গাজায় অব্যাহত গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে দখলদারত্বের বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক মহল আবারও ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার কথা তুলছে। ফ্রান্স-সৌদি বৈঠক থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য স্বীকৃতির ঘোষণা—সবখানেই শোনা যাচ্ছে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ উদ্যোগ কী সত্যিই সমাধান দেবে? নাকি কেবল ইসরায়েলের বর্বর দখলনীতির বৈধতা দেবে?
স্ট্রিম ডেস্ক
গাজায় চলমান ইসরায়েলের গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে সক্রিয় হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে ফ্রান্স ও সৌদি আরব সমন্বিতভাবে নিউইয়র্কে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে একশ’রও বেশি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। এরপর কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি আরব দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানায়। কয়েকদিন পরে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য জানায়, যদি ইসরায়েল শান্তি চুক্তি না মানে, তবে যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে এ প্রক্রিয়া প্রশংসিত হয়েছে। বাস্তবতা হলো, প্রায় ২২ লাখ মানুষকে ইসরায়েল সৃষ্ট খাদ্যসংকটের মুখোমুখি রেখে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণা এগিয়ে নেওয়া কেবল রাজনৈতিক প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রস্তাবিত ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ বাস্তবে গাজার গণহত্যা বন্ধ করতে পারবে না, এমনকি প্রকৃত সার্বভৌম রাষ্ট্রও তৈরি করতে পারবে না।
এই সময়ে এসে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠন প্রসঙ্গ পুনরায় তুলে ধরা কেবল ইসরায়েলের বর্বরতার বৈধতা ও কূটনৈতিক আড়াল প্রদান করার উদ্দেশ্যই পূরণ করে। চলতি বছরের মার্চের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৩টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল সৃষ্ট খাদ্যসংকট সমাধানে অক্ষম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনই ইসরায়েলের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না, যা প্রকৃত স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন।
দুঃখজনকভাবে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের সময়কাল ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ দশক ধরে, ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে এই সম্ভাবনাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। আঞ্চলিক, প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থিক ও আইনগতভাবে কোনো ধরনের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হলেও তা একটি সার্বভৌম জাতির মতো হবে না।
প্রথমেই বোঝা প্রয়োজন, পশ্চিম তীরের ভূখণ্ডটি এক সমতলে নয়। বরং বিচ্ছিন্ন ও ভগ্নাংশে বিভক্ত। পশ্চিম তীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা ছিটমহল হিসেবে বিদ্যমান, যা একত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের আকার নিতে পারে না। সর্বোচ্চ হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের মাত্র ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। গাজা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তি সেখানে প্রায় অসম্ভব মনে হয়। অর্থাৎ গাজা হয়তো পুরোপুরি বাদ পড়বে।
সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের সামরিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘এরিয়া সি’, যা পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এ জায়গা ছাড়তে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে? এ ছাড়া গাজার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাত থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কী তারা চাপ প্রয়োগ করবে?
১৯৬৭ সালের পর থেকে প্রতিটি ইসরায়েলি সরকার দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় বসতি সম্প্রসারণ করেছে এবং ইহুদি নাগরিকদের পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করতে আর্থিক সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়ন দিয়ে উৎসাহিত করেছে। প্রতিটি বসতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালের অর্থ সহায়তা ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সমর্থিত সশস্ত্র সিভিল নিরাপত্তা ইউনিট রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী এই বসতি ভাঙতে বা একটি একক আইনি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে? যে আইন ফিলিস্তিনের খ্রিস্টান ও মুসলিম এবং ইসরায়েলের ইহুদিদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
১৯৯৫ সালের অসলো (২) মধ্যবর্তী চুক্তি অনুযায়ী, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সব পানি সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে রয়েছে। পশ্চিম তীরের পাহাড়ি একুইফার (পানি-বহনকারী উপাদানের ভূগর্ভস্থ স্তর) থেকে ফিলিস্তিনিরা কেবল ২০ শতাংশ পানি ব্যবহার করতে পারে, বাকি ৮০ শতাংশ মূলত ইসরায়েলিদের জন্য সংরক্ষিত। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় ও ইহুদি-ইসরায়েলি বসতিগুলোর মধ্যে পানিসম্পদের ন্যায্য ও সমান বণ্টন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে?
বর্তমানে, ইসরায়েল দখলকৃত এলাকার প্রায় সব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। সকল ফিলিস্তিনি, এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকেও নিজস্ব এলাকায় প্রবেশ বা প্রস্থান করতে ইসরায়েলের অনুমতি নিতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে সীমান্ত ও পারাপারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে বাধ্য করতে পারবে?
১৯৯৪ সালে পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনি প্রশাসন পরিচালনার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠিত হয়। যা সরকার হিসেবে নয়, বরং ইসরায়েলের সামরিক দখল ব্যবস্থার সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি নির্বাচনের ফলাফলও অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী সত্যিই স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও ফলাফল গ্রহণে ইসরায়েল ও তার সহযোগীদের বাধ্য করতে পারবে?
১৯৯৪ সালের প্যারিস প্রোটোকল অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান আয়ের উৎস ভ্যাটের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসরায়েলের হাতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে বাধ্য করবে ফিলিস্তিনি সরকারকে নিজেদের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা করার অনুমতি দিতে?
এই প্রশ্নগুলো ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় বহু আঞ্চলিক ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার কেবল সূচনা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, লাখ লাখ শরণার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে যে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যে দীর্ঘকালীন অন্যায়গুলোকে হয়েছে, সেগুলোকে স্পর্শও করে না এই প্রশ্নগুলো।
এই বিষয়গুলো সমাধান না করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের যে কোনো আলোচনা আসলে ইসরায়েলের করা চলমান বর্বরতা থেকে মনোযোগ সরায়। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, কোনো গণহত্যা কখনোই দোষীদের যুক্তি বা ন্যায্যতা বোঝানোর মাধ্যমে থামানো যায়নি। বরং নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র নীতি আরোপের মতো পদক্ষেপই ইসরায়েলকে তার আগ্রাসী মনোভাব কমাতে বাধ্য করবে।
অর্থহীন রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে, বিশ্ব নেতাদের যে তিনটি মূল প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন কি ইসরায়েলের ওপর প্রযোজ্য হবে? ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার কি রক্ষা করা হবে? এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি সত্যিই যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কেবল ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের ভবিষ্যৎই নয়, বরং নিয়মতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার নির্ধারকও হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত জেমস ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানাল এ. জামালের মতামত অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ
গাজায় চলমান ইসরায়েলের গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে সক্রিয় হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে ফ্রান্স ও সৌদি আরব সমন্বিতভাবে নিউইয়র্কে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে একশ’রও বেশি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। এরপর কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি আরব দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানায়। কয়েকদিন পরে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য জানায়, যদি ইসরায়েল শান্তি চুক্তি না মানে, তবে যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে এ প্রক্রিয়া প্রশংসিত হয়েছে। বাস্তবতা হলো, প্রায় ২২ লাখ মানুষকে ইসরায়েল সৃষ্ট খাদ্যসংকটের মুখোমুখি রেখে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণা এগিয়ে নেওয়া কেবল রাজনৈতিক প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রস্তাবিত ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ বাস্তবে গাজার গণহত্যা বন্ধ করতে পারবে না, এমনকি প্রকৃত সার্বভৌম রাষ্ট্রও তৈরি করতে পারবে না।
এই সময়ে এসে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠন প্রসঙ্গ পুনরায় তুলে ধরা কেবল ইসরায়েলের বর্বরতার বৈধতা ও কূটনৈতিক আড়াল প্রদান করার উদ্দেশ্যই পূরণ করে। চলতি বছরের মার্চের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৩টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল সৃষ্ট খাদ্যসংকট সমাধানে অক্ষম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনই ইসরায়েলের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না, যা প্রকৃত স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন।
দুঃখজনকভাবে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের সময়কাল ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ দশক ধরে, ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে এই সম্ভাবনাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। আঞ্চলিক, প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থিক ও আইনগতভাবে কোনো ধরনের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হলেও তা একটি সার্বভৌম জাতির মতো হবে না।
প্রথমেই বোঝা প্রয়োজন, পশ্চিম তীরের ভূখণ্ডটি এক সমতলে নয়। বরং বিচ্ছিন্ন ও ভগ্নাংশে বিভক্ত। পশ্চিম তীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা ছিটমহল হিসেবে বিদ্যমান, যা একত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের আকার নিতে পারে না। সর্বোচ্চ হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের মাত্র ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। গাজা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তি সেখানে প্রায় অসম্ভব মনে হয়। অর্থাৎ গাজা হয়তো পুরোপুরি বাদ পড়বে।
সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের সামরিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘এরিয়া সি’, যা পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এ জায়গা ছাড়তে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে? এ ছাড়া গাজার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাত থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কী তারা চাপ প্রয়োগ করবে?
১৯৬৭ সালের পর থেকে প্রতিটি ইসরায়েলি সরকার দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় বসতি সম্প্রসারণ করেছে এবং ইহুদি নাগরিকদের পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করতে আর্থিক সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়ন দিয়ে উৎসাহিত করেছে। প্রতিটি বসতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালের অর্থ সহায়তা ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সমর্থিত সশস্ত্র সিভিল নিরাপত্তা ইউনিট রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী এই বসতি ভাঙতে বা একটি একক আইনি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে? যে আইন ফিলিস্তিনের খ্রিস্টান ও মুসলিম এবং ইসরায়েলের ইহুদিদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
১৯৯৫ সালের অসলো (২) মধ্যবর্তী চুক্তি অনুযায়ী, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সব পানি সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে রয়েছে। পশ্চিম তীরের পাহাড়ি একুইফার (পানি-বহনকারী উপাদানের ভূগর্ভস্থ স্তর) থেকে ফিলিস্তিনিরা কেবল ২০ শতাংশ পানি ব্যবহার করতে পারে, বাকি ৮০ শতাংশ মূলত ইসরায়েলিদের জন্য সংরক্ষিত। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় ও ইহুদি-ইসরায়েলি বসতিগুলোর মধ্যে পানিসম্পদের ন্যায্য ও সমান বণ্টন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে?
বর্তমানে, ইসরায়েল দখলকৃত এলাকার প্রায় সব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। সকল ফিলিস্তিনি, এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকেও নিজস্ব এলাকায় প্রবেশ বা প্রস্থান করতে ইসরায়েলের অনুমতি নিতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে সীমান্ত ও পারাপারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে বাধ্য করতে পারবে?
১৯৯৪ সালে পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনি প্রশাসন পরিচালনার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠিত হয়। যা সরকার হিসেবে নয়, বরং ইসরায়েলের সামরিক দখল ব্যবস্থার সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি নির্বাচনের ফলাফলও অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী সত্যিই স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও ফলাফল গ্রহণে ইসরায়েল ও তার সহযোগীদের বাধ্য করতে পারবে?
১৯৯৪ সালের প্যারিস প্রোটোকল অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান আয়ের উৎস ভ্যাটের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসরায়েলের হাতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ইসরায়েলকে বাধ্য করবে ফিলিস্তিনি সরকারকে নিজেদের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা করার অনুমতি দিতে?
এই প্রশ্নগুলো ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় বহু আঞ্চলিক ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার কেবল সূচনা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, লাখ লাখ শরণার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে যে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যে দীর্ঘকালীন অন্যায়গুলোকে হয়েছে, সেগুলোকে স্পর্শও করে না এই প্রশ্নগুলো।
এই বিষয়গুলো সমাধান না করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের যে কোনো আলোচনা আসলে ইসরায়েলের করা চলমান বর্বরতা থেকে মনোযোগ সরায়। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, কোনো গণহত্যা কখনোই দোষীদের যুক্তি বা ন্যায্যতা বোঝানোর মাধ্যমে থামানো যায়নি। বরং নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র নীতি আরোপের মতো পদক্ষেপই ইসরায়েলকে তার আগ্রাসী মনোভাব কমাতে বাধ্য করবে।
অর্থহীন রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে, বিশ্ব নেতাদের যে তিনটি মূল প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন কি ইসরায়েলের ওপর প্রযোজ্য হবে? ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার কি রক্ষা করা হবে? এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি সত্যিই যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কেবল ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের ভবিষ্যৎই নয়, বরং নিয়মতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার নির্ধারকও হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত জেমস ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানাল এ. জামালের মতামত অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং দাবি করে দুই হামলাকারী পাকিস্তানের নাগরিক।
৩ ঘণ্টা আগেফিলিস্তিন কেবল এক যুদ্ধক্ষেত্রই নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্ব এখনো তাদের ঔপনিবেশিক অতীতের সত্য দেখতে পারে এমন শেষ আয়না। তাই এই আয়নাটিকেই ভেঙে ফেলা চাই।
১৪ ঘণ্টা আগেএক বছর আগে, এই মাসেই, বাংলাদেশের সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাজারো শিক্ষার্থী অসংখ্য সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমাদের জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। অবশেষে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা ৫ আগস্ট এক স্বৈরাচারীকে দেশত্যাগ
১ দিন আগেযেকোনো মুহূর্তে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক ‘উচ্ছেদের নির্দেশ’ আসার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। আমার প্রিয় শহর গাজা ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি সামরিক দখলের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পরিকল্পনা হলো আমাদের ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে সবাইকে দক্ষিণ গাজায় তাঁবুর নিচে নিয়ে যাওয়া।
২ দিন আগে