leadT1ad

যে আস্থার স্পর্শ আজও বয়ে বেড়াই

মুনির চৌধুরী
মুনির চৌধুরী

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৩
খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৩ সাল। আমি তখন ২৩ বছরের তরুণ সামরিক অফিসার। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আমি যোগদান করলাম বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী, মানে এসএসএফ-এ।

প্রাথমিক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ শেষে আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পেলাম। শুরুতেই এসএসএফ-এর পরিচালকের সঙ্গে আমার ডাক পড়ল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।

হালকা নীল একটা শিফন শাড়ি পরে বসে আছেন একজন ভদ্রমহিলা। চারদিকে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। জীবনে এই প্রথম বেগম খালেদা জিয়াকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো। আমার নাম বলে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব নিলেন। তারপর লেখাপড়া, বাবা-মা, দেশের বাড়ি—এই সব নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। আমি উত্তর দিলাম। তারপর বললেন, ‘আমি রাজনীতি করি। আমাকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে যেতে হয়। তারাও আমার কাছে আসে। নিরাপত্তার অজুহাতে সেটা যেন বিঘ্নিত না হয়—সেই দিকে খেয়াল রাখবে।’

সেই থেকে আমার দায়িত্ব শুরু। দীর্ঘ সময় আমি তাঁর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামের অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছি খুব কাছ থেকে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে সেখান থেকে তিনি কখনো সরে আসতেন না। রাজনৈতিক সংকটে তাঁকে কখনো বিচলিত হতে দেখিনি। দেশের জনগণের ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল। এই জনগণকে তিনি কখনো অবমূল্যায়ন করেননি। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে দেশের জনগণ তাঁর পাশে আছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। একবার ভারত সফরের সময় আমি তাঁর সফরসঙ্গী ছিলাম। ভারতের শীর্ষ নেতাদের চোখে চোখ রেখে তিনি যেভাবে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন—তা আমাকে রীতিমতো রোমাঞ্চিত করেছিল।

দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে তাঁকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করতে হতো। এইটা ছিল তাঁর কাছে চরম বিরক্তির কারণ।

মানুষ হিসেবে তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন। প্রয়োজনের বেশি কথা বলতেন না। অপ্রাসঙ্গিক কথা কখনো বলতে শুনিনি। অসাধারণ স্মরণশক্তি তাঁর। আমাদের প্রত্যেককে তিনি নাম ধরে চিনতেন এবং ডাকতেন।

আমরা যারা তাঁর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলাম, মাতৃসম এই নারীর জীবনের সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের স্মৃতিতে আনন্দ-বেদনার এক কাব্য লুকিয়ে আছে।

রাজনীতির এক অস্থির সময়ে আমি আমার জ্যাকেটের নিচে রাখা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা বের করে তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, ‘ম্যাডাম, আপনি একটুও ভয় পাবেন না। যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি, আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেব না।’

তিনি আমার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ‘সারা রাত তো ঘুমাওনি… যাও, এখন ঘুমাও। আল্লাহ ভরসা।’

এখনো ছুটে গিয়ে আমার সেই কথাটাই বলতে ইচ্ছে হয়—‘ম্যাডাম, আমরা এখনো আছি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত