ফাতেমা আবেদীন
ক্যাপশন পড়ে চোখ উলটে ফেলার কোনো কারণ নেই। আমার বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায় না বা দেইনি—এটা সবাই জানেন। কিন্তু আজকে যে ফল প্রকাশ হয়েছে, তাতে যারা ফেল করেছে, সে তালিকায় আমার এবং আপনাদের নামও আছে।
একটু নড়েচড়ে বসুন। একটি সদ্য তারুণ্যে পা রাখা সন্তানের অভিভাবক হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় আপনার- আমার। গত ২০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ ফল বিপর্যয়। ২০২টি স্কুলে একজনও পাস করেনি—এমন ঘটনা ঘটেছে।
এই স্কুলের শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষকে বেতানোর পক্ষে আমি। তবে একটি শিক্ষার্থীকেও আঘাত বা অসম্মানের বিপক্ষে। এইচএসসি পরীক্ষার আগে নিশ্চিতভাবেই তারা টেস্ট, প্রি টেস্ট এবং পোস্ট টেস্ট কোচিংয়ের মাইলফলক পার হয়ে এসেছে। তাহলে কী করে শতভাগ ফেইল করে? শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ কী করেছে? তাদের গাফিলতির দায়ভার আমি আমার সন্তানের ওপর চাপাতে চাই না।
যা কিছু ঘটুক ‘কেষ্ট বেটাই চোর’ থিওরিতে আমি বলতে চাই, এবার ব্যর্থ হওয়ার দায়ভার আমাদের। আমার সন্তান ভালো করতে পারছে না, তার মানে তার ভালো ফল করার যে সুযোগ, সেটি আমি সৃষ্টি করতে পারিনি। কোথাও না কোথাও তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ রোধ করেছি। তাই ফেলের তালিকায় সর্বাগ্রে একজন অভিভাবক হিসেবে আমারও নাম আছে।
আর এইচএসসির পাস-ফেল বা এ প্লাস আমার জীবন নির্ধারণ করতে পারবে না, এটি আমি আমার জীবন দিয়ে অনুভব করি। অ্যাকাডেমিক ভালো ফল করে বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবেন (তাও মামার জোর, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে সম্ভব না)। তাই ফেল করা বা অপেক্ষাকৃত কম ভালো ফল করা ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে যে ট্রলের সংস্কৃতি আমরা-আপনারা চালু করেছি, তাতে শাস্তি হিসেবে আমাদের ওপর দোররা বা পাথর নিক্ষেপ উপযুক্ত বলেই বিশ্বাস করি।
জেনজি বলে ওদের ওপর যে দায় চাপিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে ক্রুঢ় হাসি দিচ্ছেন, তার আগে একবার ভেবে নেবেন, জেনজি আসমান থেকে পড়েনি। আপনি-আমিই জন্ম দিয়েছি এবং লালন-পালন করেছি। তাই এই ব্যর্থতা আগাগোড়া আপনার বা আমার ব্যর্থতা।
আপনার ট্রল বা অপমানের কারণে একজন শিক্ষার্থীও যদি আত্মহত্যা করে, তবে এইটুকু মাথায় রাখবেন, সেই খুনের দায় আমাদের হাতেই লেগে থাকবে। একজন খুনী হিসেবে আমরা বিবেচিত হব বরাবর।
আমার এক বন্ধু জানালেন তার মেয়ে ৪ দশমিক ৫ পেয়েও কান্নাকাটি করছে। ইংরেজি ও আইসিটিতে এ মাইনাস পেয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতেই ভাবলাম, ওর যে বেসিক ইংরেজি জ্ঞান, তাতে ওর কখনোই ইংরেজিতে এ মাইনাস পাওয়ার কথা না। এবং যথারীতি সংবাদ পর্যালোচনা করে পেলাম, শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, ইংরেজিতে পাসের হার কম হওয়ায় এবার সার্বিক পাসের হার কমেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি)। বিষয়টি ভাবনার কিন্তু।
একটি পরীক্ষার ফল শুধু একটি বাচ্চা খাতায় কী লিখল তার ওপর নির্ভর করে না। এটি ফল প্রস্তুতকারী প্রক্রিয়ায় থাকা প্রতিটি লোকের অ্যাফোর্ট ও গুরুত্ব দেওয়ার ওপর সমানভাবে নির্ভরশীল।
আমি জেন-জিদের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে বিশ্বাসী। এইচএসির ইংরেজিতে তারা ঢালাওভাবে ফেল করবে—এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। খাতা মূল্যায়নের বিষয়টিকে পুনঃনীরিক্ষণের দাবি জানাতেই পারি আমি। একই কথা আইসিটির ক্ষেত্রেও।
আমার ভাই এবং বোন দুইজন শিক্ষকতা করেন। তাদের একজন আইসিটির শিক্ষক আরেকজন কৃষি শিক্ষার। আমার বোন জানালেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৬ জন ফেল করেছে। এই ৬ জনই আইসিটিতে ফেল করেছে। অন্যদিকে ভাই জানালেন ৩ জন ফেল করেছে আইসিটিতে তার কলেজ থেকে। দীর্ঘ ১৯ বছর যাবত আইসিটিতে শিক্ষকতা করা ভাইটি এও জানালেন, খাতা পুনর্মূল্যায়ের আবেদন জানাবেন তারা। তবে সিলেবাসটিকেও বেশ গালমন্দ করলেন। সিলেবাস প্রণেতারা পুরো বিষয়টিতে নিজেদের জ্ঞানের কারিশমা দেখানোর জন্য বেশ কঠিন সিলেবাস করেছেন, যেটি মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগের অংক না পড়া ছাত্রদের জন্য অনেক কঠিন। কারণ এখানে কোডিং, প্রোগ্রামিংয়ের মতো জটিল বিষয়গুলো আছে। অথচ আইসিটি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বা কৃষি শিক্ষার মতো বিষয়গুলোকে ম্যাপিং করার কথা ছিল মূল নাম্বারিং পদ্ধতি বা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মুকুট যুক্ত করার জন্য।
এবার আসেন ইংরেজি নিয়ে আরেক দফা আলাপ দিই। সিলেট বিভাগে এবার ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার সর্বোচ্চ। কারণ, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে ইংরেজি পরীক্ষা হয়নি। এতে শতভাগ পাশ দেখানো হয়েছে। আগেই বলেছি, একজন ছেলে বা মেয়ে পরীক্ষার খাতায় কী লিখছে, তার ওপর নির্ভর করে না ফল। সামগ্রিক মূল্যায়ণ পদ্ধতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাতা দেখার একটি প্রাথমিক ম্যাপিং করে দেওয়া থাকে ঠিকই, কিন্তু সেখানে কোনো হেরফের হয়েছে কি না, তাও বিবেচ্য। আবার অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে পাসের হার বাড়ানোর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা দেখানোর যে চল ছিল অতীতে, এবার সেটি নেই। এ জন্য পাসের হার কমেছে, এমন দাবিও করতে পারেন কেউ কেউ। তাহলে তো আগের পাস ও জিপিএ-৫ নিয়ে গর্বে গর্বিতদের ফলকে প্রশ্ন করতে হয়।
কিন্তু ভেবে দেখুন, অংক বা পদার্থ, অর্থনীতির মতো কঠিন বিষয়ে ফেল না করে কেন আইসিটি বা ইংরেজির মতো বিষয়ে ফেলের হার বেশি কেন।
এইসব দুশ্চিন্তার সঙ্গে আমাদের রয়েছে পাশের বাসার পাস করা ভাবীরা ও ভাইয়েরা। ‘আল্লাহ, ভাবি আপনার বাচ্চা ফেল করেছে, আমার ছেলে তো এ ডাবল প্লাস পেয়েছে।’ এইসব আত্মীয়-পরিজনদের থেকে নিজেদের স্বার্থেই দূরে থাকুন। আপনার সন্তানকে ‘ভাত খাওয়াই না, ওর পায়ে ধরা পানি খা’—এইসব জিনিস থেকে নিজের স্বার্থেই দূরে রাখতে হবে আমাদের। প্রতিটি মানুষ আলাদা। প্রতিটি মানুষের মূল্যায়ণ আলাদা হওয়াই উচিত।
একপক্ষ অবশ্য দাবি করছে ডিজিটাল যুগের শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্তি কিংবা আন্দোলন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কারণে ফেল করেছে। বিষয়টার এতটা সরলীকরণ হয়তো আমরা করতে পারি না। কারণ এইভাবে ডিজিটাইজেশন দোষ দেওয়াটা অনেকটা বুমার্সদের সাত কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাওয়ার মতোই ঘটনা। কারণ আমার নিজের বাবাই বলেছেন, তিনি সাত মাইল হেঁটে স্কুলে গেছেন, আমরা কত সুবিধা পাচ্ছি। তিনি এভাবে ভাবেননি যে তাঁর সময় সাত কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল ছিল না, চাকার গাড়ি বলতে গরুর গাড়ি ছিল। সেটাও দুই চার গ্রাম পর বিয়ে বা মৃত্যুতে বের করা হতো।
আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন দুই মাইলের মধ্যে স্কুল ও রিকশা সহজলভ্য। তাই আমিও সাত কিলোমিটার হেঁটে গেলে ভালো করতাম, তেমনটা না। একইভাবে আমাদের এবারের পরীক্ষার্থীরা যখন জন্ম নেয়, তখন তাদের বাপ-মা সবার হাতেই দুটো করে ডিভাইস আছে। তারা ডিভাইস আসক্তি নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। সেটি পরীক্ষার ফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে, এমনটি নয়। বরং অপব্যবহার প্রভাব ফেলতে পারে, এটি বলা যায়।
আবার এও বলতে পারি, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে যে পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফেইস করে আসছে, সেগুলোর একটি বড় প্রভাব অবশ্যই এবারের ফলে পড়েছে। আগের সরকার এসে তাদের দলকানা শিক্ষকদের নিযুক্ত করেছেন। এই সরকার এসে কিছুই করেননি। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেয়নি। আর দলকানাদের অন্য দলের কানারা টেনে নামিয়েছে। এগুলো অবশ্যই ফল বিপর্যয়ে প্রভাব ফেলেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের একটি কথাই বলবো, ফল বিপর্যয় সাময়িক। সামনেরবার পরীক্ষা দিলেই পাস করে যাবে। এটি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করার মানে নেই। সুস্থভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা খুব বড় বিষয়। জজ-ব্যারিস্টার হওয়া নয়। জীবন উপভোগ করাটাও বড় বিষয়। আমি নিজে টেনে-টুনে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছি। এতে কিন্তু কিছু হয়নি। এই যে ঔদ্ধত দেখিয়ে ঠিক আমি দুই কলম লিখে দিচ্ছি, যারা খাতা মূল্যায়ন করেছেন, পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। জীবনের শিক্ষা বই খাতা থেকে নয়, নিতে হয় সমাজ ও প্রকৃতি থেকে। আপাতত সমাজ থেকে শিক্ষা নেওয়ায় বিরতি টানতে হবে। কারণ পুরো বিষয়টাই ৩৬ সেকেন্ডের রিলসের মতো হয়ে গেছে।
জীবন অনেক লম্বা। দম রাখতে হবে। ৫০ শতাংশ পাস করেছে, ৫০ শতাংশ ফেল। তাই যে পঞ্চাশেই আপনি থাকেন না কেন, আপনার ক্ষতি নেই। আপনি আমার সন্তান। সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অসঙ্গতি ও অভিভাবক হিসেবে আপনার সফলতা ও ব্যর্থতার দায় আমার। আমি মাথা পেতে নিলাম। যা নিদান দেবেন আমি প্রস্তুত।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
ক্যাপশন পড়ে চোখ উলটে ফেলার কোনো কারণ নেই। আমার বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায় না বা দেইনি—এটা সবাই জানেন। কিন্তু আজকে যে ফল প্রকাশ হয়েছে, তাতে যারা ফেল করেছে, সে তালিকায় আমার এবং আপনাদের নামও আছে।
একটু নড়েচড়ে বসুন। একটি সদ্য তারুণ্যে পা রাখা সন্তানের অভিভাবক হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় আপনার- আমার। গত ২০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ ফল বিপর্যয়। ২০২টি স্কুলে একজনও পাস করেনি—এমন ঘটনা ঘটেছে।
এই স্কুলের শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষকে বেতানোর পক্ষে আমি। তবে একটি শিক্ষার্থীকেও আঘাত বা অসম্মানের বিপক্ষে। এইচএসসি পরীক্ষার আগে নিশ্চিতভাবেই তারা টেস্ট, প্রি টেস্ট এবং পোস্ট টেস্ট কোচিংয়ের মাইলফলক পার হয়ে এসেছে। তাহলে কী করে শতভাগ ফেইল করে? শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ কী করেছে? তাদের গাফিলতির দায়ভার আমি আমার সন্তানের ওপর চাপাতে চাই না।
যা কিছু ঘটুক ‘কেষ্ট বেটাই চোর’ থিওরিতে আমি বলতে চাই, এবার ব্যর্থ হওয়ার দায়ভার আমাদের। আমার সন্তান ভালো করতে পারছে না, তার মানে তার ভালো ফল করার যে সুযোগ, সেটি আমি সৃষ্টি করতে পারিনি। কোথাও না কোথাও তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ রোধ করেছি। তাই ফেলের তালিকায় সর্বাগ্রে একজন অভিভাবক হিসেবে আমারও নাম আছে।
আর এইচএসসির পাস-ফেল বা এ প্লাস আমার জীবন নির্ধারণ করতে পারবে না, এটি আমি আমার জীবন দিয়ে অনুভব করি। অ্যাকাডেমিক ভালো ফল করে বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবেন (তাও মামার জোর, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে সম্ভব না)। তাই ফেল করা বা অপেক্ষাকৃত কম ভালো ফল করা ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে যে ট্রলের সংস্কৃতি আমরা-আপনারা চালু করেছি, তাতে শাস্তি হিসেবে আমাদের ওপর দোররা বা পাথর নিক্ষেপ উপযুক্ত বলেই বিশ্বাস করি।
জেনজি বলে ওদের ওপর যে দায় চাপিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে ক্রুঢ় হাসি দিচ্ছেন, তার আগে একবার ভেবে নেবেন, জেনজি আসমান থেকে পড়েনি। আপনি-আমিই জন্ম দিয়েছি এবং লালন-পালন করেছি। তাই এই ব্যর্থতা আগাগোড়া আপনার বা আমার ব্যর্থতা।
আপনার ট্রল বা অপমানের কারণে একজন শিক্ষার্থীও যদি আত্মহত্যা করে, তবে এইটুকু মাথায় রাখবেন, সেই খুনের দায় আমাদের হাতেই লেগে থাকবে। একজন খুনী হিসেবে আমরা বিবেচিত হব বরাবর।
আমার এক বন্ধু জানালেন তার মেয়ে ৪ দশমিক ৫ পেয়েও কান্নাকাটি করছে। ইংরেজি ও আইসিটিতে এ মাইনাস পেয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতেই ভাবলাম, ওর যে বেসিক ইংরেজি জ্ঞান, তাতে ওর কখনোই ইংরেজিতে এ মাইনাস পাওয়ার কথা না। এবং যথারীতি সংবাদ পর্যালোচনা করে পেলাম, শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, ইংরেজিতে পাসের হার কম হওয়ায় এবার সার্বিক পাসের হার কমেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি)। বিষয়টি ভাবনার কিন্তু।
একটি পরীক্ষার ফল শুধু একটি বাচ্চা খাতায় কী লিখল তার ওপর নির্ভর করে না। এটি ফল প্রস্তুতকারী প্রক্রিয়ায় থাকা প্রতিটি লোকের অ্যাফোর্ট ও গুরুত্ব দেওয়ার ওপর সমানভাবে নির্ভরশীল।
আমি জেন-জিদের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে বিশ্বাসী। এইচএসির ইংরেজিতে তারা ঢালাওভাবে ফেল করবে—এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। খাতা মূল্যায়নের বিষয়টিকে পুনঃনীরিক্ষণের দাবি জানাতেই পারি আমি। একই কথা আইসিটির ক্ষেত্রেও।
আমার ভাই এবং বোন দুইজন শিক্ষকতা করেন। তাদের একজন আইসিটির শিক্ষক আরেকজন কৃষি শিক্ষার। আমার বোন জানালেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৬ জন ফেল করেছে। এই ৬ জনই আইসিটিতে ফেল করেছে। অন্যদিকে ভাই জানালেন ৩ জন ফেল করেছে আইসিটিতে তার কলেজ থেকে। দীর্ঘ ১৯ বছর যাবত আইসিটিতে শিক্ষকতা করা ভাইটি এও জানালেন, খাতা পুনর্মূল্যায়ের আবেদন জানাবেন তারা। তবে সিলেবাসটিকেও বেশ গালমন্দ করলেন। সিলেবাস প্রণেতারা পুরো বিষয়টিতে নিজেদের জ্ঞানের কারিশমা দেখানোর জন্য বেশ কঠিন সিলেবাস করেছেন, যেটি মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগের অংক না পড়া ছাত্রদের জন্য অনেক কঠিন। কারণ এখানে কোডিং, প্রোগ্রামিংয়ের মতো জটিল বিষয়গুলো আছে। অথচ আইসিটি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বা কৃষি শিক্ষার মতো বিষয়গুলোকে ম্যাপিং করার কথা ছিল মূল নাম্বারিং পদ্ধতি বা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মুকুট যুক্ত করার জন্য।
এবার আসেন ইংরেজি নিয়ে আরেক দফা আলাপ দিই। সিলেট বিভাগে এবার ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার সর্বোচ্চ। কারণ, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে ইংরেজি পরীক্ষা হয়নি। এতে শতভাগ পাশ দেখানো হয়েছে। আগেই বলেছি, একজন ছেলে বা মেয়ে পরীক্ষার খাতায় কী লিখছে, তার ওপর নির্ভর করে না ফল। সামগ্রিক মূল্যায়ণ পদ্ধতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাতা দেখার একটি প্রাথমিক ম্যাপিং করে দেওয়া থাকে ঠিকই, কিন্তু সেখানে কোনো হেরফের হয়েছে কি না, তাও বিবেচ্য। আবার অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে পাসের হার বাড়ানোর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা দেখানোর যে চল ছিল অতীতে, এবার সেটি নেই। এ জন্য পাসের হার কমেছে, এমন দাবিও করতে পারেন কেউ কেউ। তাহলে তো আগের পাস ও জিপিএ-৫ নিয়ে গর্বে গর্বিতদের ফলকে প্রশ্ন করতে হয়।
কিন্তু ভেবে দেখুন, অংক বা পদার্থ, অর্থনীতির মতো কঠিন বিষয়ে ফেল না করে কেন আইসিটি বা ইংরেজির মতো বিষয়ে ফেলের হার বেশি কেন।
এইসব দুশ্চিন্তার সঙ্গে আমাদের রয়েছে পাশের বাসার পাস করা ভাবীরা ও ভাইয়েরা। ‘আল্লাহ, ভাবি আপনার বাচ্চা ফেল করেছে, আমার ছেলে তো এ ডাবল প্লাস পেয়েছে।’ এইসব আত্মীয়-পরিজনদের থেকে নিজেদের স্বার্থেই দূরে থাকুন। আপনার সন্তানকে ‘ভাত খাওয়াই না, ওর পায়ে ধরা পানি খা’—এইসব জিনিস থেকে নিজের স্বার্থেই দূরে রাখতে হবে আমাদের। প্রতিটি মানুষ আলাদা। প্রতিটি মানুষের মূল্যায়ণ আলাদা হওয়াই উচিত।
একপক্ষ অবশ্য দাবি করছে ডিজিটাল যুগের শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্তি কিংবা আন্দোলন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কারণে ফেল করেছে। বিষয়টার এতটা সরলীকরণ হয়তো আমরা করতে পারি না। কারণ এইভাবে ডিজিটাইজেশন দোষ দেওয়াটা অনেকটা বুমার্সদের সাত কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাওয়ার মতোই ঘটনা। কারণ আমার নিজের বাবাই বলেছেন, তিনি সাত মাইল হেঁটে স্কুলে গেছেন, আমরা কত সুবিধা পাচ্ছি। তিনি এভাবে ভাবেননি যে তাঁর সময় সাত কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল ছিল না, চাকার গাড়ি বলতে গরুর গাড়ি ছিল। সেটাও দুই চার গ্রাম পর বিয়ে বা মৃত্যুতে বের করা হতো।
আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন দুই মাইলের মধ্যে স্কুল ও রিকশা সহজলভ্য। তাই আমিও সাত কিলোমিটার হেঁটে গেলে ভালো করতাম, তেমনটা না। একইভাবে আমাদের এবারের পরীক্ষার্থীরা যখন জন্ম নেয়, তখন তাদের বাপ-মা সবার হাতেই দুটো করে ডিভাইস আছে। তারা ডিভাইস আসক্তি নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। সেটি পরীক্ষার ফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে, এমনটি নয়। বরং অপব্যবহার প্রভাব ফেলতে পারে, এটি বলা যায়।
আবার এও বলতে পারি, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে যে পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফেইস করে আসছে, সেগুলোর একটি বড় প্রভাব অবশ্যই এবারের ফলে পড়েছে। আগের সরকার এসে তাদের দলকানা শিক্ষকদের নিযুক্ত করেছেন। এই সরকার এসে কিছুই করেননি। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেয়নি। আর দলকানাদের অন্য দলের কানারা টেনে নামিয়েছে। এগুলো অবশ্যই ফল বিপর্যয়ে প্রভাব ফেলেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের একটি কথাই বলবো, ফল বিপর্যয় সাময়িক। সামনেরবার পরীক্ষা দিলেই পাস করে যাবে। এটি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করার মানে নেই। সুস্থভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা খুব বড় বিষয়। জজ-ব্যারিস্টার হওয়া নয়। জীবন উপভোগ করাটাও বড় বিষয়। আমি নিজে টেনে-টুনে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছি। এতে কিন্তু কিছু হয়নি। এই যে ঔদ্ধত দেখিয়ে ঠিক আমি দুই কলম লিখে দিচ্ছি, যারা খাতা মূল্যায়ন করেছেন, পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। জীবনের শিক্ষা বই খাতা থেকে নয়, নিতে হয় সমাজ ও প্রকৃতি থেকে। আপাতত সমাজ থেকে শিক্ষা নেওয়ায় বিরতি টানতে হবে। কারণ পুরো বিষয়টাই ৩৬ সেকেন্ডের রিলসের মতো হয়ে গেছে।
জীবন অনেক লম্বা। দম রাখতে হবে। ৫০ শতাংশ পাস করেছে, ৫০ শতাংশ ফেল। তাই যে পঞ্চাশেই আপনি থাকেন না কেন, আপনার ক্ষতি নেই। আপনি আমার সন্তান। সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অসঙ্গতি ও অভিভাবক হিসেবে আপনার সফলতা ও ব্যর্থতার দায় আমার। আমি মাথা পেতে নিলাম। যা নিদান দেবেন আমি প্রস্তুত।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার ভবিষ্যৎকে আমূল পুনর্গঠনের প্রস্তাব। ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবকে অভিহিত করেছেন ‘একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘এই অগ্রগতি তিন হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে।’
১৫ মিনিট আগেমাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা স্তরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী শ্রেণি হচেছ উচচ-মাধ্যমিক। সেই পরীক্ষার ফল বের হলো আজ ১৬ অক্টোবর। এবার পাসের হার ৫৮দশমিক ৮৩শতাংশ। গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। সম্ভবত শিক্ষা উপদেষ্টার পদক্ষেপে ফল কিছুটা হয়েছে। তবে পুন:নিরীক্ষনে আবার অনেকেই পাস করে যান যা পাসের হারের উ
৪ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারে বিশ্ব আজ তথ্যের এক অভূতপূর্ব যুগে প্রবেশ করেছে। এই মাধ্যম একদিকে যেমন জ্ঞান, শিক্ষা ও যোগাযোগের সুযোগ উন্মুক্ত করেছে, অন্যদিকে তা হয়ে উঠেছে নৈতিক অবক্ষয়ের এক বড় উৎস। বিশেষ করে অশ্লীল কনটেন্টের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের যে প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তা সমাজব্যবস্থা ও মানব
৫ ঘণ্টা আগেঢাকা নগরীর বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। মিরপুরের রাসায়নিক গুদামে আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু, তার আগে বঙ্গবাজারে শতাধিক দোকান ছাই হয়ে যাওয়া কিংবা চকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু প্রাণহানি—এসব ঘটনা যেন এক ভয়ংকর চক্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এই শহরে এত ঘন ঘন আগুন লাগে?
১ দিন আগে