারিখ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক পর্যায়ে বলেন, যদি অনানুষ্ঠানিক ফোনের ব্যবসায়ীরা দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শোরুমে হামলা ও হুমকি দেওয়া বন্ধ করে এবং এনইআইআর-বিরোধী প্রচারণা থেকে সরে আসে, তবে তিনি শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন। এই বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে, কারণ ব্যবসায়ীরা এটিকে একটি শর্তারোপ এবং হুমকি হিসেবেই দেখেন।
এই উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে যখন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সেক্রেটারি এবং জনপ্রিয় গ্যাজেট শপ 'সুমাশটেক'-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইয়েদ পিয়াসকে ডিবি পুলিশ আটক করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে সারা দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়, যা মোবাইল ফোনের বাজারকে কার্যত অচল করে দিয়েছে।
একটি বহুমুখী সংকট এবং ভবিষ্যৎ
বর্তমানে মোবাইল ফোনের বাজারকে কেন্দ্র করে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। প্রথমত, অর্থনৈতিক সংকট। একদিকে সরকারের রাজস্ব হারানোর উদ্বেগ, অন্যদিকে ২৫ হাজার ব্যবসায়ীর জীবিকা ও লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের প্রশ্ন। উচ্চ শুল্কের কারণে গ্রাহকদের ওপর যে আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিও একটি বড় অর্থনৈতিক বাস্তবতা।
সেই সঙ্গে রয়েছে নীতিগত সংকট। সরকার কি সমস্যার মূলে না গিয়ে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সমাধান দিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান করতে চাইছে? শুল্ক কাঠামোকে যৌক্তিক পর্যায়ে না এনে শুধু এনইআইআর বাস্তবায়ন করা হলে তা কি কালোবাজারকে আরও উৎসাহিত করবে না?
সিন্ডিকেটের অভিযোগ এবং উপদেষ্টার বন্ধুর সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তবে এটি পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে।
পরিশেষে
মোবাইল ফোন বাজারে যা হচ্ছে তাকে প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণের আড়ালে থাকা এক গভীর অর্থনৈতিক ও নীতিগত দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। অবৈধ ফোনের ব্যবহার রোধ করা নিঃসন্দেহে একটি জরুরি পদক্ষেপ। কিন্তু এর জন্য যে পথ বেছে নেওয়া হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে কিনা সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমদানিকারক, দেশীয় অ্যাসেম্বলার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা অধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত সরকারের। মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ককে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হতে পারে এই সমস্যার সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এতে একদিকে বৈধ এবং অবৈধ ফোনের দামের পার্থক্য কমে আসবে, গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন কিনতে পারবেন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বৈধ পথে ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। আবার অবৈধভাবে দেশের বাজারে আসা মোবাইল ফোন সরকারকে নির্দিষ্ট শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ পাবেন।
কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রন আরোপের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা না করে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালার মাধ্যমেই বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের বাজারকে স্থিতিশীল এবং সকলের জন্য লাভজনক করে তোলা সম্ভব। অন্যথায়, এই বিতর্ক ও সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে, যার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি।